প্রেমের শুভ সূচনা
প্রেমের শুভ সূচনা


বিপ বিপ। বিপ বিপ। অ্যালার্ম বেজেই যাচ্ছে। আর ওদিকে রণিত ঘুমিয়েই যাচ্ছে। বলা ভালো, সপ্ন দেখছে। দেখছে একটি খুব সুন্দর মেয়ে তার দিকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে। হাসছে খিলখিল করে। আবার রণিতের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিচ্ছে। রনিত তাকে কাছে থেকে দেখবার জন্য যেই না হাত বাড়াবে, অমনি তার হাত লেগে পড়ে গেলো অ্যালার্ম ঘড়িটা।
ধরমরিয়ে উঠলো রণিত। প্রত্যেকদিন এর মত এইবারও আর লেট নাইট করবনা বলে ব্রাশ করতে ঢুকলো বাথরুমে।
রণিত একজন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। পূর্ত দপ্তরে কর্মরত গেজেটেড পোস্টে। হলে কি হবে, এখনো কলেজ ছাত্রের মত চলাফেরা। তার বস তাকে খুব ভরসা, আদর করেন। আবার প্রত্যেকদিনই তার দেরি করে আসার জন্যে তাকে স্নেহভরে শাসন ও করেন। বলেন তাড়াতাড়ি বিয়ে কর, তাহলে এমনিতেই সময় বউএর শাসনে এমনিই ঠিক হবি। রণিতও হেসে হেসে তাহলে আর বিয়ে করবনা স্যার বলে পাশ কাটিয়ে যায়। অফিসের সবার সঙ্গেই তার সুসম্পর্ক। বেশ ভালই কাটছে তার জীবন।
এদিকে রনিতের মা বাবা তার বিয়ের জন্য হন্যে হয়ে পড়ে আছেন। ওঝা, বদ্যি, মাট্রিমনি, আত্মীয়, কেউ বাদ নেই। ওদিকে রনিতের ধারণা দুনিয়ায় কোনো মেয়েই নেই যে তার সাথে মিলবে। তো সেও মাকে উৎসাহ দিয়ে যেত, কারণ সে জানে কোথাও মিলবে না কেউ।
তবুও কোনো বৃষ্টিভেজা বিকেলে কলম ধরত সে, বা গাড়িতে হালকা গান চালিয়ে বেরিয়ে পড়তো সে, মনের অজান্তে বাস করা মেয়েটার সঙ্গে দুদন্ড সময় একান্তে কাটাবার জন্য, কথা বলার জন্য।
অফিসে গাড়ি পার্ক করে ঢুকতেই রনিতের বস আসুন বরসাহেব, আজও তাড়াতাড়ি বলে হাসতে লাগলেন। রণিত ও আর বলবেন না স্যার বলে চেয়ারটা টান দিয়ে বসলো স্যারের চেম্বারে।বস আজ বেশ খুশি কেন জানি।
বস:"শোন কাজ আছে একটা, করবি?"
রণিত:"হ্যাঁ বলুন না।"
বস:"একটা স্টেজ শো আছে বিকেলে। তার জন্য চিঠি দিয়েছে, স্টেজের ইলেকট্রিক্যাল সিকিউরিটি চেক করবার জন্য, তোকে দিয়েছি দায়িত্ব।"
রণিত :"আরে না না, এসব কাজ ভাল লাগে না, গিয়ে হাঁদারাম এর মত দাড়িয়ে থাকা। দুর, এসব পোষায় না। পারব না।"
বস:" তুমি করবে চাঁদু, ব্যাচেলর ছেলে, তার উপর আসছে অল গার্লস ব্যান্ড। তোর তো মজাই মজা।" বলে মুচকি হাসলেন।
রণিত:"আরে আমি তো কাজ এনা করতে যাবো, কেনা কে আসবে তাতে আমার কি?, নানা,পারবোনা, বড্ডো বরিং কাজ"।
বস(কপট রাগ দেখিয়ে): "তুমি করবে, অার কথা নয়, অফিসের গাড়ি দিয়ে দিচ্ছি, নিজের রুমে ঢুকে পড়ো চিঠিটা।"
রণিত অার কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো।
বস এইফাঁকে রণিত এর বাবাকে হ্যাঁ হ্যাঁ, চিন্তা করবেন না, ঠেলে রাজি করিয়েছি, বলে ফোন রেখে দিলেন।
রণিত অফিসের গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে গেলো দুপুরের পরে। স্টেজের কাছে এসে দু একটা জরুরী নির্দেশ দিয়ে একটা চেয়ার পেতে বসে পরলো। বড্ডো জঘন্য লাগে তার এই কাজ।
"এক্সকিউজ মী?" একটা মেয়ের গলার আওয়াজ।
"হ্যাঁ , বলবেন, স্টেজ চেক করা শেষ হলেই সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দেব।" রণিত না তাকিয়েই উত্তর দিল।
"না না সেজন্য আসিনি"
"তবে", বলে ঘুরে তাকাতেই রণিত থ।
এ কাকে দেখছে, এ তো ভোরবেলার স্বপ্ন পরী।
সাড়ে পাঁচ ফুটের মত উচ্চতা, সুন্দর গভীর চোখ, তার উপর ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। একটা কালো ঢাকাই জামদানি শাড়ি তে তিস্তাকে অপরূপ লাগছিল।
"তাকিয়েই থাকবে, না কিছু বলবো?"
"আরে সরি সরি, না বলুন।"রণিত হালকা অপ্রস্তুত। অজান্তে নিজের মাথায় একটা চাটি দিল।
"ইটস ওকে, বলছি কি তুমি সার্টিফিকেট এর একটা কপি আমাদের ও দেবে প্লিজ, একটা রিকোয়েস্ট।"
"নানা ঠিক আছে, রিকোয়েস্টের কি আছে, দেব নাহয় "
"আমি তিস্তা দত্ত।"
"হ্যাঁ ঠিক আছে, ওহ, আমি রণিত রয়।"
"ঠিক আছে, আমি রিহার্সেল এ যাই"।
এই বলে তিস্তা চলে গেলো।
রণিত ধপ করে চেয়ার এ বসলো। ভোরবেলার সপ্ন সত্যি হয় জানতাম, কিন্তু এভাবে, না বেশি ভাবছি, কিন্তু কেনো ভাবছি, দুর কেনো যে এলাম, ইচ্ছা করছে আবার দেখি, নানা কি ভাববে, এইসব এলোমেলো চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল।
ভাবতে ভাবতে কখন যে রিহার্সেল রুমের কাছে চলে এসেছে, নিজেও জানে না।
রিহার্সেল রুম থেকে ভেসে আসছে "সেদিন দুজনে, দুলেছিনু বনে, ফুলোদোরে বাঁধা ঝুলনা, আরে শ্যামলী ধুরর আবার ভুল করছিস কর্ডটায়,ঠিকমতো ধর, আর বিপাশা হালকা বিট দিবি শুরুতে, দিয়া আবহ সুর আরেকটু চাপা কর, কি করছিস, বেশি সময় নেই হাতে", তিস্তার গলার আওয়াজ।
"আরে তুমি?" রণিতকে দেখে তিস্তা বলে উঠলো।
"হ্যাঁ, মনে কিছু নিয়না, আসলে রবীন্দ্রসঙ্গীত খুব ভালো লাগে আমার, তাই শুনতে চলে এলাম, মাইন্ড করোনা যেনো আবার।"
"আরে নানা, আজকালকার ছেলেদের রবীন্দ্রসঙ্গীত ভালো লাগে,আশ্চর্য?, এসো ভেতরে এসো"
রণিত বসলো। আবার গান শুরু হলো।
"নাহ্, দারুন গায় মেয়েটা, কিন্তু কোথাও না কোথাও গিটার টা মেলাতে পারছেনা", নিজের মনেই বিড়বিড় করে উঠলো।
"আরে শ্যামলী আবার ভুল করছিস গিটার এ, বাজাবি নাকি, নাহলে বল, শেষ মুহূর্তে বলে বসিস না আবার, শরীর খারাপ লাগছে?"
" না তিস্তা দি, আসলে বাড়িতে মন পড়ে আছে, বাবার শরীরটা একটু কেমন"
"তাহলে চলে যা;দেখি অন্য কাউকে পাই কিনা"
"না অসুবিধা হলে ফোন করবে"
"ঠিক আছে বলিস, তবে লাস্ট মোমেন্ট করিসনা"
এরি মধ্যে রনীতের মোবাইল এ ফোন। স্টেজ তৈরী। রনিতের ছাড়পত্রের অপেক্ষা।
রণিত সার্টিফকেট নিয়ে তিস্তার কাছে এলো।
তিস্তা:" অসংখ্য ধন্যবাদ। অনেকখানে শো করতে যাই, কেউ দেইনা, আসলে আমাদের ইলেকট্রিক গিটার অনেকগুলো তো, তো তাই একটা চিন্তা থাকে, থ্যাংক ইউ, অার হ্যাঁ, সন্ধ্যাবেলা আসবে কিন্তু, এলে খুশি হব, সঙ্গীতপ্রেমী ভালই লাগে"।
রণিত:"হ্যাঁ হ্যাঁ, আচ্ছা এছাড়াও কিছু দরকার হলে বলবে কিন্তু, বিন্দুমাত্র সংকোচ করবে না, এই আমার ফোন নম্বর",বলে চলে এলো।
ঘরে এসে বসকে ফোন করতেই বস সবসুনে জোর হাসলো। বললো যাক বুদ্ধিমানের মতো ফোন নম্বর দিয়ে এসেছিস। রণিত ও হাসতে হাসতে আপনিও পারেন, ইত্যাদি ইত্যাদি বলে ফোন রেখে দিল।
হালকা তন্দ্রা লেগেছিল ৪৫ মিনিটের মত। এরই মধ্যে তিস্তার দু দুবার ফোন।
রণিত ঘুরিয়ে ফোন করতেই "সরি ডিসটার্ব করছি, এখুনি খবর এলো শ্যামলীর বাবার শরীর খুব খারাপ। এখুনি আগরতলা যেতে হবে, একটা গাড়ি ঠিক করতে পারবে, জানি বেশি জিজ্ঞাসা করছি, কিন্তু বিপদে পড়েছি জানো?" একসাথে তিস্তার সব কথা।
রণিত:"তুমি চিন্তা করনা, আমি আসছি, একদম টেনশন নিওনা" বলে গাড়িটা বের করলো।
তারপর তিস্তা আর শ্যামলী কে একসাথে নিয়ে নিজেই আগরতলার দিকে ছুটলো। এমনিতে গাড়ি চালাতে পাকা সে।
সারা রাস্তা তিস্তা শ্যামলীকে সাহস যুগিয়ে গেলো। বাড়ির কাছে যেতেই শ্যামলীর মা হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাচ্ছেনা। তাই দেখে রণিত বিনা বাক্যব্যয়ে সোজা শ্যামলীর বাবাকে নিয়ে ILS এ চলে গেলো। ডক্টর দেখে টেখে বললেন একদম সময়ে আসাতে রক্ষা। শ্যামলীর মা অকুণ্ঠ আশীর্বাদ করলেন রণিত অার তিস্তাকে। শ্যামলীকে বাবার যত্ন নেওয়ার কথা বলে ওরা দুজন বেরিয়ে এলো।
তিস্তা:"আবার থ্যাংক ইউ, থ্যাংক ইউ সত্যি। এভাবে দৌড়িয়ে না এলে কি যে হতো, আবার কষ্ট দিলাম তোমাকে, তাও প্রথম আলাপেই, খুব খারাপ লাগছে আমার?"
রণিত:" আরে নানা। মানুষ তো দাঁড়াবে মানুষের পাশেই। তো চলো, তোমার শো এর আর বেশি দেরি নেই।"
তিস্তা:"অার কিসের শো, লিড গিটরিস্ট শ্যামলী, কি করবো অার, বাকিদের চলে আসতে বলবো। খুব ইচ্ছে ছিলো শোটা করার, অনেকদিনের প্রস্তুতি" চোখে হালকা জল নিয়ে ফোনটা বের করতে করতে কথাগুলো বললো।
রণিত: আরে চলৈনা, দেখিনা, দেখেছো তো গাড়ি অ্যারেঞ্জ হয়েচে, সেরকম গিটারিস্ট ও পাওয়া যাবে, চলো আগে।" বলে ঠেলেঠুলে তিস্তাকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো।
তিস্তাকে স্টেজের কাছে নামিয়ে দিয়ে রণিত বললো ডাক এলে কোনো চিন্তা না করে স্টেজে উঠে শুরু করতে , বাকিটা ওর দায়িত্ব। বলে ঘরে চলে এলো।
এসে পুরনো গিটার টা আবার বের করলো রণিত। অনেকদিন বাজানো হয় না। কিছুক্ষণ বাজিয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়ালো।
এদিকে স্টেজ এ তিস্তার ডাক পড়ে গেছে। আর উপায় নেই। রণিতেরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। ফোন নট রিচবল।
বিপাশা আর দিয়া দুজনেই দিদি কি করবো বলে দপ করে বসে পড়লো। না উত্তর তিস্তার কাছেও নেই। তার একটাই ভরসা, রণিত কথা দিয়েছে, কথা রাখবে।
স্টেজে উঠে তিস্তা শুরু করলো। খালি গলায়।
"সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে, ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা
সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে, ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা
সেই স্মৃতিটুকু কভু খনে খনে যেন জাগে মনে
ভুলো না, ভুলো না, ভুলো না
সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে, ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনা"।
দর্শাকাশন থেকে এক দুটো মন্তব্য ভেসে আসছে 'খালি গান শুনতে পয়সা দিয়েছি, খালি দেখতেই সুন্দর, বাজনদারের খরচ বাঁচিয়ে দিয়েছে রে' ইত্যাদি ইত্যাদি।
তিস্তার চোখে হালকা জল। সত্যি মানুষকে প্রথম দেখায় এতটা বিশ্বাস করা ঠিক হইনি, আশাও করা ঠিক হয়নি।
হটাৎ
"সেদিন বাতাসে ছিল তুমি জানো আমারি মনের প্রলাপ জড়ানো
সেদিন বাতাসে ছিল তুমি জানো আমারি মনের প্রলাপ জড়ানো" রণিত গাইছে। কাঁধে গিটার।
তিস্তা অবাক। রণিত হালকা চোখাচোখি হতেই ইশারা করলো সামনের দিকে তাকিয়ে গাইতে।
গাইছে তিস্তা আবার। কিন্তু খুশিতে, আনন্দে, অশান্ত ঝর্নার মত , শান্ত প্রকৃতির ডাকে। রণিত কথা রেখেছে।
দুজনে দুয়েট গাইলো।
"যেতে যেতে পথে;পূর্ণিমারাতে চাঁদ উঠেছিল গগনে,
দেখা হয়েছিল তোমাতে আমাতে কি জানি কি মহালগনে
চাঁদ উঠেছিল গগনে
এখন আমার বেলা নাহি আর,
বহিব একাকী বিরহের ভার
এখন আমার বেলা নাহি আর,
বহিব একাকী বিরহের ভার
বাঁধিনু যে রাখী পরানে
তোমার সে রাখী খুলো না,
খুলো না
ভুলো না, ভুলো না, ভুলো
না
সেদিন দুজনে দুলেছিনু
বনে, ফুলডোরে বাঁধা
ঝুলনা"
শো শেষ। কিন্তু হাততালি শেষ নয়। শেষ নয় স্ট্যান্ডিং ওভেশন।
প্রাণভরে উপভোগ করলো তিস্তা মুহূর্তটা। এইজন্যই গান গাওয়া, গান শেখা, উপস্থাপনা করা, এই জন্যই।
"রণিতদা , তুমি দেখি একদম সিনেমার হিরো। বাবা তিস্তা কি চিন্তাই না করছিল, ভেবেছিল আসবেই না বুঝি আর, থ্যাংক ইউ আবার, কি বলে যে ধন্যবাদ দেব" বিপাশা, দিয়া একসঙ্গে বলে উঠলো।
তিস্তার চমক ভাঙলো। আরে, রণিতকেই তো বলা হইনি। কতকিছু ভাবছিল সে।
রণিতএর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে রইলো তিস্তা। ইচ্ছা করছে রণিতকে জড়িয়ে ধরে থ্যাংকস বলবে।
তিস্তা:"আর কি বলবো, বিশাল উপকার, ভাষা তে প্রকাশ করতে পারবোনা, সম্মান বাছিয়েছ আমার, আমার ব্যান্ডের।"
রণিত:"ওসব পড়ে বলবে, আগে শ্যামলীর একটা খবর নাও, আর চলো হোটেল এ ছেড়ে দি"।
তিস্তা শ্যামলীর খোঁজ নিল। ভালই আছে বাবা। স্ট্রোক করেছিলেন। এখন অনেক সুস্থ। রণিতকে অনেক আশীর্বাদ করেছেন।
সব শেষ হতে অনেক রাত। বিদায় নেবে রণিত ও তিস্তা। একে অপরের কাছ থেকে। কিন্তু কেউ কাউকে বিদায় দিচ্ছেনা। দিতে চাইছে না।
দিয়া, বিপাশা মুখ টেপাটিপি করে হাসতে লাগলো। চলরে আমরা যাই, ডিসটার্ব করবনা বলে তিস্তার কড়া চাউনি কে তোয়াক্কা না করে চলে গেলো হোটেলের ভেতরে।
তিস্তা:"চলে যাবে?"
রণিত:"যদি চাও"।
তিস্তা:"আগে বলো ম্যানেজ করলে কিভাবে, ফোনে ও পাচ্ছিলাম না যে।"
রণিত:"প্রথমেই বলি আমি গিটার ৪বছর শিখেছি, আর গানে বিশারদ, তো কিছুটা জ্ঞান তো আছে। অার অর্গানাইজার আমাদের অফিসের কাছের লোক, তো সেটা অসুবিধে হইনি, আর গাড়িতে ফোন রেখে এসে কথা বলছিলাম, তাই পাওনি, এই।যাহোক সব ভালোয় ভালোয় মিটলো। রেস্ট নও।"
তিস্তা: "ওমা,বলেছিলে না আমি বললে যাবে?"
রণিত:"ও সরি, হ্যাঁ।"
তিস্তা:"লং ড্রাইভে যাবে?"
রণিত:"এত রাতে?"
তিস্তা:" তাতে কি? তুমি আছো না? বিপদে পড়লে আবার বাঁচাবে,চলে, আরেকটু একসাথে সময় কাটাই, কাল তো রবিবার"।
গাড়ি চলতে লাগলো। গাড়িতে অনেক কথা হলো। তিস্তা পেশায় ডেন্টিস্ট। আর নেশায় গায়িকা। রণিতও নিজের জীবনের টুকরো টুকরো ঘটনা বললো। তিস্তার এই প্রাণোচ্ছলতা তার রাতকে মধুময় করে তুলেছে।
গান ধরলো রণিত। সঙ্গ দিল তিস্তা।
"হয়তো তোমারি জন্য
হয়েছি প্রেমে যে বন্য
জানি তুমি অনন্য
আশার হাত বাড়াই
যদি কখনো এ প্রান্তে
চেয়েছি তোমায় জানতে
শুরু থেকে শেষ প্রান্তে
শুধু ছুটে গেছি তাই।"
রণিত অপরিসীম মুঘ্ধতায় তিস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো। তিস্তা ও তাকিয়ে রইলো তার দিকে। দুজনের হাত অজান্তে এগোচ্ছে। দুজনের ঠোঁট কাঁপছে, এক মহামিলনের প্রত্যাশায়, এগিয়ে যাচ্ছে একে অপরের দিকে এক নতুন বন্ধনের সূচনায়। এক নতুন ভবিষ্যতের দিকে।
সকাল হতে তিস্তাকে ছেড়ে দিল স্টেশনে। দুজনেই জানে দুজনের মনের কথা।
ফিরে এসে মাকে ফোন করতেই মা বলে উঠলো বসকে বল। যাক ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন।
সব বুঝলো রণিত। হাসলো শুধু। না ভোরবেলার সপ্ন সত্যি হয় তাহলে।
প্রেমের সূচনা হবে দুজনের জীবনে। এক নতুন অধ্যায় রচনা হবে। এক নতুন দিগন্ত খুলবে। দুটি ফুল ফুটবে একসাথে। বলবে ওরা "আমি থাকবো তোর পাশে, হাত ধরব তোর, ভালবাসব, তোকে নিয়েই বাঁচবো , শুধু তোমারই জন্য, শুধু তোমারই জন্য, শুধু তোমারই জন্য"।