মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ
মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ
মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ শব্দ দুটির মাহাত্ম্য অনেক। মানুষের যে গুণাবলীর জন্য একজন মানুষ মানুষ হিসাবে পৃথিবীতে সমাদৃত, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তার মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ। মনুষ্যত্ব এবং মানবতাবোধ আছে বলেই কিন্তু মানুষকে মানুষ বলা হয়। নতুবা মানুষ পশুর স্বীকৃতি পেত। মানুষের দাবি, তারা সৃষ্টির সেরা জীব। তাদের আচার-আচরণ শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার। তবে, শ্রেষ্ঠত্বের দাবি নিয়েও পৃথিবীতে তাদের ক্ষণিকের অবস্থান। যেন ভ্রমণ করতে আসা এক পাখির গল্প। আর এই ভ্রমণের পরিসমাপ্তি হয় মৃত্যু বা প্রস্থান দিয়ে। অথচ এই সহজ এই সরল সত্যকে আমরা সহজভাবে নিতে জানি না। আমরা আজ হিংসা, অহঙ্কার আর স্বার্থ নিয়ে বেঁচে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করি। সত্যি বলতে আমাদের এখন ‘আমরা’ বিষয়টা নেই। আমরা প্রত্যেকেই আমিত্ব নিয়ে বেঁচে আছি। কেউ কষ্ট পাচ্ছেন, কেউ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, কেউ বা রাস্তায় পড়ে আছেন মুমূর্ষু অবস্থায়। কিন্তু এতে আমার আপনার কী? হ্যাঁ আমাদের এখন এই প্রবণতা কাজ করে। এটা সত্যি, একদম পবিত্র গ্রন্থের বাণীর মতো সত্য না হলেও আমাদের দু’চোখে দেখা বাস্তব দৃশ্য। মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ হলো দুইটি আলাদা শব্দ, যেনো দুই নদীর বুকে ভেসে থাকা দুইটি নৌকার মতো। নৌকা দুইটি আলাদা নদীতে ভাসলেও তাদের লক্ষ্য কিন্তু একটায় তারা ভাসতে চায় ঠিক সেইরকম ভাবে মনুষ্যত্ব ও মানবিকতাবোধ হলো একটি মানুষের আদর্শের পরিচয়, যেনো আঁধার রাতের জ্যোৎস্নার আলো, যা একটি মানুষকে মানুষ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মানুষ কাকে বলে, কীভাবে মানুষ হওয়া যায়, শুধু মানুষের ঘরে জন্মগ্রহণ করলেই কি মানুষ হওয়া যায় ? “যার মধ্যে মনুষ্যত্ব আছে সে-ই প্রকৃত মানুষ। যে তার অর্জিত জ্ঞান ও কথ্য ভাষার দ্বারা কোন একটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পারে সেইতো প্রকৃত মানুষ। যে তার মানবতার দ্বারা সত্যকে জয় করেছে ও সেইটা কে নিজের অন্তরে প্রতিষ্ঠা করেছে সেইতো প্রকৃত মানুষ। প্রতিটি মানুষেরই তার ব্যাক্তিক আচরণের মধ্যে কিছুটা পশুত্ব উপলব্ধি করা যায়। তবে সেক্ষেত্রে দেখা যায়, মানুষ তার মনুষ্যত্ববোধ, মানবতাবোধ তথা সর্বপরি বিবেকবোধ সাথে সাথে জাগ্রত করেই তার পশুত্বকে নিয়ন্ত্রন করে নেয়। বেশির ভাগ মানুষই তার বিবেকবোধকে কাজে লাগিয়ে পশুত্বকে নিয়ন্ত্রন রাখতে সমর্থ হয়। এভাবেই পশুত্বকে নিয়ন্ত্রন করেই চলে একজন মানুষের দৈনন্দিন পথ চলা। পশুত্বকে নিয়ন্ত্রন করেই মানুষ কল্যানকামী একটি পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে তার কর্মসাধনা চালিয়ে যাচ্ছে। একজন মানুষ যে মানুষ ছিল তা অন্ততপক্ষে এই পৃথিবীতে একবারের জন্য হলেও কেউ বলে। যেমন, প্রতিটি মানুষের মৃত্যুর পর আমরা কেউ না কাউকে বলতে শুনি যে, লোকটি ভালো মানুষ ছিলো।সুতরাং এটা ধরে নেওয়া যায় যে, ঐমানুষটি যতই খারাপ হোক না কেন, তার একটা না একটা ভালোগুণ ছিল। যে গুণটির কারনে আজ তার মৃত্যুর পরেও কোন না কোনজন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছে। সুতরাং বলা যায়, মানুষ যে সৃষ্টির সেরা জীব তা প্রমাণিত সত্য। সফলতা পেতে গেলে যেমন নিরন্তর পরিশ্রমের প্রয়োজন, তেমনি একটি সুন্দর সমাজ গড়তে হলে প্রয়োজন মানবতাবোধ ও মনুষ্যত্ব। বীজ থেকে বৃক্ষ হতে যেমন নিয়মিত পানি দেওয়া ও সঠিক পরিচর্যার প্রয়োজন হয়, ঠিক সেইরকম ভাবে একজন মানুষকে প্রকৃত আদর্শ মানুষ হতে হলে মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ নামক গুণটির ভূমিকা অপরিসীম। সূর্য যখন উদিত হয় তখন তার আলোয় এই পৃথিবীকে যেমন নতুন করে সাজিয়ে তোলে, ঠিক সেইরকমভাবে মানুষের মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ নামক গুণটি একজন মানুষকে আদর্শ মানুষ বলে স্বীকৃতি দেয়। মানুষের ঘরে জম্মগ্ৰহণ করলেই একজন মানুষ হয় না। কারণ কিছু মানুষের বিবেক পশুত্বের সমান। আর যার মধ্যে মান ও হুশ অর্থাৎ মনুষ্যত্ব রয়েছে এবং মানবতাবোধ অর্থাৎ অপরের দুঃখে, দুঃখিত বোধ করে এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় সেই সমাজে প্রকৃত আদর্শ মানুষ।
