Prantik Biswas

Inspirational

4.9  

Prantik Biswas

Inspirational

নমস্কার

নমস্কার

2 mins
718


তখন আমি আই.বি.এম কলকাতায়। আমাদের ডিপার্টমেন্টে, একজন সিনিয়র ম্যানেজার এলেন ট্রান্সফার হয়ে। বাঙালি, লম্বা দোহারা চেহারা। আট তলায় ওঠেন সিঁড়ি দিয়ে! আলাপ করার দিন, সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলাম, উনি বুকের সামনে এনে হাতদুটো জোড় করে বললেন - নমস্কার। ইংরিজীতেই কথা হলো কিন্তু। সুন্দর স্বচ্ছ ইংরিজী আর কথাবার্তায় বুদ্ধিমত্তা আর বিচক্ষণতার ছাপ! অনলাইন মিটিং বা সামনাসামনি, দেশি হোক বা বিদেশি...নমস্কার দিয়েই শুরু করতেন সবসময়। একবার জিগ্যেস করেছিলাম - আপনি হ্যান্ডশেক না করে নমস্কার করেন কেন? মিটিং শুরু হচ্ছিলো বলে আর ওনার উত্তর শুনতে পারিনি।

 

পরে জেনেছি হাত জোড় করে নমস্কার করার বিভিন্ন উপযোগিতা। এতে আপনার নম্রতা ও নিরহঙ্কারতা প্রকাশ পায়, যাতে অন্য পক্ষের নেতিবাচক মনোভাব কিছু থাকলেও স্তিমিত হয়ে যায়। অনেকে বলেন হিন্দুধর্মের মতে নমস্কার হল পাঁচ জ্ঞানেন্দ্রিয় আর পাঁচ কর্মেন্দ্রিয়কে একীভূত করা। যখন মনকে একাগ্র করার প্রয়োজন, সেই প্রার্থনার সময়ও অনেক ধর্মের লোকেরাই হাতজোড় করেন ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে। হয়তো প্রার্থনা আরো নিবিষ্ট হয়।


২০১৮ সালে থাইল্যান্ডে ওয়ার্কশপ করতে গেছি। কনফারেন্স রুমে ঢুকে দেখি আমার এক সহকর্মী থাই মহিলা। হ্যালো বলতেই উনি হাত বাড়িয়ে দেওয়ার বদলে অঞ্জলি মুদ্রার ভঙ্গিতে হাতজোড় করে বললেন সওয়াৎ-দি-কা! এই অভিবাদনকে ওনারা বলেন – ওয়াই; উদ্দেশ্য হল অপরজনের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। পরে গুগল করে জানলাম যে সওয়াৎ-দি কথাটা এসেছে সংস্কৃত শব্দ স্বস্তি থেকে। এই শব্দটা আমায় অস্বস্তিতে ফেলে দিল কিছুটা; পৃথিবীর বেশিরভাগ লোক হ্যান্ডশেক করেন কেন? দেখলাম, প্রথম হ্যান্ডশেকের প্রমাণ হিসাবে ধরা হয় অ্যাসিরিয়ার রাজসিংহাসনে খোদাই করা এক ছবি; প্রায় তিন হাজার বছর আগের। ব্যাবিলন আর অ্যাসিরিয়ার শাসকদের মধ্যে হাতমেলানো চলছে শান্তিস্থাপনের জন্য। এতে নাকি বোঝা যেত যে হাতে কোন অস্ত্র নেই দুপক্ষের! এক বন্ধু বলল যে রোমান গ্ল্যাডিয়েটররা, যাদের আমৃত্যু লড়তে হত – তারা নিজেদের মধ্যে পরিচয় বিনিময়ের সময় একে অপরের হাত ধরে থাকত, পাছে তারই মধ্যে আঘাত না আসে। যুদ্ধ নয় শান্তি বোঝাতেই কি তাহলে আমরা হাত মেলাই?

 

আরেকবার কলকাতা থেকে মিউনিখ যাচ্ছি। এমিরেটসের ফ্লাইটে উঠে দেখি আমার জন্য বুক করা জানলার সিটে বসেছেন শাড়ি পরা, মাথায় তিলক কাটা এক বিদেশিনী বৃদ্ধা। ওনাকে জিগ্যেস করলাম, আপনি কি ওখানে বসতে চান? পাশে ধুতি পাঞ্জাবী পরা মাথায় তিলক ওনার বৃদ্ধ সঙ্গী বুঝলেন ওনাদের সিট নম্বর বুঝতে ভুল হয়েছে। অনেক অনুরোধ করা সত্ত্বেও রাজি হলেন না - আমাকে সিট ছেড়ে দিলেন। বসে, একটু থিতু হয়ে আলাপ করতে নাম বলে হাত বাড়ালাম। বৃদ্ধ নমস্কার করলেন। ইটালিয়ান দম্পতি, গত দশ বছর ধরে কলকাতা-নবদ্বীপ-মায়াপুরে আসেন, থাকেন। নিজেদের দেশের গ্রামে রাধাকৃষ্ণ মন্দির/প্রার্থনাগৃহের পুরোহিত উনি। নমস্কার কি খালি আমাদের দেশে এলেই করেন? উনি বললেন - না, আমাদের আঙুলের গোড়ায় যে নার্ভগুলো থাকে, তাদের সাথে আমাদের মস্তিষ্কে স্মৃতির স্থানের যোগাযোগ আছে। আলাপের সময় তাই হাতজোড় করলে অপরদিকের মানুষটাকে মনে থাকে অনেকদিন।


 

প্রাচীন ভারতবাসীরা স্বাস্থ্যের কথাটাও নিশ্চয়ই চিন্তা করে নমস্কার প্রচলন করেছিলেন। স্পর্শ না করে কুশল বিনিময় করার কি সুন্দর এক প্রক্রিয়া! আমরা সেসব ভুলে গেছি বলে, কোথাকার এক মারণ-ভাইরাস করোনা এসে আমাদের বলছে - হ্যান্ডশেক কোরো না, কোরো নমস্কার..

 

উপরের ধারণাগুলো কতটা সত্যি তা যাচাই করে দেখিনি, তাই ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমা করবেন - নমস্কার!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational