প্রবৃত্তি
প্রবৃত্তি
ঘটনা লকডাউন শুরুর আগে আগের। গ্রামের পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে চাকরিসূত্রে উত্তরপাড়ায় ফ্ল্যাট নিয়ে থাকি। বাবা-মা-ঠাকুমা-দাদু সবাই গ্রামে। সেদিন আমার কাছে দাদুর আসার কথা; প্রতি মাসেই বুড়োবুড়ি আসে ডাক্তার দেখানোর জন্য। বহু জেদাজেদী করেও তাদের তিনদিনের বেশি এখানে রাখতে পারি না।
সকাল সাড়ে ন'টার মেন লাইন লোকাল ধরেই আসে ওরা। বাড়ি আসতে দশটা। ন'টা নাগাদ দিদা ফোন করল:
-"তোমার দাদু আজ গেলে তাকে ঢুকতে দিও না। চারিদিকে কিসব রোগ, ঘুরে বেড়ালে ছড়াচ্ছে বলছে। কত করে বললাম এক মাস ডাক্তার না দেখালে কিছু হবে না। তা কে শোনে কার কথা"?
বললাম:
-"তাতে আর কি? আসলে ঢুকতে দেব না আবার কি কথা? তা তুমি এলে না কেন"?
-"আমি বরাবর ভীতু। যাক গে বেলা হচ্ছে আমি রান্নার দিকে যাই। রাখছি"।
আধ ঘণ্টা পর দাদু এসে হাজির। বললাম:
-"আজ এতো আগে? আগের ট্রেনে নাকি"?
দাদু বলল:
-"হ্যাঁ। তোর ঠাকুমাকে ফোনে বলে দে"।
আমি ঠাকুমার ফোনের কথা বললাম দাদুকে।
খানিক অন্যমনস্ক হয়ে দাদু বলল:
-"ও! এই বলেছে বুঝি? সত্যি এসব আমার চিন্তা করে বেরোনো উচিৎ ছিল। শোন আমি আসছি। কোথ্থেকে যে কি রোগ ছড়ায়"।
এই বলে ধাঁ করে ফিরে গেল দাদু। আমার কোনো কথাই শুনল না।
কিছুক্ষণ গলির সামনে দাঁড়িয়ে ঘরে ফিরতেই বৌ কাঁদতে কাঁদতে বলল:
-"খবরটা দেখ। কিছুক্ষণ আগে ট্রেন অ্যাক্সিডেণ্টে দাদু মারা গেছে"।
হতচকিতের মতো কয়েক মিনিট বসে বাড়িতে ফোন করে বলতেই বাবা বলল:
-"তোমার ঠাকুমাও ঘণ্টা খানেক আগে কলতলায় পড়ে গেছলেন। হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই সব শেষ"...
আজ একলা ঘরে বসে ভাবছি সন্তানদের ভালো রাখার চিন্তা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি, মরার পরেও তা যায় না।