SHUBHAMOY MONDAL

Drama Tragedy

4  

SHUBHAMOY MONDAL

Drama Tragedy

ন-হন্যতে (দ্বিতীয় পর্ব)

ন-হন্যতে (দ্বিতীয় পর্ব)

3 mins
420



কুমিল্লার সুজানগরের মেয়ে সানিয়া। নয় বছরেই মাকে হারায়, বাবা আগে ছিল দিনমজুর, এখন পঙ্গু। ওদের গ্রাম থেকে অনেক লোকজন রোজ রোজগারের আশায় ভারতে আসে - সকাল বেলা। বিকেলে আবার ঘরে ফিরে যায়।


মা নেই। গৃহকর্মের পরও প্রয়োজন থাকে - অন্ন বস্ত্রের জন্য কিছু রোজগার করার। তাদের গোটা গ্রামে এমন কেউ ছিলো না যে তাকে স্থায়ী রোজগারের উপায় হবে এমন কোন কাজ দিতে পারে।


গ্রামের বেশিরভাগ মানুষই রোজ বর্ডার পার হয়ে ভারতে যায় কাজের জন্য, এখবর তার কাছেও ছিলো। তাই বাবার অনুমতি নিয়েই সেও সবার সঙ্গে ভারতে আসা শুরু করেছিলো।


তার বাবা সারাদিন গ্রামের বটতলায় বসে লোকের ছাতা, জুতো এইসব সেলাই করে চেষ্টা করতো কিছু উপার্জন করার। তার শারীরিক ক্ষমতা অনুযায়ী এর বেশি কাজ করার সামর্থ্য ছিলো না।


পাড়ার এক দাদাই শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে এসেছিলো তাদের বাড়িতে একদিন। সে-ই খবর দেয়, বর্ডার পার হয়ে ত্রিপুরায় গিয়ে, সেখানে নির্মিয়মাণ হাইডেল প্রোজেক্টে লেবারের কাজ করার জন্য।


সানিয়াও দশ বছর বয়সেই, সবার মতোই কায়িক পরিশ্রম দ্বারা নিজের আর বাবার জন্য উপার্জন করতো, বাড়ির কাজকর্মও সব করতো - ঠিক তার নিজের মায়ের মতই।


তার জানা ছিলো না - সে শৈশব অতিক্রম করে কৈশোরে পদার্পন করে ফেলেছে মানেই, পেটে ভাত জুটুক না জুটুক, মান-ইজ্জতের কথা সবার আগে মাথায় রাখতে হবে তাকে।


সে জানতো না এমন অনেক কিছুই। কেউ তাকে শেখায়ও নি, বলেও দেয়নি। নয়তো, বর্ডার পার হয়ে যাবার সময় তার নজরে পড়তো তার দিকে চেয়ে আছে কত হায়নাদৃষ্টি।


যেভাবে তাদের মত মেয়েরা কাজের খোঁজে ভিনদেশে গিয়ে মাঝে মাঝেই হারিয়ে যায়, সানিয়াও হারালো একদিন। তার বাবার কি অবস্থা হলো, কি করেছিলেন তিনি মেয়েকে ফিরে পেতে, জানা নেই।


ত্রিপুরা থেকে কলকাতায় পাচার হয়ে আসার মাঝে, রোজ তাকে দেওয়া হয়েছিলো ক্ষতিকর ডেক্সামেথাসন ইনজেকশন। ফলে শারীরিক ভাবে তাকে আকর্ষণীয়া, প্রাপ্তবয়স্কা, তরুণী মনে হচ্ছিলো।


তার সেই 'শুভাকাঙ্ক্ষী' দাদা তার নাম, ঠিকানা, বয়স - সবকিছুর নিখুঁত, জাল নথী তৈরী করেছিলো এমন যে দেহব্যবসায় নামার আগে তাকে কোন বাধার সম্মুখীন হতে হয় নি।


সানিয়ার নতুন নাম হলো মেনকা। তার বয়স বেড়ে হলো ১৯, ঠিকানা বদলে হলো রাধানগর, ত্রিপুরা। অভিভাবকহীনা হলো তার পরিচয়। এই রূপেই তাকে হাজির করা হয়েছিলো।


দুর্বার সমিতি এবারেও, খোঁজ খবর নিয়ে, তার স্বেচ্ছায় এই পেশায় আসার বিরুদ্ধে কোন তথ্য জোগাড় করতে পারে নি। তাই মেনকার ঠিকানা হলো মেঘার ছেড়ে যাওয়া সেই খুপড়িতে!


সানিয়ার শরীরে ডেক্সামেথাসনের প্রয়োগ এতটাই ভয়ঙ্কর পরমাণে করা হয়েছিলো যে তার কিডনি ও লিভার - দুটোই প্রায় নষ্টই হতে বসেছিলো।


লিভারের গোলোযোগের কারণে তার ত্বকের বর্ণও দিন দিন ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছিলো। সেটা তার ধরা পড়ে - দুর্বারের হেল্থ চেকাপ ক্যাম্পে গিয়ে।


শারীরিক ঐ অসুস্থতার মধ্যেই ততদিন কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছিলো তাকে। তাই, তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিলো একটু বেশীই মারাত্মক।


দুর্বারের ঐ ডাক্তারের পরামর্শে, কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে তখনই ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাও শুরু হয়েছিলো।


কিন্তু, সঠিক পথ্য ও যে পরিমাণ সেবার দরকার তার ছিলো - সরকারী হাসপাতালে ততটা বোধ হয় তার প্রাপ্য হয়ে ওঠেনি। ফলে যা ভবিতব্য ছিলো তাই হলো।


দিনে দিনে তার শারীরিক অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যেতে শুরু করলো। আর তার ঠিক এক মাস পর তারও ঠাঁই হয় সেই লাশকাটা ঘরে - মেঘারই পাশে, আর একটা বেওয়ারিশ লাশ হয়ে।


(ক্রমশঃ)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama