সৌন্দর্য্য
সৌন্দর্য্য


সামনে গিরিরাজের শৃঙ্খল। চারপাশ তুষারাবৃত। গিরিশৃঙ্গ গুলি যেন মালা তৈরি করেছে। শীতল বাতাস যেন দেহকে বিদ্ধ করছে। রাস্তার ধার দিয়ে পাহাড়ি খেচরের দল সারিবদ্ধ ভাবে তাদের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। খেচরের পিঠে স্থানীয় মানুষদের প্রয়োজনীয় জিনিস বাঁধা আছে। কিছুটা এগোতেই দেখা গেল এক ব্যক্তিকে। যার এক হাতে লাঠি, অপর হাতে গঙ্গাজলপূর্ণ কমন্ডলু, দেখতে সুপুরুষ, নেত্র দুটি গূঢ় তত্ত্ব উন্মোচন করতে ব্যগ্র, মাথায় লম্বা চুল, দাড়িতে মুখ আবৃত। "নমস্তে বাবাজি!" বলতেই ওই ব্যক্তিটি বলে উঠলেন,"নমস্কার!" শুনে হতবাক। বোঝা গেল বাঙালি ব্যক্তি। কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করতে যাওয়ার আগেই উনি বলে উঠলেন,"আপনাদের দেখেই বুঝেছি আপনারা বাঙালি।" বুঝলাম ব্যক্তিটির কিছু একটা ক্ষমতা আছে। আমার প্রশ্ন করার আগেই প্রশ্ন বুঝে উত্তর দিলেন। প্রথম দেখেই আমার মনে ব্যক্তিটির প্রতি এক অকৃত্রিম শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসছিল। আমি আরও উনাকে বোঝার জন্য কথোপকথন শুরু করলাম। যত আমাদের মধ্যে কথা এগোতে লাগলো তত অবাক হলাম। দেখে যেন মনে হয় এনি ভারতের সুপ্রাচীন সমাজের প্রতিনিধি। কিন্তু তিনি একাধারে যেমন সংস্কৃত পণ্ডিত তেমনি ইংরেজিতেও অসামান্য। কখনো তাকে মনে হচ্ছে সংস্কৃত পণ্ডিত সাধু আবার কখনো মনে হচ্ছে ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক। তাঁর যেমন বেদ থেকে গীতা সহ সব শাস্ত্রগ্রন্থ কণ্ঠস্থ ঠিক তেমনি পাশ্চাত্য দর্শনেও পন্ডিত। এছাড়া তিনি ইতিহাস, বাংলা সাহিত্য, ভূগোল প্রভৃতি সবেতেই পারদর্শী। এই নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে তাঁর সাথে কথা বলতে বলতে খুব আনন্দ হতে লাগলো। মনে হল কথাগুলো যেন তিনি বলেছেন না প্রকৃতিই তাঁর মুখ দিয়ে বলাচ্ছেন। কখনো তিনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সাথে গভীর ঈশ্বর তত্ত্বের সম্বন্ধ বর্ণনা করছেন, আবার কখনো পরমাণু তত্ব থেকে জীববিদ্যা সবকিছুর নতুন নতুন ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। তাঁর কথাগুলো এই পরিবেশের সাথে লয় প্রাপ্ত হচ্ছে। বলছেন,"দেখছো গাছগুলিকে। গাছগুলি নিজের কর্তব্যে অটল ও ধ্যানমগ্ন। নেই কোনো আসক্তি। আমাদেরও এরকম হওয়া উচিত।" গাছগুলোর দিকে তাকাতেই দেখি কাজ গুলির মাথায় সাদা বরফ যেন মুকুটের মতো অবস্থান করছে। এযেন ধ্যানমগ্ন মণির মাথায় সাদা মুকুট। কিন্তু মুনির কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার লক্ষ্যে অটল।