পরিনীতা ( শেষ পর্ব)
পরিনীতা ( শেষ পর্ব)
তখন দুর্গা পুজো এসে গেছিল । পরিনীতা কৌসিককে একদিন বলে --- " আমি কিছুদিন আমার মায়ের কাছে থাকতে যাচ্ছি । আমি কিন্তু এতো দিনেও ঘুরতে যাইনি মায়ের কাছে ।"
কৌসিক সেটা এক্সেপ্ট করে ।
তখন পঞ্চমী পরে গেছিল। কৌসিক দেখে ওর সব বন্ধু আর কলিগও নিজেদের স্ত্রীর সাথে ঘুরছে । কৌসিক বিরক্ত হয়ে ফোন করে পরিনীতাকে।
কৌসিক-- " পরিনীতা এক সপ্তাহ হয়ে গেছে তুমি চলে গেছ। পুজোয়,, সবাই, সবার বউ এর সাথে ঘুরছে,, আর আমি কি বসে থাকবো???"
পরিনীতা-- " বোঝ,,,, এক সপ্তাহ আমি নেই,,, তাতে তোমার কিরম লাগছে । ভাবো তো ,,, বাবার কিরম লাগছে??
তাও তোমার মনের বেদনা আমায় বলতে পারছ রেগে গিয়ে । বাবা কাউকে বলতে পারেনা । এবার তুমি ফিল করছ বাবার কিরম লাগে???"
কৌসিক,,, পরিনীতার কথা বুঝতে পারে এবার ।
পরিনীতা একদিন কৌসিককে বলে-- " ওনাদের রেজিস্ট্রি করিয়ে এক করিয়েদি না। আমার ওপর চেঁচিয় না প্লিজ ।"
কৌসিক-- " তুমি যখন বলছ তাই হবে।"
পরিনীতা-- " কৌসিক,,,,জানতাম তুমি আমার কথা বুঝবে ।"
কৌসিক-- " হমম্,,,, তবে বাকি কথা বললে না"
পরিনীতা-- " কি?
কৌসিক-- " আবার ওই একই কথা। আমার দিকে তাকাও,,, আর বলো না ।"
পরিনীতা-- " ছাড় না আমায় ।"
কৌসিক-- " পরিনীতা I love you । You are my heart। I can do anything for you । I can also...."
কৌসিকের কথা শেষ হওয়ার আগেই পরিনীতা বলে--"চুপ.......ওই কথাটা আর বলবে না । তখন আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য বলতে। I can die for you। এখন আমি তোমার ওয়াইফ ,,, এ কথা আমার এখন ভালো লাগে??? তুমি না থাকলে,, আমিও আর থাকব না।"
একদিন কৌসিক আর পরিনীতা,, দুজনেই সৌমেনবাবুর সাথে,, এটা নিয়ে কথা বলতে আসে।
কৌসিক-- " বাবা,,, আমি পরিনীতার কাছে সব শুনেছি । তুমি আন্টিকে ভালোবাস। এরম ভাবে লুকচ্ছ কেন??"
সৌমেনবাবু -- " রাজু এই কথাটা দ্বিতীয়বার উচ্চারণও করবি না । নিজের বাবাকে এসব বলছিস,,, ' তুমি কাউকে ভালোবাস''?? মুখ সামলে কথা বল। বড়ো হয়ে গেছিস মানে এরম নয়,,, নিজের বাবাকে এখন যা পারবি তাই বলবি। আর যাকে আন্টি বলছিস সে আমার বন্ধু । কোন মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব মানেই প্রেম নয়। "
কৌসিক-- " এটা যদি মিথ্যে হয়,,, তাহলে তুমি অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলছ কেন??? আমার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বল। "
সৌমেনবাবু কৌসিকের দিকে তাকিয়ে বলেন-- " তোর কি মনে হয়,,, আমি ২০ বছরের টিনেজার ছেলে,, যে তোর সাথে কথা বলতে লজ্জা পাব???
আর পরিনীতা তুই এসব কথা আমার নামে বলবিইবা কেন । ভালোবাসি বলে কি মাথায় উঠে নাচবি ।"
কৌসিক-- " এইভাবে পরিনীতার ওপর রাগ দেখাচ্ছ কেন তুমি?? ও সব সত্যি বলে দিয়েছে,,, তাই ??
পরিনীতার কথা যদি মিথ্যে হয়,, তুমি ঈশ্বরের সামনে এসে বল,, এগুলো সব মিথ্যে কথা।"
সৌমেনবাবু -- " বাঁদরামি করছিস বলে কি তোর মনে হচ্ছে না??"
পরিনীতা-- " না বাবা,,,, মনে হচ্ছে না। এতো বছর পরেও আন্টি তোমার কথা বলতে গিয়ে কি আনন্দ পাচ্ছিলেন। ওনার হাসির শেষ ছিল না । উনি আপনাকে এখনও সেই বন্ধুটাই ভাবে । আর বল্লেন " উনি বিয়ে করতে চাননি" ।কিন্তু একথা উনি কাউকে বলতে পারেননি ।
এর তো কোন অর্থ হয় ।
তুমি চেপে যাচ্ছ মনের কথা, তাই আন্টির মনেও যদি কোন ইচ্ছে থাকে,, আন্টিও চাপছে । আর তুমি ছাড়া আন্টির আর কেউ নেই । আন্টি,,, খুবই একা ।
তুমি ই ঠিক কর এতো বছর বাদে দেখা হওয়ার পর কি করবে ।
একটা কথাই বলব,,, ভালোবাসাকে কেউ আটকাতে পারে না । আমরা,,, তোমাকে ভালোবাসি । তোমার খুশিই আমাদের খুশি । তাই তো কৌসিক ??"
কৌসিক-- " একদম ।"
সৌমেনবাবুর চোখে জল চলে এসেছিল,, পরিনীতার কথা শুনে ।
বল্লেন-- " মনের কথাটা বের করেই ছাড়লি।"
কৌসিক-- " হ্যা,,,, কারণ ভালোবাসা কি,,, আমরাও তো জানি।"
সৌমেনবাবু -- " চুপ কর । বদমাশ ।"
এরপর একদিন সৌমেনবাবু মধুরিমাদেবীর সাথে একটা পার্কে ঘুরে,,, তারপর একটা হোটেলে যান।
মধুরিমাদেবী-- " কি করছিস সৌমেন?? এখনও কি তোর মাথায় বুদ্ধি এলো না?? এই বয়সে হোটেলের খাবার খেলে,, শরীর ভালো থাকবে??"
সৌমেনবাবু -- " আচ্ছা,, দাঁড়া না। হোটেল মানেই কি চাউমিন,, বিরিয়ানি নাকি?? তোর চেচানোর অভ্যাসটা এখনও গেল না।"
মধুরিমাদেবী কফি খেতে খুবই ভালোবাসতেন।
উনি দেখেন কফি এসছে ।
সৌমেনবাবু -- " কিরে চুপ করে বসে আছিস কেন??"
মধুরিমাদেবী -- " তোর এখনও মনে আছে আমি কফি খেতে ভালোবাসি?? "
সৌমেনবাবু -- " হমম্,,, মনে আছে ।"
মধুরিমাদেবী -- " তাহলে sandwich ও order দে।"
সৌমেনবাবু -- " মানে??? তোর ও মনে আছে,,, আমি
sandwich খেতে ভালোবাসি???"
মধুরিমাদেবী -- " হ্যা । তোর মনে থাকলে,,, আমার মনে থাকবে না?? কতো প্রিয় বন্ধু ছিলাম আমরা । ভুলতে পারি??"
সৌমেনবাবু-- " ছিলাম,,,, মানে এখন আর নেই । এখন আমরা বুড়ো,,, বুড়ি । আচ্ছা ।"
মধুরিমাদেবী -- " বুড়ি হব কেন আমি?? ৬০ বছর মানেই বুড়ি?? অসভ্য একটা । সেই আমাকে রাগানোর ধান্দা। এখনও শোধরায়নি ।"
সৌমেনবাবু -- " তুই ও তো তাই,,, রাগ আর কমল না তোর।"
মধুরিমাদেবী -- " তুই না,,, এখন সেই কলেজ লাইফে চলে গেছিস। ভুলেই গেছিস তোর বয়স কতো ।"
সৌমেনবাবু -- " বন্ধুর সাথে কথা বলতে গেলে,,, বয়স দেখার দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না।"
মধুরিমাদেবী -- " তুই আর পাল্টালি না,,, যা ছিলিস তাই রয়ে গেছিস ।"
সৌমেনবাবু -- " বেশি বকিশ না তো। খেয়ে নে।"
খাওয়ার পর মধুরিমাদেবী সৌমেনবাবুকে জিজ্ঞেস করেন-- " তা হঠাত্ এখানে আনলি কেন??"
সৌমেনবাবু -- " তুই সত্যিই সব ভুলে গেছিস।"
মধুরিমাদেবী -- " মানে???"
সৌমেনবাবু -- " আজ তোর জন্মদিন,,,, তোর সেটাও মনে নেই???"
মধুরিমাদেবী অবাক হয়ে গেছেন,,, সত্যিই উনি ভুলে গেছেন ।
মধুরিমাদেবী -- " তোর এখনও মনে আছে???"
সৌমেনবাবু -- " হমম্,,,, এই নে ।"
মধুরিমাদেবী -- " গিফ্ট প্যাক,,, আবারও যদি ওরকম হয়,,,, আমি কিন্তু,, আবারও তোর দিকে ছুড়ব ।"
সৌমেনবাবু -- " আরে না,,, সেরম নয়। তুই দেখ,,, আমি একটু বাইরে যাচ্ছি ।"
মধুরিমাদেবী -- সিগরেট খেতে,,,, তাই তো?? খবরদার খাবিনা । একদম নয়। তুই এখানে বোস ।"
সৌমেনবাবু -- " আরে না সিগরেট খেতে নয়।"
মধুরিমাদেবী -- " মিথ্যে কথা বলবি না, আমায় একদম । এখানে বস তুই ।"
সৌমেনবাবু -- " আচ্ছা ঠিক আছে । উফ!! তোর রাগ আর গেল না।"
বক্সটার ভেতরে সোনার দুল দেখে,,, মধুরিমাদেবীর খুব ভালো লাগে। তারপর দুলের তলায় একটা কাগজ দেখেন। কাগজটা পরে,,,, উনি চুপ করে বসেছিলেন।
সৌমেনবাবু -- " কি হয়েছে মধুরিমা,,,, চুপ করে আছিস কেন??? কিছু তো বল । তোর কি খুব বাজে লেগেছে??
then I am extremely sorry । চুপ করে থাকিস না। প্লিজ কিছু বল ।"
মধুরিমাদেবী একটু ভেঙ্গে পরেছিলেন।
বল্লেন -- " কথাটা আগে বলতে পারলিনা??? এখন বলছিস। এটা আমার ই মনের কথা ছিল । আজ যখন বল্লিই ,,, আমি সব সত্যিই বলে দিচ্ছি ।
আমি তোর সাথে অতো আনন্দ করতাম । তুই এলে খুব আনন্দ লাগতো,,,, তার একটাই কারণ ।
আমি তোকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।
কিন্তু,,, আমি একটা মেয়ে । আমি কি আর বলতে পারি?? ভয় লাগতো,,,, শুনলে যদি তুই বন্ধুত্ব ই ভেঙে দিস ।"
সৌমেনবাবু -- " তুই আমারই মনের কথা তোর মুখ দিয়ে বললি ।"
মধুরিমাদেবী -- " বাড়ি চল,,,, এসব কথা আর বলে লাভ নেই । সেই সময়টা চলে গেছে ।"
সৌমেনবাবু -- " তাই??? হাতটা একটু দে তোর।"
মধুরিমাদেবী -- " কেন,,, কি করবি??"
সৌমেনবাবু -- " আরে কেটে তো আর নিয়ে নেব না। একটু চোখ বন্ধ কর না।"
মধুরিমাদেবী -- " কি করছিস??"
সৌমেনবাবু -- " বন্ধ কর না।"
মধুরিমাদেবী চোখ খুলে দেখেন,,,, সৌমেনবাবু ওনাকে ফিঙ্গার রিঙ্স পরিয়ে দিয়েছেন । উনি চুপই হয়ে গেছিলেন দেখে ।
মধুরিমাদেবী -- " আংটি???"
সৌমেনবাবু -- " হমম্,,, প্রপোস করলাম,,,, will you marry me??"
মধুরিমাদেবী হাসি মুখে,,, লজ্জার সাথে বলছিল -- "ছাড় আমায় "
সৌমেনবাবু -- " না। তখন না হয় আমি প্রকাশ করতে পারিনি আমার মনের ভালোবাসা। এখন আমি আর পারবো না,,, নিজের ভালোবাসাকে ছাড়া থাকতে । আজ অন্তত,, চলে গিয়ে আমায় ব্যথা দিস না । আমার হাতের ওপর তোর হাতটা রাখ না। "
মধুরিমাদেবীর চোখে জল এসে গেছিল । উনি তারপর ওনার হাত সৌমেনবাবুর হাতের ওপর রেখে দেন।
মধুরিমাদেবী -- " কেন এরম করছিস??? তোর পরিবার কি ভাববে । ক্ষমাই করবে না আমায় ।"
সৌমেনবাবু -- " তাই?? তাহলে চল আমার দুই সন্তানের কথা তোকে বলি।"
সবকিছু শুনে মধুরিমাদেবী অবাক হয়ে বলেন -- " কি বলছিস???"
সৌমেনবাবু -- " হমম্,,, সত্যি কথা বলছি ।"
এরপর সৌমেনবাবুর সাথে মধুরিমাদেবীর রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হয়ে যায় ।
পরিনীতা-- " কৌসিক,,,,, কালরাত্রিটা আর হলো না,,, তাই না????"
কৌসিক-- " হমম্,,,, বউভাত টাও মিস্ করলাম ।"
সৌমেনবাবু -- " একটা থাপ্পড় মারব এবার,,,, শুতে যা।"
পরিনীতা-- " বাবার নতুন জীবন বলো।"
কৌসিক-- " একদম । কিন্তু তুমি না থাকলে হতো না । আমি ছেলে হয়ে যা বুঝলাম না,,, তুমি বউ হয়ে সেটা বুঝলে। তোমার মন এতো ভালো ।"
পরিনীতা-- " চুপ করো। আমি ও কি পারতাম,,, তুমি না থাকলে?"