শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Others

3  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Others

নিভৃতে যতনে

নিভৃতে যতনে

3 mins
222



পড়ন্ত বিকেল সূর্য একটু একটু করে ঘুমের পথে পাড়ি দিচ্ছে। কিছুক্ষন আগেই আকাশটা কালো মেঘের চাদরে ঢেকে গেছিল, কিন্তু দুচার ফোটা বৃষ্টির দানা মাটির বুকে ঝড়ে, আবার পরিষ্কার হয়ে গেছে। কালো মেঘের আড়াল থেকে সূর্য তার কমে আসা ক্ষীণ আলো ছড়াচ্ছে। আকাশের গায়ে এখন সিঁদুরে মেঘ তার প্রভাব বিস্তার করেছে। আর সেই মেঘের সুন্দর প্রতিচ্ছবি গঙ্গার স্বচ্ছ জলে................ ফুটে.....উঠছে। পড়নে বেনারসি শাড়ি,গলায় রজনীগন্ধা ফুলের মালা, কপালে চন্দনের কারুকার্য, পায়ে আলতা, হাতে শাঁখা,পলা কনের সাজে সজ্জিত হয়ে গঙ্গার পাড়ে বসে পায়েল স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে সেই জলের দিকে। গালে শুকিয়ে যাওয়া চোখের জলের দাগ বসে আছে, হয়তো কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে গেছে তাই থেমে গেছে। জলের দিক থেকে দৃষ্টি সড়িয়ে হাতে থাকা লাল খামের দিকে তাকালো পায়েল। ধীরে ধীরে খামটা খুললো, সাথে সাথে একটা দমকা শীতল হাওয়ায় খামের মধ‍্যে থাকা শুকনো গোলাপের পাঁপড়ি গুলো উড়ে গেল চারিদিকে কিছু জলের ওপর ভাসতেও শুরু করল। খামের ভীতর থেকে খুব যত্নে পায়েল বার করল একটা সাদা কাগজ। কাগজে কালো কালি দিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে.......

প্রিয়, পায়েল,

                        ভালো থাকিস পায়েল!, তুই ভালো থাকলে বিশ্বাস কর আমিও যেখানেই থাকবো ভালো থাকবো! আমিও ভালো থাকতে চেয়েছিলাম, বাঁচতে ছেয়েছিলাম তোর সাথে, কিন্তু কি... করব বল?আমাদের সব চাওয়া পাওয়ার হিসাব কি সঠিকভাবে মেলে। আমি খুব ভালোবাসিরে তোকে, তাই আমি চাই তুই আমার স্মৃতি আঁকড়ে যেন পড়ে না থাকিস, আমি চাই তুই জীবন পথে অন‍্য কারোর হাত ধরে এগিয়ে যা। আর আমার ভালোবাসা তোর মনের অন্দরমহলে রঙিন হয়ে না হয় সজ্জিত থাক। আর আমি এটাও চাই, আমার ভালোবাসা তোর দূর্বলতা এবং কষ্টের কারন নয়, বরং তোর আনন্দ এবং ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসির কারন হোক তুই প্রান খুলে হাসলে আমার খুব ভালো লাগে তোকে দেখতে, কিন্তু তুই যখন কাঁদিস তখন তোর চোখের জল আমাকে খুব কষ্ট দেয়। আমাদের ভালোবাসা সামাজিক ভাবে পূর্ণতা পায়নি! স্বিকৃতি পায়নি! কিছু কিছু ভালোবাসা এই রকম অপূর্ণই রয়ে যায়। আমাদের ভালোবাসা না হয় সামাজিক ভাবে অপূর্ণ রয়ে গেল, কিন্তু তোর আমার ভালোবাসা পূর্ণতা কবেই পেয়েগেছে, যখন আমি মৃত‍‍্যুপথ যাত্রি জেনেও তুই আমার হাত ছেড়ে দিসনি!আরও শক্ত করে ধরেছিলিস। জানিনা আমি আর কদিনের অতিথি হয়ে আছি এই পৃথিবীর কোলে! তাই যাওয়ার আগে তোকে মনের কথাগুলো লিখে জানতে বড্ড ইচ্ছে হলো। আমি জানি আমি তোর মনের মনিকোঠায় সবসময় বেঁচে থাকব, তাই আমি চাই তুই এগিয়ে যা. জীবন পথে। আর হ‍্যাঁ মনে কর এটাই আমার শেষ ইচ্ছে!!! আর আমি জানি তুই আমার এই ইচ্ছে পূরন করবি।


ইতি তোর, মৃনাল


পায়েল চিঠিটা বুকের কাছে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল। প্রকৃতির বুকে তখন সন্ধ‍্যা নেমে এসেছে, আকাশের বুকে হাজার হাজার তারা ফুটে উঠেছে। রাস্তার ধারে ধারে কৃত্রিম আলো জ্বলে উঠেছে। আলোর ছটা গঙ্গার জলের ওপর যেন রঙিন আলপনা এঁকে চলেছে। 

পায়েল দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, দেখ আজ আমি তোর ইচ্ছে পূরন করতে চলেছি মৃনাল, জীবন পথে এগিয়েছি, তুই খুশি হয়েছিস তো... মৃনাল? খুশি হয়েছিস তো? চোখের জল আর বাঁধ মানলনা পায়েলের, খরস্রোতা নদী হয়ে গাল বেয়ে পড়তে লাগল।


হঠাৎ পিছন থেকে একটা আওয়াজ আসল, পায়েল এবার ফিরতে হবে! চলো না....হলে দেরী হয়ে যাবে!

পায়ের আলতো ভাবে চোখের জলটা মুছে বলল, তুমি এসেগেছো নিলয়। চলো... একটা কাজ বাকি আছে করেই যাচ্ছি।

নিলয় পায়েলকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল, আরও কিছুক্ষন থাকতে চাইলে. থাকতে পারো... আমি না.... হয় অপেক্ষা করছি।

পায়েল বলল, কাজটা আমরা একসাথে করব, তাই তোমার অপেক্ষায় করছিলাম।

নিলয় বলল, ওদিকের বিয়ের.... অ‍্যারেঞ্জমেন্ট করতে গিয়ে দেরী হয়ে গেল।

পায়েল বলল হুম

-নিলয় বলল কি.... কাজ?

পায়েল লাল খাম সমেত চিঠিটা দেখিয়ে বলল, এটা ভাসাতে চাই... একসাথে।

নিলয় বলল, ওটা তোমার কাছে থাকনা... স্মৃতি হিসেবে, ভাসিয়ে কি.... লাভ!

পায়েল বলল, মৃনাল আমার মনের কোনে সবসময় বেঁচে থাকবে, ও.... চেয়েছিল আমি নতুন জীবন শুরু করি হাসি মুখে, আর এখন আমিও..... সেটাই চাই নিলয়।

নিলয় এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল পায়েলের কান্নাভেজা চোখের দিকে।

পায়েল নিলয়ের হাতটা ধরে চিঠি সমেত লাল খাম ভাসিয়ে দিল গঙ্গাবক্ষে। জলের তালে তালে ভেসে যেতে লাগল লাল খাম। নিয়ল পায়েলের হাত শক্ত করে ধরে মনে মনে বলল, এই হাত আমি কোনদিনও ছাড়বনা কথা দিলাম।আকাশের বুক থেকে তখন একটা উজ্জল তারা দূরে খসে পড়ল।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance