STORYMIRROR

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Tragedy Crime

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Tragedy Crime

প্রথম রিপু - ষষ্ঠ পর্ব

প্রথম রিপু - ষষ্ঠ পর্ব

4 mins
154


হীরু একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মাটির ওপর ঘাসগুলো পরীক্ষা করতে করতেই বললো - এই জায়গাটা দেখুন। ওপর থেকে গাছের ক'টা কাঁচা ডাল ভেঙে পড়েছে এখানে - এমনি এমনি তো নিশ্চয়ই নয়? ডালগুলোর ওপরে নিশ্চয়ই ভারী কিছু পড়ার ফলে, সেগুলো এখানে পড়ার পর, খানিকটা মাটিতে বসেও গিয়েছে। আর ঘাসের ওপরটা ভালো করে লক্ষ্য করলে, সেখানে ভারী কিছু পড়ার, আর সেটাকে টেনে নিয়ে যাবার চিহ্নও দেখতে পাবেন!


কৃষ্ণদাও সেগুলো লক্ষ্য করতে করতে, সম্মতি সূচক ভাবে ঘাড় নেড়ে, বললেন - হুঁ, সেটা তো বুঝলাম। কিন্তু তার সাথে এই কেসের কি সম্পর্ক - সেটা খুলে না বললে, বুঝবো কি করে?


হীরু - আকাঙ্ক্ষা গোয়েলের খুনটা এখানে হয়েছিলো। পরে তার বডিটা বাইপাশের ধারে ফেলে রেখে আসে আততায়ী। আপনি একটু স্মরণ করুন - ঘটনার রাতে, চিংড়িঘাটা ফ্লাইওভার রীপেয়ারিং এবং ওদিকে বেলিয়াঘাটা মেট্রো স্টেশনের পর বাইপাশের ওপরের পিলার তিনটেতে লাইন পাতার কাজ হচ্ছিলো। তাই, সেই রাতে ঐ রাস্তায় কোন গাড়িই তো চলতে দেয়নি পুলিশ!


তাহলে, গাড়িতে ধাক্কা খেয়ে মারা যাবেন কি করে উনি? ওনাকে আগেই খুন করা হয়েছিলো। পরে, সম্ভবত চিংড়িঘাটা ব্রীজের আর বেলিয়াঘাটা মেট্রো স্টেশনের মাঝামাঝি, ঐ মেট্রোপলিটনের ভিতরের রাস্তা দিয়ে এসে, তাঁর বডিটা বাইপাশের ধারে ফেলে দিয়ে যায়। রোড ব্লকের খবরটা আততায়ী বোধ হয় জানতো না। 


পোস্ট মর্টেম রীপোর্টেও - ওপর থেকে নিচেয় পড়ে মৃত্যুরই রীপোর্ট এসেছে। বুঝতে পারলেন এবার, কি ঘটেছে? এখন, নরেন নামের, ওদের সেই কাজের লোকটাকে, খুঁজে পাওয়া খুব দরকার। ওর বয়ানটা শুনতে হবে। চলুন, একবার ওদের ছাদটা আর বাড়ির ভিতরটাও দেখতে হবে।


কৃষ্ণদা - বাঃ, তুমি তো কাজ অনেকটাই অল রেডী এগিয়ে নিয়েছো। চলো ভিতরেই যাই তবে।


হীরু ঐ জায়গাটার বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে, বেশ কিছু ফটো নিলো। ওপরের দিকের গাছ, ব্যালকনি আর ছাদেরও! তারপর তারা বাড়ির ভিতরে গেলো। এঘর ওঘর খুঁজতে খুঁজতে, রান্নাঘরে গিয়ে দেখে - হাত পা পিছমোড়া করে বাঁধা, মুখেও কাপড় বাঁধা অবস্থায় মেঝেয় পড়ে রয়েছে নরেন! মাথার পিছন থেকে, বেশ জোড়ালো আঘাতে ফেটে, রক্তও বেরিয়েছে অনেক!


ওরা তাকে বন্ধন মুক্ত করে, বসার ঘরে তুলে নিয়ে এলো। জ্ঞান ফিরলেও, রক্তক্ষরণের কারণে আর দু' তিন দিন ঐভাবে পড়ে থাকায়, ভয়ানক দুর্বল হয়ে পড়েছিলো সে। কৃষ্ণদা তখনই একজন ডাক্তারকে ডেকে নিলেন। 


তিনি এসে নরেনের মাথার চোট পরীক্ষা করে, ধুয়ে, ওষুধ লাগিয়ে ব্যাণ্ডেজ করে দিলেন। কিছু খাবার ওষুধ আর একটা ইঞ্জেকশনও দিলেন। ঘরেই থাকা ওয়াটার হীটারে, একটু দুধ গরম করে তাকে খাওয়ানো হলো। বেশ কিছুক্ষণ পর, নরেন একটু চাঙ্গা হয়ে উঠলে, হীরু শুরু করলো প্রশ্নোত্তর পর্ব।


নরেনের বয়ান অনুযায়ী, রাহুল ঘটনার দিন সকালেই কলেজে বেরিয়েছিলো, আর ফেরেনি। সাহেবও, অর্থাৎ তার বাবা, বেশ কিছুদিন ধরেই নাকি দেশের বাইরে, সম্ভবত ব্যবসার কাজে নেপাল গিয়েছিলেন - দু' চার দিন পরেই তাঁর ফেরার কথা ছিলো।


