নমিনি
নমিনি


নমিনি
জীবনের এর বয়স ৮২, প্রচুর সম্পত্তির মালিক, কিন্তু দুশ্চিন্তা একটাই, এতো সম্পত্তি কাকে দিয়ে যাবেন? রাস্তা ঘাটে যখন লাঠি নিয়ে বেড়োন তখন চোখকান সজাগ রাখেন, যদি কাউকে পান তো নমিনি করে যাবেন। এই তো সেদিন একটি ছেলেকে দেখলেন গরীবদের জামাকাপড় দিতে, ভাবলেন ওকে ডাকবেন, কিন্তু না ডাকতে গিয়েই পিছিয়ে এলেন, ভাবলেন ও কেন ফোকটে এত্তোগুলো টাকা পাবে? কম ত না...দু কোটি, তার ওপর সোনাই আছে ৬৬ ভরির ওপর, হীরের একটা মুকুটও আছে! তার ওপর তিনতিনটে বাড়ি। যেই বাগান বাড়িতে উনি থাকেন, সেটা তে দেশীবিদেশি ফার্নিচারে ঠাসা। কিন্তু জীবন সেন একদম একা, কেউ কোথাও নেই., যারা ছিল, সবাই গত, খুব কম বয়েসে বিপত্নীক হয়ে ওই একাএকাই থেকেছেন আর দুহাতে শুধু রোজগার করেছেন, ফার্নিচারের ব্যবসা, এখনও রমরমা।
মাঝে মাঝে বিষন্ন হয়ে দুয়েক লাইন কবিতাও লেখেন। "আমিই বটে সুখী, আমিই বটে ধনী, আছে বিপুল সম্পত্তি, নেই কোন নমিনী", এই লিখে সেদিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদলেন। একদিন ইংরিজিতে একটা পুরো কবিতাও লিখলেন। সেটা আবার ছাপালেনও, একটা ব্লগে সেটা আবার পোস্টও করলেন তারই এক বন্ধুর নাতির সাহায্যে। প্রথমে শুরু করেছিলেন,
I have money, but no nominee
তারপর সেটা কেমন কৌতুকের মত শোনাচ্ছে বলে অনেক ভেবে চিনতে পরিবর্তন করে ফাইনাল ভার্শনটা এইরকম দাঁড়ালো:
Jibon has lots of money
He is 82, has no nominee.
Suspicious, alone
He doesn’t believe anyone.
Horrified with a strange worry!
He can neither distribute his wealth
To cure poor children’s health
Nor can he donate it to anyone unknown;
Those enormous fortune is lying locked up
As unfortunate prisoners,
They are of no use, they are all losers.
But Jibon is in search of someone
to whom he could hand over
the dead fruits before he is gone.
এইরকম ভাবে খুঁজে খুঁজেই দিন যায়। কোনোদিন ভাবেন কাগজে বিজ্ঞাপন দেবেন, কোনোদিন ভাবেন অনাথ আশ্রমে বা অন্য কোথাও দান করে যাবেন, কিংবা কোনো এনজিও তে দান করবেন, এইসব নানারকম চিন্তা করেন। কিন্তু কিছুতেই আর কাউকে দিয়ে উঠতে পারছেন না!
কিন্তু কবিতাটা লেখার পর তার যা একটা আনন্দ হোল তা তিনি ভাষায় প্রকাশ করতে পারলেন না। একদিন তিনি সেই ছেলেটিকে আবার ডেকে পাঠালেন, শুধু তাকে ধন্যবাদ দেবার জন্য। কী যত্ন করে সে তার লেখাটি হাতে ধরে লিখে, তারপর তা ছাপিয়ে তার সামনে তুলে ধরলেন তারপর তার উদাত্ত গলায় সেটা তাকে পড়ে শোনালেন তা জীবন ঠিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিলেন না সেদিন। উত্তরে, এ আর এমন কি, বলে সে চলে গিয়েছিলো। একটা ছোট্ট ভাব কবিতায় প্রকাশ করে তিনি সেদিন যা আনন্দ পেয়েছিলেন তা তিনি জীবনে কখনও, এতো ধন সম্পত্তি অর্জন করেও পাননি।
দিনতিনেক হলো জীবন সেন মারা গেছেন। তাঁর সমস্ত সম্পত্তি লাওয়ারিশ লাশের মত আটকে আছে ব্যাংকের সেভিংস একাউন্টে, সোনাদানা মণিমাণিক্য আছে লকারে। অনেক আত্মীয়স্বজন দেখা যাচ্ছে ঘুরঘুর করতে চিলশকুনের মত, কাটাছেড়া তো হবেই, কিন্তু আল্টিমেটলি ওগুলো কার বুকের জ্বালা, মুখের খিদা মিটাবে তা কেউ জানেনা।
যেহেতু তিনি অন্যতম ধনীদের মধ্যে একজন, তাই অনেক পুলিশের লোকজন, সাংবাদিক ভীড় করেছিলেন তার বাগান বাড়ীতে। হঠাৎই অভাবনীয় ভাবে জীবন সেনের ডেস্ক থেকে কবিতাটি পড়ে চমকে উঠলেন সাংবাদিকরা, তার কবিতাটি শোনা গেলো অনেক নিউস চ্যানেলে। কবিতাটির পিছন পাতায় লেখা ছিল জীবন সেনের শেষ ইচ্ছে।
প্রিয় প্রেমানন্দ,
তুমি সম্পূর্ণ নির্লোভ, এতো যত্ন করে আমার লেখা ছাপালে, ব্লগে পোস্ট করলে, পড়েও শোনালে তোমাকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা। আমি এইরকম আনন্দ পেলাম যা লিখে প্রকাশ করতে পারছিনা। আমি তোমাকেই আমার সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি দিয়ে গেলাম। ভাল থেকো আর এইরকম নিঃস্বার্থ ভাবে অন্যদের আনন্দ দিও। আমার নিষ্প্রাণ সম্পত্তি স্বীকার করে করে আমাকে বাধিত করো।
ইতি
জীবন সেন।