STORYMIRROR

Manjula Acharya

Inspirational Others

3  

Manjula Acharya

Inspirational Others

পানিলি

পানিলি

3 mins
143

        উড়িষ্যার একটি অনুন্নত গ্রাম। পাহাড়, জঙ্গলের মধ্যে লুকিয়ে আছে সে। নামটি তার বেশ মিষ্টি, আলকিনি।সেই গ্রামেরই একটি নাবালিকা মেয়ে, পানিলী মুন্ডা।মাত্র পনেরো বছর বয়সে সংসারের হাল ধরেছে সে । তিন বোন আর এক ভাই ওরা। মা রমলা আর বাবা রতনা দুজনে মিলে দিন মজুরী খাটত । দুঃখে, কষ্টে ওদের সংসারটি চলে যাচ্ছিল ।

      হঠাৎ একদিন রমলাকে খুজেঁ পাওয়া গেল না।সেদিন ঝড় বৃষ্টির রাতে সে আর বাড়ি ফিরল না। কাঠ কুড়োতে গিয়ে সে যেন কোথায় হারিয়ে গেল। বাবা বড় কষ্টে বাচ্চা গুলির পেট ভরতে চেষ্টা করল। কিন্তু ছেলে মেয়ে গুলির কপালে হয়ত তাও সইলো না।পাথর পড়ে একদিন বাবার পা ভাঙ্গলো ।যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, তারা চিকিৎসা করাবে কি ভাবে ।কিছু দিনের মধ্যে বাবাও ওদের ছেড়ে চলে গেল। 

     পানিলি ওখানকার একটি আদিবাসী স্কুলে পড়াশুনা করত।কিন্তু এখন ওর বাড়ির যা অবস্থা,ও লেখা পড়া করার আর সময় পেলো না। ছোটো ভাই বোনদের বাঁচাতে হবে ত। ওর মা বাবা যে সর্দারের কাছে কাজ করতো, পানিলি নিরুপায় হয়ে সেখানে গেল ।সর্দারের হাতে পায়ে ধরে খুব কাকুতি মিনতি করল ।তার মেয়েটির উপর দয়া এসে গেল ।ও বলল ঠিক আছে ,তুই কাল থেকে কাজে আয় ।সে কিন্তু ওর মতিগতি ঠিকমতো বুঝতে পারল না। রোজ ভোরে উঠে, বাসি কাজ সেরে পান্তা ভাত খেয়ে, ছোট ছেলে মেয়েদের জন্য মুড়ি গুড় রেখে দিয়ে , ও কাজে বেড়িয়ে যেত।ফিরতে রাত হত।

কিছুদিন এই ভাবেই চললো।সেদিন কাজ সারতে একটু দেরি হয়ে গেল। পাগলের। মতো ঝড় বৃষ্টি ছুটে এলো। ওর চোখে সব অন্ধকার দেখা গেল। সর্দারের কথা মত ও গিয়ে ওর  ডেরায়ে আশ্রয় নিল । কিন্তু ওখানে যে কত বড় বিপদ ওত পেতে বসে আছে তা সে জানতো না ।

একটু বাদেই মদ গিলে সর্দার এল। পানিলি কিছু বোঝার আগেই ওর শরীরটাকে দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে ফেলল। ওকে বাঁচাতে কেউ এল না।সারা রাত অনাথ ভাই বোনেরা দিদির ফেরার পথ চেয়ে বসে রইলো। ওদিকে পানীলি কাঠের মতো পড়ে রইলো।

    সকালের আলোয় পানিলি যখন চোখ খুলল ,তখন সে সব বুঝতে পারল ।ভাই বোনদের কথা ভেবে ও মরতেও পারল না ।

অনেক সাহস জুটিয়ে ও সরদারের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।সে ওকে দেখে বলল, তুই কে রে,যা যা এখন থেকে তাড়াতাড়ি পালা। মেয়েটি বলল আমি যে তোমার স্ত্রী। এই আমি তো তোমায় ছেড়ে কোথাও যেতে পারি না। সে কথা শুনে অবাক হয়ে গেল। বলল, তোর সাহস তো কম নয় । পাগলী বলল সময় আর পরিস্থিতি আমায় যে সাহসী করে তুলেছে। তুমি ভালোয় ভালোয় আমার সিঁদুর দাও ওই জঙ্গলে দেবী মায়ের কাছে। নয়তো আমি, থানা পুলিশ করব। এখানেই তোমার মুখোশ খুলে দেবো। তার সাহসের আগে সরদার হার মানল। শুধু ওকে নয় ওর ভাই বোনদেরও ও নিজের বাড়িতে এনে রাখলো। এই ভাবে পানিলি ওর ভাই-বোনদের দায়িত্ব সারা জীবন নিতে পারবে বলে ভাবল ।

  কিন্তু ওর সংঘর্ষ এখানেই শেষ হলো না । সরদারের বাড়িতেও ওকে আর ওর ভাই-বোনদের অনেক কিছু সইতে হল । এখনো সেই ছোট্ট নাবালিকা পানিলি তার জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। হয়ত রাতের আঁধারে কোন ঝোপে ঝাড়ে কেমন যেন এক কান্নার শব্দ গুমরে ওঠে । 

 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational