AYAN DEY

Drama

3  

AYAN DEY

Drama

ফেসবুকে সেদিন

ফেসবুকে সেদিন

5 mins
3.2K


পড়াশোনার বাইরে অনিকেতের শখ ফেসবুকে বা টুইটারে বা যে কোন সোশ্যাল মিডিয়ায় মিম বানানো | যত রকমের ননভেজ জোকস মিম তৈরি করে বানানো যায় সব রকমেরই উপাদান নিজের কাছে যোগান রাখত অনিকেত | এইসব করে তার পেজ বুক অফ মিম বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল বটে তবে ওইটুকুই তার পরিসর , সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে সে আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মতোই একটা ছেলে | বড় বড় সেলিব্রিটিদের থেকে শুরু করে তাবড় তাবড় নেতাদের নিয়ে মিম বানানো আজকাল তার অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেছে | এহেন অনিকেতের জীবনে এত বড় একটা বিস্ময় ঘটে যাবে তা কোনোদিনও কেউ ভাবতে পারেনি | না আপনারা ঠিক যা ভাবছেন তা নয় | পুলিশের চক্রব্যূহতে সে পড়েনি এখনো পর্যন্ত | তবে কি সেই বিস্ময় ?

সেদিন সন্ধ্যে বেলা কলেজ থেকে ফিরে বেশ কয়েকটা টপিক মাথার মধ্যে ভেবে রেখেছিল | প্রথম মিম বানাতে শুরু করলো | তার বিষয় ছিল স্বয়ং ফেসবুকের সিইও | সব বানানো হয়ে গেলে পর নিজের ফেসবুক পেজ ওপেন করা এবং তার মধ্যে পোস্ট করা , এই ছিল তার মোট প্ল্যান | কিন্তু একি হলো , পোস্টটা করার সঙ্গে সঙ্গেই তার একাউন্ট এর মধ্যে একি রকম হালচাল হতে শুরু করল | অ্যাকাউন্ট থেকে সমস্ত পোস্ট সরে গিয়ে শুধুমাত্র একটি ভিডিও দেখা যেতে লাগলো | ভিডিওটিতে মার্ক বলছেন যেন তার দিকেই চেয়ে , “ ok brother ! So you think about me like that . I also have some thoughts about you , don't you want to know ? Let me post it on your wall and let all your friends know about all of your secrets . Ok bye ! . ”

পুরো ঘটনাটা অস্বাভাবিক হলেও ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নাকচ করতে পারল না অনিকেত | নানান জনের সঙ্গে নানান বিষয়ে চ্যাটে অনিকেত এমন কিছু কথা বলে থাকে যাতে তার বিষয়ে ধারণা স্পষ্ট হওয়া এমন কিছু কঠিন বিষয় নয় | যদিও ফেসবুকের হাতে তার কোন কাস্টমারের পার্সোনাল চ্যাটের ইনফর্মেশন থাকবে এবং থাকলেও সেটা তারা দিস্ক্লোজ করবে এটা বিশ্বাস করাটা নিতান্তই অযৌক্তিক তবুও বেশ ঘামতে শুরু করলো অনিকেত |

বেশ কয়েকজন মেয়ের সঙ্গে ফেসবুকে চ্যাটের সময় তাদেরকে প্রেম প্রস্তাব গ্রহণের জন্য শাসিয়েছে অনিকেত | হরির কাছ থেকে ড্রাগ নেওয়ার আলোচনাও বেশ অনেকবার চ্যাটের মাধ্যমে হয়েছে তার সাথে | তারপর কথায় কথায় অনেক লোককে সে হুমকি দিয়েছে | এইতো সেদিন দু'ক্লাস জুনিয়ার রজতকে হুমকি দিয়েছে তার সমস্ত প্রজেক্ট এর খাতা তাকে বানিয়ে দিতে হবে , না করলে তাকে কলেজের বাইরে গিয়ে শায়েস্তা করবে |

বুক অফ মিম পেজের মাধ্যমে তার ফ্যান ফলোয়ার্স এখন অনেক | এই সমস্ত কথা জানাজানি হলে তার ফ্যানের সংখ্যা কমবে তো বটেই উপরন্তু কলকাতা পুলিশের নজরে পড়লে বিষয়টা আরো তিক্ত হয়ে উঠবে তার জন্য | গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসতে লাগলো | এক গ্লাস জল হাতে নিয়ে খেতে খেতে একাউন্ট এর দিকে ফিরে তাকাতে যখন সবকিছু আবার স্বাভাবিক দেখল তখন একটু স্বস্তি পেল সে |

তার পোস্টে কটা লাইক পড়েছে সেটা দেখার জন্য সে রাত্তিরে যখন ফেসবুক ফের খুলল তখন তার অবস্থা জীবন মৃতর মতো হয়ে উঠলো | একে একে 50 টি পোস্ট এ তার সমস্ত চ্যাট তার ওয়ালে পোস্ট করে দিয়েছে কে | একটা অদ্ভুত নাম সে লক্ষ্য করলো যে এই পোস্টগুলো তার ওয়ালে করেছে | নাও মাই টার্ন হল প্রোফাইলটির নাম | প্রোফাইলে ঢুকে দেখল তার কোন প্রোফাইল পিকচার নেই বা তার কোন পোস্ট নেই |

যে 50 টি পোস্ট তার ওয়ালে শেয়ার হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই রয়েছে কাউকে শাসানি বা হুমকির কথা , এমনকি কার কার সাথে সেই চ্যাট গুলো হয়েছে তার ছবি সমেত সেই পোস্টগুলো তার ওয়ালে শেয়ার করা হয়েছে | সেই মুহূর্তে হঠাৎ ফোনটা জোর শব্দে বেজে উঠলো | যেন সাধারণ সময়ের থেকে একটু বেশি জোরেই বেজে উঠলো |

ফোন তুলে হ্যালো বলতেই একটি মেয়ের গলা শোনা গেল , “ প্রস্তুত হও জেলের ঘানি টানার জন্য , আমার দাদার রজত বিশ্বাস এর খুনি অনিকেত বাগচী প্রস্তুত হও | ”

হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে কে যেন পিং করল | দেবাশীষ | সে লিখেছে , “ ছি ছি ছি , তুই আমার বন্ধু ভাবতেও লজ্জা হচ্ছে | আমাদের পাড়ার মেয়ে সোনালীর আত্মহত্যার জন্য তুই দায়ী ! কঠিন সাজার হাত থেকে তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না | ”

এসব কি হচ্ছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না | রজতের সঙ্গে সে আর কয়েকটা বন্ধু মিলে ragging করত বটে তবে খুন ... কি বলছে রজতের বোন ? আর সোনালী , তাকে সে বেশ কয়েকবার শাসিয়েছে বটে , তবে বেশ কিছুদিন দেখার পরেও যখন সে রাজি হয়নি তখন সে আর তার পিছু করা বন্ধ করে দিয়েছে | আত্মহত্যা করল আর তার দোষ এসে পড়ছে এখন তার ওপর ?

হঠাৎ দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো | একি পুলিশ ! জানলা দিয়ে এক নজর পুলিশের গাড়ি দেখেই সে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল | 10-12 বার কলিংবেল বাজানোর পরও যখন দরজা খুললো না তখন পুলিশ দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে অনিকেত কে নিয়ে যেতে বাধ্য হল | হির হির করে টানতে টানতে তাকে গাড়িতে নিয়ে তুললো তারা | পরদিন আদালতে তার বিচার | সোনালীর আত্মহত্যার প্ররোচক হিসাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং রজতকে খুনের অভিযোগে ফাঁসির আদেশ শোনানো হল | সে হা হা করে চিৎকার করে জীবন ভিক্ষা করতে লাগলো | ততক্ষণে জজ সাহেবের পেনের নিব ভাঙ্গা হয়ে গেছে | নিব ভাঙার শব্দটা যেন সে নিজের কানে শুনতে পেল |

এত বড় স্বপ্নটা তার এক মুহূর্তে ভেঙে গেল আর সে হাঁপাতে হাঁপাতে বিছানায় উঠে বসে পড়ল | তাহলে এতক্ষণ যা দেখেছে সবটাই তার স্বপ্ন | কিন্তু যদি এমনটা হয় | রজতের প্রতি অত্যাচার করতে করতে যদি সত্যিই একদিন তার বড়সড় ক্ষতি হয়ে যায় ?

সোনালীর পেছনে ঘোরা বন্ধ করেছে বটে কিন্তু এক মাসে তাকে যে পরিমাণ লজ্জা অনিকেত দিয়েছে তাতে সত্যি সত্যি যদি আত্মহত্যা করে বসে ?

খানিকটা পাগল পাগল অবস্থায় সে সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে অনিকেতের বাড়ি এবং পরে সোনালীর বাড়ি পৌঁছে গেল | দুজনের কাছেই নাক কান মুলে ক্ষমা চাইলো | সামনে তারা দুজনেই ক্ষমা করে দিল বটে তবে মন থেকে কেউ ক্ষমা করতে পারলো না |

সেদিনের ঘটনার পর থেকে অনিকেত সম্পূর্ণ বদলে গেল | কোন জুনিয়ার এর প্রতি সে কোনরকম খারাপ ব্যবহার করা বন্ধ করে দিল | সব মেয়েকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে শিখলো | এমনকি সেদিনের পর থেকে তার বুক অফ মিম পেজ ইন একটিভ করে দিল |


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama