মিলন সমুদ্র
মিলন সমুদ্র
শান্ত সমুদ্রের বালিতে পা.... দুটোকে জলের মধ্যে ডুবিয়ে বসে আছে স্নিগ্ধা। বাতাস তার চুলগুলোকে অশান্ত করে তুলেছে। শ্রাবনের প্রবল বর্ষনের মত জল পড়ে চলেছে স্নিগ্ধার দুগাল বেয়ে। ভাঙ্গা ঝিনুকের একটা টুকরো হাতে নিয়ে ভেজা সমুদ্রের বালিতে আপন মনে আঁকিবুকি কেটে চলেছে স্নিগ্ধা। চারিদিকে কত মানুষের ভীড় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই স্নিগ্ধার! কারন তার মনের সমুদ্র তখন উত্তাল! সেই সমুদ্রের ঢেউ ঘন ঘন আছড়ে পড়ছে আর অনেক কষ্টে সামলে রাখা মন আবেগের বাঁধকে ভেঙ্গে দিচ্ছে।
পশ্চিম আকাশের কোনে লাল হয়ে আছে সূর্যটা। তার লাল অাভায় ভরা সুন্দর রূপ সমুদ্রের জলে ভেসে উঠেছে। স্নিগ্ধা এক দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে ভাবছে.... আমি কি.... এই সমুদ্রের বুকে সলিল সমাধি নিয়ে নেব!কি.... লাভ এই কষ্টের জীবন রেখে?এত বছরের সম্পর্ককে কি.... ভাবে অস্বীকার করতে পারল রূপ!
আবার পরক্ষনেই ভাবছে না.... কেন নিজেকে শেষ করব??? তাও আবার এমন একটা মানুষের জন্য যে.... আমাদের সম্পর্কটাকে ভাঙ্গতে চায়!!! সেই.... মানুষটার জন্য আমি যদি জীবনটা উৎসর্গ করে.... দিই তবুও সেই মানুষটার কাছে এর কোনো মূল্য থাকবেনা!!! স্নিগ্ধা আপন মনে এইসব ভেবে চলেছে। হঠাৎ স্নিগ্ধা অনুভব করল কেউ যেন.... খুব যত্ন সহকারে ওর চুলে কিছু একটা লাগিয়ে দিচ্ছে।
স্নিগ্ধা পিছন ফিরতে গেলে সেই.... মানুষটি বলে উঠলো, প্লিজ..... একটু চুপ করে বোস ফুলটা ঠিকমত আগে লাগিয়ে দিই...!!
স্নিগ্ধা বলে উঠল তুই..... এখন এখানে কি করছিস রূপ???? আর আমার চুলে তোকে ফুল গুজতে হবে না.....!!!! স্নিগ্ধা উঠতে গেলে দুটো বলিষ্ঠ বাহু ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল, শত চেষ্টা করলেও সেই বন্ধন থেকে নিজেকে আলগা করতে পারবেনা স্নিগ্ধা।
স্নিগ্ধা কান্নাভেজা গলায় বলে উঠলো, এখন এইসব করে কি..... লাভ রূপ!!!! তুই তো.... আমাদের সম্পর্কটাকে রাখতে চাসনা!!!তাইতো বললি বাড়ির লোকেদের কাছে!!!
রূপ স্নিগ্ধাকে ছেড়ে ওর পাশে বসে স্নিগ্ধার হাতটা ওর হাতের মধ্যে শক্ত করে ধরে মুখে হালকা হাসি এনে বলল, হ্যাঁ..... ঠিকই তো..... বলেছি আমি!! এই সম্পর্কটাকে আর রাখতে চাইনা!!!
স্নিগ্ধা এক ঝটকায় ওর হাতটা রূপের হাত থেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলে উঠল, কেন.... এই রকম করছিস রূপ????আমি আর নিতে পারছিনা!!! বিশ্বাস কর খুব.... কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দে...না...!!!!
রূপ স্নিগ্ধার সামনে দাঁড়িয়ে ওর হাতদুটো স্নিগ্ধার ঘাড়ে রেখে আলতো করে স্নিগ্ধার নাকের সাথে নিজের নাকটা ঘষে বলে উঠল, আমি আমাদের এই সম্পর্কটাকে রাখতে চাইনা!!!! কারন আমি আর পারছিনা তোর প্রেমিক হয়ে দূরে দূরে থাকতে!! তাই তোকে একেবারে নিজের কাছে রাখতে চাই!!! আর সেটা শুধুমাত্র সম্ভব যদি আমি তোর স্বামী হই তাহলে!!! তাইতো বাড়িতে বললাম এই প্রেমিক প্রেমিকার সম্পর্কটা এবার শেষ করে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক শুরু করব। কি.... বলিস প্রস্তাবটা ভালো না.....????
রূপের কথা শুনে স্নিগ্ধা পুরোপুরি অবাক হয়ে গেছে। ওর মনের উত্তাল সমুদ্র হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে গেছে। একরাশ ভালোলাগা ঘিরে ধরছে ওর মনকে।
রূপ স্নিগ্ধার নাকটা টেনে বলল তুইতো পুরো কথাটা না..... শুনেই রাগে গজগজ করতে করতে চলে এলি। তবে কি...... জানিস তোকে রাগাতে আমার খুব ভালো লাগে। তোর রাগি মুখটা দেখতে আমি ভীষণ ভালোবাসি। কিন্তু এই চোখের জলটা ভালোবাসিনা!!! তুই বড্ড ছিঁছকাদুনে। সেই ছোট থেকে দেখছি কিছু হলো না..... হলো চোখ জলে ভরে এল.... এত জল রাখিস কোথায় কে..... জানে!!!!!
স্নিগ্ধা রূপের বুকে মাথা রেখে বলল, আমাকে কষ্ট দিতে তোর খুব ভালো লাগে না...রে.... বল!!!! জানিস আমার কত কষ্ট হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল সব শেষ......!!
রূপ স্নিগ্ধাকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে বলল, এত সহজে আমি সবকিছু শেষ করে দিতে পারি! তবে তোর ভাগ্যটা খুব... খারাপ...!সারা জীবন এইভাবে কষ্ট ভোগ করতে হবে তোকে! কারন আমিতো তোকে কোন মতেই ছাড়তে পারবনা।
স্নিগ্ধা চোখের জলটা মুছে রূপের চোখের দিকে তাকালো। রূপ নিজের দুই হাতের মধ্যে স্নিগ্ধার মুখটা নিয়ে কপালে একটা ভালোবাসার উষ্ণ পরশ এঁকে দিল। হঠাৎ করে শান্ত সমুদ্র আনন্দে উত্তাল হয়ে উঠল....। ঢেউ এর পর ঢেউ এসে ওদের পা..... ভিজিয়ে দিয়ে যেতে লাগল। সূর্য হাসি হাসি মুখে প্রকৃতির বুক থেকে বিদায় নিল।

