The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

Indrani Bhattacharyya

Drama Tragedy Others

4.9  

Indrani Bhattacharyya

Drama Tragedy Others

রোজমেরি বিস্কুট ফ্যাক্টরি

রোজমেরি বিস্কুট ফ্যাক্টরি

4 mins
395


তখন মাস খানেক হবে বদলি হয়ে এসেছি নায়েবগড় নামের এই ছোট্ট শহরটায়। আমার শহর কলকাতা থেকে এই জায়গাটা অনেকটাই দূরে হলেও আধুনিক সব সুযোগ সুবিধাই প্রায় মজুদ বলা চলে। শহরটির অর্থনীতি মূলত শিল্পনির্ভর। আমার অফিস বলতে মহকুমা শাসকের করণ। সেখানেই বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক হিসেবে যোগ দিয়েছি কাজে। কাছাকাছি তেমন কোনো ভালো অফিস কোয়ার্টার বা আবাসন না থাকায় একরকম বাধ্য হয়েই অফিসের থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটা বাড়ি ভাড়া নিতে হয়েছে। সেখান থেকে অফিস যাই রোজ একটি ভাড়া করা চার চাকা গাড়িতে। অফিসের কয়েকজন সহকর্মী মিলেই দেই ভাড়াটা। আমার বাড়ি সব থেকে দূরে হওয়ায় প্রতিদিনই সবার আগে গাড়িতে উঠি আর নামি সবার শেষে।


যাতায়াতের পথে রাস্তার ধারে রোজই দেখি মেয়েটাকে । কতই বা বয়স হবে। এই বড় জোর নয় কি দশ। রোজই রোজমেরি বিস্কুট ফ্যাক্টরির সামনে একই জায়গায় বসে থাকে, । শুধু বসে থাকে বললে ভুল হবে, রোজই দেখি সে বসে বসে রুটি খাচ্ছে। কারখানার চারপাশে ধূ ধূ মাঠ আর একটা বড় ডোবা। যতদূর চোখ যায়, জনবসতির চিহ্নটুকুও চোখে পড়ে না। মাঝে মাঝে দূরের কোনো স্টেশন থেকে ট্রেন আসা যাওয়ার শব্দ শুনতে পাই শুধু। দৃশ্যটা রোজই দেখি। খুব অবাক লাগে। 

এমনিতে হয়ত সবার সঙ্গে থাকলে খেয়াল করতাম না। কিন্তু আমার বাড়ি ফেরার সময় ওই জায়গাটা দিয়ে যাবার সময় গাড়িতে ড্রাইভার ছাড়া আমার সঙ্গে আর কেউ থাকতো না। স্বভাবতই বেশিরভাগ সময়েই চোখ থাকতো জানলার বাইরে। আর অন্য কোনো কারণে অন্য কোনো দিকে মন থাকলেও প্রতিদিন ওই কারখানাটির থেকে ওই সময় এতো মিষ্টি ক্রিম বিস্কুটের গন্ধ বেরোত যে চোখ বাইরে অবধারিত ভাবেই চলে যেত। আর তখনই নজরে পড়ত মেয়েটিকে। রোজ একই জায়গায় একই ভাবে।

এরপর কেটে গেছে আরো কিছু মাস। আমিও নতুন জায়গায় থিতু হয়ে এসেছি অনেকটা। কিন্তু এক আধদিন বাদ দিয়ে রোজমেরি বিস্কুট কারখানার সামনের দৃশ্যপটের কোনো পরিবর্তন নজরে আসেনি। একদিন কথায় কথায় আমার সহকর্মীদের বললাম ব্যপারটা। ওরা যদিও কেউই খুব একটা গুরুত্ব দিলেন না । ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করেও তেমন কোনো সদুত্তর পেলাম না। কিন্তু মেয়েটিকে নিয়ে আমার মনের মধ্যে খচখচানিটা গেলো না কিছুতেই। বরং যত দিন গেলো ততই যেনো সেই ছবিটা তাড়া করে বেড়াত। সে কোথা থেকে আসে, কেনো এই ভর সন্ধ্যেতে একা একা বসে খায়, এই বয়সের বাচ্চাদের কোনো না বন্ধু থাকে কিন্তু এর নেই নাকি ইত্যাদি হাজারো প্রশ্ন ভিড় করে মনের মধ্যে চেপে বসে থাকা সেই অস্বস্তিটা বাড়িয়ে তুলতে লাগলো রোজ। শেষমেশ ঠিক করলাম একদিন নিজেই গিয়ে শুধবো মেয়েটিকে যে ব্যপারটা কি।


সেই মত গেলো হপ্তায় শুক্রবার দিন বাড়ি ফেরার পথে গাড়িটা দাঁড় করালাম কারখানার সামনে উল্টোদিকের রাস্তার ধার ঘেঁষে। তখন গাড়িতে অন্যদিনের মতই আমি ছাড়া আর কোনো সওয়ারি ছিল না। দেখলাম রোজের সেই একই চেনা দৃশ্য। মেয়েটা বসে আছে কারখানার সামনে জংলা মত জায়গাটায়। চারিদিকে ঘিরে ধরা আগাছায় ঢাকা পড়ে আছে তার অর্ধেক শরীর। পেছনে কারখানার মোটা চিমনি থেকে গলগল করে বেরোচ্ছে কালো ধোঁয়া। আর সেই সঙ্গে বাতাসে সেই ধোঁয়ার গন্ধ আর ক্রিম বিস্কুটের একটা উগ্র মিষ্টি গন্ধ মিলে মিশে একাকার হয়ে আছরে পড়ছে নাকে।

আমি রাস্তা পার হয়ে হাজির হলাম মেয়েটির সামনে। মেয়েটির তখন মুখ তুলে তাকানোর অবকাশটুকুও নেই। মন দিয়ে খাচ্ছে একটা আধ পোড়া রুটি। আমি জিজ্ঞেস করলাম - "তোর বাড়ি কোথায় মা?" মেয়েটি চমকে গিয়ে একবার চোখ তুলে তাকালো, তারপর আবার খেতে লাগলো। আর আমিও অপেক্ষা করতে লাগলাম তার খাওয়া শেষ হবার।

মেয়েটি খেয়েদেয়ে উঠে দাঁড়াতেই আবার শুধোলাম - "কি রে বল? বাড়ি কোথায়?"

- "জল দেবে বাবু"

- "সে তো গাড়িতে আছে। দিচ্ছি। তুই দাঁড়া এখানে"।

আমি জল নিয়ে আসতেই সে এক টানে শেষ করে দিল বোতলের বাদ বাকি জল। তারপর বলল - "এখানেই ছিল তো"। বলে কারখানার দিকে আঙুল তুললো। আমি বললাম - "কারখানার জমিতে?" মাথা নাড়লো সে। প্রশ্ন করলাম আবার "এখন থাকিস কোথায়?"

- " স্টেশনে।"

- " রেল স্টেশনে? সে তো এখান থেকে অনেক দূর ! যাস কি ভাবে?"

-" হেঁটে।"

- " হম্। তোর সাথে আর কে কে থাকে?"

- " কেউ না।"

- " মা?"

-" চলে গেছে।"

-"কোথায়"

-"জানি না"

-" আর বাবা?"

-" মরে গেছে। এই কারখানায় কাজ করতে গিয়ে।"

-" ইশ, কি হয়েছিল রে?"

-" কাজ করতে করতে মেশিনে হাত ঢুকে গেছিল"

-" বুঝলাম। তা তুই রোজ এতদূর থেকে হেঁটে এসে এখানে বসে রুটি খাস কেনো?"

তাতে মেয়েটি যা বলল তা শুনে শিউরে উঠেছিলাম সেদিন। মেয়েটি বলল আমায় -" আমি স্টেশনে থাকি। ছোট বলে কোনো কাজ পাই না বাবু। স্টেশনে আমরা ভিক্ষে করে যা পাই সবটাই আমাদের থেকে ঝাড়ুদার মাসি আর রেলের পতাকা বাবু নিয়ে নেয়। তার বদলে রুটি দেয় খেতে। শুধু রুটি। অন্যেরা যারা ভিক্ষে করে তারা বড় আমার থেকে। তারা অন্য জায়গা থেকেও খাবার পায়। আমি শুধু এটুকুই পাই। শুধু রুটি খেতে পারি না। গলা শুকিয়ে ওঠে। তাই ছুটে আসি এখানে। এই কারখানা থেকে এই সময় মিষ্টি গন্ধ বেরোয়। আমি ওই গন্ধ মাখিয়ে রুটিগুলো খেয়ে নিই রোজ।"

এরপর আমি আর প্রশ্ন করার অবস্থায় ছিলাম না। শুধু বলেছিলাম - " তুই আয় আমার সাথে। গাড়িতে ওঠ। আজ থেকে তোর সব দায়িত্ব আমার।"


Rate this content
Log in

More bengali story from Indrani Bhattacharyya

Similar bengali story from Drama