STORYMIRROR

Rima Goswami

Inspirational

4  

Rima Goswami

Inspirational

পিতৃত্বের আধার

পিতৃত্বের আধার

3 mins
336

গাড়িটা দুরন্ত গতিতে চলছে হাইওয়ে দিয়ে । পৌঁছনোর দায় সময়ে , অন্তিম দর্শনের জন্য ব্যাকুল এক প্রাণ । গাড়ির ভিতরে সমানে কেঁদে যাচ্ছে আরাত্রিকা । তার মনের মানুষটা তাকে এভাবে ঠকিয়ে চলে যাবে সে তো ভাবেইনি ! আজ পিতৃদিবসের দিন আবার পিতৃহীন হয়ে গেল সে । কেন শরীর ভালো নেই শুনেও ছুটে চলে এলো না সেই আফসোস কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে ওকে । চোখের সামনে ভেসে আসছে অতীতের সেই দিন গুলো । যার ভয়াবহতা সব ঘুচিয়ে দিয়েছিল সেই মানুষটার স্নেহের পরশ আজ যে চলে গেছে সব মায়া ত্যাগ করে । বিধবা আরাত্রিকার হাত ধরে নিজে মণ্ডপ পর্যন্ত নিয়ে এসে হাজির হয়েছিল যে মানুষটা সে আর কেউ নয় তার শশুর মশাই । উনি তো কি করে আরাত্রিকার মনে বাবার স্থান দখল করে নিয়েছিলেন সে নিজেও জানে না । বিদ্যুৎ একসিডেন্ট এ মারা যাবার পর সকলে আঙ্গুল তুলেছিল স্বাভাবিক ভাবেই আরাত্রিকার উপরে । শাশুড়ি মা বলেছিলেন , কত বললাম বাবুকে ওই জাত কূলহীন মেয়েকে আনিস নি .. মা বাবার ঠিক নেই মেয়ের । সেই মেয়েকে বিয়ে করে এক বছর কাটল না আমার বাবুকে ও খেয়ে নিল গো হতচ্ছারী !শাশুড়ির ডুকরে কেঁদে কেঁদে ওকে দোষ দেওয়াটা তখন গায়ে মাখেনি আরাত্রিকা । সদ্য স্বামী হারানো মেয়েটার চোখ দুটো খুঁজছিল তখন একটা নিরাপদ আশ্রয় । জন্ম থেকে অনাথ আরাত্রিকার জীবনে স্বর্গ হয়ে এসেছিল বিদ্যুৎ । বিয়ের পর যখন ও ভাবতে লেগেছিল যে এবার হয়ত সুখ ওর আঁচলে ধরা দিয়েছে তখনই এক দুর্ঘটনায় সব ওলটপালট হয়ে গেল । বিদ্যুৎ চলে যাবার পর একটা বট গাছ হয়ে ওকে আগলে ধরলো একটা আশ্রয় যার নাম বাবা । ছেলের মৃত্যু তার মাকে কঠোর করলো আর বাবাকে করলো আরো স্পর্শকাতর । আরাত্রিকাকে নিজের মেয়ে হিসেবে গ্রহণ করলেন আশীষ সেনগুপ্ত । উনি আরাত্রিকাকে বললেন , ভগবানের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমরা যেতে পারিনা । উনি নিশ্চই কিছু ভেবে রেখেছেন । আমার সন্তান যতটুকু আয়ু নিয়ে এসেছিল , ততটা থেকেই ওকে যেতে হলো । মাঝখানে আমার জন্য সে সন্তানের অভাব পূরণ করার জন্য তোমাকে রেখে গেল আরাত্রি । তুমি এখন এই বুড়োর দায় । এই বুড়ো তোমাকে তোমার সুখের সংসার গড়ে দেবে কথা দিলো ।সেই থেকে শশুর থেকে বাবা হয়ে ওঠার জার্নি আশীষ বাবুর । মেয়েকে নিয়ে এম এ ভর্তি করানো । তাকে এস এস সির জন্য প্রস্তুতি করানো সব নিজে দায়িত্ব নিয়ে করে গেছেন । ছোট বেলায় বাবা মায়ের মৃত্যুর পর অনাথাশ্রমে বেড়ে ওঠা আরাত্রিকা বাবার স্নেহ যে কি বুঝতেই পারত না আশীষ বাবু না থাকলে । স্কুলে চাকরি পাবার পর আলাপ হলো রাজের সাথে । মেয়ের মনে যে বসন্ত আবার কড়া নেড়েছে বাবা হয়ে বুঝলেন আশীষ বাবু । স্ত্রীর রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে নিজে সম্প্রদান করলেন আরাত্রিকাকে । রাজের হাতে তুলে দেবার সময় ওনার ভাঙা মনের আয়না ওনার কষ্টে মাখা মুখ দেখে আরাত্রিকার শাশুড়ি মা পর্যন্ত কেঁদে ফেলেন । রাজকে আশীষ বাবু করজোড়ে অনুরোধ করেন তার একমাত্র মানসিক আশ্রয় তার কন্যা আরাত্রিকে যেন সুখে রাখে রাজ ।আরাত্রি সেই থেকে সুখেই ছিল । মাঝে আশীষ বাবুর লিভার নষ্ট হয়ে যাওয়াতে আরাত্রিকা নিজে লিভার ডোনেট করে তার বাবার প্রাণ রক্ষা করে । সেই সময় শাশুড়ি হাত জোড় করে আরাত্রিকার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ওনার আগের সব অপমানের জন্য । এটাও উনি স্বীকার করেন যে ওনার স্বামী আশীষ আর আরাত্রিকা সত্যি রক্তের সম্পর্কে না থেকেও প্রকৃত বাবা মেয়ে । আজ হয়ত বিদ্যুৎ থাকলেও এভাবে বাবাকে বাঁচাবার কথা সে দুবার ভেবে দেখত ।সব কিছু ঠিক হয়ে যাবার পরেও বলা নেই , কওয়া নেই বাবা ওকে ছেড়ে চলে গেল এটা মানতে কষ্ট হচ্ছে আরাত্রিকার । রাজ সারা রাস্তা ওকে সামলাতে সামলাতে নিয়ে আসে আশীষ বাবুর বাড়ি । ওরা ঢুকতেই বিদ্যুৎ এর মা এসে আরাত্রিকাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ওঠে । উনি জানান আশীষ বাবুর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী আরাত্রি মুখাগ্নি করবে ওনার । বাবাকে চন্দনে , গোরের মালায় সাজিয়ে দেয় আরাত্রি । শেষ বিদায় দেবার সময় কানে কানে বাবাকে অনুরোধ করে সে , " বাবা এবার ফিরে এসো আমার সন্তান হয়ে । কথা দিচ্ছি খুব শাসন করবো তোমাকে বাবা । তুমি বাধ্য ছেলে হয়ে থাকবে আমার । এভাবে আমাকে না বলে পালাবার জন্য অনেক বকা বাকি রয়ে গেছে ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational