Sayantani Palmal

Inspirational

3  

Sayantani Palmal

Inspirational

মলির পুজো

মলির পুজো

3 mins
484


 “ আমার ছেলেমেয়ে আমাকে বলে বাবা তুমি আমাদের সুপারম্যান কিন্তু আজ আমি বুঝে গেলাম আমি শুধুই এক ব্যর্থ পিতা।” দুহাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে উঠলেন রজত। পাশে বসে রুনাও নিঃশব্দে কেঁদে চলেছেন। একে অপরকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা নেই তাঁদের। 

   


  মাথায় হাত বুলিয়ে বোনকে ঘুম পাড়িয়ে দিল টিকু। আজ বোন ওর কাছেই থাক। ঘুমন্ত বোনের নিষ্পাপ মুখটার দিকে তাকিয়ে টিকুর চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে এল কয়েক ফোঁটা অশ্রুবিন্দু। মলি মাসকুলার ডিস্ট্রফি নামে এক বিরল রোগে আক্রান্ত। এই রোগে হাঁটাচলা করার মত দৃঢ়তা থাকে না পেশীর তাই হুইলচেয়ারই মলির আশ্রয়। স্বাভাবিক ভাবেই আর পাঁচটা বাচ্চার মত জীবন নয় মলির তাও রুনা আর রজত যতটা সম্ভব মেয়েকে জীবনের সব কিছুর স্বাদ দিতে চেষ্টা করেন। টিকুও নিজের সাধ্যমত বোনকে সঙ্গ দিতে চেষ্টা করে। টিকুর এবার ক্লাস নাইন আর মলি দশে পা দিয়েছে। মলির কারণেই কোনও বছর পুজোতে রজত-রুনা ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখতে বেরোন না। এবছর হঠাৎ ষষ্ঠীর দিন মলি ওর বাবাকে বলল, “ বাবা, আমাকে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখাবে সবার মত? ”

অসুস্থ মেয়ের আবদার ফেলতে পারেন নি রজত তাই সপ্তমীর সন্ধ্যায় সবাইকে নিয়ে বেরিয়ে ছিলেন কিন্তু এই কলকাতা শহর প্রতি পদে বুঝিয়ে দিয়েছে মলির মত অসুস্থ বাচ্চাদের জন্য নয় এই আনন্দ উৎসব। জনসমুদ্রের মাঝে মলিকে ঠাকুর দেখাতে পারেন নি তাঁরা। একটি মন্ডপের উদ্যোক্তারা অবশ্য যত্ন করে মলিকে ভেতরে নিয়ে গেলেন কিন্তু সেখানে জনৈক দর্শনার্থীদের সুমধুর মন্তব্য ভেসে এল, “ এইসব অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে কেন যে ঝামেলা করতে বেরোয়!”। কেউবা বললেন, “ অসুস্থ মেয়ে নিয়ে এত শখ কেন কে জানে!”। প্রতিটা কথাই মলির কানে এসেছে। অবস্থা দেখে ওরা বাড়ি ফিরে আসে। ঘুমোবার আগে মলি দাদার দিকে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বলে, “ দাদা, সামনের বছরের পুজো আমার আর দেখা হবে না তাই না?” নীরব থেকেছে টিকু। ডাক্তারের বলা কথাগুলো মলিকে না জানালেও ও বোধহয় নিজেই বুঝে গেছে নিয়তির লিখন।


     মেসেজ ঢুকলো একটা। পিয়া মেসেজ করেছে, “ কেমন ঘুরলি?” টিকু ফোনটা নিয়ে ভাবলো পিয়া যখন জেগেই আছে ওর সঙ্গে কথা বলেই হালকা হওয়া যাক।


   গাড়ী থেকে নেমে বিস্ময়ে মলির দুচোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। মাথার ওপর নীল আকাশের চাঁদোয়া, সোনালী রোদের লুকোচুরি, একটু দূরে কাশের ঝোপে 

বাতাসের দুস্টুমি, হাওয়ায় ভেসে আসছে ঢাকের আওয়াজ। এমন পরিবেশ মলি আগে দেখেনি।

“ তোমরা এসে গেছ। চল চল মন্ডপে চল।” মলির কাছাকাছি বয়সের তিনটে ছেলেমেয়ে মলির হুইলচেয়ারটা ঠেলে নিয়ে কাছেই একটা ঠাকুর মন্ডপে চলে এল। মলিকে তারা একদম ঠাকুরের সামনে নিয়ে চলে গেল। মলি মুগ্ধ হয়ে প্রতিমার দিকে তাকিয়ে রইল। এত কাছ থেকে সে আগে কখনও ঠাকুর দেখেনি। ক্রমশ মলির মুখটা খুশিতে ঝলমল করে উঠছে। 


  পুজোর বাকি কটা দিন পিয়াদের গ্রামের বাড়িতে মহানন্দে করে কেটে গেল ওদের। পিয়ার কাকুদের ছেলেমেয়েরা যেন মলির মুখে হাসি ফোটাবার সমস্ত দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। এ গ্রামে একটাই পুজো তাও কেউ কিছু বলত না পুজোর সময় সে একদম ঠাকুরের সামনে থাকতো। এত মজা,এত আনন্দ আগে কখনও পায়নি মলি। পিয়া দিদিকে সে অনেকবার থ্যাঙ্কস বলেছে কারণ মলি ভালো করে ঠাকুর দেখতে পায়নি জানতে পেরে পিয়াদিদির মাথাতেই মলিকে এখানে আনার প্ল্যানটা আসে। চলে আসার সময় সবাই যখন আবার আসার কথা বললেন তখন মলি তার নতুন বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলল, “ সামনের বছর আমি আবার আসব।” মনে মনে মা দুর্গাকে বলল, “ মা, আমাকে আরেকটু আয়ু দিও আমি যেন বন্ধুদের সঙ্গে আবার পুজোয় আনন্দ করতে পারি।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational