ঋজু .

Horror

3.9  

ঋজু .

Horror

ফিরে আশা

ফিরে আশা

5 mins
7.2K


অনেকদিন পর ব্যাট করতে নামার ফলে একটু টেনশনে ছিলাম, তাও বল করছে আমাদের গ্রামের স্বরূপ প্রথম ব্যাট করে অন্য দল এত রান করেছে, যে তার অর্ধেক করতে পারলেই বুঝব ম্যাচ জিতে গেছি | আমার পাশেই তখন রিতু মানে আমার খুড়তুতো বোন সে আমাকে উৎসাহ যোগানো বোদলে টিপ্পনী দিচ্ছিল| তার বয়স মাত্র 7, ক্রিকেটের সে কিছু বোঝেনা এটুকু জানে যে আমাকে মনঃসংযোগ করতে না দিলে, আমাকে ব্যাট ছেড়ে দিতে হবে| এটা পড়ে ভেবে বসবেন না যে কোন বড় টুর্নামেন্ট খেলছি এমনকি এটা তো গ্রামের একটা ছোট টুর্নামেন্টও নয় আর খেলছি কোন বড় বা ছোট মাঠে ও নয় খেলছি আমার জেঠাবাবুর বাড়ির উঠোনে আর দর্শক সংখ্যা এক মানে আমার বোন রিতু | যাইহোক স্বরূপ বলটা করলো, আমি চোখ বন্ধ করে দিলাম ব্যাট চালিয়ে তাকিয়ে দেখি বল 4 হয়েছে কিন্তু পড়েছে জেঠাবাবুর প্রিয় বাগানে আর যেখানটায় পড়েছে সেখানটায় লতাপাতার জঙ্গল আর আছে এক কুমড়ো গাছ| সবাই গেলাম বল খুঁজতে কিন্তু ওই বনের মধ্যে এই সরি সুন্দর বাগানে বলটা খুঁজে পাওয়া অতি দুস্কর ব্যাপার |আমাদের ক্যাপ্টেন রিন্টু দা বলল, মঙ্গল দা ব্যাট দিয়ে একটু চারদিকটা চটিয়ে দেখব কিন্তু কুমড়ো গাছের ক্ষতি হতে পারে| মঙ্গল দা আমার একমাত্র জেঠুর ছেলে, সে,বললো নিশ্চয়ই দেখবি কেন দেখবি না এটা শুনে রিন্টু দা যেই পা বাড়িয়েছে, মঙ্গল দা বলল কিন্তু একটি পাতা ভাঙলে 50 টাকা জরিমানা নেব কিন্তু |তা শুনে রিন্টু দা নিরস্ত্র হলো|                 সেই দিনের মত খেলা শেষ যে যার বাড়ির দিকে রওনা হলাম যাওয়ার আগে স্বরূপ বলল খেলাটা হলে কিন্তু জিততে পারতিস না, আমি কোন উত্তর করলাম না কারণ সেটা আমি ভালোমতোই জানি, সাধারণত আমার খুব বেশি খেলাধুলা হয় না এই মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়ি আসি তখনই খেলা হয়| আমি কিছু দূরেই সদর শহরে থাকি মা বাবার সাথে আর এখানে থাকেন আমার কাকু ও জেঠুর পরিবার সাধারণত গ্রামের বাড়ি এলে আমি কাকুর কাছেই থাকি এইবার এসেছি কালীপুজোর জন্য, গ্রামের বাড়ি কম আসলেও অনেক বন্ধু আছে আর আছে এই গ্রামের সাথে এক অদ্ভুত নাড়ির টান তবে আসল গল্প এটা নয় তা ঘটে সেদিন রাত্রে |                     ঋতু আর আমি সন্ধ্যাবেলা গ্রামের এক কালী মন্দিরে যাই কালীপুজোর দিন প্রতিবছর প্রদীপ দিয়ে গোটা মন্দিরটা সাজানো হয়, বেশ সুন্দর লাগে দেখতে, বড় একটা আলপনার মত প্রদীপ রেখে তেল আর সলতে দিয়ে তৈরি করে ছোটরা মোমবাতি হাতে সলতে তে আগুন দেয় আর বড়রা সেটা সাজিয়ে দেয় |বেশ মজা হয় প্রদীপ নিভে গেলেই সবাই মিলে জ্বালানোর জন্য ছুটে যায় | আমার বোন ওদের সাথে কাজ করছে আমি বড়দের সাথে গল্প করছি এমন সময় কিছু দূরে একটা গোলমাল দেখে আমরা বড়রা গেলাম, দেখতে আর ছোটদের বলা হল প্রদীপ গুলো না নিভে যায় সেই দিকে খেয়াল রেখো |ওরা দায়িত্ব পেয়ে ভীষণ খুশি হয়ে আরও ব্যস্ত হয়ে গেল| সেখানে গিয়ে সব শুনে যা বুঝলাম তা খুবই দুঃখের, যে বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়ে আছি সেই বাড়িতে একটি বাচ্চা ছেলের হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হয়, তার মা স্বামীকে জানালে তিনি গাড়ির ব্যবস্থা করার আগেই ছেলেটি মারা যায়| সদর ছাড়া ভালো ডাক্তার নেই, গ্রামের ডাক্তার দেখে বলেন সদরে নিয়ে যাও আমার পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব নয় গ্রামে একটিই গাড়ি সেটা আবার গেছল অন্য গ্রামে |ফিরে আসার আগেই ছেলেটি মারা যায়| মনটা খারাপ হলো আরো বেশি, যখন জানলাম বাচ্চা ছেলেটার দিদি আছে সেও ছোট, মন্দিরে প্রদীপ জ্বালাচ্ছে, বাচ্চাটার মা বাবা কাঁদছে গরিব পরিবার ছেলেটার বাবা নিজে দিনমজুরের কাজ করেন| যাইহোক বাচ্চাটার দিদিটা, এল খুব কাঁদল সে বলল ভাই উঠ, কাল ভাইফোঁটা তোর জন্য নতুন জামা খেলনা কিনেছি | আর থাকতে পারলাম না, দূরে সরে গেলাম ঋতুকে নিয়ে | বাড়ি ফিরে সেদিনের মত কেটে গেল সময়টা| রাত্রে খেতে বসে কাকুর কাছে শুনলাম চার বছরের বাচ্চা তাই জঙ্গলের কোথায় নাকি পুঁতে দিয়ে এসেছে |পাঁচ বছর না হলে আবার নিয়ম নেই পোড়ানোর আর শ্মশানে পুঁতলে মানুষ ভয় পেতে পারে |সেদিন রাত্রে বাচ্চাটার দিদির কথা গুলো বার বার মনে আসছিল,  

        এর পর তিন-চার দিন কেটে গেল পাড়ার মোড় গুলোতে ঘটনাটা নিয়ে অনেক আলোচনা হল |আমার এবার বাড়ি ফেরার সময় হয়ে আসছিল যেদিন ফিরব তার আগের দিন বিকেলবেলা বাড়িতে খাবার জল শেষ হয়ে গেল |আমাদের গ্রামের কলের জল ভালো নয় তাই খাবার জল আনতে হয় পাশের গ্রাম থেকে| এমনিতে কাকু আনে কিন্তু আমি আসার পর থেকে আমিই এনে দিচ্ছিলাম| ভালো লাগতো কাজ করতে আর ভালো লাগতো সাইকেলে চেপে দু সারি গাছের মাঝে মাটির রাস্তা দিয়ে পাশের গ্রামে যেতে |এই অনুভূতি গুলো খুব সুন্দর, শহরের কোলাহল থেকে দূরে এই প্রশান্তি প্রাণ ভরিয়ে দেয়| সেই জন্য সুযোগ পেলে আমি গ্রামের বাড়িতে চলে আসি | জল নেবার জায়গায় পৌঁছতে পৌঁছতে সূর্য ডুবলো |এমনিতে এই কলের জল অনেকেই নেয়, ভিড় থাকে কিন্তু এই সময়টা কেউ নেই| একা দুটো বড় পাত্র নিয়ে গিয়েছিলাম জল আনতে, একা একা ভরছি |একা এসেছি কারণ কাকু এখনো অফিস থেকে ফেরেনি আর বোন খেলতে গেছল| জল ভরে সেগুলো সাইকেলে নিয়ে সাইকেল চালিয়ে এগোতে লাগলাম| সাইকেলের সামনে লাইট থাকায় পথ দেখতে অসুবিধা হচ্ছিল এমনিতেই জঙ্গলে বাঘ ভালুক থাকেনা শিয়াল আর খরগোশ তিনটি অনেক আছে| মাঝে মাঝে হাতি এসে পড়ে কিন্তু এখন তাদের আসার সময় নয়| হঠাৎ রাস্তায় একটা কিছু দূর থেকে হালকা আলোতে দেখতে পেলাম, ভাবলাম শেয়াল, সামনে আসতে বুঝলাম একটা বাচ্চা ছেলে| গ্রাম দূরে না হলেও খুব কাছে নয় |ভাবলাম কারো সাথে এসেছে, তাকে জিজ্ঞেস করলাম তুমি একা এখানে কি করছো? সে বলল মায়ের জন্য দাঁড়িয়ে আছি |আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় তোমার মা? সে বলল, বাড়িতে| তুমি আমার মাকে বলে দিয়ো দুঃখ না করতে আমি তাড়াতাড়ি ফিরব| আমি বললাম, কোন গ্রামে বাড়ি তোমার চলো পৌঁছে দিচ্ছি সে ছুটে জঙ্গলে হারিয়ে গেল |মাথা মুন্ডু কিছু বুঝতে না পেরে আমি নিজের গ্রামের রাস্তা ধরলাম |ভাবলাম কোন মানুষের বদ মতলব থাকতে পারে বাচ্চাটার পেছনে গেলে হয়তো আমাকেই না চোরের পাল্লায় পড়তে হয় |কিন্তু সাথে কিছুই ছিল না, তাও কে ডেকে এনে বিপদ বাড়াতে চায় | পরদিন আমি মা বাবার কাছে ফিরে গেলাম |

                এরপর আমি কলেজের পড়ার জন্য কলকাতায় ভর্তি হয়ে সেখানে চলে গেছিলাম | বাবা মায়ের সাথেই দেখা হয় না| পড়ার চাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে গ্রামের বাড়ি যাওয়া হয়নি |তিন বছর পর শেষ পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরলাম কয়েকদিন থেকে গ্রামের বাড়ি যাবো যাবো ভাবছিলাম |একদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম, সেখানে পৌঁছে কাকু জেঠু সবার সাথে দেখা হল|বিকেলে গ্রামে ঘুরতে বের হলাম অনেকদিন পর সবার সাথে দেখা হলো, অনেক গল্প হল |আগের বারের সেই ক্রিকেট খেলার গল্প হতে হতে হঠাৎ মনে পড়ল সেই সন্ধ্যায় বাচ্চাটা মারা যাবার কথা জিজ্ঞেস করলাম| ওদের বাড়ির সবাই কেমন আছে? ওরা বলল, ছেলেটা মারা যাবার পরের বছর ওদের বাড়িতে আরো একটা ছেলে জন্মেছে, অবাক কান্ড জানিস সেই ছেলেটা হুবহু ওর মৃত দাদার মতই দেখতে| কথাটা সোনার পর আমার কানে সেই দিন রাত্রে রাস্তায় দেখা বাচ্চাটার কথা ভেসে উঠলো " তুমি মাকে বলে দিও... আমি তাড়াতাড়ি ফিরব "


Rate this content
Log in

More bengali story from ঋজু .

Similar bengali story from Horror