প্রথম রিপু - দ্বিতীয় পর্ব
প্রথম রিপু - দ্বিতীয় পর্ব
হীরু - বিনোদ নাকি পার্ট টাইম জব করতো! তাদের অফিসটা কোথায়?
রাহুল - তা ঠিক বলতে পারবো না। এখন অনলাইনে সব নানারকম কাজের অফার আসে না, সেইরকমই কিছু হবে। আমায় সে জবটা ঠিক কি সেটা বলেই নি কখনও। ওর তো ফোনেই নাকি, কোথায় কবে যেতে হবে তার ডাইরেক্শান আসতো। রোজ অফিস যাওয়ার মত জব প্রোফাইল বোধ হয় ঐ কাজের ছিল না।
হীরু - তা, ওর মোবাইলটা পেলে?
রাহুল - না৷ কই দেখছিও না তো, কোথায় রেখেছে কে জানে।
হীরু - তোমার বাড়ি কোথায়? আর বাড়িতে কে কে আছেন?
রাহুল - আমরা এই তো কাছেই মানিকতলায় থাকি। নিজেদের বাড়ি। বাড়িতে বাবা মা আছেন। দিদির বিয়ে হয়ে গেছে - ওরা সল্ট লেকে থাকে।
হীরু - তোমার বাবা মা কে কি করেন?
রাহুল - বাবার বিজনেস আছে 'গোয়েল এক্সিম' - কলকাতায়, আর রাজস্থানে আমাদের দেশের বাড়ির ওখানে ব্রাঞ্চ অফিস আছে। মা হাউস ওয়াইফ।
হীরু - এই ফ্ল্যাটটা কি ভাড়া দেবার জন্যই কেনা?
রাহুল - না, ঠিক তা না। এই জায়গাটা আমার নানীর ছিলো। তাই ফ্ল্যাটের জন্য প্রমোটারকে দেওয়া হলে, কিছু টাকা আর এই ফ্ল্যাটটা পাওয়া গিয়েছিলো। পাশে নানীরও একটা ফ্ল্যাট আছে - এটার ডবল সাইজের।
আগে এটা ছিলো, কিন্তু উনি মারা যাবার পর, ঐ ফ্ল্যাটটাই এখন আমাদের বিজনেসের গেস্ট হাউস হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই এই ফ্ল্যাটটা খালিই পড়েছিলো। বিনোদের সাথে পরিচয় হবার পর, যখন জানতে পারলাম ওর একটা ফ্ল্যাট দরকার, ওকেই প্রায় হাফ ভাড়াতেই থাকতে দিয়েছিলাম এখানে।
খালি পড়ে থাকার চেয়ে ব্যবহার হবে, প্লাস আমার কিছু হাতখরচাও উঠে আসবে। তাছাড়া, ও পড়াশুনাতেও খুব ভালো ছিলো বলে, এখানে গ্রুপ স্টাডিও করতাম আমরা। কিন্তু হঠাৎ কি হয়ে গেলো দেখুন…
কথার ফাঁকেই হীরু আর কৃষ্ণদা মোটামুটি যা দেখার, যা খোঁজার সব খুঁজে পেতে দেখে নিলো। বিশেষ কিছুই মিললো না তার ঘরে। তবে একটা বিষয় লক্ষ্য করলো দুজনেই - তার শরীরচর্চার আধুনিক জিনিসপত্র, আর বেশ কস্টলী পোশাক, জুতো, সেন্ট, বেল্ট, ঘড়ি, চশমার সম্ভার।
আরো কিছু সাধারণ কথাবার্তা সেরে, তারা পাশে তাদের গেস্ট হাউস, মানে ঐ ফ্ল্যাটে গেলো। বেশ বড় সড় টিপ টপ করে সাজানো ফ্ল্যাট। দেখেই বোঝা যায়, মালিকের যথেষ্ট দেখভালে যত্নে রাখা, মডার্ণ হাইলী ডেকোরেটেড ফ্ল্যাট।
রাহুল জানালো - তাদের গেস্টরা সচরাচর, রোজ এসে থাকে না এখানে। ব্যবসার কাজে এসে, জাস্ট রেস্ট নিতে আর জিনিসপত্র রেখে যাবার জন্যই, সাধারনত তারা এখানে আসে। তাই তারাও কোন রেগুলার অ্যাটেন্ডেন্ট রাখেনি এখানে।
কারোর আসার কথা থাকলে, ওদের বাড়ির কাজের লোক নরেনই এসে, আগের দিন সাফ সাফাই করে দিয়ে যায়। প্রতি মাসেই কেউ না কেউ তো আসেই, তাই একরকম নিয়মিতই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করাই হয়। ওর মাও নাকি নিজে এসে দাঁড়িয়ে থেকে সাফাইয়ের কাজ করান। কখনও কখনও তো নিজেও এসে, টুকটাক কাজ করে নেন নিজেই।
ওখান থেকে বের হয়ে এসে, মোটর বাইকে কৃষ্ণদার পিছনে বসতে বসতে হীরু বললো - এখন তো তাহলে ঘটনাস্থলে একবার যেতে হয় দাদা।
কৃষ্ণদা - কিন্তু আর কি ওখানে গিয়ে কিছু মিলবে। প্রচুর লোকজন ইতোমধ্যে ও জায়গা চষে ফেলেছে। ঠিক আছে বলছো যখন, চলো একবার ঘুরেই আসা যাক।
রেল লাইনের যেখানে বডিটা মিলেছিলো সেটা দেখে নিয়ে, হীরু নেমে গেলো পাশের ঝোপের মধ্যে। বেশ কিছুক্ষণ সেসব ঘাঁটাঘাঁটি করে বেরিয়ে এসে বললো - ঐ ড্রেনটা কতটা খাল হবে দাদা?
কৃষ্ণদা - তাও ফুট চারেক তো হবেই। জলই আছে প্রায় তিন ফুট মত। কেন?
হীরু - মন বলছে, ওখানেই জিনিসটা থাকবে। কোন মেথর বা ড্রেনে নামার মত কাউকে পাওয়া যাবে?
কৃষ্ণদা, হীরুর মুখের সিরিয়াস এক্সপ্রেশন দেখে, কাছেই বাড়ি, মিউনিসিপ্যালিটির এক জমাদার, রামপেয়ারেকে ডেকে আনালেন। হীরুর নির্দেশ মত সে ড্রেনে নেমে, অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে, একটা স্মার্টফোন তুলে নিয়ে আসলো।
হীরু সেটা দেখে খুব খুশী হয়ে, তাকে একটা দু'শ' টাকার কড়কড়ে নোট ধরিয়ে দিলো। তারপর ফোনটা নিয়ে, কৃষ্ণদাকে বললো - দাদা, কিছু লীড হয়তো এটা থেকেই পাবো। সেক্ষেত্রে আপনার অনেক সাহায্য নিতে হবে। তবে আপাতত আমি এটা রাখছি, ঠিকঠাক করে দেখি - কি ক্লু পাওয়া যায় এর থেকে!
কৃষ্ণদাকে একাই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে হীরু ফোনটা নিয়ে গেলো কাছেই একটা সার্ভিস সেণ্টারে। বেশ কিছু টাকা অতিরিক্ত খরচ করে ফোনটাকে ঠিক ঠাক করে ঘরে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা গড়ালো তার।
বাড়িতে এসে, হাত পা মুখ ধুতে বাথরুমে ঢুকতে না ঢুকতেই, ফোনটা তারস্বরে বেজে উঠলো। হীরু তাড়াতাড়ি এসে ফোনটা ওঠাতেই দেখে - কৃষ্ণদার কল। হ্যালো বলার পর, আর তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই, কৃষ্ণদা সরাসরি বললেন - রাহুলের মাও খুন হয়েছে। বেলেঘাটার কাছে বাইপাশের ধারে, বডি পাওয়া গেছে!
হীরু - খুন? উনি ঐ রাহুল গোয়েলের মা? ঠিক বলছেন তো?
কৃষ্ণদা - হ্যাঁ, খুন এই জন্য বললাম - গায়ে শুধু অন্তর্বাস ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। ঐ পোশাকে এক জন সম্ভ্রান্ত গৃহবধূ, নিশ্চয়ই বাড়ির বাইরে যায় না! গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে পড়ে, জলে ডুবে মারা গেছে দেখানোর চেষ্টা হলেও, পোস্ট মর্টেম রীপোর্ট নিশ্চয়ই তা বলবে না!
ওখানে, তোমার বন্ধু মৌসুমী এখন অফিসার ইন চার্জ আছে, কথা বলে নাও৷ হীরু আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলো, কিন্তু কৃষ্ণদা ফোন কেটে দিয়েছেন দেখে, থেমে গেলো৷
তখনই বাইকটা বের করে দৌড় দিলো ঐ থানায়। মৌসুমী তখন ডিউটি শেষ করে বের হচ্ছিলো। অগত্যা তাকে বাইকে বসিয়ে নিয়ে, তার বাড়িতেই যেতে হলো তাকে।
ক্রমশঃ
