মুখরা মেয়ে
মুখরা মেয়ে


রাজচন্দ্রপুর গ্রামের স্কুল মাষ্টার সুধীরবাবুর দুই মেয়ে চৈতালী আর মিতালী। বড় মেয়ে চৈতালী খুবই শান্ত স্বভাবের। দেখতে শুনতে বেশ ভালো। ঘরের কাজকর্মেও বেশ পটু। আর দিদির থেকে তিন বছরের ছোট মিতালী দেখতেশুনতে দিদির মত হলেও স্বভাবে একদম আলাদা—যেমন চটপটে, তেমনিই স্পট বক্তা তাই আত্মীয়স্বজন ও পাড়াপ্রতিবেশীদের মধ্যে ‘মুখরা’ বলে দুর্নাম আছে তার।
চৈতালী এবছর গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করার পর থেকেই স্ত্রীর জোরাজুরিতে মেয়ের বিয়ের জন্য ছেলে দেখা শুরু করেছেন সুধীরবাবু। তার স্কুলের বিমলবাবু একজন পাত্রের সন্ধান দিয়েছেন। পাত্রপক্ষ আজকে আসবে মেয়েকে দেখতে।
বিকালের একটি নির্দিষ্ট সময়ে পাত্রপক্ষ এসে হাজির হল। প্লেট ভর্তি মিষ্টি খাওয়ার পর ও চৈতালিকে দেখার পর বোঝা গেল মেয়ে তাদের পছন্দ হয়েছে। তাই ছেলের বাবা শুরু করলেন ছেলে বিক্রীর দরদাম।
এতক্ষণ মিতালী দরজার আড়াল থেকে সব শুনছিল এবার বেরিয়ে এসে ছেলের বাবার উদ্দেশ্যে বলল ‘আপনারা পণপ্রথার নামে তো নিজের ছেলেকে বিক্রী করার একটা নতুন পণ্যপ্রথা চালু করেছেন। আমার বাবার অত দামী পণ্য কেনার ক্ষমতা নেই আর তাছাড়া যত দামী পণ্য তার মেন্টেনেন্স খরচাও তত বেশি তাই বিয়ের পরও আপনাদের চাহিদা চলতেই থাকবে। আর আমার বাবা যদি সেই চাহিদা না পূরণ করতে পারে তখন দিদির ওপর অত্যাচার করবেন আর শেষে পুড়িয়ে মারবেন।’
সুধীরবাবুর আজ আর এই মেয়েটাকে একবারও চুপ করাতে ইচ্ছা হলনা বরং তিনি মিতালীর মাথায় স্নেহের হাত রেখে বললেন ‘যে সমাজে পণ্যপ্রথা আজও একটা অভিশাপ সেখানে প্রত্যেক ঘরে যেন তোর মত একটা মুখরা মেয়ে জন্মায়।’