নরঘাতী
নরঘাতী
বিজয় তালাটা খুলে কায়াকে ফ্ল্যাটে ঢুকতে বললো। কিন্তু পিছনে ফিরে তাকে দেখতে না পেয়ে আবার সে দরজায় তালা দিয়ে নিচে নামলো। নিচে নামতেই কায়াকে মেন গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। তারপর আস্তে-আস্তে হেঁটে গিয়ে কায়ার পিছনে দাড়াতেই মেয়েটা বলে উঠলো, "আমরা আগের ফ্ল্যাটেই ভালো ছিলাম, শহর টাও আমাদের ছিল, এখানে আসার কোনো দরকারই ছিলোনা"। বিজয় খুব শান্ত ভাবে বললো "দেখো এখানে আসার কারনটা আমরা দুজনেই জানি, অতয়েব এই প্রসঙ্গে আর আলোচনা না করাই শ্রেও"। কথাটা শেষ করেই কায়ার হাত ধরে উপরে উঠে গেল।
মাঝরাতে বিজয়ের হঠাৎই ঘুম ভেঙে যায়, বিছানায় হাত বুলিয়ে যখন কায়াকে খুঁজে পায়না। কিন্তু সে আন্দাজ করেছিল ওই সময় কোথায় গেলে কায়াকে পেতে পারে। তাই সে একটুও দেরি না করে সোজা ছাদের সিড়ি দিয়ে উঠে গেলো। ছাদে উঠতেই কায়াকে দেখতে পেলো। মেয়েটা তখন ওর দিকে পিছন ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। বিজয় ওর কাছে গিয়ে বললো, "শুধু শুধু অভিমান করছো আমার উপর, আমি তোমার ভালো চাই, আমাদের ভালো চাই, আর সব থেকে বড় কথা আমি তোমায় হারাতে পারবনা"। কায়া ফিরে দাড়িয়ে বললো, "তুমি আমার ভালো চাইলে আজ আমরা পুরনো ফ্ল্যাটেই থাকতাম, শহর থেকে এত দূরে আসতে হতো না, আসলে তুমি খুবই সার্থপর, নিজেকে ছাড়া কাউকে চেনোনা, কারোর ভালোও চাওনা"। কায়ার এমন আচরণে বিজয়ের সত্যিই খুব খাপার লাগলো, রাগ সম্বরণ করতে না পারে এবার সে প্রায় চেচিয়ে উঠল, "যদি সত্যিই আমি সার্থপর হোতাম তাহলে তুমি আজ এখানে দাড়িয়ে আমায় এভাবে কথাগুলো শোনাতে পারতেনা, আর কোন শহরের কথা বলছো ওটা কি শহর ছিল অদেও, না একটা খুনের সাগরে পরিণত হয়েছিল"। চোখ নামিয়ে কায়া বললো, "তবুও ওখানেই ভালো ছিলাম, এখানে সব নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে, সব আবার নতুন করে শুরু করতে হবে"।
কায়ার এমন কোথায় বিজয় কিছুই বলতে পারলো না, কারণ ও চায়না কায়া নতুন করে কিছু করুক। শুধু বললো, "অনেক রাত হয়েছে এবার শুতে চলো"। কথাটা বলেই বিজয় হনহন করে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেল আর কায়াও তাকে অনুসরণ করলো।
সকাল-সকাল বাইরের কোলাহলে বিজয়ের তারাতারি ঘুমটা ভেঙ্গে যায়। তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে ও ব্যালকনিতে ছুটে যায়, আর কোলাহলের কারনটা বুঝতে পারে। তারপর টিশার্ট গলিয়ে নিচে নেমে গেলো ব্যাপারটা কাছ থেকে দেখার জন্যে। ব্যাপারটার বিষয়বস্তু হলো ফ্ল্যাটের দারওয়ানকে কে যেনো গতকাল রাত্রে খুব নৃশংস ভাবে খুন করেছে। লাশটাকে কাছ থেকে দেখে বিজয়ের বুকটা ধ্বক করে উঠেছিল। এই জন্যে নয় যে লাশটা ফ্ল্যাটের দারোয়ানের, কিন্তু এই জন্যে যে লাশটার গলায় সেই একই খতর চিন্হ আর লাশটার হৃৎপিনটি কেটে নেওয়া হয়েছে।
বিজয় রুমাল দিয়ে কপালে গড়িয়ে বেয়ে আসা ঘামটা মুছে ফ্ল্যাটে উঠে যায়। শোয়ার ঘরে ঢুকে দেখে কায়া তখনও ঘুমোচ্ছে। এত শব্দ বাইরে টাও মেয়েটা অকাতরে ঘুমোচ্ছে। বিজয়ের চোখ চলে গেল কায়ার বন্ধ চোখের উপরে। চোখের নিচে নাক তার ঠিক নিচেই নরম দুটো পাতলা ঠোঁট। সেই ঠোঁটে এক টুকরো হাসি লেগে আছে। বিজয় মনে-মনে ভাবলো আগের দিন অত রাত জাগার ফলে মেয়েটা ক্লান্ত তাই বাইরের এত আওয়াজেও ওর ঘুম ভাঙছে না। আর ঠোট লেগে থাকা হাসি বোধয় তার পছন্দ মতো স্বপ্ন দেখার প্রতিক্রিয়া।
এসব ভেবে বিজয় খাটের ওপর উঠে বসলো, তারপর তার কপাল দুটো কুচকে গেলো, ভুরু দুটো কাছে চলে এলো, আর সে ক্রুদ্ধ বাঘের মতো গর্জন করে বলে উঠলো, "এত কিছুর পরেও তুমি শান্তিতে ঘুমাতে পারছো"? "আমি জানি তুমি জেগে আছো আর আমার কথাও শুনতে পাচ্ছো"। কায়া ধীরে-ধীরে চোখ খুলে উঠে বসে বললো "কেনো সকাল-সকাল এত রেগে যাচ্ছ, প্লীজ কুল ডাউন"। এই কথা শুনে বিজয় আরও রেগে যায়। সে বলে, "তোমায় নিয়ে এবার আমি কোথায় যাবো, তুমি এসব কবে বন্ধ করবে, তুমি ভালোভাবেই জানো আমি চাইনা তুমি এই ধরনের কাজ করো"। কায়া বিজয়কে বোঝানোর চেষ্টা করে বললো, "তুমি জানো আমার এই কাজ করতে ভালো লাগে, আমার প্যাশন, আমি খুব ভালোবেসে কাজটা করি, তবু তুমি আমায় ঘরে আটকাতে চাও, তুমি এত ডমিনেটিং জানলে তোমায় বিয়ে করতামনা"। বিজয় একটা ম্লান হাসি হেসে বললো, "আমায় ভালোবেসে তাহলে কাকে বিয়ে করতে"। বিজয়কে হঠাৎ সিরিয়াস হতে দেখে কায়া তাড়াতাড়ি বলে উঠলো, "আরে আমি তো মজা করছিলাম, তুমি কেনো সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছ"। বিজয় এবার কয়ার দু-কাধে দুটো হাত রেখে বলল, "সেটাই তো সমস্যা, এই হত্যালীলা তুমি যে কোনোদিনই বন্ধ করবেনা সেটা আমার আগে বোঝা উচিৎ ছিল, কি লাভ পাও এসব করে, এমন ঠান্ডা মাথার পরিকল্পিত খুন, কেউ টেরও পায়না"। কথা শেষ হওয়া মাত্র কায়ার নিষ্পাপ মুখটা বিকৃত হয়ে সেই মুখে ফুটে ওঠে একটা কুটিল হাসি। সেই হাসি দেখে বিজয় আবার বলে "কাল তোমার মাঝ রাত্রে বিছানায় অনুপস্থিতেই আমি বুঝেছিলাম তুমি সুদ্রবেনা। হয়তো খুব শিগগিরি আমাদের এই জায়গাও ছেড়ে চলে যেতে হবে, কারণ তোমায় পুলিশ টেনে নিয়ে যাবে সেটা আমি সহ্য করতে পারবনা, তাছাড়া তোমার ভালো-মন্দের দাইত্ত তো আমারি"।