Arup Mitra

Classics

3  

Arup Mitra

Classics

প্রিয় বন্ধু

প্রিয় বন্ধু

5 mins
926


স্বপ্ন, বেশিরভাগ মানুষের মনের স্বপ্নের পাতায় একটি করে পাতা বাড়িয়ে চলে আর এই সব অপূর্ণ হ‌ওয়া স্বপ্ন মানুষ কে দৌড় করায়।তবুও মানুষ স্বপ্নের পিছনেই ছুটে চলে এই আশায় যদি স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়! 

ঋক এর মনের স্বপ্নের খাতা টা বেশ মোটা!ঋক আজও স্বপ্ন দেখে .....হয়তো কোনদিন তার জীবনে এমন কেউ আসবে যে ঋককে পুরোপুরি গ্ৰহন করবে ,সে জানে না সে কতো দূরে? তবুও ....

ঝক এর এখনো সকাল সন্ধ্যা মানালীর কথা মনে পরে...

সে শুধুই ভাবে যদি মানালীর সাথে ... তাহলে কি মানালী কে ভালো রাখতে পারতো না ...? মাঝে মাঝে তার মনে হয় শুধুই কি মানালীর পরিবার ..নাকি মানালীও...অনেক প্রশ্ন থাকে যার উত্তর শুধুই প্রশ্নের জন্ম দেয়, একমাত্র তার উত্তর জানতে গেলে অপরের মনে প্রবেশ করতে হয়, যা কারোর পক্ষেই সম্ভব নয়।পরক্ষণেই মনে হয় ,এই ভালোলাগার রেসটাই সারাজীবন থাক ! বেশী জেনে তার কি আর লাভ!!

ঝক ছোট থেকে বিশ্বাস করে, কাউকে অবিশ্বাস করার চেয়ে বিশ্বাস করে ঠকা অনেক ভালো। যে ঠকে, চিরকাল সেই জেতে..সে বিশ্বাস করে ভালোবাসতে তো পেরেছিল...

যদি কেউ ঠকায় তবে সে সেই 'অনুভূতি' কোন দিন‌ উপভোগ‌ করতেই পারেনি ,কোনদিনই পারবেও না।শুধু ভবিষ্যতে জিতবে এই আশায় শুধুই দৌড়ায়।


 আজ  অনিমেষ আর মানালীর বিবাহবার্ষিকী।

নানান ব‍্যস্ততায় আজ সারাদিন খবরের কাগজের পাতায় চোখ রাখতে পাড়েনি মানালী। রাতে খবরের কাগজের প্রথম পাতায় ঋক বোসের ছবিসহ নাম টা দেখে, না পাওয়ায় যন্ত্রণার মধ্যেও চোখ থেকে আনন্দ অশ্রু গালে নেমে এলো। তার মনে পড়ছিল কলেজে জীবনে র স্মৃতি, যা পুরনো কিন্তু যা তার কাছে এখনো নতুন। আজ আর দু চোখের পাতা এক করতে পারলো না মানালী।।

 আজ থেকে ঠিক দু বছর আগে নারী দিবসের দিন মানালী তার পরিবারের মতামত কে প্রাধান্য দিয়ে ‌‌অনিমেষ কে তার চলার পথের সঙ্গী হিসাবে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল। সেই দিনগুলোর কথা মনে পরলে আজও তার কাছে তার পরিবারের সবাইকে কেমন অচেনা মনে হয় , সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারে না ,তার মা-বাবা কোনো দিন...!!জ্ঞান হ‌ওয়ার পর থেকে যে মা -বাবা কে দেখে এসেছে নারী স্বাধীনতা নিয়ে ঘরের বাইরে বক্তৃতা দিতে ,সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের সম্বধনা আর অনুদান দিতে তারাই কিনা ....

ঋকের এর সাথে তার কবে যে বন্ধুত্ব হলো আর কবে যে ...এখন মনে করতে পারে না মানালী।ঋকের স্বাধীনচেতা মনোভাবটাকে সম্মান করতে করতে  মানালী স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল একদিন সে স্বাধীন হবে ঋকের সঙ্গে বিবাহের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে।  

তাদের সম্পর্কের কথা কলেজে র কেউ জানতো না , আসলে ঋক লোক দেখানো অনুভূতি তে বিশ্বাসী নয়,সে মনে করে অনুভূতি মনের মনিকোঠা থেকে আসে লোকদের দেখানোর বিষয় নয়।এই ভাবে তারা কলেজ পাশ করে।পাশ করার পরপরই ঋকের উপর দিয়ে একটা ঝড় বয়ে গেছিলো, মানালী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হলো ,ঋক এর উপর পৈতৃক ব‍্যবসার দায়িত্ব চাপলো।

হিসাব নিকাশে বরাবরই খুব কাঁচা ঋক। আসলে স্বাধীনচেতা ঋক তার সৃষ্টির মধ্যে জীবন খুঁজে পায়,ব‍্যাবসায় নয়! কিন্তু, কি আর করা যাবে!তীব্র অনিচ্ছা সত্বেও ঋক ব‍্যবসা সামলাতে বাধ্য হয়।

 যতদিন যায় তারা একে অপরের উপর নির্ভরশীল হতে থাকে, স্বাধীনচেতা ঋক কবে থেকে তার সমস্ত স্বাধীনতা মানালীর কাছে বন্দক রেখেছিল তা সে মনে করতে পারে না ...হয়তো প্রেমে পড়লে মানুষের সব ভালো লাগা তৈরী হয় অপরের ভালো লাগা কে ঘিরে!তা না হলে যে মানালী তার প্রতিটি পদক্ষেপ লোকদের দেখিয়ে করতো সেও এখন ঋকের ধ‍্যানধারনায় নিজেকে বিশ্বাসী করে তুলেছে এই ক'বছরে!

এইভাবে সময়ের সাথে সাথে একে অপরের উপর বিশ্বাস বাড়তে থাকলো ,অন‍্যদিকে মানালীর নারী স্বাধীনচেতা মা- বাবা  এতদিনে কিছু একটা আভাস পেয়েছে তারা মানালীর কাছ থেকে ঋকের ব‍্যাপারে ,ওর বাড়ির ব‍্যাপারে ,সব জানতে পেরে ঋককে বাদ দিয়ে মানালী কে স্বপ্ন দেখতে বললো।ওর মা বাবা ,মেয়েকে বারবার বোঝাতে লাগলো ,ঋকের কি ভবিষ্যৎ আছে! না আছে তোর মত শিক্ষাদীক্ষা, আর ওদের পারিবারিক অবস্থা,আর আমাদের .. !  আর ওর সৃষ্টি ! ওর চেয়ে হাজার গুন সুন্দর সৃষ্টিও জলের অভাবে অঙ্কুরেই মাটিতে মিশে যায়।তুই আমাদের একমাত্র মেয়ে তোর বিয়ে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন। সেই তোর ছোটবেলা থেকে,তোর বাবার‌ অনেক ইচ্ছা ,তুই অন্তত তোর বাবার মুখের দিকে চেয়ে ..!!.আর আজ পযর্ন্ত আমরা তোর জন্য যা যা করেছি সবেতেই তোর ভালোয় হয়েছে। মানালী কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না । মানালী শুধু ভাবতে লাগলো একটা মানুষের জীবন ... সত্যি তার নিজের কতটুকু!  একজন মানুষ সত্যি সত্যি একজনের কতটুকু ভালো করতে পারে ? মা - বাবা সত্যি -সত্যি কতটুকু ভালো আছে? ভালো থাকা বলতে লোকে কি ভাবে?এই পৃথিবীতে কতজন সত্যি সত্যি ভালো আছে? তার মনে হয় ভালো থাকা অনেকটাই লোকদেখানো, নির্ভর করে কতটা নিজে দক্ষ অভিনয় করতে পারছে তার উপর! এখনো প‌‌‌‌‌র্যন্ত তার জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপ পরিবার , পরিজন সবার ভালো লাগার জন্য ! সমাজের কাছে ভালো সাজার জন্য । মাঝে মাঝে খুব অসহ্য লাগে তার মনে হয় এই জীবনের সত্যি সত্যি কি প্রয়োজন?  

মানালী কি করবে ,ঋক কে কিভাবে বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। দিনরাত্রি শুধুই একটা ঘোরে আছে, মাঝে মাঝে নিজেকে অপরাধী লাগছে। অঙ্কের মেধাবী ছাত্রী টা আজ প্রথম এত চেষ্টা করেও অঙ্ক মেলাতে পারছে না।

যে স্বপ্ন সে ঋক কে দেখিয়েছিল তা কি করে মুছতে বলবে! ঋক কে সে কি বলবে?সম্পর্কে র এই পরিনতির জন্য নিজেকে সে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারছে না।

একটা সম্পর্ক ভাঙ্গলে যে এত কষ্ট হয় তা সে কোন দিন ভাবতে পারেনি ,যখন বন্ধুদের মুখে শুনতো বা সিনেমায় দেখতো তখন ওর এইসব বেশী বাড়াবাড়ি বলে মনে হতো, এখন ওর মনে হয় ওকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য‌ই হয়তো সময় ওকে ... এই সব ভাবতে ভাবতে চোখ ঝপসা হয়ে গেল।মানালী কিছুতেই ভেবে উঠতে পারছে না কি করে ঋক কে বলবে... 

মানালী নিজের চেয়েও ঋক কে ভালো দেখতে চায় ঠিক আগের মতোই। সে কিছুতেই ঋক কে হারতে দিতে চায়না,কিন্তু আজ তাকে ঋককে হারাতে হবে!মানালী বারবার কেবল ভাবছে ,কথাটা শোনার পর ঋক কি ভাববে?  তার আজকে বারবার প্রথম দিনের কথা মনে পড়ছিল ,যেদিন প্রথম ঋককে .... তখন 'না' হতে পারে জেনেই এগিয়ে ছিল, কিন্তু আজ! যদি কথা টা শোনার পর থেকে ঋক আর ওর সাথে কথা না বলে ,এতদিনের এত ভালো একটা সম্পর্ক কতো সহজেই ভেঙে যেতে পারে শুধু ভবিষ্যতে ভালো থাকার আশায়! যা আদৌও কতটা হবে ?তা কেউ জানে না সময় ছাড়া! হয়তো খুব ভালো হবে কিন্তু 'মন'  সে কতটা নতুন কে গ্ৰহণ করবে!!


কিছু কিছু সকাল থাকে যা রাতের চেয়েও অন্ধকার তা এতদিন পড়েছে ,এই প্রথম আজ নিজের চোখে দেখলো ঋক।ঋক জীবনের প্রতি পর্যায়ে হেরে হেরে আজ হারটাকে নিজের ভাগ্য বলে মেনে নিতে শিখেছে।

মানালী এই প্রথম ঋকের চোখের কোনায়....

 ঋক আবার তার স্বপ্নের মৃত্যুর প্রতীক্ষায় দিন গুনতে শুরু করলো ,নিজে মন থেকে ভেঙ্গে পড়লেও মানালী কে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করলো সব ভাগ্য বলে মেনে নিতে বললো‌।মানালী ভাগ্য বলে সব কিছু মেনে নেওয়ায় বিশ্বাসী নয় ,তার মনে হয় মানুষ ভাগ্যের কাছে পরাজিত হয় না, কিছু মানুষের  জন্য ভাগ্য মানুষের অধরা থেকে যায়!

ছোট বেলার জেদী মেয়েটা কবে যে সব কিছু যুক্তি দিয়ে ভাবতে শিখলো তা আজ আর মনে পরে না মানালীর।

মানুষ ভীষন রকমের অভ‍্যাস এর দা‌স। ভলোবাসার মাটিতে যে অভ‍্যাস গড়ে ওঠে তার গাছ খুব তাড়াতাড়ি বৃক্ষে পরিনত হয়!

মানালী বারবার মা বাবা কে বোঝাতে চেষ্টা করলো, মানালী বিশ্বাস করে চেষ্টা করলে পাহাড় প্রমাণ সমস্যার ও সমাধান আছে আর না চাইলে.... অনিচ্ছা সত্ত্বেও মা বাবার অ মত হতে পারলো না। মানালীর বাবা মা, তাদের পরিবারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ অনিমেষের বাড়ির সাথে মানালীর বিবাহের সমন্ধের ঠিক করলো। 


 কিছুতেই ঘুম আসছে না মানালীর ,টেলিভিশনের সুইচ অন করে খবরের চ‍্যানেলে চোখ রাখলো মানালী ,একি 

ঋক কে পুরস্কৃত করছে আমার মা ! মা বাবা সব কথা বলে ,এই কথাটা তো বলেনি ,তাহলে কি তারা আজ পরাজিত!! এতদিনে মানালী র চোখে মুখে সব পাওয়ার আনন্দ ,যেন সাহিত্য আ্যকাডেমী পুরস্কার টা ও পেয়েছে। একে‌ই বলে সময়! 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics