STORYMIRROR

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Tragedy Crime

3  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Tragedy Crime

প্রথম রিপু - পঞ্চম পর্ব

প্রথম রিপু - পঞ্চম পর্ব

4 mins
1.1K


পরদিন সকালে ছ'টা বাজতে না বাজতেই, হীরু হাজির হলো সুমনার ফ্ল্যাটে। সে তখন বাচ্ছাদের স্কুল বাসে তুলবে বলে, গেটেই দাঁড়িয়েছিলো। ওরা স্কুলবাসে উঠতেই, হীরু বললো - যথেষ্ট আগেই এসেছি, তোর দেওয়া টাইমের থেকে। এবার কখন বেরোবি বল?


সুমনাও প্রায় রেডীই ছিলো, ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে বললো - চল, আজ তাের বাইকে চেপেই যাই তাহলে ডিউটিতে। বহুদিন বাইক চড়া হয় না জানিস। কয়েক মিনিটেই তারা দুজনে এসে পৌঁছালো ডাঃ হরমোহন ব্যানার্জীর বাড়ি। সুমনাকে দেখে তিনি বেশ খুশি হলেন। নিজেদের কাজের বিষয়ে কিছু কথাবার্তার পর, সুমনা হীরুকে পরিচয় করালো তাঁর সাথে।


হীরু তাঁকে বললো - স্যার, পোস্ট মর্টেমের বিষয়ে, আমি একটা জিনিস জানতে চাই। কাউকে ওপর থেকে ছুঁড়ে ফেললে যদি সে চিত হয়ে মাটিতে পড়ে, আর কাউকে পিছন থেকে বড় ট্রাক জাতীয় কোনো গাড়িতে ধাক্কা দিলে, দুজনের মৃতদেহে কি একইরকম শারীরিক ক্ষত হওয়া সম্ভব?


ডাক্তার ব্যানার্জী - না, কয়েকটা জায়গায় ক্ষত আলাদা হবে। পিছন থেকে ধাক্কা খাওয়া ব্যাক্তির মূলত বডিতে, আর পায়েরও ওপরের কিছুটা জুড়েই সর্বাধিক ক্ষতি হবে। ওপর থেকে পড়ার ক্ষেত্রে, মূলত হাত দুটো এবং বডির যে পার্ট আগে ভূমিস্পর্শ্ব করবে সেখানেই ক্ষত বেশী হবে। দুটো থ্রাস্টের ডিরেক্শন - বডির ওপর একই না হলে, ক্ষত কি করে এক হবে? আলাদা তো বেশ কিছু লক্ষণ থাকবেই!


হীরু - আকাঙ্ক্ষা গোয়েলের বডির পোস্ট মর্টেম করে, আপনার কি মনে হলো - গাড়ির ধাক্কায়, না পড়ে গিয়ে - কিভাবে ওনার মৃত্যু হয়েছে?


ডাক্তার ব্যানার্জী - এই কেসের ব্যাপারটা, তুমি জানলে কি করে? 


হীরু মোবাইলটা বের করে আকাঙ্ক্ষা গোয়েলের পোস্ট মর্টেমের আগের ও পরের ছবিগুলো দেখিয়ে, বললো - আমার বন্ধু মৌসুমি এই কেসটা দেখছে। আমাদের দুজনেরই ধারণা, কেসটা অ্যাক্সিডেন্ট নয়, মার্ডার। তাই আপনার পরামর্শ আর বিস্তারিত রীপোর্ট খুব দরকার।


ডাক্তার ব্যানার্জী - আমি একটা প্রাইমারী নোট দিয়েছিলাম তোমার বান্ধবিকে, এই ডেথের বিষয়ে। ঠিক আছে, আমি ডিটেল্ড রীপোর্ট পাঠিয়ে দেবো আজ। হ্যাঁ, তোমার ধারণা ঠিক, ওপর থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলেই - মহিলাটিকে কেউ খুন করেছে। গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যুর কেস এটা নয়। কিন্তু তুমি ভাই, আমার রীপোর্টটা অফিসিয়ালী দেখে নিয়ে, তারপরেই এই ব্যাপারে মুখ খুলো, কেমন?


হীরু - অনেক ধন্যবাদ স্যার আপনাকে। আমি বোধ হয় কেসটা এবার, অনেক স্পষ্টভাবে বুঝতে পারছি, খুব উপকার হলো। আপনার পরামর্শ মাথায় রেখে, কেসটা বোধ হয় ক্লোজ করাতে পারবো। আজ উঠি তাহলে স্যার, পরে আবার কোনোদিন যদি এইরকম কোন প্রশ্নে আটকাই, আপনার দ্বারস্থ হয়ে বিরক্ত করবো আবার।


ডাক্তার ব্যানার্জী - না না বিরক্ত বলছো কেন? তুমি ইচ্ছা হলেই আসতে পারো। সুমনা আমার বেস্ট স্টুডেন্টদের মধ্যে একজন, যে এখনও সম্পর্কটা রেখেছে, খোঁজ খবর নেয়, ফোনে মাঝে মাঝেই কথাও হয় ওর সাথে। তোমার সাথেও কথা বলে বেশ ভালো লাগলো। তুমি যখনই চাইবে এসো, আমি বিরক্ত হবো না।


তিনজনেই হেসে উঠলো। সুমনাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়ে, হীরু দৌড়ালো - বিনোদ আর রাহুলের কলেজে। কৃষ্ণদার কলীগের ছেলে, যে ওখানে পড়ে, তার সঙ্গেই গিয়ে দেখা করলো। বিনোদ, রাহুল এবং তাদের ব্যাচের অন্যান্য বন্ধু বান্ধবদের বিষয়ে জানলো। বিনোদের পার্ট টাইম জব করার বিষয়টা, দু'একজন ছাড়া আর বিশেষ কেউই জানে না দেখলো সে! তবে রাহুলের সঙ্গে তার বন্ধুত্বের বিষয়টা - সবাই জানে।


ওখান থেকে নিজের ঘরে ফিরে এসে, হীরু তাদের মোবাইল দুটো নিয়ে বসলো। কল ডাটার ব্যাক আপ নিলো। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ গুলো সঙ্গে এসএমএস গুলোও পড়লো। দুটো ফোনেরই কন্ট্যাক্ট লিস্টেরও ব্যাক আপ নিলো। দুজনের ফোনেরই পুরো মিডিয়ার ব্যাকআপ নিলো - মিউজিক ও গানের ভিডিওগুলো দেখে ডিলিট করে স্পেসটা কমিয়ে নিলো। তারপর বসলো অ্যানালাইসিস করতে।


সকাল ন'টায় শুরু করে, বিকেল চারটেয় তার কাজকর্ম শেষ হলো। ঘড়িতে টাইমটা দেখে তো চমকে উঠলো হীরু। তারপর পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দেখে সাতাশটা মিসড্ কল - কুড়িটা কৃষ্ণদার, সাতটা মৌসুমির। ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখেছিলো সে ইচ্ছে করেই - যাতে তার কাজের মাঝে ব্যাঘাত না আসে।


মোবাইল অ্যাপ থেকে তখনই সে, খাবারের অর্ডার দিয়ে, দ্রুত স্নান সেরে নিলো। তারপর প্রথম কল করলো মৌসুমিকে - কি রে, পোস্ট মর্টেমের ডিটেল্ড রীপোর্ট পেলি? ওটা অ্যাক্সিডেন্ট নয়, মার্ডারই তো? 


মৌসুমি - তুই কি করে জানলি? আমি তো এই কিছুক্ষণ আগেই এটা হাতে পেয়েছি। তারপর থেকে এটা আমার হাতেই রয়েছে - তুই জানলি কি করে, কি রীপোর্ট এসেছে?


হীরু - মা আমার, আমিও তদন্ত করি। কম বেশী একটু আধটু বিশ্লেষণ ক্ষমতা আমারও আছে। আমি তোকে আজ সন্ধ্যেয় দেখা করে, পুরো কাহিনী শোনাবো। তুই নিজেই দেখতে পাবি - কেসটা জলের মত ক্লীয়ার। তার পর না হয়, তোর যেভাবে মন চায় সাজাস কেসটা। এখন রাখছি রে।


মৌসুমির কলটা কেটেই কৃষ্ণদাকে ফোনে ধরলো হীরু - কি খবর দাদা ওদিকে? 


কৃষ্ণদা - আর বোলোনা, এ ছেলে তো একবারে যন্ত্র জিনিস। মুখ দিয়ে কোনো কথাই বার করা যায় না। অবশ্য আমাদের পদ্ধতি এখনও প্রয়োগ করিনি, তুমি বলেছিলে বলে। তাকে যাই জিজ্ঞাসা করা হয়, সে শুধু হাসে আর বলে - আমি জানিনা। নিজের বাবার ফোন নম্বরটা পর্যন্ত নিজে দেয়নি। আমরা ওর ফোন থেকেই দরকারী ফোন নম্বর গুলো খুঁজে বের করেছি। তুমি কখন আসছো?


হীরু - ওর বাড়ির চাবিটা পেয়েছেন? আর ঐ নরেন নামে ওদের বাড়ির চাকরটা কোথায় জানুন তো। 


কৃষ্ণদা - ওর বাড়ির চাবি পেয়েছি, ফ্ল্যাট দুটোরই চাবিও পাওয়া গেছে - ঐ গেস্ট হাউস ফ্ল্যাটটারও আরো একটা চাবি পেলাম। কিন্তু নরেনের ব্যাপারে কিছুই বলছে না।


হীরু - ঠিক আছে, আপনি ওর বাড়িতেই আসুন চাবিটা নিয়ে, আমিও পৌঁছাচ্ছি। তাড়াতাড়ি আসুন - অন্ধকার নামার আগেই, যা কিছু দেখার দেখে নিতে হবে।


ফোনটা রাখতে না রাখতেই, খাবারটা ডেলিভারী দিয়ে গেলো। হীরু গোগ্রাসে সেগুলো শেষ করেই, দৌড়ালো রাহুলের বাড়ির দিকে। কৃষ্ণদা আগেই পৌঁছে তালা খুলে, ভিতরে ঢুকে বসেছিলো। হীরু ওখানে এসেই, প্রথমে বাড়ির পিছন দিকটায় গেলো। ছাদের দিকে বেশ ভালো করে লক্ষ্য করতে করতে, নিচের দিকটা পরীক্ষা করতে শুরু করলো।


কৃষ্ণদা তাকে অনুসরণ করে সেখানে এসে বললেন - কি খুঁজছো বলো তো?


ক্রমশঃ


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama