সাগরিকা
সাগরিকা
মধুপুর একটি ছোট্ট গ্রাম। সেখানে থাকে কিছু কেউটে পরিবার। মাছ ধরে কেনাবেচা করাই ওদের জীবিকা। আমি বলছি নগেন মৌলিকের পরিবারের কথা । তার বাড়িতে আছে বউ ,এক মেয়ে আর এক ছেলে আর এক বুড়ি মা। দুখে সুখে সংসারটি কোন রকমে চলে যাচ্ছিল। হঠাৎ একদিন মাছ ধরতে গিয়ে মাছ সমুদ্রে নগেন মৌলিক হারিয়ে গেলে । সংসারে হাহাকার পড়ে গেল । বিধবা বউ কি করবে, কিভাবে সংসারের হাল ধরবে কিছু বুঝতে পারছিল না। ছেলেটাও ছোট । ঘরে যা দুমুঠো চাল ছিল তাই দিয়ে পাঁচ, ছয় দিন কেটে গেল । এমন সময় দুই মেয়ে কিছু একটা করবে বলে চিন্তা করল। বড় মেয়ে মিতা বললো চল আমরা দুজনে মিশে সমুদ্রের ধারে। চায়ের দোকান দি। ছোটো বোন রীতা দিদির কথায় রাজি হয়ে গেল। ওদের বাড়িতে অনেক দিনের পুরানো একটি সোনার বালা ছিল । কোনরকমে ওটি বন্ধক রেখে ওরা কিছু টাকা জোগাড় করল । চা বানানোর সরঞ্জামও জোগাড় হল। এখন প্রতিদিন দুই বোন বিকেল চারটা পাঁচটা নাগাদ
চায়ের জিনিসপত্র ধরে সমুদ্র সৈকতে এসে হাজির হয় । ওখানে অনেক বাঙালি পর্যটক আসে। দেখতে দেখতে ওদের হাতে চায়ের স্বাদ সবারই ভালো লাগলো। ওদের দোকান বেশ ভালো মতো চললো।
ওরা ভাইকে লেখাপড়া করার জন্য একটি সরকারি স্কুলে নাম লিখিয়ে দিল। এদের মা এসব দেখে খুব খুশি হলেন। কিন্তু সুখের দিন তো বেশিদন স্থায়ী হয় না। ওদের জীবনে আবার ঝড় উঠলো,যেদিন ওরা অনেক খোঁজা খুঁজি করেও রীতার কোনও হদিস পেলো না। এমন একটি অঘটনের জন্য ওরা কেউই প্রস্তুত ছিল না ।
মিতা ভাবলো দোকানে নিয়ে ওর বোনক দাঁড় করটাই হয়তো ভুল হয়েছে। ওখানে কত রকমের লোক আসে। রীতা একটু মিশুকে , বেশ খুশ মেজাজের মেয়ে। কথায় কথায় হয়ত কারো সঙ্গে একটু বেশি আলাপ হয়ে গেছে । ওদের সন্দেহ হলো হয়তো কেউ ওকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বা কোনরকম প্রলোভন দেখিয়ে কোথাও নিয়ে গেছে। আজকাল তো দিনকাল ভাল নয়। রীতার আবার বাড়ন্ত বয়স।
ওরা নিজের মতো করে যা পারল করল। কিন্তু রিতার কোন খবর পাওয়া গেল না। যত ঝড় আসুক না কেন বাঁচতে তো হবেই। মিতা এখন ওর ভাই রাজাকে নিয়ে দোকানে যেতে শুরু করল ।
হঠাৎ একদিন রাজা সমুদ্রের বেলাভূমিতে একটুকরো ছেঁড়া খবর কাগজ
দেখতে পেল। তাতে রীতার ছবি দেখে ও আশ্চর্য হয়ে গেল । বাড়ি ফিরে সবাইকে ছবিটা দেখাল। মিতা বৃদ্ধি করে সমুদ্র কূলের থানায় ছবিসহ রিপোর্ট লেখালো।
হঠাৎ একদিন একজন অজানা ছেলের সাথে রিতা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। ওরা দুজনেই জানিয়ে দিল ওরা পরস্পরকে ভালোবাসে এবং বিয়ে করতে চায়। মিতা ভাবল ওদের বাড়ির যা অবস্থা, ওরা চাইলেও মেয়ের বিয়ে দিতে পারত না ঠিকমতো,তাই যা হয়েছে মেনে নেওয়াই ভালো। মা বললো তোরা তো এতদিন একসঙ্গেই আছিস, তাই আজ কেন মুখ দেখাতে এলি, যেখান থেকে এসেছিল সেখানেই চলে যা । ওরা চলে গেল ।
কিন্তু বেশ কিছু মাস পরে সবাই সমুদ্রের ধারে একটি পাগলীকে আবিষ্কার করল । সে আপন মনে কি যেন সব বিড়বিড় করতো । মিতা ওকে চিনতে পারল। সে যে তার ছোট বোন রিতা। মিতা ওকে খুব কষ্ট করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে এলো। ওদের আদর যত্নে রীতা অনেক সুস্থ হয়ে উঠলো । ও তার দিদিকে দুঃখের কথা সব জানালো । কিভাবে ও ঠকামির শিকার হয়েছিল সেই কথা সবকিছু খুলে বলল।
মিতা বলল বোন দুঃখ করিস না। তোকে আমরা আবার ফিরে পেয়েছি এটাই আমাদের জন্য অনেক বড় কথা। আজ থেকে তুই আর আমি একসঙ্গে থেকে সারা জীবন খুশিতে কাটিয়ে দেবো। দুনিয়ার কোন শক্তি আমাদের আলাদা করতে পারবে না।