Mr. Ranajit Singh

Horror Others

3.4  

Mr. Ranajit Singh

Horror Others

ফেরার পথে

ফেরার পথে

4 mins
252



সাধারণত রোজই কাজ করে এই পথ দিয়ে ফিরি, কিন্তু আজকের রাতটা একটু অন্য রকম কাটলো। আমি জুট-মিলে কাজ করা একটা সাধারণ কর্মচারী। রোজ সকালে কাজে যাই এবং রাত্রে বাড়িতে ফিরি। যত সহজ সবকিছু মনে হচ্ছে, আসলে বিষয়টা তত ও সহজ নয়। আমার সাথে ঘটে যাওয়া কয়েক মিনিটের এই অভিজ্ঞতাটা আমার হয়তো সারা জীবন মনে থাকবে! বিশ্বাস করা খুবই কঠিন কিন্তু আজ আমি যেটা দেখলাম সেটা একেবারেই সত্যি!...


এখন রাত এগারোটা...,

শেষ-মেশ আমি নিজের বাড়িতে ফিরলাম। আমি নিজের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় ঠকঠক করতে লাগলাম। আমার স্ত্রী দরজাটি খুলে দিল। আমি খুব ক্লান্ত হয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলাম। ইতিমধ্যেই আমার স্ত্রী আমাকে প্রশ্ন করতে শুরু করলো,- কিগো.. তোমার আজকে ফিরতে এত দেরি হলো?!.. তোমার তো কাজ থেকে ফিরতে কোনদিনও এত দেরি হয় না!.. 

আমার মাথা থেকে টপটপ করে ঘাম ঝরে পড়তে লাগলো। আমার স্ত্রী আমাকে আবার প্রশ্ন করলো,- কিগো.. চুপ করে আছো কেন?!..বল কিছু.. 

পরিবর্তে আমি নিম্নস্বরে বলে উঠলাম,- সবই বলবো.., কিন্তু তার আগে আমাকে একটু এক গ্লাস জল এনে দাও। আমার স্ত্রী রান্নাঘরে আমার জন্য জল আনতে চলে গেল। আমি ঘরের বাইরে টা একবার উঁকি মেরে, ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে ছিটকিনি আটকে দিলাম। তারপর টেবিলটার উপর আমার কাজের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে চেয়ারটা টেনে নিয়ে, মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। মাথা তো ব্যথা করছিলই, সাথে পুরো শরীরটাতে ই কেমন যেন একটা অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল। আমার স্ত্রী এক গ্লাস জল এনে আমার হাতে তুলে দিল। আমি এক নিশ্বাসে পুরো জলটা খেয়ে নিয়ে টেবিলের উপর গ্লাসটা রেখে দিলাম। একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিয়ে.. তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম,- বাবু কোথায়?.. সে বলল,- বাবু নিজের ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি আমার স্ত্রী সুলেখা কে বললাম,- আমার পাশে এসে একটু বসো। সে বলল,- রাত অনেক হয়ে গেছে, তুমি বসো আমি তোমার জন্য খাবারটা নিয়ে আসি তারপরে বসে তোমার সব কথা শুনবো। বাবু আগেই খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়েছে তার ঘরে। সুলেখা রান্নাঘর থেকে তার আর আমার জন্য খাবারের থালা সাজিয়ে নিয়ে এসে টেবিলে রাখলো। তারপর চেয়ারটা টেনে নিয়ে, সে আমার পাশে বসলো। সুলেখা বললো,- হ্যাঁ এবার বলো... 


আমি বললাম:- 


আমি যে পথ ধরে ফিরি.. সেই পথটা খুবই নিরিবিলি এবং নিঝুম। দূর দূর পর্যন্ত লোকজন থাকে না বললেই চলে। দু-ধারেই ঘন জঙ্গল আর কাঁচা মাটির রাস্তা। প্রায় কুড়ি-পঁচিশ হাত দূরে দূরে লাইটপোস্ট রয়েছে। তার মধ্যেও কয়েকটি পোলের লাইট ভাঙা। এক কথায় অন্ধকারের অভাব নেই। যদিওবা এই সমস্ত বিষয় নিয়ে আমি এর আগে কখনোই ভাবিনি, আর এই ছোটখাটো ব্যাপার গুলোর পরোয়া ও আমি করিনা। আমি অন্ধ-বিশ্বাসী নই। আর এইসব ভুত-প্রেতের বিষয় নিয়ে কখনোই আতঙ্কিত হয় না। এইসব মাথায় ও আসেনি কোনদিন। আমি প্রতিদিন এই পথ ধরেই যাতায়াত করি। কিন্তু আজ ফেরার পথে যা কিছু আমার সাথে ঘটেছে! পুরোটাই অবিশ্বাস্যকর। শীতের রাত, তাই চারিদিক ঘন কুঁয়াশায় ঢাকা। রাতের বেলা এই পথে কাউকেই সেই ভাবে দেখা যায়না। প্রতিদিনের মতো আজও আমি কাছ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। সাইকেল চালাতে চালাতে কি যেন মন হলো, একবার আকাশের দিকে তাকালাম। অদ্ভুত ব্যাপার!.. আকাশে আজ একটা ও তারা নেই! আর চাঁদ?!.. সেটাও কি মেঘে ঢাকা পড়লো? হঠাৎ মনে পড়ল আজ তো আমাবস্যা। ইতিমধ্যেই মাঝপথে আমার সাইকেলের চেন পড়ে যায়। মাঝপথেই আমাকে থেমে যেতে হয়। আমি সাইকেল থেকে নেমে চেনটা ঠিক করার চেষ্টা করলাম। চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। আর কোথাও কোথাও জোনাকি পোকার টিমটিমানি আলো। আমি চেন তোলার চেষ্টা করেছিলাম তখনই একটা হাওয়ার স্রোতের ধাক্কা আমার গায়ে এসে লাগলো। আমার কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভুতি হলো। খুবই চাপা এবং ভাঙ্গা স্বরে যেন একটা মহিলার গলা আমার কান পর্যন্ত ভেসে আসতে লাগলো। কেউ যেন আমাকে আমার নাম ধরে ডাকছে!!!... ‘ নিপিন..নিপিন...’ নিজের নামটা এই ভাবে শোনার পর আমার গলটা কেমন যেন শুকিয়ে উঠলো। আমি খুবই সংকোচ বোধ সহ নিজের ডানদিকে ফিরে তাকাতেই দেখলাম!... কালো চাদরে মোড়ানো একটা প্রায় সাত ফুট লম্বা দেহ! আমার থেকে প্রায় হাত ছয়েক দূরে দাঁড়িয়ে আছে। তার চোখ দুটো পুরো রক্তে রাঙ্গানো লাল হয়ে আছে! তার হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে! খুবই ভয়ঙ্কর সেই রূপ!..


সে বারেবারে আমাকে আমার নাম ধরে ডাকছে!.. আমি ভয়ে স্থির হয়ে আছি। সে আমার দিকে পা বাড়িয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো। আমি সাইকেল ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম। সে এবার আরো দ্রুতগতিতে আমার দিকে পা বাড়ালো! আমি সাইকেল ফেলে রেখে সেখান থেকে দৌড়ে পালালাম। একটা খুবই অদ্ভুত, হিংস্র আর উত্তেজিত করার মতো উচ্চ স্বরে সে চিৎকার করে আমার পিছন পিছন হাওয়ায় ভেসে আসতে লাগলো। আমি দৌড়ে তার থেকে দূরত্ব বেশিক্ষণ বজায় রাখতে পারলাম না। আমি ভাবলাম এবার হয়তো আমার প্রানটা যাবে। আমি হাঁপাতে হাঁপাতে একটা নিম গাছের নিচে এসে দাঁড়ালাম। সে আমার থেকে হাত দশেকের দূরত্বে আমার দিকে ধেয়ে আসলো। আমি সেই নিম গাছটাকে চেপে ধরে ভয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম। ভাবলাম এবার হয়তো সব শেষ। কিছুক্ষণ পর চোখ খুলে দেখলাম... সেখানে আর কিছুই নেই!.. আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম! চারিদিক পরিষ্কার!.. আমার মন থেকে তখনো আতঙ্ক কাটেনি। এমন সময় হঠাৎ আমার চোখ নিম গাছটার দিকে পড়ল। নিম গাছটার নিচে একটা অনেক পুরনো পাথরের খোদাই করা হনুমানজির মূর্তি রাখা রয়েছে। এবার ব্যাপারটা আমার কাছে স্পষ্ট। আমি দু-হাত জোর করে সেই চমৎকারী মূর্তিটাকে প্রনাম করলাম। সাইকেল নেওয়ার জন্য পিছনদিকে যাওয়ার সাহস টুকু আর কিছুতেই জোটাতে পারলাম না। তাই সামনের দিকেই পা বাড়ালাম। হনুমানজির নাম নিতে নিতে জোর পায়ে হেঁটে ই ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম। শেষ-মেশ আমি আমার বাড়ির দরজার সামনে এসে পৌঁছলাম। 


আমার মুখে পুরো ঘটনাটি শোনার পর, আমার স্ত্রী সুলেখা ও আশ্চর্য হয়ে গেলো। সে শেষ পর্যন্ত আমাকে শুধু একটাই কথা বললো,- তুমি পরের দিন থেকে আর ঐ পথ দিয়ে কাজে যাবে না।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror