সাহিত্য অনুরাগী

Tragedy Others

3  

সাহিত্য অনুরাগী

Tragedy Others

শেষ দেখা-প্রথম পর্ব

শেষ দেখা-প্রথম পর্ব

3 mins
248


রাত প্রায় এগারোটা।সারাদিন অনেক ছুটোছুটি,খাটুনি আর ধকল গেছে রাহুলের মধ্যে দিয়ে।তাই,খেয়েদেয়ে ঘুমোবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল সে।চোখদুটি আর কিছুতেই চলতে পারছেনা বিরামহীন অবস্থায়।তার সঙ্গে পূর্ণ সহমত পোষণ করে শরীরটাও এলিয়ে পড়তে চাইছে।অবসন্ন, ক্লান্ত, শ্রান্ত আর মলিন শরীরটাকে বিছানায় ছড়িয়ে দিয়েই শান্তি মাখানো এক গভীর স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে রাহুল।অন্যদিন খুব সহজে তার ঘুম আসতে চাইনা।ঘরের বাতি জলতেই থাকে সে ঘুমিয়ে পড়ে,হাতে বা তার পাশে রয়ে যায় কোনোদিন বই বা মোবাইল।যেন মনে হয় তাঁর স্বচ্ছন্দবোধে তাকে ঘুমোতে দেবেনা বলে ঘুমের রাজ্যের পরীরা তার সঙ্গে শত্রুতা করে রেখেছে।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে সমস্ত শত্রুতা ভুলে সেই পরীরা রুপোর কাঠি ছুঁইয়ে দিয়ে তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতে চাইছে।


   সবেমাত্র চোখদুটি চেপে এসেছিল।ঠিক সেই মুহূর্তেই মাথার কাছে রাখা রাহুলের ফোনটা বেজে উঠলো।সে প্রথম কলটা উপেক্ষা করল।এখন এতটাই ক্লান্ত যে মনে হচ্ছে ফোন রিসিভ করে কারো সঙ্গে কথা বলা তাঁর সাধ্যের বাইরে।আর, এখন কাঁচা ঘুমটাকে ভেঙে দিয়ে ঘুমপরীদের কৃপায় বহুদিনের শত্রুতার সন্ধি বিচ্ছিন্ন করার এতটুকু অভিসন্ধি বা অভিপ্রায় তাঁর ছিলোনা।কিন্তু রাহুলের কলারটুন "জিন্দেগী এক সাফার হে সুহানা"মনে হয় অপরপক্ষকে খুব ভালো লেগেছিল তাই আবার ফোনটা বেজে উঠলো।এদিকে রাহুলকে অগত্যা বাধ্য হয়েই কোনো আপদকালীন কল ভেবে রিসিভ করতে হলো।


রাহুল ক্লান্তি আর বিরোক্তিমাখানো স্বরে,"হ্যালো,কে বলছেন"


ওপার থেকে ক্ষীণ স্বরে উত্তর আসে,"আমি ছায়া।"

 রাহুলের কণ্ঠস্বর থেকে নিজের অজ্ঞাতসারেই অস্ফুটসরে একটি দীর্ঘস্বাস বেরিয়ে আসে।তারপর দুদিক থেকেই নীরবতা।গভীর নিমগ্নতা।রাতের কোলাহলহীন শান্ত পরিবেশ,বাড়ির ডালিম গাছটায় বসে থাকা প্যাঁচাটির একঘেয়ে আওয়াজ,ঝিঁঝি পোকার ডাক,মাথার উপরে চলতে থাকা সিলিং ফ্যানের অবিরত সোঁ সোঁ শব্দ,ঘড়ির কাঁটার টিকটিক প্রতিধ্বনি,রজনিকালের প্রকৃতির নিস্তব্ধতা যেন পরিস্থিতিটাকে রহস্যময় করে তুলেছে।রাহুল চলে গেছে ভাবনার জগতে।আর ছায়া রাহুলের প্রত্যুত্তরে প্রতিক্ষারত।রাহুলের অবিশ্রান্ত ক্লান্তিটা যেন আর নেই,মনের ভাবনার সঙ্গে বিলীন হয়ে গেছে।"শুনছো",ছায়ার এই ক্ষুদ্র কঠিন একটা শব্দ রাহুলকে তার ভাবনার কাল্পনিক জগৎ থেকে কঠিন বাস্তবে টেনে নিয়ে এলো।


"হ্যাঁ, বলো"রাহুল খুব শান্ত নিচু স্বরে বলে।

ছায়া,"শুনলাম তোমার বিয়ে!"

রাহুল,"হ্যাঁ, আর মাত্র তিনদিন বাকী।"

ছায়া,"একটি অনুরোধ করবো।রাখবে?"

রাহুল,"হ্যাঁ বলো।"

"কালকে একবার দেখা করতে পারো!অল্পক্ষণের জন্য।জানিনা কেন?তবু দেখার খুব ইচ্ছে করছে।যদিও জানি এখন তুমি খুব ব্যস্ত।"কথাগুলো খুব স্বাভাবিকভাবে বলে ছায়া।

রাহুল একটু বিচলিত হয়ে উত্তর দেয়,"কালকে!"

রাহুলের কথা সম্পূর্ণ না হতে দিয়েই ছায়া বলে,"আচ্ছা থাক বরং!অসুবিধে থাকলে আসতে হবে না!

রাহুল একটু ভেবে উত্তর দেয়,"না।অসুবিধে তেমন নেই।কালকে বাজারে অনেক কাজও আছে আমার ।সেখানে চলে আসতে পারো!"

ছায়া,"ঠিক আছে।আমি বাসস্ট্যান্ডের ওপারে সাথী রেস্টুরেন্টে অপেক্ষায় থাকবো তোমার। যদি পারো তো চলে আসবে কাল সকালে।"

রাহুল ক্লান্ত আর অবিচলিত ভাবে,"বেশ তাই হবে।"

"আচ্ছা বেশ।তোমাকে খুব tired মনে হচ্ছে।এখন দ্বিধাহীনভাবে ঘুমোতে পারো।এখন রাখলাম তাহলে।"শুভ রাত্রি জ্ঞাপন করে ছায়া ফোন রেখে দিল।

   প্রথমত,রাহুল কি উত্তর দেবে তা তাঁর ভাবনার আকুলে চলে গিয়েছিল।সে হয়তো ভেবেছিল তাকে নিয়ে হয়তো ছায়া রাগে,অভিমানে তামাশা করছিল।কিন্তু পরক্ষনেই সে সন্দেহটা তাঁর অবশিষ্ট ছিল না।আর যাকে নিয়ে একসময় তাঁর স্বপ্ন ছিল।তার একটি ক্ষুদ্র ,শেষ অনুরোধকে সে সরাসরি না বলতই বা কিভাবে!এমন একটি ছোট্ট দাবি,শুধুমাত্র একটিবার কিছুক্ষণের জন্য দেখা করা!যেখানে কোনো জোর নেই,উত্তাপ নেই,ক্ষোভ নেই,বিশ্বাস অবিশ্বাসের সন্দেহ নেই,বিরহ নেই,না আছে ভালোবাসা-প্রেম',কোনোরকম বিশেষ অভিসন্ধি,না আছে অভিযোগ।এসব তো কিছুই ছিল না তার গলার স্বরে।মনে হলো বহুদিনের কোনো পরিচিত বন্ধু তাঁর শহরে এসে তার সঙ্গে একবার দেখা করার বায়না করছে।খুব স্বাভাবিক,সাবলিল আর স্বাচ্ছন্দ্যে তার ইচ্ছে প্রকাশ করল ছায়া।আর সে স্বাভাবিক স্বভাবের মধ্যেই কি কোনো অস্বাভাবিকতা আছে!তার জন্যই কি রাহুল সম্মত হলো ।সে কি কোথাও ভুল করছে?



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy