STORYMIRROR

Ahnaf Shahriar Ayon

Horror Tragedy Action

3  

Ahnaf Shahriar Ayon

Horror Tragedy Action

প্রফেসর কার্ল

প্রফেসর কার্ল

5 mins
4

১৭ শতকের দিকে ডাব্লিনে খুব বেশি সংখ্যক আইরিশ থাকতেন না। সেখানে যতজন মানুষের আনাগোনা চলতো তাদের দিয়ে সেখানকার অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অত্যন্ত সুগতিতে চলমান ছিল। প্রফেসর কার্ল তৎকালীন একজন ধন কুবের এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক।। আইরিসরা তখনো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীনে, তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল না বললেই যথেষ্ট হবে। এক প্রভাত বেলা পত্রিকায় এলো ডাবলিনের কেন্দ্রীয় মিউজিয়ামে একটি চিঠিকে নিয়ে অস্থিরতা কাজ করছে। সেদিন দিনের বেলা জাদুঘরের পোস্ট অফিসে একটি চিঠি আসে । চিঠিটি খাম বন্দি করা এবং তার ওপর ইংরেজি ডিজিট ব্যবহার করে কিছু লেখা ছিল। প্রথম আটটি ডিজিট ছিল শূন্য, পরবর্তী দুটি ছিল খালি ঘর । প্রথমত জাদুঘর অথরিটি একটি সাধারণ চিঠি বার্তা বলেই একে চালিয়ে দেয় , গুরুত্বারপ করে পড়াটাকে জরুরি মনে করেনি তারা। কোন এক সময় একজন দারোয়ান চিঠিটি বিনা অনুমতিতে খুলে ফেলেন। চিঠিটি পড়ে দেখেন এখানে সতর্কতাসরূপ কিছু লিখা ছিল। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মিউজিয়ামের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটি চুরির হুমকি দেয়া হয়,সবাই যেন মিউজিয়ামের বড় অর্থনৈতিক ক্ষতি জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকে।

প্রথমত তারা ভেবেছিল স্থানীয় থানা থেকে কোন প্রকার সতর্কবার্তা কিংবা মালিক পক্ষ থেকে নির্দেশনা এসেছে। কিন্তু তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর তারা বিষয়টি অস্বীকার জানায়। স্বভাবগত ভাবেই এটি সতর্কবার্তা নয়,বরং হুমকি!

প্রফেসর কার্ল বিষয়টি জানতে পেরে মিউজিয়ামের নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন । প্রকৃতপক্ষে জাদুঘরের বড় একটি অংশ প্রফেসরের ডোনেশনের মাধ্যমে চলে। তাই এ বিষয়ে কোন প্রকার সন্দেহ নেই যে এখানে বড় কোন ক্ষয়ক্ষতি হলে উভয়পক্ষই সমান বিপর্যস্ত হবে। প্রফেসর জানান মিউজিয়ামে কোনো চুরি হলে সাধারণত তা রাত্রিবেলা হয়, তাই আজ দুপুর থেকে এখানে সকল এক্সিবিশন বন্ধ করে দেওয়া হোক। সেদিন দুপুরবেলা থেকে পুরো মিউজিয়ামের চারদিক রেস্ট্রিকটেড এরিয়া বলে ঘোষণা করে দেওয়া হয়। আশেপাশে কারো উপস্থিতি দেখা যায় না । প্রফেসর কার্ল এখনো নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না, তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন জাদুঘরে মূল্যবান যে সমস্ত জিনিস আছে সবগুলো তিনি গোপনে মিউজিয়ামের বাইরে সরিয়ে নিবেন। তাই এখানে চুরি হওয়ার কোন সম্ভাবনা থাকবে না। এই সমস্ত পূর্বপ্রস্তুতির মাধ্যমে সকল সতর্কতা অবলম্বন করা হলো। সবার মনে একটি আতংকের জন্ম হতে লাগল,পূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা স্বত্ত্বেও সবার মধ্যে একটা শংকা কাজ করছিল৷

সন্ধ্যা নেমে আসল,নিরাপত্তার জন্যে আইরিশ কিছু সৈন্য আনা হলো। আইরিশ সৈন্যরা ততকালীন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্যতম সেরা সৈন্য বলে জানা যেত,হয়ত ইতিহাসবিদরা গবেষণা চালালে তাদের দু-একটি ত্রুটি বের করতে পারবে। রাতের আকাশে সম্পূর্ণ অন্ধকার নেমে আসার পর জাদুঘর সংলগ্ন সকল আবাসিক ও অনাবাসিক এলাকায় কোথাও মানুষের উপস্থিতি নেই। চলাচলের জন্য যে পথগুলো প্রয়োজন তার সবগুলোতেই কঠিন নিরাপত্তা ছিল।

সম্পূর্ণ রাত অপেক্ষমান থাকার পরও মিউজিয়ামে কোনো প্রকার চুরির ঘটনা ঘটেনি। সকলেই প্রায় হতভম্ব ছিলেন,কেউ যে মজা নিতে পারেন এ নিয়ে এটা কেউ ভাবতেও পারেননি৷ তবে এ ঘটনার সত্যতা তদন্তের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে তা প্রসেফর কার্ল অকপটে ঘোষণা দিয়ে দেন। মিউজিয়ামে যথারীতি পূর্বের সরানো মূল্যবান সামগ্রীগুলো রেখে দেয়ার কাজ শুরু হলো। প্রফেসর কার্ল প্রকৃতপক্ষে মিউজিয়াম অথরিটির কেউ নন,তবে অর্থের দাপটে তার হুকুমেই সব চলে। তিনি অনুমতি দিলে কর্মীরা থলেবদ্ধ সামগ্রীগুলো বের করেন। ঘটনাবশত একটি বিষ্ময়কর দৃশ্য দেখতে পাওয়া গেল,পুরাতন ভাষ্কর্য থেকে শুরু করে প্রাচীনমুদ্রা সবই আছে অক্ষত;তবে সবগুলো উপর আটটি করে শূন্য লিখা এবং শেষের দুটি ঘর ফাঁকা রেখে দেয়া হয়েছে...

[২]

লিওনার্দো রবার্ট স্মিথসোনিয়ান একজন আইরিশ ব্যবসায়ী ছিলেন। লিওনার্দোর জুতার ব্যবসা আয়ারল্যান্ড জুড়েই প্রসারিত ছিল,অর্থের অভাব সম্পর্কে তিনি এখন আর অবগত নন। এক রাত্রিবেলা লিওনার্দো ডাব্লিন মিউজিয়ামের সংলগ্ন রাস্তায় একা হাটছিল। হঠাৎ একদল বাদুড় তার উপর আক্রমণ করে বসে, বাদুড়গুলোর পাখনার আঘাতে লিওনার্দো লুটিয়ে পড়লে বাদুড়গুলো উধাও হয়ে যায়। লিওনার্দো দেখতে পায় তার সামনে এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন। আকারে লম্বাচওড়া, কালো কোর্ট পড়নে। মাথায় জাদুকরের মতন এক ত্রিকোণাকার টুপি পরিধান করা। অন্ধকারে স্রোতে লিওনার্দোর এমন সুযোগ হয়নি যে তার চেহারা দেখে তা পরবর্তীবার চেনার জন্য মনে রাখবে। লোকটি লিওনার্দোর মাথার কাছে একটি পেন্ডুলাম সংলগ্ন ছোট একটি ঝুলন্ত ঘড়ি রেখে যায়। এটি অনেকটি লকেট আকৃতির, তৎকালীন আইরিশরা এটিকে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রস্তাবে ব্যবহার করতেন।

পরেরদিন সকালবেলা লিওনার্দোর ঘুম ভাঙ্গে,সে প্রথম ভাবল হয়ত এটি একটি দুঃস্বপ্ন বটে। কিছু সময় পর লিওনার্দোর মেয়ে এসে বলে "বাবা এই ঘড়ির মতন লকেটটি তোমার ব্যাগের মধ্যে পাই!"

