প্রথম রিপু - চতুর্থ পর্ব
প্রথম রিপু - চতুর্থ পর্ব
কৃষ্ণদা ততক্ষণে নিজের থানার নিকটতম ডিউটিরত অফিসারকে কল করে, রাহুলকে আটকানোর কথা বলে দিয়েছেন। ঐ চৌদ্দ তলার ওপর থেকে, রাহুলের গতিবিধি বেশ ভালোমতই দেখতে পাচ্ছিলো তারা। মৌসুমির মোবাইলে রাহুলের একটা ফটো পেয়েছিল হীরু, বডি ক্লেম করতে এসেছিলো যখন, তখনকার তোলা। সে ওটা কৃষ্ণদাকে পাঠিয়ে দিতে বললো তাঁর অফিসারকে, ওকে সহজে আইডেন্টিফাই করার জন্য।
ওপর থেকেই তারা দেখতে পেলো - রাহুল যে পথ দিয়ে পালাচ্ছে, সেই পুলিশ অফিসারটি দুজন কনস্টেবল নিয়ে, সেই পথেই উল্টোদিক থেকে আসছে। যথারীতি, তাঁরা তাকে পাকরাও করলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই। সেটা দেখার পর কৃষ্ণদা আবার কল করে, তাকে থানায় নিয়ে গিয়ে, ইন্টারোগেশন রুমে আটকে রাখতে বলে দিলেন।
রাত তখন প্রায় এগারোটা পার হয়ে গেছে। কৃষ্ণদা বললেন - এবার?
হীরু - এই ফ্ল্যাটটা একটু ভালো করে সার্চ করতে হবে দাদা। এখানে নিশ্চয়ই কিছু ক্লু তো আছেই। আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এখনও, কিন্তু মন বলছে - আছে কিছু না কিছু। নয়তো রাহুলই বা কিসের জন্য বাড়ি ছেড়ে এখানে ঘুরঘুর করছে। রহস্যটা বড় জটিল হয়ে উঠছে দাদা। চলুন ঘরটা সার্চ তো করা যাক আগে।
দুজনে তন্নতন্ন করে খুঁজে ফেললো গোটা ফ্ল্যাটটা। কিন্তু বিশেষ কিছুই সন্দেহজনক মিললো না তাদের। কৃষ্ণদা বললেন - ভাই, আমার আবার ভোর থেকেই ডিউটি আছে। আর রাত করলে, একটুও রেস্ট নেওয়া হবে না। আমরা বরং ফ্ল্যাটটা বাইরে থেকে লক করে দিয়ে যাই। দরকার হলে কাল ওকে নিয়েই বরং একবার আসা যাবে আবার?
হীরু - ঠিক আছে দাদা, আপনি চলুন। আমি জাস্ট একটু বাথরুম করে আসছি। বলে হীরু বাথরুমে ঢুকলো। মুখ চোখে ভালো করে জলের ছিটা দিয়ে, আয়নার দিকে চেয়ে - কি যেন একটা মিসিং লিংক আছে, ভাবতে ভাবতে ফেস টাওয়ালটা নিতে গিয়ে, একটু জোড়ে টান দিতেই, হাতের ধাক্কায় মিররটা পাল্লার মত দেওয়াল থেকে খুলে এলো - বাথরুম মিরর যেমন হয় আর কি!
কিন্তু এটা দেওয়ালে এমনভাবে সেট করা ছিলো, বুঝতেই পারা যাচ্ছিলো না - ওটা দেওয়ালে ফিক্সড করা নয়। যাই হোক, আয়নাটার পিছনে বেশ কয়েকটা খোপ, সেখানে রাখা ছিলো - বেশ কিছু দু'হাজার টাকার নোটের বাণ্ডিল, অনেকগুলো ফ্লেভারের একগাদা অব্যবহৃত কনডমের প্যাকেট, আর একটা মোবাইল ফোন!
হীরু সেগুলো ভালো করে নেড়ে চেড়ে দেখতে গিয়ে, একটা ছোট্ট চাবি পেলো, আর ভালো করে নজর করতেই, দেখতে পেলো - কিভাবে সেটার সাহায্যে, আয়নাটাকে ঐ দেওয়ালে ফিক্সড করার মত করে, লক করা যায়। মোবাইলটা অন করতেই, স্ক্রীনে আকাঙ্ক্ষা গোয়েলের ছবি ভেসে উঠলো। আশা করা যায় এটা ওনারই সেই মোবাইল, যেটা পুলিশ এবং হীরু দুজনেই খুঁজছিলো। সেটা নিজের প্যান্টের পকেটে চালান করলো হীরু।
তারপর, বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে হীরু বললো - দাদা, আপনি কাল ইন্টারোগেশনের সময়, ওকে কোনো মতেই বুঝতে দেবেন না যে, ওকে আমরা সন্দেহ করছি। শুধু ও পালাচ্ছিলো বলে আটকেছেন, এটাই বলবেন। আর ওর পরিবারের লোকজন - কে কোথায় আছে, তাদের কে কে ঠিক কি কি করে, কোথায় যায়, আর অবশ্যই সবার মোবাইল নম্বর গুলো চেয়ে নেবেন, ঐ বিনোদের টাও।
ওর মায়ের মৃত্যুর কথাও ওকে জানাবার দরকার নেই। শুধু ওর মায়ের বিষয়ে যখন জানতে চাইবেন তখন, ওর এক্সপ্রেশনটা খেয়াল করবেন। ব্যস আমার মনে হয়, এতেই কাজ হয়ে যাবে। আমিও ততক্ষণে, আরও কিছু তথ্য জোগাড় করে, আপনার কাছেই ফিরবো। এখন, ঐ সিকিউরিটির কাছ থেকে কিছু তথ্য নেওয়ার আছে, সেটা আমিই নিয়ে নিচ্ছি বরং। আপনি ততক্ষণ বাড়ির দিকে এগিয়ে পড়ুন। কাল বরং, আমি ডিটেলস নিয়ে হাজির হবো আপনার কাছে।
কৃষ্ণদা - তোমার কি মনে হয়, এদের সিকিউরিটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার থেকে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে ভালো হয় না?
হীরু - সিসিটিভি কাজ করছে না দাদা, আমি সেটা সকালেই দেখে নিয়েছি। সম্ভবত বেশকিছু দিন ধরেই কাজ করছে না। সোসাইটির অফিসের সামনের নোটিশ বোর্ডে, সেই ব্যাপারে একটা নোটিশও দেওয়া আছে, আমি দেখেছি। তাছাড়া, জিজ্ঞাসাবাদ নয়, আমি তো আলাপ করবো ওনার সাথে, দেখুন না।
বলে হাসতে হাসতে দুজনে লিফ্টে ঢুকলেন। নিচেয় এসে কৃষ্ণদা বেরিয়ে গেলেন বাইক নিয়ে। হীরু একটু সময় নিয়ে, তাঁর চলে যাবার খানিকক্ষণ পরই বেরিয়ে এলো। সিকিউরিটির কাছে গিয়ে, কৃষ্ণদা কোথায় গেলেন সে বিষয়ে জানতে চাইলো। তারপর একথা ওকথা করতে করতে ঢুকে গেলো বিনোদ কুমার, রাহুল গোয়েল আর তার মা আকাঙ্ক্ষা গোয়েলের বিষয়ে! যাবতীয় যা যা তার জানার ছিলো, মোটামুটি সব তার পেট থেকে বের করে নিলো সে এক এক করে।
যা জানলো, তা বেশ আকর্ষণীয় - আকাঙ্ক্ষা গোয়েল শুধু ফ্ল্যাট সাফ করতে নয়, গেস্টদের আপ্যায়ণ করার জন্যও এখানে এসে দীর্ঘসময় থাকতেন। তাছাড়া আগে প্রায়ই কিছু ইয়াং ছেলেও আসতো এখানে - যারা বোধ হয় ওনাদের বিজনেস গেস্ট ছিল না। কারণ, ওনাদের ব্যবসা সূত্রে যে সব গেস্টরা আসে, তাদের সঙ্গে ওদের স্ট্যাটাস ম্যাচ করে না!
সেও নাকি মাস পাঁচেক আগের কথা, এখন আর তেমন কেউ আসে না ওখানে - ওনাদের ঐ গেস্টরা ছাড়া। হ্যাঁ আকাঙ্ক্ষা গোয়েল নিজে অবশ্য নিয়মিত, রোজই আসেন বিকেলের দিকে, আর রাত করেই বাড়ি ফিরে যান। বিনোদের সঙ্গে তাঁর রীলেশন কেমন ছিলাে না ছিলো, সে বিষয়ে অবশ্য কিছুই বলতে পারলো না!
হীরু ওখান থেকে বেরিয়ে, আর জি করের দিকে এগোলো। ওখানে আয়ার কাজ করা ঐ মহিলার সঙ্গে গিয়ে দেখা করলো। তার কাছ থেকে অবশ্য বিশেষ কিছু জানতে পারলো না - শুধু আকাঙ্ক্ষা গোয়েলের বডির পোস্ট মর্টেম যে ডাক্তারের সুপারভিশনে হয়েছে তাঁর নামটা ছাড়া। রীপোর্টেও তাঁরই ফাইনালী সাইন করার কথা। তিনি যথেষ্ট সিনিয়র ডাক্তার, তাই তাঁর কাছে কিভাবে অ্যাপ্রোচ করা যায়, ভাবতে লাগলো হীরু।
আর জি কর থেকেই, এম বি বি এস করেছিলো সুমনা, ওর ক্লাস মেট। ভাবলো তার সাহায্য নিয়ে, কিছু লাভ হয় কিনা দেখা যাক। সুমনাকে কল করলো তখনই। দু' চারটে সাধারণ কথাবার্তার পর, পোস্টমর্টেম রীপোর্টের ব্যাপারে চলে এলো। ঐ সিনিয়র ডক্টরের দেওয়া রীপোর্টের কথাও বললো।
সুমনা বললো - উনি তো আমারও টীচার ছিলেন। অ্যানাটমির অনেক কিছুই, শুধু ওনার অভিজ্ঞতা দিয়েই শিখিয়েছিলেন আমাদের। তুই কথা বলতে চাইলে, কাল সকালে আয়, সাতটার মধ্যে আসবি - আমার এখান থেকে কাছেই স্যারের বাড়ি। তোদের ইন্ট্রোডিউস করিয়ে দিয়ে, আমি হাসপাতালে ডিউটিতে চলে যাবো। স্যার খুব ভালো, কথা বলে দেখিস। এখন রাখলাম রে, গুড নাইট।
ক্রমশঃ
