পুজোর মরশুম
পুজোর মরশুম
আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘেদের আনাগোনা, বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধ, শিরশিরে আবহাওয়া, মাঠের পর মাঠ যেন কাশফুলের সাদা চাদরে আচ্ছাদিত, দোকানে দোকানে মানুষের ভিড়, কুমোরটুলিতে প্রতিমা শেষ করার কাজে ব্যস্ত সবাই, চারিদিকে প্যান্ডেলের কাজ শেষ করতে ব্যস্ত শিল্পীরা; এইসবই পুজোর মরশুমের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। 'পুজোর মরশুম' এই শব্দ দুটি মানুষকে আনন্দিত করে তোলে। এই সময় কত মানুষের রোজগারে গতি আসে, আবার কত মানুষ বিলাস ব্যসনে নিজেদের জীবন কাটায়। এই পুজোর মরশুমে মানুষ একঘেয়েমি জীবন থেকে রেহাই পায়। কিন্তু যারা রাস্তায় থাকে অনাহার যাদের নিত্যসঙ্গী তাদেরকে পুজোর মরশুম স্পর্শ করতে পারে না। তাদের একঘেয়েমি জীবন কাটানোর কোনো উপায় নেই, নেই তাদের আনন্দের অধিকার। তারা পুজোর কটা দিন সুন্দর পোশাক পরিহিত মানুষদের দেখে দিন কাটিয়ে দেয়। ভাবুন তো সেই ছোট্ট শিশুটির কথা, তারই বয়সী আর একটি শিশু নতুন জামা পরে ঘুরতে বেরিয়েছে কিন্তু সেই পথশিশুটির সেই ধরনের
জামা পরার সুযোগ নেই। কারণ, সে তো পথশিশু আমাদের সমাজ তাকে তো নিজের সন্তানরূপে দেখেনা। তার তো ভবিতব্যই ওইভাবে জীবন কাটানো। একদিকে আমাদের সমাজ কোটি কোটি টাকা খরচ করে উৎসবে মাতছে। আরেকদিকে কত মানুষের নূন্যতম জীবনধারণের ব্যবস্থা নেই। আমরা যদি দয়া করে তাদের কিছু দিই তবে তাদের কিছু ক্ষুধা মেটে। কিন্তু আমরা ভাবি না তাদের কিভাবে সাবলম্বী করে তুলতে পারি। পুজোর মরশুমে আনন্দের সঙ্গে আমার মন বিষাদে ভরে ওঠে ওই সব মানুষদের দুঃখের কথা ভেবে। আচ্ছা একবার ভেবে দেখুন না, আমরা যখন পুজোর সময় রাস্তা দিয়ে যাব তখন কোনো শিশুর করুণ চোখ আমাদের দেখতে হবে না, কোনো মানুষ এসে আমাদের কাছে হাত পেতে দুটো খেতে চাইবে না, কোনো বয়স্ক বা বয়স্কা মানুষ এসে জামাকাপড় চাইবে না এরকম একটি সমাজ যদি আমরা গঠন করতে পারি তাহলে আমাদের দেশ কি সুন্দর হয়ে উঠবে। আসুন, আমরা সবাই আমাদের পুজোর মরশুমের আনন্দ ওই সব মানুষদের সাথে ভাগ করে নিই, তাদের স্বাবলম্বী করে তোলার মাধ্যমে।