শোধনাগার
শোধনাগার
ছেলেটি নিঃসন্দেহে ব্রিলিয়্যান্ট।মাধ্যমিকে মাত্র এক নাম্বারের জন্য রাজ্যের মেধা তালিকায় জায়গা করতে পারেনি।
সে আফসোস ছেলেটা কাটিয়ে উঠেছে।
মা,বাবা আত্মীয়,স্বজন সকলেই আশাবাদী।
এবার তাদের ছেলে উচ্চ মাধ্যমিকে বিশাল কিছু করে দেখাবে।
ছেলেটা একটা অব্দি হোস্টেলে রাত জেগে পড়ে।
তাতে কেউ, কেউ বিরক্ত বাসে।
...আর মাত্র কয়েকদিন পরই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা।
ছেলেটা পুর্ণোদ্যমে পড়ছে।
হঠাৎ পাশের বন্ধুগুলো ছেলেটার হাত,পা ধরে জোর করে তাকে বেডে শুইয়ে দিল।
ছেলেটা অনুনয়ের সুরে বলে উঠল,প্লিজ..তোরা এখন ইয়ার্কি মারিস না। আমাকে পড়তে দে।
উত্তরে একজন বন্ধু হাতদুটো ঝেড়ে বলে উঠল,আবে..ঘচু পড়বিই তো।তারজন্য অনেক সময় পড়ে আছে।
আপাতত আমাকে আমার কাজ করতে দে।...এই ঢ্যামনাগুলো আজ কসম খেয়েছে।তোর ধন দেখে ছাড়বে।তাই এই প্ল্যানটা আজমাতে হল।
...এই তো বাছার আমার আন্ডারপ্যান্ট বেরিয়ে এসেছে!..মেয়েদের জিনিস..তোর পরতে ভাল লাগে?
ছেলেটি প্রাণপনে নিজেকে মুক্ত করতে লাগল।
কন্ঠস্বর রাগে,উত্তেজনায় আর লজ্জায় মোটা হয়ে গলার কাছটাই গুঁজির মত আটকে গেল।
....ছা....আ...আ র...বল....ছি
ওরা তত ওকে টিপে ধরল।
অবশেষে সেই ছেলেগুলো তাকে উলঙ্গ করেই ছাড়ল।
একজন উচ্চস্বরে হেসে বলে উঠল,...এ্যাঁ মা।একদম পুচকে ব্যাঙাচির মত যেরে।তুই শালা মাগীকে চু...বি কী করে?
এত পড়াশুনো করে ভাল চাকরী পাবি।একজন সেক্সি গার্লফ্রেন্ড জুটবে।তারপর বিয়ে করবি।
তারপর তাকে চু..বে অন্য লোকে।তোর দ্বারা তো কিস্সু হবে না বস্।
...এই দ্যাখ আমাদেরগুলো!..একবার যে মেয়ে স্বাদ পাবে না।চির জীবন মনে রাখবে।এতবড় হয়ে সাহেব হয়ে বা.. ছিড়বি!
আসল যন্ত্রই তো তোর বেকার বে।
ছাড় শালাকে।পড়ুক গে।
ছেলেটা উচ্চমাধ্যমিকে ফেল করে গেল।
তা দেখে সবাই হতবাক।
ওর মা,বাবার তো পাগল হওয়ার জোগাড়।
কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না। তাদের এমন সুন্দর সোনার টুকরো ছেলের এরকম অবস্থা কেন হল?
ছেলেটি কোন প্রশ্নরই ঠিকমত উত্তর দিচ্ছে না।
দু,এক সময় রাগে খুব চেঁচাচ্ছে।
বাথরুমে অনেকক্ষণ ধরে থাকে।
একদিন তাদের হাই ইস্কুলের বাংলার শিক্ষক মশাই তাদের বাড়ি এলেন।খুব হাসি,খুশি চেহারা।
ছাত্র,ছাত্রীদের সঙ্গে তার মধুর সম্পর্ক।সবার সাথে মিশে যেতে পারেন।
এক সময় এই ছেলেটার সাথেও সেই রকম সম্পর্ক ছিল।আজকাল তেমন দেখা হয় না।
এসেই মিষ্টি করে একটা ডাক দিলেন, কই রে লাল
বাহাদুর।এই দেখো আমি বিনা নেমতন্নে মিষ্টি খেতে চলে এলাম।
ছেলেটার নাম লাল বাহাদুর না।ওটা একমাত্র উনিই রেখেছেন।
মাষ্টারমশাই-এর ডাক শুনে ওর মা,বাবা ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন।
তার মা বিরক্ত গলায় বলে উঠলেন, আর আপনার লাল বাহাদুর!..আজ মুখ কালো করে বাথরুমে লুকিয়ে আছে। ছেলে আমাদের গলায় জুতোর মালা পরিয়ে ছাড়ল।ছিঃ...ছিঃ।এইটুকু বয়স থেকে পেঁকে গেল গো।দু বছর ধরে হোস্টেলে থেকে বাপের দেওয়া স্মার্টফোনে যত আবোল,তাবোল দেখে নিজের ভবিষ্যত মাটি করে দিল।তার সাথে আমাদের স্বপ্নগুলোকেও।
ওর বাবা প্রায় কেঁদেই ফেললেন,আমার তো মরে যেতে ইচ্ছে করছে।কেন আমি ফোনটা ওর কথা শুনে দিতে গেলাম?তা না হলে এমনটা হত না।
মাষ্টারমশাই একটু হেসে বলে উঠলেন,আরে বাবা ফেল করেছে তো কী হল?..ওর কী বিয়ে দেওয়ার সময় হয়ে গেছে নাকি?..পরের বছর আবার বসবে।
কই রে লাল বাহাদুর, বেরিয়ে এসো।না..আমি এমনই চলে যাব?
ছেলেটা সাথে,সাথেই চোখ,মুখ মুছে দৌঁড়ে বেরিয়ে এল।মাষ্টারমশাইকে প্রণাম করে বলে উঠল,স্যার আপনি!
--এলাম।দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রিকে একবার দেখতে।উনাকে তো স্বচক্ষে দেখিনি কোনদিন।তাই,তোমাকে দেখেই আশ মিটে যায়।আসলে ব্যাপারটা তা নয় রে।একটা মুশকিলে পড়েই এসেছি।অনেক ভেবে দেখলাম।তুমি ছাড়া এই মুহুর্তে আমায় আর অন্য কেউ হেল্প করতে পারবে না।
ছেলেটি তার স্যারের চিন্তাগ্রস্থ মুখের দিকে চেয়ে বলে উঠল,কী হয়েছে...বলুন স্যার। আমি আপনার সব সময় পাশে আছি।
মাষ্টারমশাই বলে উঠলেন,আর বলো না লাল বাহাদুর।থাকি তো ভাড়াটে ঘরে।রান্না করতে আজো অব্দি শিখলাম না। আর কপালে কোন বউও জুটছে না। তার উপর রান্নার মাসিটি কাল থেকে আর আসবে না। আবার বাচ্চা হবে।তুমি তো শুনলাম এ বছর ফেল করেছ।ভর্তি, টর্তির ঝামেলা নেয়।তুমি ভাই কিছুদিন আমার সাথে থেকে কোনরকমে রান্নাটা একবার শিখিয়ে দাও।শুনেছি তুমি নাকি খিচুড়ি আর পরোঠা দারুণ করতে পারো।
ছেলেটা খুশি মনে রাজি হয়ে গেল।বলল,আমি কিন্তু আপনার কাছে খাব,ওখানেই শোব।এই বাড়িতে আসছি না। ঘেন্না ধরে গেছে।
মাষ্টারমশাই ওর কাঁধে আলতো করে বাঁ হাতটা রেখে বলে উঠলেন,আচ্ছা তাই হবে।চলো এবার।
ওর মা,বাবা কিছু বলতেই যাচ্ছিলেন।পিছন থেকে মাষ্টারমশাই-এর ডানহাতের একটা অদ্ভুত ইশারা পেয়ে চুপ করে গেলেন।
ছেলেটা পাকা তিন মাস সেই মাষ্টারমশাই-এর কাছে থাকার পর আবার সেই ইস্কুলে পড়াশুনো শুরু করল।এবার সে একটা নিজস্ব রুম ভাড়া নিল।
এবং পরের বছর আই.আই.টি তে একশোর মধ্যে রাঙ্ক করল।
তার ইচ্ছে বিদেশে গিয়ে পড়াশুনো করবে।