নাড়ির টান
নাড়ির টান
রণজয় এর সাথে দেশের বাড়ির যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অতি আধুনিক এবং পুরোপুরি কর্ম ব্যাস্থ মিতালির কোনো আগ্রহ নেই গ্রামের ব্যাপারে। শেষের দিকে মাকে আনতে চেয়েছিল বিদেশের বাড়িতে কিন্তু আজীবন সংগ্রামী ও আত্মমর্যাদা সম্পন্ন শিক্ষিকা মা রাজি হয় নি। মার মৃত্যুর খরব পেয়ে ও একাই পারলৌকিক কাজকরতে এসেছিল গ্রামের বাড়িতে। জমি সহ বড় দোতলা বাড়ি টা মায়ের পুরনো কাজের মাসি খোকনের বাবা হাতে দেখভালের দায়িত্ব দিয়ে চলে গিয়েছিল। তখন খোকন শিশু। তা প্রায় দশ বছর আগে। হঠাৎ এত বছর পর একটা mail আসে তার কাছে। গ্রামের গরিব মানুষদের জন্য একটা বিদ্যালয় খোলা হবে আর বিদ্যালয় টি ওর বাবার নামে হবে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং তারা অনুরোধ করেছে বিদ্যালয় টি রণজয় কে উদ্বোধন করতে। Mail পেয়ে রণজয় হঠাৎ nostalgia হয়ে পড়ে। তার মনে পড়তে থাকে সে যখন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে তখন তার বাবা মারা যান। তার বাবা ছিলেন শিক্ষক ও সমাজ সেবক। মা বাবা দুইজন মিলেই কত মানুষের উপকার করেছেন। তাই তার বাবার মৃত্যুর খরব পেয়ে প্রায় পুর গ্রাম ভেঙে পড়েছিল ওদের বাড়িতে। তার পর ধিরে ধিরে মা একদিন স্বাভাবিক হল। বাবার স্কুলে চাকরি নিল। দিন রাত এককরে রণজয় কে মানুষ করে তোলে।জীবনে কখনো দ্বিতীয় হয় নি রণজয়। গ্রামের স্কুল থেকে কলকাতায় engineer কলেজ থেকে পাশ করে সোজা বিদেশ চাকরি। মা জীবনে দুটি জিনিস মনের মতন করে তৈরি করেছে।একটি হল রণজয় কে মানুষ করা আরেক টি হল বাবার ছোট্ট বাড়িটা দোতলা করা। মিতালির সাথে বিয়ের পর অনেক বার ভাবেছিল একবার গ্রামের বাড়িতে যাবে,কিন্তু মিতালি র কাছে গ্রাম মানে dengue, malaria, কাদা নোংরা। তাই যাওয়া হয়নি। মা ও কোনো দিন বলেনি।মা শেষের দিকে খোকনের পরিবার কে নিয়ে ছিলেন। খোকন র লেখাপড়ার দেখভাল মা করত। মা পৃথিবীর থেকে চলে যাবার পর মিতালি বার বার বলছে পৈতৃক বাড়িটা বিক্রি করতে। যাইহোক এইভাবে কেটে গেছে বহুদিন। হঠাৎ ma
il টা এল।অনেক দিক বিবেচনা করে এবার মিতালি বেশি উৎসাহ দেশে যাবার জন্য। গ্রামের বাড়িটার পাকাপাকি ব্যবস্থা করেই ফিরবে। যথারীতি ওরা দেশের বাড়িতে এসে পৌছাল। খোকন এখন college এ পড়ে। ও আর ওর মা মিলে খুবই সুন্দর করে ওদের বাড়ির নিচের একটা ঘরে থাকবার ব্যবস্থা করেছে। মিতালির কিন্তু রাগ হয়েছে। দোতলা বাদ দিয়ে কেন নিচের তলা। পরের দিন মিতালি খুবই রেগে বলল কেন তাদের জন্য দোতলায় থাকার ব্যবস্থা করেনি। এবং ওদের পরিষ্কার বলে দেয় সে বাড়িটা বিক্রি করে দেবে, ওরা যেন বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। খোকনের মার কাছে দোতলা র চাবি চাইতে ওনি বলেন যে তার ছেলের কাছে চাবি আছে। সে বাড়িতে নেই। মিতালি রণজয় কে বলে খোকনের বাড়ি দখল করার মতলব আছে। মিতালি খোকনের মাকে ইংরেজিতে যা বলল তা খোকনের মা ভাষা না বুঝতে পারলেও এরা বুঝতে পেরেছে যে মিতালি খুবই রেগে আছে। যাইহোক ঘন্টা খানেক পর খোকন এল মিতালি র কাছে। মিতালি তো খুবই রেগে ওকে অনেক কথা শোনাল। খোকন চুপ করে সব শোনার পর দোতলার চাবি দিল আর বলল চলুন উপরের ঘর গুলো দেখিয়েদি। মিতালি ও রণজয় ঘরে গিয়ে দেখল সব ঘর গুলোতে প্রচুর বই সাজানো আছে। মিতালি একটু অবাক হল। মিতালি ঘরে ঢুকে বইগুলো দেখছে হঠাৎ খোকন একটা বই মিতালি র হাতে দিল। মিতালি একটু অবাক হয়ে বইয়ের পাতা টা উল্টোতে চোখে পরল তাতে লেখা আছে শুভ বিবাহ
উপলক্ষে ছোট্ট উপহার। সাল ১৯৬৮। মিতালির শাশুড়ির বিয়ের সময়। ও রণজয়ের চোখে জল দেখল। পরের দিন মুল অনুষ্ঠানে রণজয় ফিতে কেটে স্কুল বাড়ি উদ্বোধন করল। গ্রামের BDO , Councillor সবাই বক্তব্য রাখেন। রণজয় কে কিছু বলাল জন্য অনুরোধ করা হলো। সে এক মিতালির দিকে তাকিয়ে বল যে তারা দুই জনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওদের বাড়িটা ওরা গ্রামের পাঠাগার করতে চান আর তার পুর দায়িত্ব খোকনের হাতে থাকবে। ওরা চায় ওদের পৈতৃক বাড়িতে ওর বাবা র নামে যে পাঠাগার হবে তাতে গ্রামের ছেলে মেয়ে রা পড়াশোনা করবে। সেই দিন গ্রামে খুশি জোয়ার বয়ে যায়।