রঙের ছোঁয়া
রঙের ছোঁয়া


আজকে অনিক বাড়ির বাইরে বেরোবে না। অন্তত এ বেলা তো নয়ই। আজ বলে নয়, চিরকালই এই দিনটা খুব ঠেকায় না পড়লে ও চেষ্টা করে ঘরেই কাটাতে। আসলে রং খেলতে অনিকের কোনদিনই ভাল লাগে না। সেই ছোট্টবেলায় যখন ওর বন্ধুরা নানারকমের পিচকিরিতে ভরে ছুটোছুটি করে রং খেলত, তখনও অনিক চেষ্টা করত একটু তফাতে থাকতে। কলেজে পড়ার সময় একবার বন্ধুদের চাপে পড়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও রং খেলতে হয়েছিল। সেবার মুখে মাথায় সব এমন রং মাখিয়ে দিয়েছিল যে দু তিন দিন সাবান শ্যাম্পু লাগিয়েও তা পুরোটা ওঠেনি। ওখানেই শেষ। তারপর শত অনুরোধেও আর কখনও দোল খেলেনি। অল্প কিছুদিন হল অনিক এই বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হয়ে এসেছে। এখান থেকে ওর অফিসটা কাছে পড়ে। বাড়ির তিনতলার একমাত্র ঘরটা ওর জন্য বরাদ্দ। সবকিছু আলদা ব্যবস্থা আছে। ওর একার জন্য ঘরটা যথেষ্ট বড়। বাড়ির মানুষগুলোও ভাল। আপনজনের মতই ওর দেখাশুনো করে। বাড়িটা রাস্তার ওপরে। জলখাবার খেয়ে ঝুল বারান্দায় একটা চেয়ারে বসে নভেল পড়ছিল। বই পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে রাস্তার দিকে চেয়ে দেখছে। বাচ্চা বুড়ো সব একে অপরকে রঙে চুবিয়ে ভূত করছে। এতে কি যে এত আনন্দ অনিক বুঝে উঠতে পারে না। একরাশ বিরক্তি নিয়ে বইয়ে চোখ ফেরায়। কিন্তু মনঃসংযোগ করতে পারে না। বারে বারেই নিচে বাইরের দিকে নজর চলে যাচ্ছে। একটা গরুকে রং মাখিয়ে কিছু লোক মজা মারছে। নিরীহ প্রাণীরও এই নোংরামির হাত থেকে মুক্তি নেই। বই বন্ধ করে অনিক ঘরে এসে টিভি খুলে বসল। এখানেও নিস্তার নেই। অধিকাংশ চ্যানেলেই শুধু দোল খেলার ছবি। অগত্যা একটা কার্টুনের চ্যানেল খুলে দেখতে লাগল। কিছু সময় পরে হঠাৎ মুখে মাথায় কে যেন আবির মাখিয়ে দিল। পরিষ্কার জামা কাপড় সব আবিরে ভরে গেল।
"কি হচ্ছে কি ?”—অসন্তুষ্ট হয়ে একটু জোরেই কথাটা বলার পর তাকিয়ে দ্যাখে আবিরের প্যাকেট হাতে ঘরের একধারে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই বাড়ির একমাত্র সন্তান, পিয়ালি।
---রাগ করলেন ? দোলের দিন একটু রং না খেললে ভাল লাগে বলুন ! আর এমন একটা দিনে আপনি কিনা ঘরে বসে বাচ্চাদের মত কার্টুন দেখছেন।
অনিক কি বলবে ভেবে পায় না। ওরকম ভাবে রিঅ্যাক্ট করাটা উচিত হয়নি। কি করে বুঝবে যে পিয়ালি আবির মাখাতে এসেছে।
খুব সংকোচের সঙ্গে বলল---কিছু মনে করবেন না। আমি না ঠিক বুঝতে পারিনি যে আপনি।
---তা বোঝার পরেই বা কি করলেন !
---আমি সত্যিই খুব লজ্জিত।
---শুধু লজ্জা পেলেই হবে! রং খেলার একটা নিয়ম আছে জানেন না!
---আমি কোনদিন তো রং খেলি না, কি করে জানব বলুন !
---কেউ আবির মাখালে তাকেও একটু আবির লাগাতে হয়।
অনিক তাকিয়ে দ্যাখে যে আবিরের প্যাকেটটা পিয়ালি ওর দিকে বাড়িয়ে রেখেছে। এদের সাথে খুবই অল্প দিনের পরিচয় তাই আড়ষ্টতা একটু ছিলই। তবু সব দ্বিধা সংকোচ কাটিয়ে প্যাকেট থেকে আবির নিয়ে অনিক পিয়ালিকে মাখাতে লাগল। প্যাকেট কখন শেষ হয়ে গেছে তবু রং মাখানো আর শেষ হয় না। রং যে তখন হৃদয়ে লেগেছে।
নিচে থেকে মায়ের ডাকে সম্বিৎ ফিরতে পিয়ালি এক ছুটে ঘর থেকে পালাল। আবির ধুয়ে ফেললেও পিয়ালির মুখের রাঙা ভাবটা কিন্তু ফিকে হতে সময় লাগবে। আর অনিক, রঙের ঘোরে বিভোর হয়ে ভাবে, এমন দোল রোজ আসে না কেন!