 ম্যাডাম অর্থাৎ আকাঙ্ক্ষা গোয়েল, সেদিন দুপুরেই তাঁদের ঐ গেস্ট হাউসে চলে গিয়েছিলেন - নরেন সাফ সাফাই যা করে এসেছিল আগের দিন, সেসব দেখবেন বলে। কিন্তু সেদিন, ওখান থেকে বেশ আগে আগেই, মানে সন্ধ্যার পরেই, বাড়ি ফিরে এসেছিলেন তিনি - যেকোনো কারণেই হোক, তিনি তখন খুব ডিস্টার্বড্ মুডে ছিলেন। 


তাঁর মুড খারাপ দেখে, সেও আর বিশেষ ঘাঁটায় নি তাঁকে। তিনি এসেই সোজা বেডরুমে ঢুকে, দরজা বন্ধ করে দেন। সারা সন্ধ্যা, ঘর অন্ধকার করে, একা একা বসে ছিলেন ঘরের ভিতরে। শুধু একবার বেরিয়েছিলেন তিনি রাত দশটার দিকে - স্নানে যাবার আগে, তাকে পাম্পটা চালাতে বলার জন্য।


তারপর, তাকে ডিনার দিতে বলেন রাত সাড়ে দশটা - এগারোটা নাগাদ। সে রান্নাঘরে এসেছিলো ম্যাডামের জন্য খাবার রেডী করতে। তখনই দেখে - কেউ যেন পাঁচিল টপকে বাড়িতে ঢুকলো। কিন্তু বারান্দায় গিয়ে, পিছনের দিকের লাইটটা জ্বেলে দিয়ে, ভালো করে এদিক ওদিক তাকিয়েও, কাউকে দেখতে পায়নি সে। 


মনের ভুল হবে হয়তো ভেবে, যেই সে রান্নাঘরে ফিরে আসে, মাথার পিছনে ভয়ানক জোড়ে কেউ আঘাত করে তাকে। জ্ঞান হারিয়ে ওখানেই লুটিয়ে পড়ে সে। জ্ঞান ফিরলে দেখে, মুখ, হাত পা সব বাঁধা অবস্থায়, সে সেখানেই মেঝেয় পড়ে রয়েছে। এছাড়া আর কিছুই জানে না সে। 


হীরু রান্নাঘরটা ভালো করে খুঁজে, হামান দিস্তার পেসলটা খুঁজে বের করলো - ডাস্টবিনটার পাশ থেকে। তার মাথায় রক্তের দাগটা আছে দেখে, রুমাল দিয়ে সেটা তুলে একটা পলিথিনের মধ্যে ঢুকিয়ে, কৃষ্ণদাকে দিয়ে বললো - ফিঙ্গার প্রিন্টটা পরীক্ষা করলেই প্রকৃত আততায়ীকে খুঁজে পেয়ে যাবেন।


এরপর ছাদে একটা চক্কর লাগালো, আস পাশ ভালো করে দেখে নিলো। তাদের প্রত্যেকের বেডরুম, বারান্দা, ওয়ারড্রোবগুলো ভালো করে চেক করলো। তারপর হঠাৎ কৃষ্ণদাকে বললো - দাদা, নরেশ গোয়েল, মানে রাহুলের বাবার, মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করতে হবে গত কয়েকদিনের - অন্তত চারদিনের তো বটেই। নম্বর ধরে হবে না, আই এম ই আই নম্বর ধরে করতে হবে।


কৃষ্ণদা তখনই সাইবার সেলে কর্মরতা, তাঁর আর হীরুর দুজনেরই কমন ফ্রেণ্ড, বর্ণাকে কল করে সব ডিটেল্স পাঠিয়ে, তার যা করণীয় জানিয়ে দিলেন। তারপর, দুজনে ফিরলো থানায়। তার আগে হীরু আরও একটা চক্কর দিয়ে এলো, সেই ফ্ল্যাটের সিকিউরিটির লোকটার কাছ থেকে।


ফিঙ্গার প্রিন্টের ওপর ট্রেনিং, কৃষ্ণদার নিজেরই নেওয়া ছিলো। তাই, থানায় এসেই সর্বাগ্রে তিনি ফিঙ্গার প্রিন্ট টেস্টিং এ বসলেন। তাঁর পরীক্ষায় তিনি স্পেশিমেনের সঙ্গে আট খানা পয়েন্ট ম্যাচ করে দিয়ে, প্রমাণ করতে পারলেন নিজের কাছে নিজেই যে, ফিঙ্গার প্রিন্টটা ঐ রাহুলেরই। 


তারপর বর্ণাকে সাইবার সেলে কল করে জিজ্ঞাসা করতেই, সে জানালো - নরেশ গোয়েলের মোবাইল লোকেশন গত চারদিন ধরে, জয়পুর আর দিল্লী দেখাচ্ছে। তার আগে খুব সম্ভবত কাঠমাণ্ডুতে ছিলো। সেটা কনফার্ম করতে একটু টাইম লাগবে।


হীরু সব শুনে বললো - দাদা, কেসটা আমার কাছে এখন, একদম জলের মত পরিস্কার। আমি আপনাকে বলছি, সেদিন ঠিক কি কি ঘটেছে, বা ঘটে থাকতে পারে।


আগামী পর্বে সমাপ্ত।



இந்த உள்ளடக்கத்தை மதிப்பிடவும்
உள்நுழை

Similar bengali story from Drama