লিওনার্দো সেই লকেটটি হাতে নেয়৷ হাতে নিয়ে দেখলো,এর মধ্যে থাকা ঘড়িটি সঠিক সময়ই দেখাচ্ছে। লিওনার্দো বিষয়টি প্রফেসর কার্লের নিকট সংবাদ জানায়, তিনি লিওনার্দকে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। লিওনার্দো লকেটটি নিজের টেবিলের ড্রয়ারে রাখতে গিয়ে দেখে তার রুমে ভূমিকম্প শুরু হয়েছে। টেবিল জোরে জোরে শব্দ করে নড়ছে এবং অন্যান্য আসবাবপত্রের শব্দতেও বোঝা যাচ্ছে ভূমিকম্পনের উপলব্ধি । হাত থেকে রেখে দিলে ভূমিকম্প ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়, লিওনার্দের মাথায় তীব্র ব্যথা শুরু হয়। মনে হচ্ছিল যেন কোন একটি আচমকা শক্তি তার শরীরের প্রতিটি রক্তনালী এবং শিরা-উপশিরা একটি বিন্দুতে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।

পরবর্তী দিন যখন লিওনার্দো লকেটটি প্রফেসরের হাতে দেয়, তিনি এটি দেখে সম্পূর্ণ চমকে ওঠেন। মিউজিয়ামে সংরক্ষিত মূল্যবান বস্তুগুলোর মধ্যে একটি ছিল এটি । কিন্তু তা লিওনার্দোর হাতে কিভাবে আসে তা নিয়ে তিনি উৎকণ্ঠ হয়ে পড়েন। তিনি চিৎকার স্বরে লিওনার্দোকে জিজ্ঞাসা করতে থাকেন সে এটি কিভাবে পেয়েছে এবং কোথা থেকে পেয়েছে‌। তিনি হুবহু এরূপ একটি লকেট মিউজিয়ামে সংরক্ষণে রাখতেন। প্রফেসরের কানে এখন পর্যন্ত যত সংবাদ এসেছে, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি জানতে পারেননি যে মিউজিয়াম থেকে কোন কিছু চুরি হয়েছে। প্রফেসর কার্ল ততক্ষণাৎ ডাব্লিন মিউজিয়ামের কিউরেটরকে টেলিফোন কল করেন,খবর পান মিউজিয়ামে লকেটটি পাওয়া যায়নি। সবার চোখের অজান্তেই এটি চুরি হয়ে যায়। প্রফেসর কার্ল ফোন রেখে দেন।

হঠাৎ কিউরেটর সাহেব আবার ফোন দিয়েন,ফোন দিয়ে বলেন

-স্যার আমাদের তদন্তকারী দল একটু আগে দেখতে পায় মিউজিয়ামের যে গুপ্ত স্থানে আমরা পেন্ডুলাম লকেটটি সংগ্রহ করে রেখেছিলাম সেখানে কে যেন খোদাই করে ৭টি শুন্য লেখে দিয়ে গেছেন!

প্রফেসর এ কথা শুনে আচমকা হয়ে উঠেন৷ লিওনার্দোর হাত থেকে লকেকটা নিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন৷ লিওনার্দো এ সম্পর্কে কিছুই অবগত ছিল না।

কিছু সময় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকার পর তিনি লিওনার্দোকে বলেন,

-তুমি আমার কিছু সৈন্যসহ আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝখানে গিয়ে এই লকেটটি ফেলে দিয়ে আসো ১ সপ্তাহের মধ্যে।

লিওনার্দো জিজ্ঞাসা করে,

-কেন?

প্রফেসর বলেন,

-আমি এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না। তুমি শীঘ্রই নিজে উপলব্ধি করতে পারবে।

লিওনার্দো বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় দেখল একটি কালো কোর্ট এবং চশমা পরিহিত একজন ব্যক্তি তাকে ইশারা করে ডাকছেন। তিনি বললেন,

-আমি একজন হতদরিদ্র ব্যক্তি,আমি সামান্য অর্থের বিনিময় কার্ড বিক্রি করি। আপনি একটা কিনলে বড় উপকার হয় আমার।

লিওনার্দো একটি কার্ড কিনে নেয়ার পর লোকটি রাত্রির অন্ধকারের স্রোতে হারিয়ে যায়। বাসায় এসে কার্ডটি খুলে দেখতে পায় এতে পর পর ছয়টি শুন্য লিখা!....


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror