“ মায়ের গায়ের গন্ধ ”
“ মায়ের গায়ের গন্ধ ”
মা তোমার গায়ে কেমন একটা গন্ধ পাচ্ছি....
ছেলে মৃন্ময়ের কথা শুনে মৃণালিনী দেবীর হাতের চামচ টা মৃণ্ময়ের ঠোঁটের কাছ অবধি গিয়ে থেমে গেলো । মুখ নিচু করে বামে ডাইনে মাথা ঘুরিয়ে নিজেকে দুবার শুঁকে নিয়ে ছেলের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললেন
___ গন্ধ ? কিসের গন্ধ ? হ্যাঁ গো তুমি পাচ্ছো ?
ছেলের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে স্বামী বিনয়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লেন মৃণালিনী দেবী । বিনয় বাবু স্ত্রীর কাঁধের কাছে নাক নিয়ে গিয়ে ' সোঁ সোঁ ' করে কয়েকবার শ্বাস টেনে নিয়ে বললেন
___ কই না তো । আমি তো পাচ্ছি না......
আবারও দৃষ্টি ফেরালেন মৃণালিনী দেবী ছেলের দিকে । প্রশ্ন করলেন
___ কিসের গন্ধ পাচ্ছিস বাবু ? খুব কি গন্ধ পাচ্ছিস ? আমি তো সবেমাত্র স্নান সেরে তোর জন্য জন্মদিনের পায়েস রান্না করে তোর কাছে নিয়ে এলাম । তাছাড়া এখন তো খুব গরম পড়েনি , তাই ঘাম হওয়ারও সম্ভবনাও খুব একটা নেই । তাহলে ?
মৃণালিনী দেবীর কথা শেষ হতেই মৃন্ময় মায়ের গলা জড়িয়ে ধরলো । মৃণালিনী দেবী নিজের গলা থেকে ছেলের হাত ছড়ানোর চেষ্টা করে কিছু বলতে গেলেন তার আগেই মৃন্ময় হালকা ধমকের সুরে বলল
___ আহ্ মা.... একটু শান্ত হয়ে দাড়াও তো । খুব ছটফট করছো । তুমি যে বাচ্চাবেলায় খুব ছটফটে ছিলে তার প্রমাণ আর দিতে হবে না নাও , বাবার সাথে কথা কাটাকাটি হতে হতে হাতাহাতি হওয়াটাই প্রমাণ করে তুমি যথেষ্ট পরিমাণে ছটফটে আর মারকুটে ছিলে । এখন আপাতত চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকো ।
ছেলের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালেন মৃণালিনী দেবী । বুঝতে পারছে না ছেলের কথা কিছু। ছেলের কথা মতো তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলেন তিনি । মৃন্ময় মায়ের কাঁধে মাথা রেখে দুবার জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে বললো
____ উফফ কি জোরালো মিষ্টি মোহনীয় গন্ধ। মুড ফ্রেশ করার মোক্ষম ওষুধ । সেই জন্মের প্রথম দিন টা থেকে পেয়ে আসছি । আমি ছাড়া তোমার গায়ে এই গন্ধ কেউ পায় না মা । পাওয়া সম্ভবই না......কিছুতেই সম্ভব না । আজ জন্মদিন বলে মনে হয় একটু বেশি বেশিই পাচ্ছি।
ছেলের কথার অর্থ বুঝতে পেরে দুই চোখ ছলছল করে উঠলো মৃণালিনী দেবীর । বাম হাতে পায়েসের বাটিটা ধরে ডান হাতে করে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকালেন তিনি । তার ভাবতেই অবাক লাগছে , এই এত বড়ো সুঠাম দেহের জৌলুসে ভরপুর বছর সাতাশে পা রাখা ছেলেটি তার......শুধুই তার । এই ছেলেটাকেই তার ছোট্ট পেটাটাতে ধারণ করেছিলেন তিনি । যখন ডাক্তাররা তার নাড়ি থেকে ছিন্ন করে তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন মোমের মতন নরম শরীর টাকে তখন কিছুক্ষণ আগের তীব্র হাড় ভাঙ্গা যন্ত্রণা কে ভুলে গিয়ে চোখে চকচক করে উঠেছিলো তার বাঁধভাঙা আনন্দের অশ্রু , ঠোঁট প্রসারিত হয়ে প্রকাশ করেছিলো বহু মূল্যবান কিছু প্রাপ্তির হাসি । তিনিও তো তাকে প্রথম হাতে পাওয়ার পর সুন্দর একটা গন্ধ পেয়েছিলেন ছেলের শরীর থেকে । আজও সেই গন্ধটা পান তিনি । দেখতে দেখতে তার ছোট্ট মোমের মতন নরম শরীরটা কতটা বড়ো হয়ে গেলো , তার থেকেও কতো লম্বা - চওড়া সেই শরীর । ছাব্বিশ টা বছর পেরিয়ে আজ সাতাশে পা রাখলো..... ভাবা যায় ? ভাবতেই কেমন গা শিউরে উঠছে মৃণালিনী দেবীর । তার স্নেহের আদরমাখা ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে দিলেন ছেলের কপালে । এরপর চোখে জল মুখে হাসি নিয়ে বিনয় বাবুর দিকে তাকিয়ে বললেন
____ শুনছো ? এবার আমাদের ছেলের জন্য একটা পাত্রী দেখো । আবার কি ? দেখতে দেখতে সাতাশ তো হয়েই গেলো ।
মৃন্ময় আবারো মাকে জড়িয়ে ধরে বললো
_____ধ্যাত মা , ওসব ছাড়ো তো । তুমি আমি বাবা এই বেশ আছি । আমাদের আর কাউকে লাগবে না ।
মৃণালিনী দেবী ছেলের গালে হাত রেখে বললেন
____ পাগল একটা.... তাই বলে হয় নাকি ? তোর একটা সুখী পরিবার দেখে মরতে পারলে তবে শান্তি পাবো ।
মৃন্ময় জোরে ধমকে উঠলো তার মাকে
_____ একদম চুপ....... আর একবার যদি এমন কথা বলো তো খুব খারাপ হবে । তুমি বাবা সারাজীবন আমার কাছেই থাকবে । কিছুতেই আমায় ছেড়ে যেতে দেবো না ।
মৃন্ময়ের গলায় শাসনের সুর । ছেলের কথা শুনে হাসলেন মৃণালিনী দেবী বিনয় বাবু । বিনয় বাবু এগিয়ে এসে হাত রাখলেন ছেলের মাথায় । মৃণালিনী দেবী সস্নেহে ছেলের মুখে জন্মদিনে প্রথম পায়েস তুলে দিলেন । মায়ের হাতে তৈরি পায়েস খেয়ে এক বুক তৃপ্তি অনুভব করলো মৃন্ময়। চোখ বন্ধ করে মাথা নাড়িয়ে নাড়িয়ে পায়েসের মধ্যে আদর , যত্ন , ভালোবাসা , স্নেহ , শাসন নামক উপকরন গুলোকে তৃপ্তি ভরে উপভোগ করছে সে