Raja Biswas Painting

Horror Fantasy

1  

Raja Biswas Painting

Horror Fantasy

সেই রাত

সেই রাত

3 mins
371


“মোবাইলের রিংটোনের শব্দে ঘুমটা ভাঙল তনুজার। রাত্রি তিনটে পনেরোয় চৈতির ফোন! ঘুমচোখে রিসিভ করল, “কী রে! এত রাতে ফোন কেন?” বিপরীতে ভেসে আসা কথাগুলো শুনে মুহূর্তের জন্য ওর পায়ের তলার মাটিটা যেন সরে গেল!”


(গতবছর ২৬এ জুন একটা পথদুর্ঘটনায় চৈতির স্বামী[বিকাশ] মারা যান. অনেক হুলুস্থুলু হয়েছিল.)


যাইহোক, আসল ঘটনায় আসি. চৈতি তার বান্ধবীকে বলছে - আজ একটা দাপ্তরিক কাজে আমাকে একটু কার্শিয়াং যেতে হয়েছিলো. এখনও আমি সেখানেই. আমি যেই হোটেলে উঠি, সেটা আমাদের অফিসই ঠিক করে দিয়েছিলো. কিন্তু সেখানকার স্থানীয় কিছু বাসিন্দা আমাকে নতুন দেখে অনেক মানা করেছিলো যে এই হোটেলে না থাকতে. কিন্তু কি করবো, দপ্তর যেখানে ঠিক করবে আমাকে সেখানেই থাকতে হবে. অন্যথা আমাকে আলাদা মোটা টাকা ভাড়া দিয়ে অন্য হোটেলে থাকতে হবে. 

যাইহোক, কারুর কোনো বারণ না শুনে একপ্রকার জোর করেই এই হোটেলে উঠলাম. হোটেলে আতিথেয়তার কোনো অভাব ছিলোনা. সারাসকাল এদিকওদিক করে বেশ কাটলো. সন্ধ্যা হতেই আকাশ কালো করে উঠলো এবং যথারীতি ঝড়বৃষ্টি শুরু হোলো. 

গা টা শিরশির করছে, হঠাৎ লোডসেডিং. ল্যান্ডফোন কাজ করছে না. মোবাইলেও চার্জ নেই. হোটেলের ওয়েটার বহুবার ফোন করলাম, কিন্তু ফোন যাচ্ছে না. 

ঠিক সেই সময়, দরজায় খটখট. ভয়ে আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত. সারা শরীরে কম্পন শুরু হয়েগেলো আমার. দরজা খুলবো কি খুলবো না দোনোমোনো করছিলাম. তারপর ভাবলাম যদি ওয়েটার হয়, তাহলে সোনায় সোহাগা. আর যদি না হয়. সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে দরজাটা খুললাম, কিন্তু কই. কোথাও তো কেউ নেই. একটু স্বস্তি হোলো. ফিরে এলাম বেডরুমে. রাত তখন ১২ টা ৩৫. সোফায় বসে একটা সিগারেট জ্বালালাম. লাইটার টা জ্বালতেই আমার গা শিউরে উঠলো, একটা খয়েরি ছায়া আমার ঠিক সামনেই দন্ডায়মান. 

আমি প্রায় শ্বাসরুদ্ধ. হঠাৎ দেখি ছায়া টা আবার মিলিয়ে গেলো. এভাবেই কেটে গেলো কিছুক্ষন. রাত এখন ২ টো ২৫.

আমি স্তম্ভিত, শরীরের কলকব্জা কাজ করছে না. তারমধ্যে আবার লোডশেডিঙের অন্ধকার. 

প্রায় জ্ঞান হারানোর মতো অবস্থা আমার.. ঠিক এই সময় হঠাৎ নানানরকম বাসন-কোসনের শব্দ কানে এলো রান্নাঘর থেকে. যাকে বলে গোদের উপর বিষফোঁড়া. হিমনীথর হয়ে গেলাম আমি. সারা শরীর আমার অবশ হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে, প্যারালাইসিস রুগীর মতো. কোনো সার নেই. শতাধিক চেষ্টা করে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালাম. কিন্তু পড়ে গেলাম, পায়ে ঝিঁ ঝিঁ ধরে গেছে. হঠাৎ একটা বেটা ছেলের গলায় অট্টহাসির শব্দ কানে এলো. শব্দ টা যতদূর সম্ভব বাথরুম থেকে আসছে. ভীষণ চেনা একটা আর্তনাদ. অনেক দিনের চেনা. গুটি গুটি পায়ে কাঁপতে কাঁপতে বাথরুমের দরজা টা খুলতেই আমার ঘাম ছুটে গেলো. দেখলাম আমার প্রয়াত স্বামী বিকাশ, নীল জ্বলজ্বলে ঠান্ডা চোখ, মাথায় চুল নেই, দুটো হাত আছে কিন্তু পা নেই. ঝুলন্ত অবস্থায় আমার দিকে ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে এক বিশ্রী আর্তনাদ করে ডাকছে, বলছে "এসো চৈতি এসো, চলো আমার সাথে, এসো চৈতি এসো, চলো আমার সাথে, হাহাহাহাহাহাআআআ এক বিচ্ছিরি অট্টহাসি".. আমি এবার পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম. যখন জ্ঞান ফিরলো, তখন দেখি ঘড়িতে বাজে ২ টো ৫০.. আমি বিছানাতেই শুয়ে আছি.. কোথাও কোনোকিছু নেই, আমার সামনে ওয়েটার দাঁড়িয়ে আছে, আমাকে জিজ্ঞেস করলো "কি হয়েছিলো ম্যাডাম ?

নিশ্চই আপনি ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখেছিলেন. 

আর কোনো চিন্তা নেই, এই রুমে যে আসে, সে প্রথম দিনে একটা স্বপ্ন দেখেই থাকে. তারপর আর কোনো অসুবিধা হয়না.. আর চিন্তা করবেন না.. যান এবার নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ুন.. "

 ঘটনা টা শুনে তনুজারও রক্ত হীম হয়ে গিয়েছিলো.. পরে দুজনেরই সম্বিৎ ফিরলো


Rate this content
Log in

More bengali story from Raja Biswas Painting