ঋতুর স্বপ্ন
ঋতুর স্বপ্ন
ঋতুর স্বপ্ন
কলমে -নেহা দাস
*************************
ঝাপসা ঝাপসা কিছু দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে আসতে লাগলো খুব চেনা পরিচিত একটা গ্ৰাম ,চারিদিক সবুজে সমাহার। গ্ৰামের মধ্যবিও পরিবার রা মধ্যান্ন ভোজনের জন্য একবেলা ভালো খাবারের আশায় তাদের ছেলে-মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করায় ।এভাবেই চলতে থাকে ।কিছু সংখ্যক ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনায় মেধাবী হলেও পরিস্থিতির হাতে বাধ্য হয়ে পড়তে পারে না ।এই গ্ৰামের মেয়ে ঋতু , খুব মেধাবী সেই কারনে স্কুলের স্যার-দিদি-মনিরা তাকে খুব ভালোবাসতেন । রানি দিদিমনি ঋতুর পড়াশুনায় সাহায্য করতেন।ঋতু নবম শ্রেণীতে পড়ে ।
স্কুল থেকে ঘরে আসতেই , শুনতে পেল যে তার বাবা-মা তার বিয়ের নিয়ে কথা বলছে। তার মা -বাবার এই বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।
ঋতুকে ঘরে ঢুকতে দেখে তারা চুপ হয়ে গেল।
ঋতু চুপচাপ নিজের রুমের দিকে যেতে নিলে ।
ঋতুর বাবা ঋতুকে ডাক দিল -“ঋতু এদিক আসো । আমি তোমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি।”(ঋতুর বাবা)
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ঋতু বলে উঠলো,-“বাবা আমি বিয়ে করবো না , আমি পড়তে চাই।”
আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না , এটাই আমার শেষ কথা আমি তোমাকে অনুমতি নিতে আসি নাই । বিয়ের জন্য প্রস্তুত হও।
ঋতুর মা তখন কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলেন মেয়েটার বয়স বা কতো হলো আমার ছোট মেয়েটার বিয়ে দেবার জন্য পাগল হয়ে উঠেছো কেন।
“দেখ লীনা একটু বুঝার চেষ্টা কর মেয়েটার তো বিয়ে দিতে হবে আজ নাহয় কাল আর আমার ব্যবসা একদম ভালো যাচ্ছেনা প্রায় সব লসে চলছে আর আমার বন্ধুর থেকে যেটুকু ঋণ নিয়েছি তা ফিরত দিতে হবে নাহলে তার ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ে । ঋতু ওখানে খুশি থাকবে ।আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না । (ঋতুর বাবা)”
“আমি এই বিয়ে হতে দেবো না । জানো না তোমার বন্ধুর ছেলেটা নেশাখোর আর লম্পট ছেলের সাথে তুমি তোমার মেয়ের বিয়ে দিবে।”(ঋতুর ম
া)
“আহা বৌমা এও চিৎকার চেচামেচি করছো কেন? খোকা যা করছে মেয়ের ভালোর জন্যই করেছে।”(ঋতুর ঠাম্মু)
ঋতুপরেরদিন স্কুলে গেল । তার বিয়ের কথা শুনে রানি দিদিমনি তার বাবাকে বুঝাতে গেলেন কিন্তু তার বাবা যাতা অপমান করে তাকে পাঠিয়ে দিলেন । আসার সময় তিনি ঋতুর হাতে একখানা কাগজ দিয়ে গেলেন। আর বললেন আমি আচ্ছি এখন সব তোমার হাতে।
চারদিক অন্ধকার গ্ৰামের মেঠো পথ ঝড়-জঙ্গল পেরিয়ে পাণেপণে ছুটে চলছে একটা মেয়ে পনেরো-ষোলো বছরের মেয়ে অন্ধকারে তার মুখ দেখা যাচ্ছে না পরনে তার লালশাড়ি মেয়েটা স্টেশনে এসে দেখল যে একজন নারী দাড়িয়ে আছে তাকে দেখে একদৌড়ে সেই নারীটির কাছে গিয়ে বলল দিদিমনি ।
“ঋতু তুই এসে পড়েছিস ! চল এখান থেকে ,ট্রেন ছেড়ে দিবো এখনই ।কি হল? দাড়িয়ে পড়লি যে ! চল । ঋতু কাঁদতে লাগলো !
দিদিমনি ঋতুকে জড়িয়ে ধরল , ঋতুর চোখের জল মুছিয়ে দিতে দিতে বলতে লাগলো কি হয়ছে বল আমাকে । ঋতু চোখের জল মুছতে মুছতে বলল ,'ওরা যদি জানতে পেরে যায় মা আমাকে পালাতে সাহায্য করেছে ওরা মা'কে কিছু করবে না তো ।
"দেখো ঋতু এখানে দাড়িয়ে থাকলে চলবে না তোমার মা'র স্বপ্ন পূরণ করতে হবে যে!" তারা এগিয়ে যেতে লাগলো ট্রেন এর দিকে ।
হঠাৎচিৎকার চেচামেছির শব্দে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল , উফফ এটা স্বপ্ন ছিল !
ঋতু ও ঋতু আমার খাবার টা কই আর তুমি এখানে ঘুমাচ্ছ আর মা কাজ করছে এই বলে এক চড় মারালো ঋতুর গালে ,ঋতু নিঃশব্দে চোখের জল ফেলে খাবার আনতে চলে গেল ।
এই স্বপ্ন ঋতুর অবচেতন মনে পড়ে থাকা ইচ্ছা যদি সেদিন সে পালাতে পারতো তাহলে হয়তো তার স্বপ্ন টা সত্যি হতো ।
হয়ত সে পড়াশুনো করে নিজের স্বপ্ন গুলোকে পূরণ করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতো নিজের লক্ষ্যকে সফল করতে পারত।
.................................