SOMA GHOSH

Abstract Romance Others

3  

SOMA GHOSH

Abstract Romance Others

সাগরে মিলায়ে যায়

সাগরে মিলায়ে যায়

28 mins
293



নদী নদী কোথায় তুই একটু রান্নাঘরে আই না মা ৷ (মহিলা কণ্ঠস্বরটা শুনেই সিঁড়ি দিয়ে নুপুরের ছন্দ তুলে একটি বছর ২১শের মেয়ে দুমদাম করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে এলো )

 এই হচ্ছে নদী৷ বাবার সাথে শিলিগুড়িতে থাকে ৷ নদীর যখন চারবছর বয়স তখন নদীর মা মারা যায় ৷ তারপর থেকে বাবাই ওর কাছে সব ৷ নদীর বাবাও আর বিয়ের কথা ভাবেনি ছোট্ট নদীর মুখ চেয়ে ৷ যাকে নতুন বিয়ে করে আনবে সে যদি নদীকে মায়ের ভালোবাসা দিতে না পারে সেটাই ছিলো নদীর বাবার আসল ভয় ৷

তবে নদীকে মায়ের ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করেছে ওদেরই প্রতিবোশী পাশের বাড়ির মৃণালী দেবী ৷ স্বামী, শাশুড়ি মা ও একমাত্র ছেলে সাগরকে নিয়ে ওনার স্বচ্ছল সংসার ৷ সাগরের বাবার শিলিগুড়ি শহরে নিজস্ব বড় একটা গারমেন্টসের দোকান রয়েছে ৷ নদী,,,, মেয়েটার চলার গতিপথের সাথে ওর নামটা যেন একদম সার্থক৷ সত্যিই পাহাড়ি নদীর মতোই উচ্ছল একটা মেয়ে ৷

মেয়েটির গায়ের রঙ শ্যামবর্ণ হলেও মুখটা যেন মায়ায় পরিপূর্ণ ,, হরিণীর ন্যায় টানাটানা কাজলকালো চোখ দুটো যেন সর্বদা চঞ্চল ,, ঠোঁটের একেবারে নিচে ছোট্ট কালো তিলটা ঠোঁটিটাকে যেন আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে৷ তবে মেয়েটার ঘন কালো একরাশ কোমড় ছাপানো চুল এই শ্যামবর্ণ মেয়েটার সৌন্দর্য্য কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে ৷ নদীর বাবা হাই স্কুলের মাস্টার হওয়ায় ও ছোট থেকেই সাগরদের বাড়িতেই মানুষ ৷ নদী সাগরের থেকে পাঁচ বছরের ছোট ৷ নদী সাগরদের বাড়িতে ছোট মেয়ের মতোই আদর পাই। সাগরের ঠাকুমার কাছে নদী হচ্ছে ওনার সখী৷ তবে নদীর মনের গভীরে ঢোকার অধিকার শুধু একজনেরই আছে ৷ সে হচ্ছে ওর সাগর দাদা ৷ চার বছর বয়সে মাকে হারিয়ে উচ্ছল নদী একেবারে চুপচাপ হয়ে গেছিল ৷ সাগরই ওকে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনে ৷ সেই থেকেই নদী ওর সাগর দাদার নেউটা ৷ ওর সব আবদার অভিযোগ অভিমান ওর সাগর দাদার কাছে ৷ ছোট থেকেই নদীর একটা অভ্যাস রাতে বাড়িতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সাগরকে ওর সারাদিনের মনের সব কথা উজার করে বলতেই হবে। নইলে ওর রাতের ঘুম উড়ে যাবে ৷ সাগরও অবশ্য ওর নদীকে সবসময় আগলে রাখে। আর নদীর বকবক না শুনে তো সাগরের চোখেও ঘুম আসেনা। এই ভাবেই ছোট থেকে সাগর আর নদী একে অপরের প্রিয় বন্ধুও হয়ে উঠেছে ৷ ধীরে ধীরে নদীর মনে সাগরের প্রতি অদ্ভুত এক অধিকারবোধ জন্মে গেছে ৷ যার ফলস্বরূপ সাগর বাড়ির বাইরে কোথাও গেলে ওর মায়ের সাথে সাথে নদীকেও জানিয়ে যেতে হবে ও কোথায় যাচ্ছে নইলেই মেয়ের মুখ ফুলে হাঁড়ি ৷ একই স্কুলে পড়ার দরুণ নদী যদি সাগরকে কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখেছে তাহলেই লেগে যেত ধুন্দুমার কান্ড৷ বাড়ি ফিরে নদীর চেখের বহমান নদীকে থামানোর জন্য সাগর ছলনা করে হলেও ওর মায়ের হাতে মার খেয়ে নিতো ৷ নইলে যে ওর নদীর চোখের জল বন্ধ হবে না। ধীরে ধীরে কখন নদীর মনে ওর সাগর দাদার প্রতি ভালোবাসা জন্ম নিয়েছে ওর নিজেরই অজান্তে ৷ সাগর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্ত্তির জন্য যখন প্রথম কলকাতায় যাচ্ছিল তখন মৃণালী দেবীর থেকে হয়তো নদীই বেশি কান্নাকাটি করেছিল ৷ প্রতি মাসে বাড়ি আসবে এই প্রমিজ করে ,,,, অনেক বোঝানোর পর সাগর নদীকে শান্ত করেছিল ৷ কলকাতায় যাওয়ার পর সাগর রোজ রাতে ফোন করে নদীর সারাদিনের বকবক শুনতে ভুলতো না ৷ প্রথম প্রথম মাসে অন্তত দুবার বাড়ি আসত। তারপর সেটা কমে একমাসে বাড়ি আসতো ৷ কিন্তু ধীরে ধীরে পড়াশুনার চাপ যত বেড়েছে নদীর সাথে ফোনে কথা বলাও ততো কমে এসেছে ৷ বাড়ি ছমাসে দুবার আর তারপর বছরে দুবারে এসে দাঁড়িয়েছিল ৷ নদীও বড় হওয়ার সাথে সাথে নিজেকে একটু একটু করে গুটিয়ে নিতে শিখেছে ৷ এখন আর আগের মতো সাগরের কাছে জেদ করে না ৷ সাগরের ওপর অভিমান হলেও সেগুলো এখন নিজের মধ্যেই লুকিযে রাখে, চোখের জলগুলোরও এখন সক্ষী থাকে শুধু রাত জাগা পাখিরা , আকাশের উজ্জ্বল তারাগুলো আর দূরে নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়ের চূড়াগুলো ৷ কিছুদিন আগেই নদীর ইংলিশ লিটেরেচার নিয়ে বি.এ ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা দিয়েছে। তবে এখনো রেজাল্ট বেরোয়নি ৷ সাগর আজ ছবছর হলো কলকাতাতেই আছে। চার বছর পড়াশুনার পর একটা ভালো কম্পানিতে জব পেয়েছে। তাই ওখানেই থেকে গেছে৷ গত দুবছর ঐ কোম্পানিতে জব করছে। স্যালরিও ভালো ৷ তবে কাজের চাপে বাড়ি প্রায় আসতেই পারে না ৷ 

 ও বড়মা কেন ডাক ছিলে আমাকে ? (নদী রান্নাঘরে ঢুকেই মৃণালী দেবীকে পেছন থেকে জডিয়ে ধরে কলকল করে বলে উঠলো)

