প্রেমের অষ্টমী
প্রেমের অষ্টমী


অভীক আর স্বর্নিমার প্রথম দুর্গাপুজো একসাথে। হ্যা প্রথম, কারণ আজকের থেকে ছয় মাস আগে অভীক আর স্বর্নিমা দুই জনই দুইজনের অপরিচিত ছিল,আজ তাদের বাবা মায়ের সুবাদে একে অপরকে একটু চেনা হোয়েছে। একটুই, কারণ এই ছয় মাসের আলাপে স্বর্নিমা অনেক সপ্রতিভ হয়ে গেলেও অভীক এখনো লাজুক। খালি চুপচাপ কথাগুলো শোনে আর মাথা নাড়ে, মাঝে মাঝে এক দুটো মন্তব্য করে এই যা। স্বর্ণীমা প্রথম প্রথম ভাবত অভিকের বোধয় তার সঙ্গে কথা বলতে বা সময় কাটাতে ভালো লাগেনা। তাই বারদুয়েক চেষ্টাও করেছে বলতে যে ভালো না লাগলে বলে দিও, রাগ করবনা। কিন্তু অভীক এই কথা শুনলে জাস্ট একটা অভিব্যক্তি দিয়ে বসে থাকে যে, বলো না , শোনার জন্যই বসে আছি। এটাও লক্ষ্য করেছে স্বর্ণিমা যে রাস্তায় হাঁটতে গেলে অভীক সবসমই রাস্তার দিকটা নিয়ে নেই, স্বর্নীমা কে ভেতরে ঠেলে দিয়ে। বা রাস্তা পার হওয়ার সময় অজান্তেই স্বর্নিমার হাতটা শক্ত করে ধরে ফেলে, কিন্তু পার হওয়ার পর যেই টের পায় স্বর্ণীমার হাত তার হাতে, সঙ্গে সঙ্গে ভীতসন্ত্রস্ত হোয়ে ছেড়ে দেই, না জানি কি অপরাধ করেছে। বা হটাৎ বৃষ্টি এলে সবার আগে স্বর্ণিমার মাথায় ছাতা ধরে, তারপর নিজের মাথায় যদি হয়, নাহলে ভিজতেই থাকে বাদুড়ের মত। স্বর্নিমা তখন মুখ টিপে হাসে আর মাথা নাড়ে।
অভীক বেছারাও কি করে। পরিবারের বড় ছেলে হলে যা হয়, সংসারের সব দায়দায়িত্ব তার উপর। এমনিতেই বয়েজ স্কুল এ পড়াশুনা, তার ওপর আবার ইঞ্জিনীরিং পরে সঙ্গে সঙ্গে চাকরি, পুরো সরলরেখায় এসেছে। কারণ অভীকের বাবা সবসমই বলতো যে বাবা ,তোমাকে সারাজীবন খাওয়ানোর মত ক্ষমতা আমার নেই, তুমি কিছু না করলে আমরা পথে বসে যাবো যে। সেই থেকেই অভীক তার সব ইচ্ছা জলাঞ্জলি দিয়ে জাস্ট ভাবত যে কবে কলেজ শেষ হবে আর কবে চাকরি করে বাবা মা কে দায়ভার থেকে মুক্ত কর্বে। যাও কয়েকটা মেয়েকে ভাল লাগতো, বুড়ো বাপটার কথা ভেবে প্রেম গুলোকে না বলা কথা ও কাহিনী হিসেবে বানিয়ে নিয়েছিল।স্বরনিমা র সাথে যখন প্রথম আলাপ, তখনই অভীকের অল্প অল্প মনে ধরেছিল তাকে। ভাল লাগতো স্বর্নিমাকে, একে তো সুন্দরী, তার উপর তার আচার ব্যবহার দেখে অভীক রীতিমতো শাহরুখ খান। খুব ইচ্ছে করতো গল্পও করার সময় স্বর্নীমার চুল যখন তার মুখের ওপর এসে পড়তো, আলতো করে সরিয়ে দিতে। ইচ্ছে করতো স্বর্নিমা কে জড়িয়ে ধরে বলতে " হ্যাঁ ভালোবাসি তোমাকে, কাছে রাখতে চাই তোমাকে", কিন্তু বলতে পারতোনা। কারণ ওই যে মুখচোরা ছেলে।
আজ দুর্গাপূজার অষ্টমী দিন। সকালে স্বর্ণীমা বলে রেখেছিলো রামকৃষ্ণ মিশনে অঞ্জলী দেবে। অভীক সেইমত তৈরি হয়ে এসেছে। মনে ইচ্ছে, স্বর্নিমা কে দেখবে আজ নতুন রূপে, প্রাণ ভরে।
স্বর্ণীমা আজ খুব সুন্দর সেজেছে। একদম লাল পার সাদা জামদানি তে তাকে খুব মানিয়েছে। বাবা দেখে বললো," বাহ দুগ্গা ঠাকুর আমার"। মা এসে খোপাই লাল ফুল বেঁধে বললো "সাবধানে যাস, দুগ্গা দুগ্গা"। বাবা রিকশা ডেকে দিলে তাতে চড়ে পৌঁছে গেলো ধালেশ্বর রামকৃষ্ণ মিশনে। ঐতো অভীক দাড়িয়ে।
অভীক স্বর্নিমা কে দেখে অজান্তেই এগিয়ে এলো। মনে প্রতিজ্ঞা, আজ সে স্বর্ণীমাকে মনের কথা বলবেই। দুজনেই এগিয়ে যাচ্ছে এক পা এক পা করে, চোখে চোখ রেখে, হোয়ত একটা মাহেন্দ্রক্ষণ রচনার অপেক্ষায়। আজ অনেক না বলা কথার পরিসমাপ্তি হবে, শুধু খালি সময়র অপেক্ষা।
হটাৎ ছন্দপতন।
অন্যভস্ত ভাবে শারী পড়ার কারনে স্বর্নিমা আরেকটু হলে হোচট খাচ্ছিল আরকি। অভীক না ধরলে পড়েই গেলো হলে। লজ্জায় রাঙা হয়ে গেলো স্বর্নিমা, অভীক ও অপ্রস্তুত।
" তুমি ঠিক আছো?", অভীক জরতা কাটানোর জন্য বললো।
"হ্যাঁ, থ্যাংকস, না ধরলে পড়েই যেতাম", স্বর্নিমা বললো আস্তে আস্তে।
" কি করে পড়বে, পড়তে দেবনা যে কোনোদিন তোমাকে", অভীক অজান্তেই বলে বসলো।
এই কথার পর দুজনের মুখেই মিটিমিটি লাজুক হাসি।স্বর্নিমা ভাবলো, যাক, ফাইনালি অভীক সাবালক হলো। অভীক একটা অসাধারন খুশি অনুভব করছিল ভেতরে ভেতরে। দুজনেই অঞ্জলী দিল, কিন্তু একে অপরের দিকে তাকিয়ে, একে অপরের পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়ে।
অস্ফুটে দুজনেই বললো '' হ্যাঁ ভালোবাসি, আরও বাসব".।
পাশের ক্লাবঘরে স্পিকার তখন শোনাচ্ছে
হতে পারি রোদ্দুর
হতে পারি বৃষ্টি
হতে পারি রাস্তা
তোমারই জন্যে
হতে পারি বদনাম
হতে পারি ডাকনাম
হতে পারি সত্যি
তোমারই জন্যে
হতে পারি গল্প
তুমি কাছে টানলে
হতে পারি জানলা
এই হাওয়াও তোমার কারণে
শুধু তুমি চাও যদি
সাজাবো আবার নদী
শুধু তুমি চাও যদি
সাজাবো আবার নদী
এসেছি হাজার বারণে
শুধু তোমারই জন্যে
শুধু তোমারই জন্যে
শুধু তোমারই জন্যে