সাহিত্য অনুরাগী

Romance Tragedy

3  

সাহিত্য অনুরাগী

Romance Tragedy

শেষ দেখা-2য় পর্ব

শেষ দেখা-2য় পর্ব

3 mins
229


  ছায়ার সঙ্গে রাহুলের প্রথম দেখা টিউশন পিকনিকে।তার খুব প্রিয় বন্ধু আসিতের বাবা একজন প্রসিদ্ধ টিউশন শিক্ষক।প্রতি বছরই তিনি ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পিকনিক করেন।আগে অনেকবার বলেছিল রাহুলকে কিন্তু তার যাওয়া হয়নি।কিন্তু সেবার অসিত নাছোড়বান্দার মতন রাহুলের পেছনে লেগেছিল।আসিতের বাবাও তাকে বারবার করে বলাই সে আর না করতে পারেনি।হলুদ রঙের চুড়িদার সঙ্গে আকাশি ওড়না,কপালের মাঝে ছোট্ট লাল টিপ এ উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রী ছায়াকে দেখে রাহুলের দৃষ্টি স্থির হয়ে গিয়েছিল।অন্য সবার থেকে আচরণে, বার্তালাপে,ভূষণে,ব্যবহারে,ভাবে সবকিছুতেই যেন সাধারণ ভাব।মানুষের সাধারণ ভাবের জন্যও যে অসীম অসাধারণত্বের প্রয়োজন হয় তার প্রকৃস্ট প্রতিমা সে।অনেক অসাধারণ এর মধ্যে থেকে সাধারণকে খুঁজে নিতে কিঞ্চিৎ দ্বিধা বা বিলম্ব হয় না।

ছায়ার সৌন্দর্য,, মিষ্টি হাঁসি,নম্র ব্যবহার আর সাধারণত্ব রাহুলকে অমোঘ আকর্ষণ করেছিল।

তারপর অসিত আর রাহুল দুজনে মিলে কোনো কাজের ছুতো বের করে কথাবলা এবং তারপর কথা বলার জন্য বিভিন্ন প্রয়োজন সৃষ্টি করা।পিকনিকটা খুব ভালো গিয়েছিল।কারণ,প্রথম যুদ্ধে সে বিজয়ী।তারপর টিউশন চলাকালীন বন্ধুর বাড়ি যাওয়া,টিউশন ছুটির সময়ে পথের ধারে চায়ের আড্ডা,চোখের চাহনি আর মুখের হাঁসি দিয়ে বাক্যবিনিময়।শেষমেষ অসিতএর মাধ্যমে প্রেম নিবেদন।

  

তাঁদের প্রেমে একে অপরের জন্য অমোঘ ভালোবাসার টান থাকলেও অন্য সবার মতো সুখের ছিল না।তাদের প্রেম ছিল শরৎ এর মেঘের মতো।মেঘলা দিনে ক্ষনিকের রৌদ্রের ন্যায়।ছায়াকে যেমন ধরা যায়না,কোনো মেঘের আড়ালের জন্য ক্ষনিকের মতো এসেও সূর্যের প্রখরতার জন্য আবার চলে যেতে হয়।ছায়া ছিল উচ্চমাধ্যমিক এর ছাত্রী।পড়াশোনার অনেক চাপ,ভবিষ্যত এ সামনে এগিয়ে যাবার জন্য পাহাড় সমান প্রস্তুতি,বাবা মায়ের স্বপ্ন আর কড়া শাসন।পরীক্ষার কয়েকমাস আগে থেকে একরকম সে ঘরবন্দি।এরই মাঝে কোনো কাজের মাঝে রাহুলের সঙ্গে ক্ষনিকের দেখা,প্রিয় বন্ধুর সাহায্যে একটা দুটো চিঠি।খুব মন খারাপ করলে ওপাড়াই কোনো এক বিকেলে মামার বাড়ি গিয়ে মামাতো বোনের মোবাইলে কয়েকমিনিটের ফোন।এরকম ভাবেই তাঁদের চলে যাচ্ছিল।

তারপর উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট এর পরে তার বাবা তাকে ভর্তি করিয়ে দেয় কলকাতায় কোনো মেডিক্যাল কলেজে।ছায়ার স্বপ্ন সে ডাক্তার হবে।সেখানকার হোস্টেলে খুব কড়া আইন শৃঙ্খলা ছিল।নিয়মিত মোবাইল ব্যাবহার নিষিদ্ধ।তারই ফাঁকে কলেজের ক্যান্টিনে বা ছুটির সময় বাড়ি আসতো এক সঙ্গে কত স্বপ্ন বুনত তারা।প্রথম বছরটা খুব আনন্দে কেটেছিল তাদের,প্রেমের এক অনন্য স্বাদ পেয়েছিল।