এই মেয়ে কোথায় ছিলি তুই এতোক্ষণ ? (মৃণালী দেবী নদীকে আদর করে বললেন )

বৌমা বিকেল হলেই তোমার নদীকে তো শুধু ছাদেই পাওয়া যায় সেটা জানোনা ৷ (সাগরের ঠাকুমা রমা দেবী পাশ থেকে বললেন )

হুম তা ঠিক,,,, তবে নদী শুধু ছাদে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে।একবছর বাদে কাল তোর সাগর দাদা ফিরছে ৷ এবার তো ওর সাথে ওর অফিসের পাঁচজন কলিগও আসবে বলেছে। তাই তোর সাগর দাদার ঘরের সাথে সাথে আরও দুটো ঘর একটু পরিষ্কার করতে হবে ৷ আমি এই দুধটা গরম করে রাখি। তারপর কিন্তু আমার সাথে একটু হাত লাগাতে হবে ৷ (মৃণালী দেবী)

ওমা বৌমা তুমি এখন এসব চিন্তা করছো ৷ তোমার ঘর পরিষ্কার তো সকালেই হয়ে গেছে ৷ ( রমা দেবী)

ঐ দেখ যেই শুনেছে ওর সাগর দাদা ফিরছে অমনি মেয়ে নিজে নিজেই সব করা শুরু করে দিয়েছে ৷ তা বলি মা তুমি যে একা একা এতো কাজ করছো তা তোমার বাবা জানলে কি ভাববে বলতো? (মৃণালী দেবী)

বারে আমি আমার মায়ের কাজ করছি এতে বাবা কেন কিছু মনে করতে যাবে ? বুঝেছি তুমি মুখেই আমাকে মেয়ে মেয়ে করো আসলে মন থেকে তো কখনো আমাকে মেয়ে মানোই না ৷ (নদী সঙ্গে সঙ্গে মুখ ফুলিয়ে বসে পাড়লো)

উফ এই মেয়েকে কিছু বলা নয় অমনি মেয়ের অভিমান হয়ে গেলো ৷ আচ্ছা বাবা আমার ভুল হয়ে গেছে কথাটা বলা। আর মুখ ফুলাতে হবে না ৷(মৃণালী দেবী রান্নাঘর থেকেই বললেন )

সাগরের মা তুমি আবার আমার মেয়েটাকে রাগিয়ে দিয়েছ নিশ্চয় ৷ কি হয়েছে মা আমাকে বলতো তোর বড়মা তোকে কি বলেছে ৷ (সাগরের বাবা বিনয় বাবু নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে নদীর পাশে বসে বললেন)

আসলে এই বাড়িক সকলেই এই মা মরা মেয়েটাকে খুব স্নেহ করে। আর সবসময় ওর মুখের হাসিটা বজায় রাখর চেষ্টা করে ৷

দাদা তুমি কিন্তু অহেতুক ওকে এতো আসকারা দাও ৷ (নদীর বাবা কনক বাবু সাগরদের বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বললেন )

কনক তুমি একদম আমাদের বাবা মেয়ের ভেতরে কথা বলবে না ৷ (বিনয় বাবু চোখ রাঙিয়ে বললনে)

তবে নদীর এখন আর কারো কথায় মাথায় ঢুকছে না ৷ ওর মন তো এখন পড়ে আছে ওর সাগরদাদার কাছে ৷ কতদিন পর কাল ও সাগরকে দেখতে পাবে বলে কথা ৷ কেউ না জাননেও এর মন তো জানে ওর সাগরদাদাকে ও কতটা ভালোবাসে ৷ সেই ভালোবাসার মানুষটাকে আজ একবছর চোখে দেখতে পায়নি ৷ মন যে ওর চাতকের মতোই পিপাষু হয়ে বসে আছে ৷


কিছুক্ষণ আসেই সাগর ওর বন্ধুদের নিয়ে ফিরেছে ৷ সবার সাথে কুশল বিনিময়ের পরে ও ওর বন্ধুদের নিয়ে রুমে গেছে ৷ তবে সবার মাঝে নদী এক কোণে দাঁড়িয়ে ছিল ৷ এখন ওর চোখদুটো ঝাপাসা হয়ে আসছে। ফেরার পর ওর সাগরদাদা ও কেমন আছে এটাও জানতে চাইনি ৷ এমনকি ওর উপস্থিতি উপলব্ধি করে ওর দিকে একবার তাকায়নি পর্যন্ত ৷ নদী দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁটটা কামড়ে বুকের ভেতর থেকে উঠে আসা কান্নাটাকে কোন রকমে আটকে ছুটে রান্নাঘরে চলে গেলো ৷


নদীমা কি হয়েছে তখন ধরে রান্নাঘরে কি করছিস ৷ ( মৃণালী দেবী)

এই তো বড়মা সব্জিগুলো ধুয়ে রাখছিলাম ৷ (নদী দ্রুত নিজের চোখের জল লুকিয়ে নিয়ে বলল)

তুই এসব ছাড়তো ৷ তুই বরং সকালের জলখাবারটা সাগরদের দিয়ে আয়৷ সাগর ওর বন্ধুদের নিয়ে নিজের ঘরেই আছে ৷ (মৃনালী দেবী)

ও তুমি গিয়ে দিয়ে আসো ৷ আমি এখন যেতে পারবো না ৷ (নদী)

কেন যেতে পারবিনা শুনি?তোর এখন এখানে কোন কাজ নেই ,,,যা গিয়ে জলখাবারটা দিয়ে আয় বলছি ৷ (মৃণালী দেবী একটু গম্ভীর হয়ে বলতেই নদী অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজী হয়ে গেলো)


নদী সাগরের ঘরে গিয়ে কাউকে দেখতে পোল না। তবে পরক্ষণেই ঘর লাগোয়া বারান্দা থেকে অনেকের গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে বুঝতে পারলো সাগররা বারান্দাতেই আছে ৷

সাগর দাদা বড়মা তোমাদের জন্য জলখাবার পাঠালো ৷ (নদী বারান্দার টেবিলটাতে ট্রেটা নামিয়ে দিয়ে বললো)

আরে এটা কে? ( সাগরে পাশে বসে থাকা একটা মেয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে বললো)

ও হলো নদী৷ (সাগর)

আমি সাগর দাদাদের পাশের বাড়িতে থাকি ৷ (সাগর আরও কিছু বলার আগেই নদী বলে উঠলো)

ওহ হাই নদী আমি রাইমা ৷ তোমার সাগর দাদার সাথে একই অফিসে জব করি ৷ (সাগরের পাশে থাকা মেয়েটা বললো)

নদী মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলো মেয়েটা সাগরেরি বয়সি হবে৷ গায়ের রং দুধের মতো ফর্সা, আর প্রচন্ড স্মার্ট৷ ওর কেন জানিনা মনে হলো মেয়েটা সাগরের সাথে একটু বেশিই ঘেঁষে কথা বলছে। নদীর এটা ও মনে হলো সাগরের পাশে মেয়েটাকে খুব সুন্দর মানাচ্ছে ৷ আর এই কথাটা মনে হতেই ওর বুকটা ধক করে উঠলো ৷

নদী নাইস নেম। হাই আমি রাজ ৷ (ওদের মাঝেই একটা ছেলে বললো)

আমি প্রদীপ ৷ নদী তোমার আর সাগরের নামে বেস কিন্তু একটা মিল আছে। ও সাগর আর তুমি নদী৷ (প্রদীপ হাল্কা হেসে বললো)

প্রদীপের কথার নদী জোর করে মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে মুখটা নমিয়ে নিলো ৷ সত্যিই ছোট বেলা বড় মায়ের মুখে ও শুনেছিল সাগরের নামের সাথে মিল রেখেই ওর মা ওর নাম নদী রেখেছিল ৷ ওর মা নাকি সাগরকে খুব ভালোবাসতো। 

আরে ধুর প্রদীপ তুমি তো সবেতেই মিল খুঁজে পাও ৷ নদী আমি হলাম অরুনিমা ৷ তবে তুমি কিন্তু খুব মিষ্টি৷ আর হ্যাঁ এই প্রদীপ মানে তোমার প্রদীপদা আমার বয়ফ্রেন্ড হয় ৷ (অরুনিমা নামের মেয়েটা একটা প্রাণোচ্ছল হাসি দিয়ে বললো)

অরুনিমা তুই না গলাই একটা পোস্টার টাঙিয়ে ঘোর যে আমি তোর বয়ফ্রেন্ড হই ৷ (প্রদীপ অরুণিমার কথা শুনে ওর দিকে কটমট করে তাকিয়ে বললো)

প্রদীপের কথা বলার ভঙ্গিতে নদীও হাসতে বাধ্য হলো ৷

হাউ সুইট,,, কি সুন্দর তোমার হাসিটা ৷ একেবারে মনে গেঁথে গেলো৷ ওহ তোমাকে তো আমার নামটাই বলা হয়নি। আমি সায়ান তবে তুমি আমাকে সান বলে ডাকলে আমার খুব ভালো লাগবে ৷ (সায়ান হ্যান্ডশেক করার জন্য নদীর দিকে হাতটা বারিয়ে বললো)

নদী নিজের হাসির প্রশংসা শুনে যেমন লজ্জা পেল তেমনি সানের সাথে হ্যান্ডশক করতে ইতস্তত করে হাতটা এগোলো ৷ তবে কেউ খেয়াল করলো না সাগরের মুখটা এতোক্ষণে গম্ভীর হয়ে গেছে। আর ওর চোখ দুটো যেন রাগে জ্বলে উঠেছে ৷

নদী তুই এখানে এখনো দাড়িয়ে কি করছিস? যা মায়ের কাছে ৷ (নদী সানের হাতটা ধরতে যাবে তখনি সাগর জোরে ধমকে উঠলো)

সাগরের ধমক খেয়ে নদী চমকে তাড়াতাড়ি হাতটা সরিয়ে নিলো ৷ ওর শ্যামবর্ণ মুখটা লাল হয়ে উঠলো চোখের কোনগুলোতেও জলকণা জমা হতে শুরু করলো ৷ ও এক ছুটে ওখান থেকে চলে গেলো ৷

নদীকে এভাবে বকার জন্য সাগরের বন্ধুরা ওকে বকাবকি করতে লাগলো ৷ 

ইস এতো সুন্দর মিষ্টি মেয়েটাকে তুই এভাবে বকলি কেন বলতো সাগর ৷ (সান)

ওর কথা বাদ দিয়ে চল সবাই জলখাবার শুরু কর ৷ (সাগর সানের দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে কথাটা বললো)

সাগরের কথায় সবাই তখনকার মতো লুচি তরকারি আর মিষ্টিতে মনোনিবেশ করলো ৷


দুপুরে সবাই খেতে বসলে সাগর মায়ের কাছ থেকে জানতে পারলো নদী সেই সকালে বাড়ি যাওয়ার পর আর এখানে আসেনি ৷ মৃণালী দেবী অনেকবার ডাকার পরেও আসেনি। ওর নাকি শরীরটা ভালো না ৷ সাগর আর কিছু না বলে খাওয়া শেষে নিজের রুমে গেলো বিশ্রাম নিতে ৷

কিরে এই তাহলে তোর নদী৷ (প্রদীপ সাগরের রুমে ঢুকেই বলে উঠলো)

প্রদীপ সাগরের কলেজ লাইফেই বন্ধু আর ওর সব থেকে ক্লোজ ফ্রেন্ড৷

হুম এই আমার নদী৷ (সাগর ইশারায় প্রদীপকে বসতে বলে বললো)

তুই তো বলেছিলি ওর বকবক শুরু হলে থামেইনা ৷ কিন্তু আজ তো দেখলাম পুরো শান্ত৷ (প্রদীপ বসতে বসতে বললো)

অভিমান হয়েছে আমার ওপর। এসে থেকে যে ওর সাথে কথা বলিনি৷ (সাগর একটু হেসে বললো)

আর এটা তুই কেন করলি ? এতো মিষ্টি একটা মেয়েকে কষ্ট দিতে হয় না ৷ (প্রদীপ )

এটা ওর শাস্তি ৷ তুই তো জানিস কাজের চাপে এখন বাড়ি আসত পারি না ৷ কিন্তু ও ভাবে আমি ইচ্ছা করে আসি না এখানে ৷ এমনকি ও তো আজকে রাইমাকে আমার পাশে দেখেও ওকে আর আমাকে নিয়ে অনেক কিছু ভেবে নিয়েছে জানিস ৷ (সাগর)

তুই সেটা কি করে বুঝলি,, ওর সাথে তো তোর কথাও হয়নি ৷ আমার মনে হয় তুই ভুল ভাবছিস ৷ (প্রদীপ )

প্রদীপের কথায় সাগর আগে একটু হাসালো তারপর উত্তর দিলো……

নদীর অবস্থান কিন্তু সাগরের মধ্যেই। তাই নদীর মনের গভীরের কথা সাগর বুঝবে না তাই আবার হয় ৷ আমি যে আমার নদীর মন পড়তে পারি ৷ (সাগর ম্লান হেসে বললো)

মেয়েটাকে যখন এতোই ভালোবাসি তাহলে মেয়েটাকে সবার সামনে তখন ইনশাল্ট করলি কেন? (প্রদীপ)

প্রদীপের কথায় সাগরের মুখটা গম্ভীর হলো ৷

সান কেমন ছেলে তুই জানিস না ৷ আমি চাইনা আমার নদীকে কেউ খারাপ ভাবে টাচ করুক ৷ সেই সময় নদীকে না বকলে সান আমার নদীর হাত ধরার সুযোগ পেত ৷ সেটা আমি বসে বসে কি করে দেখতাম ৷ (সাগর)

বাব্বা এতো পজেশিভনেস ৷ (প্রদীপ হাসলো)

হুম আমার নদী শুধুই আমার ৷ ছোট থেকে আগলে রেখেছি আর সারাজীবন এভাবেই আগলে রাখবো ওকে ৷ (সাগর সিরিয়াস ভাবে বললো)


দেখেছো মেয়ের কান্ড ৷ সদর দরজাটা ভেজিয়েই বোধায় নিজের ঘরে ঢুকে বসে আছে ৷ কাকু স্কুলে থাকলে কতবার বলেছি হয় আমাদের বাড়িতে থাকতে নয়তো দরজা লাগিয়ে রাখতে। এই মেয়ে আমার একটা কথাও শোনে না ৷ এই জন্য একে এখানে ছেড়ে রেখে কলকাতাতে থেকে আমি শান্তি পায় না ৷ (সাগর নিজের মনেই বিড়বিড় করতে করতে বাড়িতে ঢুকে

নদীর রুমে যেতেই দেখলো নদী বিছানায় শুয়ে রয়েছে একটা হাত কপালে তুলে রেখে )

কিরে বাইরের দরজাটা খুলে রেখে এখানে শুয়ে আছিস,,,, কতবার বলেছি একা থাকলে দরজা ভেতর থেকে লাগিয়ে রাখবি। (সাগর নদীকে বকা দিতে দিতে ওর পাশে বসলো)

তবে নদী সাগরের গলা শুনেও চমকে হাতটা সরিয়ে চোখ খুলে সাগরকে দেখেল,,,, তবে সামনের মানুষটাকে দেখে ওর অভিমান আরও গভীর হয়ে গেলো ৷

নদী অনেক বেলা হয়েছে,,, ওঠ ভাত এনেছি খেয়েনে ৷ (সাগর হাতের থালাটা পাশের টেবিলে রেখে বললো)

খাওয়ার কথা বলতেই নদী অভিমানে সাথে সাথে মুখটা ঘুরিয়ে পাশ ফিরে শুলো । 

নদী আমি কি বললাম শুনতে পেলি না ৷ (সাগর গম্ভীর হয়ে বললো)

তুমি রেখে যাও আমি পরে খেয়ে নেবো। (নদী কোন রকমকে ভাঙ্গা গলায় বললো)

নদীর গলা শুনেই সাগর বুঝতে পারলো এতোক্ষণে বৃষ্টি বেস ভালোই হয়েছে ৷ ওর মনটা হু হু করে উঠলো ৷

না রেখে যেতে পারবো না ৷ ইলিশ ভাপা তো তুই খুব ভালোবাসিস। কিন্তু নিজে তো কাঁটা বেছে খেতে পারবি না। তুই ওঠ আমি খাইয়ে দিচ্ছি ৷ (সাগর)

ছোট থেকেই নদী মাছের কাঁটা বেছে খেতে পারতো না বলে ওকে খাইয়ে দেওয়ার ভার সাগর স্বহাস্যে নিজের কাঁধে তুলে নিত ৷

না তোমাকে খাওয়াতে হবে না। আমি ঠিক খেতে  পারবো। আমি তো আর আগের মতো ছোট নেই৷ তুমি তো আর এখানে থাকোনা,,,, তাই বলে তো আমি আর না খেয়ে থাকি না ৷ আমি এখন একাই সব করতে শিখে গেছি। এখন আমার আর কাউকে দরকার হয় না ৷(নদী মুখ ফিরিয়ে একটু ঝাঁঝের সাথে উত্তর দিলো)

সাগর বুঝলো এতোদিনের জমানো অভিমান ফেটে বেরোতে চাইছে ৷ নদীকে দেখে সাগরের খুব খারাপ লাগলো ৷ তবে মুখে বললো…..

হ্যাঁ খুব বড় হয়ে গেছিস,,, মা যে তোকে এখনো খাইয়ে দেয় তুই কি ভাবছিস আমি জানি না ৷ দেখ কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ উঠে খেয়ে নে৷ (সগর এবার নদীর হাত ধরে হ্যাঁচকা টানে ওকে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো )

এতে অবশ্য নদী বেস অসস্থিততে পড়লো ৷ ও মুখটা ঘুরিয়ে সাগরের কাছ থেকে নিজেকে লুকাতে চাইলো। তবে সাগরের যা দেখার দেখা হয়ে গেছে ৷ অত্যধিক কান্নার ফলে মেয়েটার চোখ দুটো ফুলে ঢোল হয়ে গেছে ৷ নাকের ডগাটাও লাল হয়ে আছে ৷ গালে চোখের জলের দাগ লেগে রয়েছে ৷ লম্বা চুলগুলো অযন্তের ফলে অবিন্যস্ত হয়ে পিঠময় ছড়িয়ে আছে ৷ নদী মুখ ঘুরিয়ে রাখলেও আড়চোখে সাগরকে দেখছে। মনে অভিমান যতই থাকুক ভালোবাসার মানুষটা চোখের সামনে থাকলে তাকে প্রাণ ভরে দেখার লোভ কি ছাড়া যায়,,, হোক না সে চুরি করে।

নদীর আগের সাগর আর এখনকার সাগরের মধ্যে অনেকটাই তফাৎ এসেছে। এখন সে পরিণত যুবক৷ শরীর এখন আরও বলিষ্ঠ ৷ মুখের গঠনেও পরিবর্তন এসেছে। আগে মুখে ছিল হালকা চাপদাড়ি ৷ এখন তার পরিবর্তে ট্রিম করে কাটা হাল্কা দাড়িতে ওর সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে ৷ যে কোন মেয়ের মনই এই সুপুরুষের বশবর্তী হতে চাইবে ৷ নদীর মত এক নিমেষেই সাগরের মধ্যে হারিয়ে গেলো ৷

আড়চোখে না দেখে সামনাসামনি দেখ৷ তোর সাগর দাদাকে দেখার থেকে কেউ তোকে আটকাবে না ৷ (সাগর মিচকি হেসে কথাটা বলতেই নদী বুঝল ওর চুরি ধরা পড়ে গেছে)

তবুও ও নিজেকে ধরা দিতে নারাজ ৷

আমি কেন তোমাকে দেখতে যাবো ৷ আমি তো জানলার দিকে তাকিয়ে ছিলাম ৷ (নদী সাগরের কথায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বললো)

সেই ছোট বেলার মতো মিথ্যে বলছিস তো ৷ থাক এখন এসব তর্ক। তুই খেয়ে নে | (সাগর একগাস ভাত তুলে বললো)

আমার মাথা ধরেছে আমি এখন খাব না ৷ (নদী গোমরা মুখে বললো)

এতো কান্নাকাটি করলে মাথার আর কি দোষ ৷ (সাগর)

আমি মোটেও কান্নাকাটি করিনি ৷ (নদী)

হ্যাঁ জানি তো ৷ তাই তো চোখ দুটো ফুলে গেছে,,, নাকের ডগাটাও লাল হয়ে গেছে,,,, নে হাঁ কর এবার ৷ (সাগর বলা সত্ত্বেও নদী মুখ না ঘোরানোয় সাগর নদীর মুখটা ধরে সামনে ঘুরিয়ে জোর করে ওর মুখে ভাত ঢুকিয়ে দিলো)

এরপর আর নদী কিছু বলতে পারলো না ৷ এতোটা অধিকারবোধকে কি কেউ হেলা করতে পারে। তাছাড়া আজ এত বছর পর আবার সাগরের হাতের ছোঁয়ায় খাওয়া নদীর মনকে যেন পরিতৃপ্ত করছিল। তবে নদীর দুগাল বেয়ে নিশব্দে নেমে আসছিল বাঁধভাঙা নদীর জল ৷ আর সেই জলে ভিজে যচ্ছিল সাগরের মনের অনুভূতিগুলো ৷

এই পাগলি কাঁদছিস কেন? (সাগর নদীর চোখের জল মুছিয়ে বললো)

তুমি পালটে গেছো সাগরদাদা,,, অনেক পাল্টে গেছো ৷ (নদী আনমনেই বললো)

বেসতো আমি তো এখন কদিন আছি,,, তুই মিলিয়ে নিস তোর সাগরদাদা ঠিক কতটা পাল্টে গেছে ৷ (সাগর কথাটা বলে নিশব্দে নদীকে খাইয়ে দিতে লাগলো)

নদী ও মুখে আর কিছু বললো না ৷ খেতে খেতেই নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো সাগরের মুখের দিকে ৷ তবে বাইরে ওকে যতটা শান্ত লাগছে ওর ভেতরে যেন ঠিক ততটাই ঝড় বয়ে যাচ্ছে। খাওয়ানো হলে সাগর চুপচাপ বাড়ি চলে গেলো৷


এরপর মাঝে আরো তিনটে দিন পেরিয়ে গেছে ৷ সাগর ওর বন্ধুদের ঘোরাতে ব্যস্ত ছিল। আর নদী ওতো ভুলেও সাগরের সামনে যায়নি। তবে আড়াল থেকেই দেখেছে রাইমা আর সাগরের ঘনিষ্টতা,,, ওদের হেসে হেসে কথা বলা,,, একে অপরের সাথে ইয়ার্কি ঠাট্টা করা। নদী মনে মনে বুঝে গেছে এবার ওর সাগর দাদার থেকে ওকে দূরে চলে যেতে হবে ৷ নদী তাই আজ সারা দিনটাই ওবাড়িতে না গিয়ে ওর সবথেকে কাছে বন্ধু মিস্টুর বাড়িতে ছিল ৷

কিরে সারাদিন কোথায় ছিলি৷ বৌদি বললো বৌদিকেও কিছু বলে যাসনি৷

(নদী বাড়িতে ঢুকতেই কনকবাবু একটু চিন্তিত সুরে বললেন )

ওহ বাবা আসলে মিস্টু সকালে ফোন করে তাড়াতাড়ি ওদের বড়ি যেতে বললো | আমিও তাড়াহুড়োর মাথায় বড়মাকে বলে যেতে ভুলে গেছি ৷ (নদী বানিয়ে বানিয়ে বললো)

তাহলে ওখানে গিয়েই অন্তত একটা ফোন করতে পারতি। বড় হচ্ছিস,,, আমাদের তো চিন্তা হয় ৷ (কনক বাবু)

সরি বাবা ভুল হয়ে গেছে ৷ (নদী মাথা নামিয়ে বললো)

নদী তোর মা যাওয়ার পর তোর মুখ চেয়েই তো আমি বেঁচে আছি ৷ তুই ছাড়া আমার আর কে আছে বল। এরকম না বলে কোথাও যাস না মা৷(কনক বাবু মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললো)

নদী মুখে কিছু বললো না। তবে ওর এখন নিজেকে খুব সার্থপর মনে হচ্ছে ৷ ও বাবার কথা চিন্তা না করে শুধু নিজের কষ্টটাকেই বড় করে দেখলো ৷ সত্যিইতো ও ছাড়াতো ওর বাবার কেউ নেই ৷ (নদী মনে মনেই কথা গুলো আওড়ে নিয়ে বাবার মুখের দিকে একবার তাকিয়ে নিলো)

মা তোকে একটা কথা বলার ছিল ৷ আসলে তোর জন্য একটা সমন্ধ এসেছে।কাল সন্ধ্যেবেলা ওনারা এখানে আসবেন তোকে দেখতে ৷ তুই ওনাদের জন্য রান্নাবান্না করে রাখিস ৷ (কনক বাবু হঠাৎ কথাটা বলতেই নদী অবাক হয়ে গেলো)

ওর বাবা ওকে এমন একটা কথা বলবে সেটা ভাবতেও পারেনি ৷

আ--- আমাকে দে--- খতে আসবে মানে? তুমি বড়মাদের এসব না জানিয়েই…….( নদী কম্পিত গলায় কথাটা শেষ করার আগেই কনক বাবু আবার মুখ খুললেন )

তুই ভাবলি কি করে বৌদিদের না জানিয়ে আমি তোর ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত নেবো ৷ ঐ বাড়ির সবাই জানে রে ৷ তবে তোর বড়মা কাল থাকবে না। তাই তোকেই সব রান্নাবান্না করতে হবে ৷ (কনক বাবু )

বেস বাবা তুমি চিন্তা কোর না আমি সব করে রাখবো ৷ (নদী কথাটা বলেই ছুটে নিজের ঘরে ঢুকে স্বশব্দে দরজাটা বন্ধ করে দিলো)

কনক বাবু শুধু মেয়ের যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে রইলেন ৷

ঐ বাড়ির সবাই জানে মানে তুমিও সবটা জানো সাগর দাদা ৷ তাও কাউকে কিছু বললে না ৷ অবশ্য আমিই বোকা | তুমি কেন কাউকে কিছু বলবে ৷ তোমার মনে তো আমার জন্য কোনদিন কোন অনুভূতি ছিলোই না ৷ তবে যা হয় ভালোর জন্যই হয় বলো ৷ আমিও তো ভেবেছিলাম তোমার কাছ থেকে দূরে চলে যাবো ৷এবার সত্যি সত্যি তোমার কাছ থেকে আমি দূরে চলে যাব ৷ আর হয়তো কোনদিন তোমার পাশে বসে গল্প করা হবেনা ৷ তোমার হাতের ছোঁয়ায় খাওয়া হবেনা কোনদিন ৷ তোমার উপর আর কোনোদিন কোনো অভিযোগ অভিমান করার অধিকার আমার থাকবেনা ৷ এই নদী আর কোনদিন সাগরের বুকে মিলিয়ে যেতে পারবেনা ৷ (নদী ঘরের মধ্যে একা একাই কথাগুলো বলে বিছানায় ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণ খুলে কেঁদে নিজেকে হাল্কা করতে লাগলো)


মারে তোর সবকিছু রেডি তো ? ওনারা চলে এলেন বলে ৷ (কনক বাবু নদীকে তাড়া দিয়ে বললেন )

বাবা আমার সব রান্নাবান্না কমপ্লিট ৷ (নদী মুখটা নিচু করে উত্তর দিল )

ঠিক আছে তাহলে তুই যা তোর ঘরে আমি একটা শাড়ি আর কিছু গয়না রেখে এসেছি ওগুলো পড়ে রেডি হয়ে নে | ( কনক বাবু কথাটা বলে চলে গেলেন)

নদী আর ওখানে দাঁড়াতে পারল না ,,, কম্পিত পায়ে ধীরে ধীরে নিজের ঘরে গেলো ৷ ওকে যে আজ সাজতে হবে। না ওর সাগর দাদার জন্য নয়,,, অন্য কারোর জন্য ৷ দুচোখ দিয়ে বেরিয়ে আসা অবাধ্য চোখের জল গুলোকে দুহাতের চেটো দিয়ে ভালো করে মুছে নিলো ৷


কলিং বেলটা বেজে উঠতেই নিজের ঘরে বসে থাকা নদীর বুকটা ধক করে উঠল ৷ তারমানে তারা চলে এসেছে ৷ এবার ওকে ওর সাগর দাদার থেকে সারা জীবনের জন্য আলাদা হয়ে যেতে হবে ৷কথাটা ভাবতে নদীর চোখগুলো আবার জলে পরিপূর্ণ হয়ে এলো তবে আপ্রাণ চেষ্টা করল সেই চোখের জলকে দূরে সরিয়ে নিজেকে হাসিখুশি করে তোলার ৷

আজ আমাকে অন্য কেউ দেখতে আসছে সাগর দাদা ৷ হয়তো কদিন পর আমার তার সাথে বিয়েও হয়ে যাবে ৷ তুমি ভালো থেকো সাগর দাদা ৷ তোমার জীবন যেন হাসিখুশিতে ভরে থাকে সবসময় ৷ (নদী নিজে নিজেই কথাগুলো বলে একটু হাসলো)


নদী বাবার ডাকে বাইরে এসে বসেছে ৷ তবে মুখ তুলে এখনো তাকায়নি ৷ কাজেই ওর সামনে যারা বসে আছে তাদের মুখ এখনো ও দেখতে পাইনি৷

ঠাকুরপো (কনক বাবু ) আমার দূরন্ত মেয়েটা এরকম মুখ নিচু করে বসে আছে এটা ঠিক হজম হচ্ছে না ৷ (মৃনালী দেবী)

নদী ওর বড় মার গলা পেয়ে মুখটা তুলে তাকাতেই হাঁ হয়ে গেলো ৷ ওর সামনে ওর বড়মা, জেঠুন ( সাগরের বাবা ), সাগর এমনকি সাগরের সব বন্ধুরাও বসে আছে ৷

বড়মারা সবাই এখানে,,, মানে বাবা তো বলেছিল বড়মা থাকবে না। তবে কি বড়মা তাড়াতাড়ি চলে এসেছে ৷ কিন্তু বাবা যে বললো ওনারা চলে এসেছে,,,,আমি তো ভেবেছিলাম ছেলের বাড়ির লোকেরা এসেছে ৷ (নদী কি হচ্ছে বুঝতে না পেরে নিজের মনেই বিড়বিড় করতে লাগলো)

কিরে কি এতো বিড়বিড় করছিস ? (সাগর উঠে নদীর পাশে বসে বললো)

আহ সাগরদা বেচারি এমনিতেই কিছু বুঝতে পারছে না ৷ ওকে আগে সবটা বুঝতে দাও ৷ হাই আমি অরুণিমা ৷ তোমার থেকে বয়সে বড়ই হবো। তবু আমার দাদার হবু বৌ তাই তোমাকে বৌদি বলেই ডাকবো ৷(অরুনিমা একমুখ হেসে বললো)

নদীর মাথায় তো অরুনিমার কথা কিছুই ঢুকলো না ৷

কার দাদা কার বৌদি আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না ৷ (নদী ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে বললো)

নদী তুমি ওর কথা ছাড়ো তো ৷ আগে আমার সাথে পরিচয় করো ৷ দেখ রাজ যেহেতু সাগরের থেকে বড়ো আর আমি একবছর আগেই ওর মিসেসের পোষ্টে জয়েন করেছি। সেই হিসেবে কিন্তু আমি তোমার বড়জা হচ্ছি সম্পর্কে ৷ কি রাজ তাইতো? ( রাইমা )

একদম তাই ৷ (রাজ)

আর আমি তোমার ছোট দেওর। তাই হবু বৌদির সাথে আমার ফ্লাট করার ধৃষ্টতা মাফ কোর বৌদি ৷ (সান দুই কান ধরে বললো)

আর আমাকে তো চেনোই প্রদীপ,,, আমাকেও দাদা বললেই হবে ৷ (প্রদীপ )

নদী আগের মতোই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে সবার কথা শুনে যাচ্ছে ৷ সবাই যে কি বলছে কিছুই ওর মাথাতে ঢুকছে না ৷ওর মাথার মধ্যে সবকিছু যেন তালগোল পাকিয়ে জগাখিচুড়ি হয়ে যাচ্ছে ৷ নদী আর থাকতে না পেরে স্বপ্রশ্ন চোখে ওর বড়মার দিকে তাকালো৷

কিরে মা আমার ছেলেটাকে পছন্দ তো তোর ? এবার তোকে আমি ছেলের বৌ করে সারাজীবনের জন্য আমার সত্যিকারের মেয়ে করে রাখবো ৷ আমার এতোবছরের স্বপ্ন আজ পূরণ হবে ৷ (মৃণালী দেবী কথাগুলো বলতে বলতে নদীর আরেক পাশে বসে ওর দুহাতে দুটো সোনার বালা পড়িয়ে দিলেন)

বাবা এসব….তুমি তো বলেছিলে…. (নদী আর কোন কথা বলতে পারলোনা ,,,,ওর গলা বুজে এলো) হয়তো কোন আশাহীন জিনিস হঠাৎ করে এইভাবে পেয়ে গেলে মানুষ এইভাবে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় ৷

কাল বিকেলে ফেরার পর তোকে খোঁজার জন্য সাগরদের বাড়িতে গেছিলাম ৷ তখন বৌদির সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই সাগর বাইরে থেকে এলো ৷ আমাদের সবাইকে বলল আমাদের সাথে নাকি কি দরকারি কথা আছে ওর ৷ তারপর হঠাৎ করেই তোকে বিয়ের করবে বলে বসল ৷ আমরা তো অনেকদিন ধরেই ভেতরে ভেতরে তোদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলাম ৷ সাগর আর দেরি করতে চায় না শুনে আমরাও রাজি হয়ে গেলাম ৷ তবে একটাই শর্ত ছিল ওর ওরা আসার আগে পর্যন্ত তুই যেন জানতে না পারিস কারা তোকে দেখতে আসছে ৷ ( কনক বাবু মুখে হাসি নিয়ে বললেন )

বাবার কথা শুনে হঠাৎ করেই নদীর মনের অভিমান রাগে পরিনত হয়ে গেল ৷ ও পাশে বসে থাকা সাগরের দিকে তাকিয়ে দেখল ও এখনও মিটিমিটি হেসে যাচ্ছে ৷ নদী আর ওখানে বসে থাকতে না পেরে ওখান থেকে উঠে ছুটে নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগাতে যাবে কিন্তু তার আগেই সাগর ওর পেছনে এসে ছুটে দরজাটা ঠেলে ধরে রুমের ভেতরে ঢুকে দরজা আটকে দিল ৷

প্রদীপ এ তো পুরো সিনেমার মত দৃশ্য গো ৷ হিরোইন ছুটে দরজা লাগাতে গেল আর হিরো ছুটে গিয়ে ওকে আটকে নিজেই রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল ৷ ( অরুনিমা লাফিয়ে উঠে বলল)

উফ অরু তুইকি সবেতেই সিনেমা খুঁজে পাস ৷এখন যে ভেতরে কি হচ্ছে কে জানে ৷ (রাইমা বিরক্ত হয়ে বলল)

ঠাকুরপো ওরা দুটিতে যা করে করুক ৷ শোন সাগর যেহেতু দেরী করতে চাই না সেহেতু আমি ঠাকুরমশাইয়ের সাথে কথা বলে একমাস পরেই ওদের বিয়ের ডেট ঠিক করেছি ৷ (মৃণালী দেবী)

কিন্তু বৌদি একমাসের মধ্যে মানে এতো তাড়াতাড়ি ……(কনক বাবু )

কোন কি অসুবিধা? আর তোমার যদি এতো অসুবিধা থাকে কনক তাহলে আমি সাগরকে বলছি আজকেই নদী মাকে সিঁদুর পরিয়ে আমাদের বাড়ি নিয়ে চলে যেতে ৷ তারপর আমার বাড়িতে যা অনুষ্ঠান হবার হবে ৷ (বিনয় বাবু ) 

আরে দাদা আমি সেরকম কিছুই বলিনি৷ আমি তো ভাবছিলাম এত তাড়াতাড়ি মেয়েটা আমার কাছ থেকে চলে যাবে ৷ তারপর আমি একা হয়ে যাব ৷ ( কনক বাবু চোখের জল মুছে বললেন )


নদী মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে আর সাগর ওর পেছনে দাঁড়িয়ে আছে ৷

নদী এখনো কেন কাঁদছিস ? (সাগর এসে নদীর দুই কাঁধে হাত রাখতেই নদীর এক ঝটকায় সাগরের হাতটা সরিয়ে দিয়ে ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ালো )

একদম ছোঁবে না তুমি আমাকে ৷ "এই নদী কেন কাটছিস" উমহ খুব দরদ উথলে পড়ছে বাবুর আমার প্রতি ৷ আর এতদিন ধরে যে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছে তার বেলা,,,, আমাকে অন্য ছেলে দেখতে আসবে শুনে আমি কষ্ট পেয়ে কান্নাকাটি করবো সেটা তুমি জানতে না? তাও তুমি বাবাকে সব কিছু বলতে বারণ করেছিলে ৷ নিজে কষ্ট দিয়ে এখন কাঁদতে বারণ করা হচ্ছে ৷ বেস করবো কাঁদবো,,, কেঁদে কেঁদে বাড়িতে বন্যা বইয়ে দেবো ৷ ( নদী প্রায় ঝাঝিয়ে উঠলো)

ও একা আমি তোকে কষ্ট দিয়েছি,,,, আর তুই আমাকে কষ্ট দিস নি? তাহলে শুনে রাখ তুই আমাকে যে কষ্ট গুলো দিয়েছিলি এগুলো তার শাস্তি ছিল ৷ (সাগরও এবার একটু রাগ দেখিয়ে বললো)

আমি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি সাগর দাদা? (নদী করুন দৃষ্টিতে সাগরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল)

দিসনি আমাকে কষ্ট,,, দিস নি? তুই খুব ভালো করে জানিস তোর সাথে কথা না বলে আমি থাকতে পারিনা ৷ তাও তুই আজ এক বছর ধরে আমার সাথে ফোনে কথা বলিসনি। আমি কাজের চাপ এখানে আসতে পারছিনা এটা তুই বিশ্বাস করিস নি ৷ তোর মনে হয়েছে আমার জীবনে অন্য কেউ চলে এসেছে ৷ তাই তুই আমাকে ফোন করা বন্ধ করে দিয়েছিলি৷ এই এক বছর আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল তোর গলা না শুনতে পেয়ে ৷ তুই ভেবেছিলি আমার কথা ? রাতে যখন ঘুম আসতো না তোর সাথে আগে বলা কথাগুলোর রেকর্ড শুনে ঘুমিয়েছি ৷ তুই বুঝেছিলি আমার কষ্ট? কেন রে তুই মেয়ে বলে তোর কষ্ট হয় আমি ছেলে বলে আমার কষ্ট হতে নেই ? আমাকে যখন ফোন করতাম আমি বুঝতে পারতাম তুই মায়ের কাছেই থাকতি তাও একবারও আমার সাথে কথা বলতি না ৷যেদিন প্রমোশন পেলাম সেদিন তোকে ফোন করে আমার খুশিটা ভাগ করতে চেয়েছিলাম ৷ তুই কাকুকে দিয়ে ফোন তুলিয়েছিলি মনে পড়ে ? তুই আমাকে সবসময় ইগনোর করে গেছিস ৷তাইতো এসে থেকে তোকে ইগনোর করেছি ৷ এটা বোঝানোর জন্য যে কাউকে ইগনোর করলে অপরদিকের মানুষটা কতটা কষ্ট পায় ৷ হ্যাঁ সেদিন তোকে আমি আমার বন্ধুদের সামনে বকেছি তার একটা কারণ আছে ৷ সান তোর সাথে হাত মেলাতে চেয়েছিল ৷ আমি সামনে বসে থেকে দেখতে পারতাম না রে যে আমার নদীকে অন্য কেউ স্পর্শ করছে ৷তাই তোকে ওখান থেকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম ৷তুই তো সত্যিটা না জেনেই রেগে গেলি আমার ওপর৷ আসার পর থেকে আমাকে আর রাইমাকে নিয়ে উল্টোপাল্টা কথা ভেবে গেছিস ৷বল এটা কি মিথ্যে ৷ কেন রে তোর মনে যদি সন্দেহ থাকতো একবার কি আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা যেত না,,, এতোটাই পর হয়ে গেছি আমি? (সাগরের গলাটা এবার ধরে এলো )

নদীর চোখ আবার জলে পরিপূর্ণ ৷ তবে এবার ও নিজের জন্য নয় সাগরের কষ্টের কথা ভেবে কেঁদে দিলো ৷

আমি বুঝতে পারিনি সাগর দাদা আমি তোমাকে এতোটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ৷ (নদী কাঁদতে কঁদতে বললো)

হ্যাঁ তুই আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস নদী৷ আর সব থেকে বেশী দিয়েছিস কালকে ৷ কাল বিকেলে তুই কার সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাচ্ছিলি? কে ছিল ওই ছেলেটা তোর সাথে ? (সাগর গম্ভীর হয়ে বললো)

সাগর দাদা তুমি তো আমার বান্ধবী মিষ্টুকে চেনোই৷ উনি হলেন মিষ্টুর মাসতুতো দাদা ৷ (নদী মিন মিন করে বলল)

কেন আমি তো এখানেই ছিলাম,,,, আমাকে বলতে পারিস নি তোর ফুচকা খেতে ইচ্ছা হয়েছে ৷ ওর সাথে কেন গেছিলি তুই ? (সাগর রাগী গলায় বলল)

আমি যেতে চাইনি বিশ্বাস করো ৷ মিষ্টু জোর করে নিয়ে গেছিল ৷ ( নদী আবারো মিনমিন করে বললো)

বুঝলাম,,, তবে এবার তুমিও শোন অনে উড়ে নিয়েছো তুমি ৷ এবার ভালই ভালই বিয়েটা করে আমার সাথে কলকাতায় চলো ৷আমি আর তোকে এখানে রেখে যাওয়ার রিক্স নিতে পারবো না ৷ বুঝতে পারছি আমি এখানে না থাকায় তোর পা টা একটু বেশিই বেড়ে গেছে ৷ সব খোঁজ নিয়েছি আমি কাকুর কাছ থেকে। (সূর্য মুখটা গম্ভীর করে বুঝলো )

নদীও এবার বুঝলো হঠাৎ করে এই বিয়ের ফরমান কেন ৷ মিষ্টুর দাদার সাথে ফুচকা খেতে যাওয়াটাই এর আসল কারণ ৷তবে নদী মনে মনে বেস খুশিই হলো এই ফরমান শুনে ৷

কি হলো এখনো কি দূরেই দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি? (সাগর হাত বাড়িয়ে হঠাৎ করে নদীর ডান হাতটা ধরে টান মারতে নদী সাগরের বুকে এসে আছাড় খেলো)

হঠাৎ করে সাগরের এতটা কাছে চলে আসায় নদী লজ্জায় কুঁকড়ে সরে যেতে গেলে সাগর একহাতে নদীর কোমরটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওকে নিজের সাথে চেপে ধরলো ৷

এখনো রাগ করে আছিস আমার উপর ? ( সাগর এবার নরম গলায় ধীরে ধীরে বলল)

নদীর চোখের জল এতক্ষণ অল্পস্বল্প পড়লেও এবার আঝোর ধারায় নেমে এলো |

আমি খুব ভয় পেয়ে গেছিলাম সাগর দাদা ৷ ভেবেছিলাম তোমার কাছ থেকে সারা জীবনের জন্য চলে যেতে হবে ৷ তোমাকে ছাড়াই এই জীবনটা আমাকে কাটাতে হবে ৷ আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিল ৷ (নদী সাগরের কাঁধে মুখটা নামিয়ে অঝোরে কেঁদে কেঁদে বলল)

শশশশশ!!!চুপ কর সোনা ৷ আমি বুঝতে পারছি রে একটু মজা করতে গিয়ে তোকে এতোটা কষ্ট দিয়ে ফেলবো ৷ আসলে কালকে তোকে ওই ছেলেটার সাথে দেখে আমারও মাথায় কেমন রাগ উঠে গেছিল ৷ তাই এসব,,,, আর কাঁদিস না বাবু, কাল থেকে তো অনেক কান্নাকাটি করেছিস ৷ ( সাগর নদীর মুখটা তুলে ধরে ওর চোখের জলটা মুছে দিয়ে বলল)

সাগর দাদা এই সবকিছু সত্যি হচ্ছে তো নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি ৷ তুমি আবার আমার কাছ থেকে হারিয়ে যাবে না তো ? ( নদী ভেজা চোখে সাগরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল)

সাগরও নদীর দিকে এক ভাবে তাকিয়ে আছে ৷ ও ধীরে ধীরে নিজের মুখটা একেবারে নদীর মুখের কাছে নামিয়ে এনে নদীর ঠোঁটের নিচে তিলটাতে আলতো করে ঠোঁট ছুঁয়ে দিলো ৷ তারপর নদীর ঠোঁটজোড়া নিজের দখলে করে ওর অধোরে ভালোবাসা বর্ষণ করতে লাগলো ৷হঠাৎ এরকম একটা নতুন স্পর্শের অনুভূতিতে নদী কেঁপে উঠলো ৷ও আবেশে সাগরের বুকের কাছে শার্টটা খামচে ধরল ৷ সাগর নদীর ঠোঁটজোড়া ছেড়ে দিয়ে ওর চোখে চোখ রাখতেই নদী ওর দিকে আর তাকাতে পারলো না ৷নদীর সঙ্গে সঙ্গে সাগরের বুকে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করলো ৷

কিরে এবার বিশ্বাস হলো তো এসবকিছুই সত্যি ৷ (সাগর অবশ্য ততক্ষণে নদীকে নিজের কোলে বসিয়ে নিয়েছে)

নদী আর কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতে নেই। ও সাগরকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর বুকের মধ্যে মিশে যেতে চাইছে ৷ ঠিক যেমটা একটা নদী নিজর ছন্দে অনেকটা পথ পার হবার পর সাগরের বুকে মিশে যায় ৷

আমি জানি নদী তুই আমাকে ভুল বুঝে অনেকটা কষ্ট পেয়েছিস। তবে তুই একটা কথা ভুলে গেছিস নদী৷ নদী যে ছন্দে যে পথেই চলুক না কেন তার নিয়তি যে একটাই৷ শেষ পর্যন্ত নদী যে "সাগরে মিলায়ে যায়" ৷ কিরে তাইনা ? (সাগর নদীর মুখটা দুহাতের মধ্যে নিয়ে আবেগপূর্ণ গলায় বললো)

অনেক নদী তো এমনো থাকে সাগর দাদা যারা সাগরে মেলার আগেই শুকিয়ে যায়।আমিও যদি সেরকম…..( নদী কথাটা শেষ করার আগেই সাগর ওর মুখটা নিজের হাত দিয়ে চেপে ধরলো)

এসব কথা মুখেও আনিসনা নদী৷ এই নদীটা ছাড়া যে এই সাগরেরও কোন অস্তিত্ব থাকবে না ৷ (সাগর নদীর মুখে হাত রেখেই বললো)

হয়তো দুজনের কথপোকথন এভাবেই চলতে থাকতো যদি না বাইরের দরজায় জোরে জোরে ধাক্কাধাক্কি শুরু হতো৷

ছিছি আমরা দুজন এভাবে ঘরে দরজা আটকে বসে আছি। সবাই কি ভাবছে বলতো ৷ সাগরদাদা আমাকে ছারো ৷ ( দরজায় আওয়াজ শুনেই নদী ব্যস্ত হয়ে পড়লো দরজা খোলার জন্য)

নদী !!! (সাগর নদীর শাড়ির আঁচল টেনে ধরলো)

কি হলো আবার? (নদী মুখ ঘুরিয়ে বললো)

এখন তো আমি তোর বরের পোস্টের জন্য অ্যাপলাই করেছি৷ এখনো দাদা বলে ডাকবি? (সাগর মুখ কুঁচকে বললো)

বরের পোস্টের জন্য অ্যাপলাই করেছো,, আগে পোষ্টটা পাকাপাকি হোক তারপর ভেবে দেখব ৷ (নদী কথাটা বলেই নিজের শড়ির আঁচল ছাড়িয়ে নিয়ে দুষ্টুমি ভরা হাসি উপহার দিয়ে দরজাটা খুলে দিলো ৷

সাগরের বন্ধুরা সবাই মিলে ওদের টেনে বাইরে নিয়ে গেলো ৷ তারপর আর কি সবাই সাগর ও নদীর বিয়ের খুশিতে মেতে উঠলো ৷


পেরিয়েছে সাতটা বছর,,, এর মধ্যে সাগর ও নদীর মধ্যে এসেছে ওদের মিলনের ছোট্ট মোহনা ৷ সাগর এখন ওর নদী ও ছোট্ট মোহনাকে নিয়ে ওর কলকাতার ফ্ল্যাটেই থাকে ৷ তবে ওদের সাথে অবশ্য মৃণালী দেবী,, বিনয় বাবু ও কনক বাবুও থাকেন ৷ তবে বিয়ের সাত বছর পরেও সাগর ও নদীর ভালোবাসা একই রকম রয়েছে ৷ নদী এখনো একই রকম ভাবে ওর সাগরে মিলায়ে যায় ৷ আর সাগর নিজের নদীকে এখনো আগলে রাখে সেই পুরনো দিনগুলোর মতোই৷ এভাবেই দুজনের ভালোবাসা একে অপরের মধ্যে মিলেমিশে বেঁচে রযেছে ৷ আর এভাবেই মিশে থাক সকল নদীর ভালোবাসা তার সাগরদের বুকের মাঝে ৷

সমাপ্ত













Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract