পতিতা
পতিতা
বাবা মায়ের আদরের একমাত্র মেয়ে ঝিমলি। ছোটবেলা থেকেই খুব আদরে আবদারে বড়ো হয়েছে। সকলের নয়নের মনি ছিল সে। সবাই তাকে খুব ভালোবাসত।
ছোট্ট একটা গ্রামের মধ্যে মাটির দোতলা বাড়িতে তারা থাকে। বাবা কৃষক আর মা গৃহবধূ। তাদের একমাত্র মেয়ে ঝিমলি। যেমন রূপ, তার তেমন গুন। কেউ একবার দেখলেই তাকে পছন্দ করে ফেলত।
ঝিমলির এখন দশ বছর বয়েস। তার অনেক বন্ধু আছে। আর তাদের সঙ্গে সে সারাদিন খেলা করে। এর জন্য ঝিমলিকে কেউ কোনোদিন কিছু বলতনা।
এরই মধ্যে একদিন আলাপ হয় আকাশ নামের একটি ছেলের সঙ্গে। আস্তে আস্তে আকাশও তার খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। আকাশকে পেয়ে ঝিমলি তার অন্য বন্ধুদের প্রায় ভুলেই যায়। সবসময় আকাশের সঙ্গেই ঘুরতো আর খেলত।
কিছুদিন এইভাবে চলতে চলতে হঠাৎই একদিন আকাশ ঝিমলিকে ভালোবাসার প্রস্তাব দেয়। ঝিমলি ভয়ে থতমত খেয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর ঝিমলি নিজেই বলে ওঠে -----
" আমাকে একটু ভাবার সময় দাও। "
আকাশ এই কথার উত্তরে বলে -----
" ঠিক আছে ঝিমলি, আমি অপেক্ষা করে রইলাম তোমার উত্তরের আশায়। তবে আমি বেশি খুশি হব যদি তুমি হ্যাঁ বলো। আর যদি তোমার কথার উত্তর না হয় তাহলে এই আকাশকে আর কোনোদিন খুঁজে পাবেনা। শুধু তুমি নও, এই পৃথিবীও আর পাবে না। "
ঝিমলি কাঁদোকাঁদো হয়ে বলে ওঠে -----
" না আকাশ। অমন কথা মুখেও আনতে নেই। আর কোনোদিন এমন কথা বলবে না। "
সেদিন সারারাত ঝিমলি ঘুমাতে পারলোনা। শুধু আকাশের কথাগুলোই তার কানে বাজতে লাগলো আর মনে মনে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো -----
" আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি আকাশ। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না। প্লীজ তুমি আমার জন্য নিজের কোনো ক্ষতি করোনা। "
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই ঝিমলি ছুটলো আকাশের কাছে। কিন্তু আকাশ তখনও এসে পৌঁছায়নি। ঝিমলি অস্থির হয়ে উঠলো। মনের মধ্যে বিভিন্ন রকম চিন্তাও তার ঘোরপাক খেতে লাগলো। যাইহোক কিছুক্ষণ পরেই আকাশ এসে উপস্থিত হলো। আকাশ আসার সঙ্গে সঙ্গে ঝিমলি তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগলো আর বললো -----
" আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি আকাশ। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবনা। তোমার আসতে দেরি হচ্ছিল দেখে আমার মনের মধ্যে কত চিন্তা হচ্ছিল। আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। "
কথাগুলি বলা শেষ হতেই ঝিমলি আবার আকাশকে চুমু খেতে লাগলো। আকাশও ঝিমলিকে কিছুক্ষণ চুমু খাওয়ার পর বললো -----
" ধুর পাগলী,আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারি। আমিও যে তোমাকে খুব ভালোবাসি। চলো আমরা আজকেই বিয়ে করে নিই। তাহলে আর কেউ কোনোদিন আমাদের আলাদা করতে পারবেনা। "
ছোট্ট ঝিমলিও রাজি হয়ে গেল আকাশকে বিয়ে করতে। তার কারণ সেও পারবেনা আকাশকে ছাড়া থাকতে। যদি ওদের কেউ মেনে না নেয়, সেই জন্য আরও বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো।
এরপর আকাশ ঝিমলিকে নিয়ে তাদের গ্রামের একটি ভাঙ্গা বাড়িতে গেলো। ঝিমলি বলে উঠলো -----
" এইখানে কেনো এলে? বিয়ে তো মন্দিরে হয়। "
তার কথার উত্তরে আকাশ বললো -----
" পাগলী বউটা আমার। আমরা মন্দিরে বিয়ে করতে গেলে সবাই জেনে যাবে তো। তাই আমরা রাজরাজাদের মত এখন বিয়ে করবো। আর বয়েস হলে তখন সামাজিক বিয়েটা করে নেব। এখন তুমি তোমার বাড়িতে আর আমি আমার বাড়িতেই থাকবো। "
ছোট্ট ঝিমলি এইসবের আর কি জানে। তার এখন খেলার বয়স। যাইহোক আকাশের কথায় সে রাজি হয়ে গেল।
ভাঙ্গা ঘরের মধ্যে প্রবেশ করেই আকাশ ঝিমলিকে জড়িয়ে ধরলো আর চুমু খেতে শুরু করলো। ঝিমলি ভাবলো আগেকার রাজরাজারা মনে হয় এইভাবেই বিয়ে করত। তারপর ঝিমলিকে অবাক করে দিয়ে আকাশ তার পরনের জামাটা খুলে ফেললো আর ঝিমলিরও পরনের জামাটা খুলে দিল। ঝিমলি বলে উঠলো -----
" এইভাবে আবার বিয়ে হয় নাকি? "
আকাশ বললো -----
" আগেকার রাজরাজারা এই ভাবেই বিয়ে করত। "
ছোট্ট ঝিমলীও মনে করলো তাই হবে।
ছোট্ট ঝিমলির পরনের জামাটা খুলে দেওয়ার পর আস্তে আস্তে তার সারা শরীরের সমস্ত জামাকাপড় খুলে ফেললো আকাশ। আর তার সঙ্গে নিজেরও। এখন তারা দুজনেই বিনা বস্ত্রে দাড়িয়ে আছে। ঝিমলি লজ্জায় হাত দিয়ে মুখ ঢাকলো। আকাশ ঝিমলিকে বুকে টেনে নিয়ে তার উপর কিছুক্ষণ পাশবিক অত্যাচার চালাতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর তাদের যখন মোহ কেটে গেলো, তখন ঝিমলি তার পেটে ব্যাথা অনুভব করতে লাগলো। পেটে হাত দিতেই সে দেখতে পেল রক্ত। একনাগাড়ে রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছে তার গোপনাঙ্গ থেকে আর খুব ব্যাথাও হচ্ছে। সে আকাশকে বললো -----
" আকাশ আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। খুব ব্যাথা করছে। "
আকাশ কোনো কথা না বলে তাকে শুধু আদর করতে লাগলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝিমলির রক্ত বেরণা বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু পেটের ব্যাথাটা তার সেইরকমই থেকে গেলো। আকাশ বললো -----
" কেউ কোনোদিন যেনো না এই কথা জানতে পারে। তাহলে কিন্তু আমাদের দুজনকে আলাদা করে দেবে। আমরা আর একসঙ্গে থাকতে পারবো না। "
ঝিমলি আকাশের কথা শেষ না হতে হতেই বলে উঠলো -----
" আমার যতই কষ্ট হোক। আমি কোনোদিন কাউকে বলব না। আমি তোমাকে ছাড়া যে বাঁচতে পারবনা। "
সেদিন বাড়ি ফেরার পর থেকে ঝিমলি যেনো পালটে গেল। সারাদিন শুধু ঘরেই শুয়ে আছে। তার বাবা মা যতই বলে কি হয়েছে তোর বল? ঝিমলি তাদের কোনো উত্তরই দিতে পারেনা। একইরকম ভাবে বালিশ জড়িয়ে ধরে সবসময় শুয়ে থাকে।
কিছুদিন পর ঝিমলি একইরকম ভাবে আবার আকাশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়। একবার, দুইবার, বহুবার সে আকাশের সঙ্গে এইরকম ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে।
ছোট্ট ঝিমলি মনে করে এটাই হয়তো বিয়ে। আর সেও তো খুব খুশি হয়। আর ভালোও লাগে তার আকাশ যখন তারসঙ্গে এইরকম করে।
দেখতে দেখতে দুবছর কেটে গেলো। ঝিমলি এখন এইসবের মানে বুঝতে শিখে গেছে। তাদের যে বিয়ে হয়নি, সেটাও সে বুঝতে পারে।
হঠাৎ করেই আকাশ একদিন বলে ওঠে -----
" চলো ঝিমলি আমরা পালিয়ে যাই। "
ঝিমলি বলে -----
" কোথায় পালাবো? "
আকাশ বলে -----
" আমরা কলকাতা যাবো। তোমায় বিয়ে করে ঐখানেই সংসার করবো। "
ঝিমলি বলে -----
" আমার বাড়ির লোক। "
আকাশ বলে -----
" বাড়ির লোক জানলে আমাদের আর কোনদিনই এক হওয়া হবে না। ওরা আমাদের বিয়ে দেবে না। "
ঝিমলিও আর কোনো কিছু না ভেবে রাজি হয়ে যায়।
সেইদিন রাতে আকাশ ঝিমলির বাড়ির সামনে আসে। ঝিমলিও রেডি হয়েই ছিল। দুজনে পালিয়ে যায় কলকাতা।
কলকাতা গিয়ে ঝিমলিকে এক বাড়িতে রেখে আকাশ চলে যায় বিয়ের জোগাড় করবে বলে। ঝিমলি অপেক্ষা করে বসে থাকে আকাশের। কিন্তু আকাশ আর ফেরেনা। দিন কেটে রাত হয়ে যায়, আকাশের আর পাত্তা নেই। ঝিমলি কাঁদতে শুরু করে। তখন সেই বাড়ির মালকিন এক মহিলা এসে তাকে ভালো ভালো খাবার দেয়। আর বলে -----
" তুই চিন্তা করিস না। আকাশ ঠিক এসে পড়বে। তুই খেয়ে নে। আমি তো তোর মায়ের মতই। "
তারপরের দিনও আকাশ এসে পৌঁছালো না। ঝিমলিকে ওই মহিলা ভালো ভালো পোশাক আর খাবার দিয়ে তার মন জয় করে ফেললো।
তবে ওই নারীর উদ্দেশ্য যে ভালো ছিল না তা বুঝতে পারেনি ঝিমলি। তৃতীয় দিনে ঝিমলিকে আরও ২০ জন মেয়ের সঙ্গে দাঁড় করিয়ে দেয় রাস্তায়।
তখনও ঝিমলি বোঝেনি কেন তাকে রাস্তায় দাঁড় করানো হয়েছে। সে ভেবেছিল হয় তো অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়া হবে তাকে।
কিন্তু যখন সে বুঝতে পারল খদ্দের ধরার জন্য তাকে রাস্তায় দাঁড় করানো হয়েছে তখন পালানোর চেষ্টা করে।
কিন্তু পালাতে পারেনি। ওই নারীর লোকজন তাকে ধরে ফেলে। পরে একটা অন্ধকার ঘরে বেশ কয়েকদিন বন্দি করে রাখা হয় তাকে। মারধরও করা হয় তাকে।
তবে তার মুখ, বুক ও উরুতে কখনও আঘাত করা হতো না। ওইসব জায়গায় আঘাতের দাগ পড়লে শরীরের বাজারে ‘দাম’ পড়ে যাবে যে তার।
অন্ধকার ঘরে বসে ঝিমলি ভাবতে থাকে আকাশ তাকে বিক্রি করে দিয়েছে পতিতালয়ে। কিন্তু আকাশ কেনো এমন করলো। সে তো আমাকে খুব ভালোবাসত। আর আমিও তাকে খুব ভালবাসতাম। ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি এই দিল আকাশ। ভাবতে ভাবতে ঝিমলি ঘুমিয়ে পড়ে।
ঝিমলি বেশ ভালোই বুঝতে পারলো এইখান থেকে সে আর কোনোদিন বেরিয়ে যেতে পারবে না। বাবা মায়ের জন্য সে খুব কষ্ট পেতো। ওই নারী তাকে মেয়ে বলে ডাকতো। আস্তে আস্তে ঝিমলিও তাকে মা বলে ডাকতে শুরু করলো।
ছোট থেকেই ঝিমলি খুব সুন্দর দেখতে ছিল। আর আজ বারো বছর বয়সে ঝিমলি আরও সুন্দর দেখতে হয়ে গেছে। কি রূপ, যৌবন এখন তার। দেখলে মনে হয় কুড়ি বছরের যুবতী মেয়ে। যে দেখে সেই শুধু ঝিমলিকে নিয়ে বিছানায় শুতে চায়।
আস্তে আস্তে ওই নারী ঝিমলির দাম দুহাজার টাকা করে দেয়। সারাদিন ঝিমলির উপর মানুষগুলো হিংস্র পশুর মত অত্যাচার চালিয়ে যায়। রাতে ব্যাথা যন্ত্রণায় সে ঘুমাতে পারে না। এক একদিন রাতেও নিস্তার পায় না ঝিমলি। মুখ বুজে সব সহ্য করে যেতে হয়।
বেশিরভাগই আসে কলেজছাত্র। তাছাড়াও সাধারণ মানুষ, এমনকি কিছু বিদেশী পর্যন্ত আসে তার কাছে।
ড্রাগ-আসক্তরাও আসে তাদের কাছে। এক মাদকাসক্ত জোর করে ঝিমলির গলায় ঢেলে দিয়েছিল মাদক। অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েকদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়েছিল ঝিমলিকে।
এরপর ওই দালাল নারী প্রতি বছর দুর্গাপূজায় শাড়ি কিনে দেন ঝিমলিকে। বর্তমানে ঝিমলির বয়স ১৬। তবে তার সঙ্গে যারা রাত কাটাতে যান তাদের কাছে নিজের বয়স ২০ বছর বলে উল্লেখ করে ঝিমলি দালাল মহিলার কথা মত।
প্রত্যেকদিন ঝিমলি যা রোজগার করে তার অর্ধেক দিয়ে দিতে হয় ওই দালাল মহিলাকে।
তারপর ৫ বছর সেইখানেই কেটে গেলো ঝিমলির। এখন আর বাবা-মার কথা মনে নেই তার। এখন সে ওই পতিতালয়ের সেরা পতিতা হয়ে উঠেছে। ঘণ্টা প্রতি এখন তার দাম পাঁচ হাজার টাকা।
বড় হয়ে নার্স হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল ঝিমলি। কিন্তু আজ সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়। এইখানে ঝিমলির ‘মা’ তাকে পতিতালয় থেকে বের হতে দেবে না।
ঝিমলিকে মুম্বাইয়ে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে তার।
তাছাড়া এইখান থেকে বেরিয়ে ঝিমলি যাবেই বা কোথায়? এই নির্মম সত্যটা ১৬ বছর বয়সেই বুঝে গিয়েছে ঝিমলি যে, সে যাই করুক না কেন,যত টাকাই আয় করুক না কেন,পতিতা বৃত্তির কলংক তার গা থেকে কোনো দিনও ঘুচবে না।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কাছে সে চিরকালই ‘পণ্য’ হয়েই থাকবে। তাহলে এখন কি আর কোনো স্বপ্নই নেই ঝিমলির চোখে? আছে। তার ঘরে প্রায়ই একটা লোক আসে। সে বিয়ে করতে চায় ঝিমলিকে।
বিয়েতে আপত্তি নেই ঝিমলিরও। সেই পুরুষকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখে ঝিমলি। কিন্তু তার এই মা কি মেনে নেবে তার এই বিয়ে। কোনদিনই না।
ঝিমলি বসে বসে ভাবতে থাকে, সে যদি কোনোদিন কন্যা সন্তানের মা হয়, তাহলে সেই মেয়েকে যেন কিছুতেই তার মতো আর একটা বিড়ম্বিত জীবন কাটাতে না হয়।
এরপর তারা বিয়ে করবে বলে সব কিছু ঠিক করে ফেলে। কিন্তু ঝিমলির ওই মা আগে থেকেই সব কিছু বুঝতে পেরে যায়। ঝিমলির ঘর বাঁধার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।
কিছুদিনের মধ্যে হঠাৎ করেই তার ওই মা ঝিমলিকে এক রাতে মুম্বাইতে মোটা টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয়।
সেই রাতের পর থেকে আর ঝিমলির কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি আর কেউ কোনোদিন তাকে দেখতেও পায়নি।