প্রাপ্তি:-
প্রাপ্তি:-


হইহই করতে করতে ঘরে ঢুকলো তিস্তা আর তিতির। তিস্তা বড় আর তিতির ছোট, তিস্তা অষ্টম শ্রেণী আর তিতির ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। দুই বোনের মধ্যে যেমন ভাব ভালোবাসা খুব আছে তেমনি ঝগড়ার মাত্রা টাও অধিক আছে। দুই কন্যারত্ন কে নিয়েই প্রবীরবাবু আর ক্ষমাদেবীর সংসার। প্রবীরবাবু এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সাথে নিযুক্ত আর ক্ষমাদেবী ঘরের সর্বময় কর্ত্রী। সেদিন স্কুল ছুটির পর আনন্দে উৎফুল্লিত হয়ে ঘরে প্রবেশ দুইবোনের। ক্ষমাদেবী কে জড়িয়ে ধরে তিস্তা জানালো আসছে রবিবারে স্কুল থেকে সকল বিদ্যার্থীদের নিয়ে বনভোজনে যাওয়ার কথা। সঙ্গে এটাও জানাও মাথাপিছু ৩০০টাকা করে মোট ৬০০টাকা জমা দিতে হবে তিস্তা এবং তিতিরের বিদ্যালয়ের বনভোজন উদযাপনের জন্য। তিস্তার থেকেও বেশি উৎসাহী তিতির, চোখে মুখে তার উৎসাহের ছাপ। ক্ষমাদেবী একটু স্মিত হেসে দুবোন কে বললেন,"আচ্ছা ঠিক আছে দেখা যাবে খন, এখন যা হাত মুখ ধুয়ে কিছু মুখে তোল,খিদে পেয়েছে না তোদের..."। খাওয়ার টেবিলে বসেও দুবোন বনভোজনে যাওয়ার ব্যাপারেই কথা বলছে, খুব উৎসাহী দুবোন।
রাতের বেলা সবার খাওয়া হয় গেলে পর ক্ষমাদেবী প্রবীর কাছে কথা টা পারলেন,বললেন,"কি করি এখন বলো? মাসের শেষ এই সময়ে দুজনার পিকনিক যাওয়ার জন্য ৬০০ টা টাকা দেওয়া তো কষ্টসাধ্য। তোমার নিজের তো এইবার একটা ভালো সোয়েটার কেনার কথা ছিল সেইমত সংসার খরচ থেকে কিছু টাকা বাঁচিয়েছিলাম কিন্তু মেয়ে দুটোর পিকনিক যাওয়ার উৎসাহ দেখে কোন মুখে না করবো ভেবে পাচ্ছি না..."। প্রবীরবাবু একটু হেসে বললেন," আহা! ওরা বাচ্চা মানুষ যেতে চাইছে যেতে দাও, আর একা তো নয় স্কুলের সকলের সাথেই তো যাবে। আর আমার জন্যে ভেবো না, এখন এত শীত কোথায়? সোয়েটারের প্রয়োজন নেই আর, তুমি বরং টাকা টা দু বোন কে দিয়ে দাও, একটু আনন্দ করে আসুক পিকনিকে..."। পরদিন সকালে ক্ষমাদেবী যখন তিস্তা আর তিতির কে বনভোজনে যাওয়ার টাকা টা হাতে দিলেন তখন ক্ষমাদেবী কে হতবাক করে দিয়ে তিতির বললো," মা তুমি দিভাই কে টাকা টা দাও, আমি যাবো না পিকনিকে..."। তিস্তা এবং ক্ষমাদেবী উভয়েই চকিত হয়ে চেয়ে রইলেন তিতিরের দিকে। তিতির বলতে লাগলো,"মা, তুমি দিদিকে যেতে বলো আমি বাড়িতে থাকবো সেদিন..."। ক্ষমাদেবী প্রত্যুত্তরে বললেন,"সে কি! তুই যাবি না মানে, কি হলো খুলে বল তিতির?" তিতির কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো," মা কাল রাতে জল ভরতে রান্নাঘর যাচ্ছিলাম যখন তখন শুনি বাবা বলছে ভালো সোয়েটার ছাড়াও বাবার চলে যাবে কিন্তু আমরা দুটি তে যেনো পিকনিক যাই...আমার খারাপ লাগলো খুব,বাবা ঠাণ্ডায় কষ্ট করছে আর আমরা পিকনিকের বায়না করছি, আমি যাবো না,তুমি বরং দিদিকে যেতে বলো ..."। এবারে তিস্তা এসে জড়িয়ে ধরে তিতির কে আদর করে বললো "কে বলে তুই ছোট? কত ভাবিস রে বোনু তুই আমাদের সবার জন্য, নিজে বাড়ি তে থেকে আমাকে একা পিকনিকে আনন্দ করতে পাঠাবি তুই ভাবলি কি করে? তোকে ছাড়া আমিও যাবো না রে বোনু..."। ক্ষমাদেবীর চোখে তখন আনন্দাশ্রু, তেনার কন্যারত্নদ্বয় বাবা মায়ের কষ্ট টা বুঝতে পেরেছে এইটাই যে পরম প্রাপ্তি।