রাত তিনটা
রাত তিনটা
হঠাৎ গা ছমছম করে উঠলো। শিরদাঁড়া বেয়ে হিমশীতল স্রোত বয়ে গেল। মোবাইল ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখি রাত তিনটে পাঁচ। মনে পরে গেল সব অদ্ভুত শিহরণ জাগানো তথ্য।
মোবাইল ঘাটতে ঘাটতে এবং তারপর বই পড়তে পড়তে এত দেরি হয়ে গেল ঘুমোতে। ঘুমানোর আগে জানালা খুলে একটা চকলেট মুখে নিয়ে চাবাচ্ছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। আমার ঘরের এই জানালাটার পাশের সব বাড়িগুলো একতলা তাই সব কটা ল্যাম্পপোস্টের আলো দেখতে পাই যতদূর চোখ যায়। অনেকদিন ধরে দেখি একটা ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্বলে আর নেভে। অভ্যাস হয়ে গেছে দেখতে দেখতে। সারা রাত্রি জুড়ে কুকুরের চিৎকার নতুন কিছু নয়। রাতজাগা রাত পাখিদের গানও শুনতে পেলাম।
রোজ একই ছবি দেখি জানালার বাইরে। বাইরেটা যতটা আলো তারচেয়ে অনেক বেশি কালো। হালকা কুয়াশাচ্ছন্ন ভাব আছে খেলার মাঠে।
আমি ব্যালকনি দিয়ে রাস্তার দিকে তাঁকালাম। কি চোখে পরলো কে জানে? হুট করে কাঁচের পাটাতনটা বন্ধ করে দিলাম! এক চাঞ্চল্যকর ভয়ের শিহরণ খেলে গেল শরীরজুড়ে। মনে হল কে যেন দাঁড়িয়ে আছে পাশের বাড়ির কচু গাছের আড়ালে। আমি যখন সিগারেটের ছাই ঝারছি তখন আমার হাত লক্ষ্য করছে। গলা শুকিয়ে এলো আমার। তৎক্ষণাৎ ঘরের লাইট জ্বালালাম। জল খেলাম ঢকঢক করে অনেকটা।
এমনিতে আমি বেশ সাহসী সবাই বলে আর আমি নিজেও তা বিশ্বাস করি। দোতলা বাড়ির ওপর তলায় আমি একাই থাকি আর রাতে জানালা খুলে বাইরে দেখা নিত্যদিনের ব্যাপার। আজকের মত ঘটনা কোনদিনও একবারও ঘটেনি আগে।
তখন মনে পরলো রাত তিনটের সময় কি কি অদ্ভুত ঘটনা ঘটে তার ফিরিস্তি সমূহ। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে এই রাত তিনটের সময়। সমস্ত ভয়ের সঙ্গে জড়িত ব্যাপার-স্যাপার ঘটে রাত তিনটে বা তার আশেপাশে। ডাকিনী বিদ্যার জন্য নাকি রাত তিনটে আদর্শ সময়। আরো নানাবিধ অপ্রীতিকর ঘটনা সব এই রাত তিনটেতেই ঘটে থাকে। আর এখন সেই রাত তিনটে। ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলাম।
মাথার কাছে জলের বোতল রেখে প্রভুর নাম স্মরণ করে বিছানায় উঠে শুয়ে পড়লাম। লাইট বন্ধ করতে ইচ্ছা করছিল না। কিছুক্ষণ পর সাহস করে বন্ধ করলাম। প্রতিজ্ঞা করলাম রাত তিনটে অব্দি জেগে থাকা যাবে না কোনমতেই আর জাগলেও জানালা খুলে বাইরে দেখা নিষেধ। ঠিক রবি ঠাকুরের অচলায়তন নাটকের মত।
পরেরদিন সকালে যখন রাতের কথা মনে পরলো যুক্তি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম। হাসি পেল। সারাদিন এটাওটা করে কাটলো। রাতের বেলা একটু নিরিবিলি থাকে তাই এই সময় আমার বই পড়ার নেশা। আজও পড়ছিলাম। দেয়াল ঘড়িতে চোখ পরতেই দেখি দুটো পঞ্চান্ন। জানালার দিকে তাঁকালাম। জানালাটা যেন ডাকছে আমায়। খুলে দেখতে বলছে বাইরেটা। মাথাও ধরে গেছে পড়তে পড়তে। তাও যেন এগিয়ে গেলাম কোন এক আগ্ৰহের ছলে। জানালা খুলতেই চোখে পড়ল
{{সংক্ষেপিত}}•••••••