কিন্তু তার পর থেকেই ধীরে ধীরে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে।কবিগুরুর ভাষায়,সর্ষে ক্ষেতের শেষ সীমানায় শাল বনের নিলাঞ্জনের মতন।ছায়া হঠাৎ করে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ে।মগ্ন হয়ে পড়ে তার স্বপ্নপূরণ নিয়ে।আর এদিকে রাহুল তাদের ব্যবসার সঙ্গে কঠিনভাবে নিযুক্ত হয়ে পড়ে।মাঝে মাঝে কথা বার্তা হলেও সম্পর্কের টান আর যেন সেরম অনুভূত হয় না।ছায়ার এত ব্যস্ততাকে রাহুলও হয়তো তাকে মুক্তি দিতে চেয়েছিল।দুজন দুজনের মতো আপন কর্মে মন সমর্পন করেছিল।দুজনের স্মৃতির মণিকোঠায় থেকে যাওয়া সেই অমূল্য ভালোবাসা সময়ের ব্যস্ততায় ধীরে ধীরে গ্রাস করে।নিজের অজ্ঞাতসারেই কখন একে অপরের থেকে একটু একটু করে বহুদূরে চলে যায়।

আর মাত্র তিনদিন পরে রাহুলের পরে।ছোট্টবেলাতেই বাবাকে হারিয়েছে সে।মায়ের আঙ্গুল ধরে আশ্রয় নেয় মামাবাড়িতে।মামাবাড়িতে মানুষ হলেও তাকে কোনোদিন অপমান,লাঞ্চিত,অবাঞ্চিত,অবহেলিত হতে হয়নি।তার মামা মামী নিজের দুটি মেয়ের সঙ্গে তাকে ছেলের অধিক যত্ন দিয়ে বড়ো করে তুলেছে।অন্যদিকে তার প্রিয়মাসি।শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে।ভালোবাসা,অর্থ কোনোকিছুর অভাব তাকে বুঝতে দেয়নি তাঁরা।

 রাহুল এখন যথেষ্ট বড়ো হয়েছে।তার মামা নিজের ব্যবসার মালিকানা সমস্তকিছুই রাহুলের উপর অর্পণ করেছেন।ব্যবসার ভারের সঙ্গে সাংসারিক দায়িত্ব আর কর্তব্য এসে পড়েছে তার ঘাড়ে।আর এই ব্যস্ততার মাঝে ছায়াকে প্রায় বাধ্য হয়েই এড়িয়ে যেতে হয়েছিল তাকে।তার দুটি বোন রিয়া আর মিষ্টি।রিয়া বিবাহযোগ্য সুন্দরী কন্যা।মামাতো বোন হলেও রাহুল নিজের বোনের থেকেও তাদের বেশি ভালোবাসে,তাদের ভবিষ্যৎ,সুখ দুঃখ নিয়ে চিন্তা করে,সর্বদা আগলে রাখে।সবাই রিয়ার বিয়ের জন্য তৎপর হয়।তার মাসি একটা পাত্রের সন্ধান নিয়ে আসে একদিন।

পাত্র স্কুলের শিক্ষক,সুপুরুষ, রুচিপূর্ণ ব্যবহার, সৎ এবং ধার্মিক,ভালো পরিবার।রিয়ার সঙ্গে খুব মানাবে।বাড়ির সকলে রাজি।বিয়েটা হঠাৎ করে ঠিক হয়ে গেল।আর আরও বেশী হঠাৎ করে ঠিক হয়ে গেল রাহুলের বিয়ে একই দিনে তার মাসির মেয়ের সঙ্গে।তার প্রিয়মাসির একমাত্র মেয়ে অর্পিতা।রাহুলের বিয়ের যথেষ্ঠ বয়স হয়েছে।আর অতি নিপুণ হস্তে দক্ষতার সঙ্গে ব্যবসা সামলাচ্ছে।আর রিয়া এই বাড়ি থেকে চলে গেলে বাড়ির অনেক অসুবিধা হবে।তাই সবার পরামর্শে ঘরের মেয়েকে ঘরের ছেলেকে দেওয়াই স্থির করলো সবাই।

রাহুল অর্পিতাকে নিয়ে এরকম কোনোদিন ভাবেনি।মাসির মেয়ের মতো,বন্ধুর মতো মিশে এসেছেচিরকাল। রাহুল এমনটা কোনোদিন আশা করেনি।তার কাছে এটা ভীষণ অপ্রত্যাশিত।কিন্তু সে না ও বলতে পারেনি।এক কথায় রাজি হয়ে গিয়েছিল সে।যাঁরা তাকে অফুরান ভালোবাসা যত্ন দিয়ে বড়ো করে তুলল।তাঁদের সিদ্ধান্ত সে কিভাবে উপেক্ষা করবে।যাঁরা চিরকাল তার সুচিন্তা করে এসেছে তাদের মুখের উপর কেমন করে বলবে এ বিয়েতে আমি রাজি হতে পারবো না।অর্পিতাকে সে অনেক ছোট থেকে দেখে আসছে।সুন্দরী,শান্ত স্বভাবের মিষ্টি মেয়ে।তার মায়ের খুব আদরের।বাড়ির সকলকে খুব খুশিতে রাখবে।আর সবার খুশির মাঝেই তো তার সুখ।

 to be continued....



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance