মুক্তি
মুক্তি
"মুক্তি? ওরে, মুক্তি কোথায় পাবি, মুক্তি কোথায় আছে"- রবি ঠাকুরের এই কবিতা দেবাশীষ এর কাছে আরও অর্থবহ হয়ে উঠছে এই লকডাউনের সময়। দেবাশীষ মুক্তি চায় এই লকডাউন থেকে। কিন্তু লকডাউন যেন তাকে আরো বেঁধে ফেলেছে। সে অধৈর্য হয়ে উঠছে। হঠাৎ তার হাতে এলো রবি ঠাকুরের কবিতার লাইনটি। তার অধৈর্য মন আস্তে আস্তে শান্ত হতে শুরু করল। সে নিজেকে প্রশ্ন করল "আমি লকডাউন থেকে মুক্তি পেলেও সত্যি কারের মুক্তি পেতে পারলাম?" নিজের মধ্যেই উত্তর এলো 'না'। সে গভীরভাবে রবিঠাকুরের কবিতাটির অর্থ বিশ্লেষণ করতে শুরু করলো। দেবাশীষ উপলব্ধি করলো এইভাবে প্রকৃত মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। দেবাশীষ বুঝলো প্রকৃত মুক্তির স্বাদ তখনই সম্ভব যখন 'ভগবানকে' লাভ করা যায়। একবার ভগবানকে পেলে সংসারের সব কর্তব্য পালন করেও সে মুক্ত হতে পারে। সেই মুক্তিতে নেই কোনো দুঃখ, নেই কোনো কষ্ট, শুধু আছে আনন্দ! আনন্
দ! আর আনন্দ! তখন কোনো বন্ধনই বেঁধে রাখতে পারবে না। চারিদিকে যেন ধ্বনিত হবে মুক্তি! মুক্তি! মুক্তি! দেবাশীষ এই মুক্তির জন্য সংসারে থেকে শুরু করল সাধন। সাধনের বহু পথ আছে। ছোটোবেলা থেকেই দেবাশীষ বিচার করে সবকিছু গ্রহণ করার পক্ষপাতি। তাই সে সাধনের সবচেয়ে কঠিনতম পথ জ্ঞানযোগের আশ্রয় নিল। সে জানে এই পথ প্রচন্ড দুর্গম কিন্তু সে অটল নিজের লক্ষ্যে। দেবাশীষ সংসারে থেকেই কর্তব্য করার মধ্য দিয়েও সবকিছু 'নেতি নেতি' বিচার করতে শুরু করলো। তার কাছে জগৎ, তার দেহ, মন, মানুষ, জীব "কিছুই নয়" বলে প্রতিভাত হতে লাগল। দেবাশীষ উপলব্ধি করল ব্রহ্মই সবকিছু হয়েছেন। জগৎ, মন, দেহ, মানুষ, জীব সবই ব্রহ্ম, ব্রহ্ম ব্যতীত কিছুই নয়। দেবাশীষ উচ্চারণ করলো ভারতবর্ষের প্রান্তে প্রান্তে সুপ্রাচীন কাল থেকে ধ্বনিত হয়ে আসছে অদ্বৈত বেদান্তের সেই শ্লোক,"ব্রাহ্ম সত্যং জগন্মিথ্যা জীবো ব্রহ্মৈব নাপরঃ"