" অপ্রদর্শিত অনুভূতি
" অপ্রদর্শিত অনুভূতি
কেমন আছিস আমার রাজকন্যে ? নিশ্চয় ভালোই আছিস। তিন বছর দুমাস হলো বোধয় তোর বিয়ে হয়েছে ।
চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি জানিস ? এক বছর হলো । মাসে বেতন ওই পঁচিশ হাজার টাকা । পরে পরে অবশ্য প্রমোশন হবে , তখন আরো কিছু টাকা হাতে আসবে।
এখন তুই আমি আর আমার মা বাবা এই চার জনের ছোটো সংসারে আমি তোদের দায়িত্ব ঠিক নিতে পারতাম বৈকি । হ্যাঁ তোর শখ পূরণ করতে একটু অসুবিধা হতো ঠিকই , তোর ওই রাজপ্রাসাদ ছেড়ে ছোটো ছোট দুটো ঘরের খড়ের চালের একটা বাড়িতে কষ্টমস্টো করে থাকতে হতো কিন্তু বিশ্বাস কর তোকে বুক ভরা ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতাম , তোকে পেট ভরে খাওয়াতে পারতাম , হয়তো তোর শখটা আরো কয়েকবছর পর পূরণ করতাম । কিন্তু সেটা আর হলো কই? আচ্ছা আর দুটো বছর অপেক্ষা করলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত ? আসলে ঐ অ্যাকসিডেন্টে বাবার পা দুটো যদি বাদ না যেতো......... । অপারেশন করাতে অনেকগুলো টাকা লেগে গেলো জানিস? চার বিঘে জমি আর পৈতৃক বাড়িটা শেষ পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হলাম , বেকার ছিলাম তো তাই । আলিপুরদুয়ারের কাছে দাদু একটা জায়গা কিনে রেখেছিলো আগে থেকেই , ওখানেই এই দুকামরার মাটির বাড়িটা কোনরকমে দাড় করিয়েছে ।
যেদিন ডেকে শেষ দেখা করলি সেদিন যদি তোর মধ্যে আমার প্রতি প্রথম দিনকার মতো বিশ্বাস ভরসা টা থাকতো তাহলে আজ হয়তো আমি তোর ......................
থাক ! সেসব বলে আর কি লাভ ?
খুব ভেঙে পরেছিলাম জানিস বাবার অ্যাক্সিডেন্টের দিন । কি করবো না করবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না । কোনো আত্মীয় স্বজন পাশে ছিল না । সেদিন তোকে খুব প্রয়োজন ছিলো আমার। না না টাকার সাহায্য চাইতাম না । চাইতাম তোর হাতটা , তোর কিছু স্বান্তনা বাক্য আর তোর ভালবাসা। ব্যাস এটুকুই যথেষ্ট ছিল আমার মনে জোর অনার জন্য কিন্তু শেষ বেলাতে তুইও
আপাতত ভালোই আছি । রঙচঙে পৃথিবীতে বেরঙিন হয়ে বেঁচে আছি । বসন্তের রঙে রাঙানোর জন্য মানুষটাই যে কাছে নেই । তোর দেওয়া হলুদ পাঞ্জাবীটা এখনও রেখে দিয়েছি, পড়া হয়না আর । সেই সাড়ে তিনবছর আগের বসন্ত উৎসবের লাল , নীল , হলুদ , সবুজ , গোলাপী আবির এখনও লেগে আছে । তোর সাথেই তো সে বছর শেষ বসন্ত পাড় করে আসলাম । তারপর আর ছুঁইয়ে দেখিনি ।
ভেবেছিলাম তুই যদি ছেড়ে যাস তাহলে আমিও আর বাঁচবো না কিন্তু এখনও দিব্যি বেঁচে আছি দেখ । আচমকায় বুকের ধুকপুকুনিটা স্থির হয়ে যায় , শ্বাস আটকে আসে তবুও মরি না । ওই বুড়োবুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু করতেও পারিনা । আমি ছাড়া তাদের যে আর কেউ নেই । তাদের অসহায় করে দিয়ে বিদায় নিতে পারলাম না পৃথিবী থেকে , বিবেক আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখলো আমায় । প্রায় তিন মাস হলো বাবার দুটো আর্টিফিসিয়াল পা লাগিয়েছি । মানুষটা হাঁটতে পারে মোটামুটি । মায়ের সুগার লেবেল টাও নরমাল হয়ে গেছে । ওদের সুস্থ থাকতে দেখে এখন একটু শান্তি পাচ্ছি । যা ঝড় গেছে এই কটা বছর সে কি বলবো, একেবারে বিধ্বংসী রূপ তার । উফফ !!!
এখন তাদের শখ বাড়িতে বউ আনবে । তাদের কিভাবে বোঝায় বলতো যে এখনও আমার মনে তোর বাস। আজও তুই আমারই ; আমার মনের রাজকন্যে । আমার মনে রাজত্ব করার অধিকার শুধুমাত্র তোরই ।
তোকে খুব ভালোবাসি রাজকন্যে তাই তোকে ঘৃণা করতে মন চায় না । খুব করে চাই আজও তোকে, জানি এই চাওয়াটা আমার অন্যায় । এখন তুই অন্যকারোর কিন্তু এই বেহায়া মন কিছুতেই তা মানতে চাই না । আশায় থাকি এখনও তোর । তুই ফিরবি না জেনেও তোর ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকি ।
আচ্ছা সত্যি করে বলতো আমায় এই অথৈ জলের মধ্যে একা ফেলে রেখে যাওয়া কি খুব জরুরি ছিল