STORYMIRROR

Sucharita Das

Romance Tragedy Inspirational

1.1  

Sucharita Das

Romance Tragedy Inspirational

#মি_টু(একজন নারীর প্রতিবাদ)

#মি_টু(একজন নারীর প্রতিবাদ)

5 mins
618


----------পিয়া শোন্, কোনো কথা বলবি না তুই। একটা অতীত নিয়ে মানুষ বাঁচতে পারে না। তাই ভুলে যা সবকিছু।


----------কিন্তু মা, তুমি জানো এটা অন্যায়। সেদিন তুমি আমাকে ছোট ছিলাম বলে চুপ করিয়ে দিয়েছিলে। আজকেও সেই একই জিনিস করতে বলছো। 


"এই পিয়ালি এতো কি ভাবছিস বলতো। চল্ ওখানে সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে তো। স্পেশালি সুপ্রতিম দা।" পিয়ালি কে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় ওর মাসতুতো বোন রিনি।আজ পিয়ালির বিয়ের কথাবার্তা পাকা করা হবে। দু বাড়ির লোকজন ই একটা ব্যাংকোয়েট হল এ একসাথেই দুজনের আংটি বদলও করিয়ে দেবে। ওই এখন যেমন হয় আর কি। এখন তো বাঙালি বিয়েতেও সঙ্গীত,মেহেন্দি, আংটি বদল সব অনুষ্ঠানই হচ্ছে। তারপর তো বিয়ের অনুষ্ঠান।পিয়ালিকে অসাধারণ সুন্দর লাগছিল গোলাপি লেহেঙ্গা তে। সঙ্গে মানানসই হালকা গয়না।দু পক্ষের ই দশ বারো জন করে ঘরের লোকজন ই ছিলো।  

সুপ্রতিম মানে পিয়ালির উড বি হাজব্যান্ড খুব ই সুদর্শন, ভদ্র একটি ছেলে। ওর মাসতুতো বোন রিনির পিসির ছেলে সুপ্রতিম। তাই ওই বাড়ি থেকে যখন প্রস্তাব টা এসেছিল দু'পক্ষের সম্মতিতেই সব ঠিকঠাক হয়েছিল। আর আজকাল যা দিনকাল , একটু চেনা পরিচিতির মধ্যে সম্বন্ধ হলে ভালোই। পিয়ালি সুপ্রতিম কে আগেও দেখেছে। সেভাবে কথাবার্তা হয়নি ।ওই সৌজন্যমূলক হাসির বিনিময় কোনো অনুষ্ঠান বাড়িতে হয়েছে। তারপর তো সুপ্রতিম চাকরি পেয়ে বাইরে চলে গিয়েছিল।




--------মা ও মা জানোতো বড়দাভাই আমাকে কি সব করে যেন। আমার একটুও ভালো লাগে না মা ।


---------কি যা তা কথা বলছিস পিয়া। বড়দাভাই কতো যত্ন করে পড়ায় তোকে। কত ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ও। সেজন্য ই তো তোকে পাঠাই ওর কাছে পড়তে। 


--------না মা আমাকে আর যেতে বলো না ওখানে। মা আমি যাব না বড়দাভাই এর কাছে পড়তে। পাঠিও না মা, পাঠিও না আমাকে আর। 


----------ঘামে ভিজে গেছে পিয়ালির রাত পোশাক। চমকে বিছানায় উঠে বসে পড়ে ও। গলা শুকিয়ে কাঠ। ঢকঢক করে জলের বোতল থেকে খানিকটা জল খেল ও। আবার সেই স্বপ্ন । কিছু তেই ভুলতে পারে না পিয়ালি চোদ্দো বছর আগের সেই ঘটনার কথা। তখন ওর বয়স আট বছর। ওর বড়ো জ্যেঠুর ছেলে পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলো বলে, মা ওকে পড়তে পাঠাতো রোজ বড়দাভাই এর কাছে। প্রথম প্রথম খুব যত্ন করে পড়াতো বড়দাভাই পিয়ালি কে সবার সঙ্গে। তারপর কি যে হলো বড়দাভাই এর । মা কে এসে বললো একদিন , পিয়ালি তো আমার বোন কাকিমা, তাই ওকে সবার সঙ্গে পড়ালে ভালো করে সব পড়া দেখিয়ে দিতে পারবো না। তাই পিয়ালি কে তুমি সবাই চলে গেলে, একটু পরে পাঠিও বরং। একই ঘর তো ,তাই একটু রাত হলেও অসুবিধা নেই। পিয়ালির মা তারপর থেকে পিয়ালিকে সবাই চলে গেলে পাঠাতো বড়দা ভাইয়ের কাছে। এক দু মাস সব ঠিক ছিল। কিন্তু তারপরই বড়দাভাই ওর আপত্তিজনক জায়গায় ছুঁতে শুরু করলো। পিয়ালি সরে আসতো, কিন্তু পড়া দেখিয়ে দেবার নাম করে বড়দাভাই আবার ওর কাছে এসে , ওকে বিভিন্ন ভাবে ছোঁয়ার চেষ্টা করতো। বারণ করলেও শুনতো না। পিয়ালি কতোবার , কতোভাবে ওর মা'কে কথাগুলো বলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ফল কিছুই হয় নি ‌ মা উল্টে ওকে ধমক দিয়ে আবার পড়তে পাঠিয়েছে সেই বড়দা ভাই এর কাছে।




 সেবার পিয়ালির পরীক্ষা শুরু হবে। এদিকে দাদুনের গলব্লাডারের স্টোন অপারেশন হবে, তাই মাকে যেতে হবে মামারবাড়ি। জ্যেঠিমা পিয়ালির মাকে বললো, "তুই নিশ্চিন্তে যা। আমরা আছি তো, পিয়ালির জন্য ভাবিস না। তাছাড়া ওর বড়দাভাই তো আছেই, ওর পড়াশোনারও কোনো অসুবিধা হবে না।" সেই বার পিয়ালিকে ওর জ্যেঠিমার কাছে তিন দিনের জন্য রেখে ওর মা গিয়েছিল দাদুর ওখানে। রাত্রি বেলা সব স্টুডেন্ট রা চলে গেলে বড়দাভাই ওকে পড়তে আসতে বললো। পিয়ালি ঘরে ঢুকতেই বড়দা ভাই ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিয়েছিল। তারপর আচমকা পিয়ালি কে জড়িয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,ওর চরম সর্বনাশ টা করেছিল। সবকিছু হয়ে যাবার পর পিয়ালি নিস্তেজের মতো বিছানায় পড়েছি

ল। বড়দাভাই ওকে শাসিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল, ও যেন কাউকে কিছু না বলে। সে রাতে পিয়ালির চলাফেরা করার ক্ষমতা পর্যন্ত ছিলো না। জ্যেঠিমা খাবার সময় জানতে চেয়েছিল কি হয়েছে ওর। পিয়ালি কোনো কথা বলেনি সেই রাতে।তার পরের দু দিন ও একই ঘটনা ঘটেছিল পিয়ালির সঙ্গে। চতুর্থ দিনে পিয়ালির মা ফিরে এসেছিল। পিয়ালি তখন স্কুলে ছিল। স্কুল থেকে ফিরে মাকে দেখে ও আর নিজের কষ্ট চেপে রাখতে পারছিল না। সেদিন সন্ধ্যে বেলা পিয়ালি ওর মা'কে সব ঘটনা বলেছিল, যখন ওর মা ওকে বড়দা ভাই এর কাছে পড়তে যেতে বলেছিল। সব কথা শুনে পিয়ালি কে ওর মা বলেছিল,এসব কথা যেন ও আর কাউকে কখনো না বলে। সেদিনের পর থেকে বড়দা ভাই এর কাছে মা ওকে আর পড়তে পাঠায়নি ঠিকই। কিন্তু তারপর থেকে পিয়ালির জীবনের প্রতিটা মুহুর্ত পিয়ালির কাছে দুর্বিষহ মনে হয়েছে। ওর মনে হয়েছে ,এত কিছু হবার পরও ওর মা কি করে ওকে চুপ করে থাকতে বলেছিল সেদিন, আর নিজেই বা কি করে চুপ করে ছিল সেদিন সব জানার পরও।






 সুসজ্জিত ভাবে সাজানো ব্যাংকোয়েট এর ভেতর ওরা যখন প্রবেশ করলো, সুপ্রতিম আর ওদের বাড়ির লোকজন তখন পিয়ালি দের জন্য ই অপেক্ষা করছিল। সুপ্রতিম কেও বেশ সুদর্শন লাগছিল। সুপ্রতিম পিয়ালির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওর বাড়ির লোকজন সবাই বললো, "আগে শুভ কাজটা সেরে ফেলা হোক। তারপর সবাই কথাবার্তা বলবো, আনন্দ করবো।" সবাই সাইডে ফুল দিয়ে সুসজ্জিত স্টেজের দিকে এগিয়ে গেল সুপ্রতিম আর পিয়ালি কে নিয়ে। দুজনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে আংটি বের করে দু'জনের হাতেই দিলো ওদের বাবা মা, আত্মীয় স্বজন রা।সুপ্রতিম পিয়ালির হাতটা ধরে আংটি ওর অনামিকায় পরাতে যাবে, ঠিক সেই মুহূর্তে পিয়ালি বললো,"দাঁড়াও সুপ্রতিম। আমার তোমাকে কিছু বলার আছে। অবশ্য শুধু তোমাকে না তোমার বাড়ির প্রত্যেক কে জানাতে চাই কথাটা আমি।" পিয়ালির মায়ের মুখ রক্তশূন্য হয়ে গেল। পিয়ালি র দিকে তাকিয়ে বললো,"কি যা তা বলছিস বলতো। আগে আংটি টা পরাতে দে। আর কি আবার বলার আছে তোর। কিছু বলার নেই।" পিয়ালি হাতের ইশারায় মাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,"আজ তুমি আমাকে থামাতে পারবে না মা। আজ আমি সব কথা সবাইকে বলবো।" তারপর সুপ্রতিমের দিকে তাকিয়ে বললো, " আজ থেকে চোদ্দো বছর আগে আমি আমার জ্যেঠুর ছেলের যৌন নির্যাতনের শিকার হই। পরপর তিনদিন সে আমার ওপর অকথ্য অত্যাচার করেছিল। অবশ্য তাতে আমার কোনো দোষ না থাকা সত্বেও মা আমাকে চুপ করে থাকতে বলেছিল। কারণ আমার নাকি বদনাম হবে, বড়ো হলে কেউ বিয়ে করবে না আমাকে। অথচ দেখো ,যার জন্য আমার এই বদনাম হলো, সেই বড়দা ভাই কিন্তু দিব্যি বিয়ে করে সংসার করছে।"কথাটা বলেই পিয়ালি ঘরে উপস্থিত ওর জ্যেঠুর ছেলের দিকে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিলো। ঘরে উপস্থিত সবাই স্তম্ভিত পিয়ালির কথায়। আর তথাকথিত ভদ্র মুখোশধারী ওর সেই বড়দাভাই এর তো মাটির সঙ্গে লজ্জায়,অপমানে মিশে যাবার মতো অবস্থা। আর বড়দাভাই এর বউ তখন লজ্জায়,ঘেন্নায় স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললো,"এই তোমার স্বরূপ? ছিঃ!"

 ঘরের পরিবেশ নিমেষের মধ্যে পালটে গিয়েছিল। আর পিয়ালির দুচোখ দিয়ে তখন এতদিনকার ভেতরের চেপে রাখা কষ্ট, নির্যাতন জলের ধারা হয়ে বয়ে যাচ্ছিলো। 




 ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতবাক হয়ে গিয়েছিল। পিয়ালি ধীরে ধীরে স্টেজ থেকে নেমে যাচ্ছিলো। সুপ্রতিম ওর কাছে এগিয়ে এসে, ওর হাত দুটো ধরে বললো, "কোথায় যাচ্ছো পিয়ালি। আমাকে আংটি টা না পরিয়েই চলে যাবে? কথাটা বলে সুপ্রতিম পিয়ালির অনামিকায় আংটি টা পরিয়ে দিলো।আর বললো," যে ঘটনায় তোমার কোনো দোষ ই ছিলো না, তার শাস্তি তুমি কেন পাবে পিয়ালি, যে দোষ করেছে সে পাবে শাস্তি। আর তার যোগ্য শাস্তি তুমি তাকে আজ সবার সামনে তার মুখোশটা খুলে ,দিয়ে দিয়েছো।"

পিয়ালির অনামিকায় তখন জ্বলজ্বল করছে সুপ্রতিমের পরানো আংটি। নিজের ওপর হওয়া প্রত্যেকটি অত্যাচারের জবাব পিয়ালি আজ নিজেই দিয়েছে সরব প্রতিবাদ করে।যেটা প্রত্যেকটি মেয়ের করা উচিত। তোমার জীবন তোমাকেই তোমার ওপর হওয়া প্রত্যেকটি অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে হবে ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance