STORYMIRROR

Rocky Kazi

Tragedy Inspirational Others

3  

Rocky Kazi

Tragedy Inspirational Others

মা তুমি মহান

মা তুমি মহান

4 mins
421

  “মা হাজার টাকা লাগবে, পিকনিক আছে”

মা কোন প্রশ্ন না করে হাজার টাকা দিয়ে দিল। 


   ছোটোবেলা থেকেই বাবাকে হারিয়েছে শুভেন্দু আছে বলতে শুধু মা, যিনি তাকে আগলে রেখেছেন তার সকল স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে। তার সকল আবদার মিটিয়েছেন নির্দ্বিধায়। শুভেন্দু নামি কলেজের ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র। হ্যাঁ মেধাবী ছাত্র। আসছে হেঁটে হেঁটে বন্ধু বান্ধবী দের সাথে, বাজার করতে, পিকনিকের জন্য বাজার। অতি চেনা পরিচিত একটা মুখ সামনে ভেসে উঠলো শুভেন্দুর। সে খেয়াল করেনি, বন্ধুদের সঙ্গে বকতে বকতে ঠিক এদিকেই চলে এলো। হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল সব কথা। বড় ভুল করে ফেলল সে। এদিকে কেন আসতে গেল। সামনেই একটু দূরে একজন সবজি বিক্রেতা টাটকা সবজি নিয়ে বসে ছিল তার কাছে তাদের প্রয়োজনের প্রায় সব সবজিই ছিল। কিন্তু না, তারা গেল না। শুধু শুভেন্দুর অনুরোধে। শুভেন্দুর বক্তব্য ছিল যে ওই সবজি বিক্রেতাটা একজন চোর সব জিনিসের বেশি দাম নেই আর মানুষ ঠকায়। কেউ তাই ওর কাছ থেকে কিনতে চাই না, দাম বেশি নেয় আবার সবজিও খারাপ দেয়। শুভেন্দু কীভাবে এসব জানল, কারণ শুভেন্দুর এই এলাকায় বাড়ি। কলেজটা তার বহু দূরে, এই এলাকায় তার কলেজের বন্ধু-বান্ধবীরা মিলে পিকনিক করতে এসেছে। কেননা এই এলাকাটা একটা বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রশিদ্ধ। 


   বন্ধু-বান্ধবীরা অনেক অনুরোধ করেছিল তার বাড়িতে আসবার জন্য কিন্তু না সে ঠিক কোন না কোন ছুঁতো ধরে তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিল। কিন্তু সব ভেস্তে গেল শুভেন্দুর, শেষে সেই বুড়ির বেলতলাতেই আসতে হলো। যা ভয় পেয়েছিল তাই হল। সে এই পিকনিকে আসতে চেয়েছিল না এই ভয়েই যে সবাই সবকিছু জেনে যাবে। শেষে বন্ধুদের অনেক অনুরোধে, মনমালিন্য হ্রাস পাওয়ার ভয়ে তাকে আসতেই হল এই পিকনিকে। কিন্তু সে হার মানবে না, কাউকে জানতে দিলে হবে না। তাই সে ফন্দি বের করলো, মিথ্যা কথা বললো বন্ধু দের সবজি বিক্রেতার সমন্ধে। চোর সাজলো সবজি বিক্রেতাকে।


   গল্পে মশগুল কলেজ পড়ুয়াদের দল, সবার শেষে শুভেন্দু। সেও গল্পে ব্যস্ত। সেই সময় হঠাৎ ঘটলো এক দুর্ঘটনা। লোফার গোছের এক ছোকরা কৌশলে বার করে নিল মোবাইল ফোনটা শুভেন্দুর পকেট থেকে। নতুন কলেজে উঠতেই মা কিনে দিয়েছিল এই নামি কোম্পানির দামি মোবাইলটা। না তারা টের পেল না, শুভেন্দুও বুঝতে পারল না। কৌশলটা এমনই, যে কেউ সহজে বুঝতে পারবেনা। কিন্তু একজনের চোখে পড়ল। সেই চোখ যা আগলে রাখতে চাই সকল বিপদ থেকে। যেই না চোর ব্যাটা মোবাইলটা তার পকেটস্থ করবে অমনি একটা মহিলা কণ্ঠস্বর ভেসে এল দূর থেকে। 

“বাবু তোর ফোন, চোর, চোর” তারপর আর কী। বাছাধন পালাবে কোথায়, ধরা পড়ে গেল। রামধোলাই দেওয়া হল বাছাধনকে। 


   তবুও বাবুর মুখ কেন বাংলার পাঁচ? তার তো খুশি হওয়ার কথা, ফোনটা রক্ষা পেল যে। না, বাবু অন্য সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। যা ভয় করেছেন শেষমেষ সেটারই আবির্ভাব। এবার সে কী করবে? পালাবে কোথায়? এই সত্যের হাত থেকে।


   এক বন্ধু বললো, “তোর ওই চোর সবজি বিক্রেতাটাই দেখ তোকে আজ চোরের হাত থেকে রক্ষা করল।”


   এক বান্ধবী বললো, “যা তাকে ধন্যবাদ দিয়ে আয়, সে না বললে তো, তোর ফোন এতক্ষণে ভ্যানিশ। বারেক দেখলো মহিলাটা, ভালো বলতে হয়।”


   সুমিত বললো, “মহিলাটা কী বেশ বললো যেন, 'বাবু তোর ফোন।' কী ব্যাপার এরকম বললো কেন?”


   শুভেন্দু বললো, “দূর এরকম আবার বলে নাকি, কী বলতে কী শুনেছিস।”


   সুমিত বললো, “না আমি স্পষ্ট শুনেছি এটাই বললো।” 


   বিপ্লব বললো, “আরে তোরা দেখছি যে এখানে এসেও তর্কাতর্কি। আর সুমিত তুইও বলিহারি কেন মহিলাটা কি 'বাবু তোর ফোন' বলতে পারে না নাকি? হয়তো শুভেন্দু তার ছেলের বয়সি, তাই বললো আরকি। নাহলে কি, স্যার, আপনি আপনি করে বলবে। যত সব গাধাদের নিয়ে কারবার।"


   সুমিত বললো, “ওই গাধা বলবি না, নইলে এক্ষুনি মুখ ফুলে যাবে।”


   সুস্মিতা বললো, “চুপকর, চুপকর। এখন দেখছি যে তোরা নিজেদের মধ্যেই মারপিট আরম্ভ করে দিবি। তোদের নিয়ে আর পারা যায় না। চল মহিলাটিকে ধন্যবাদ দিয়ে আসি।”


   “ধন্যবাদ কাকিমা” সবাই বললো।

   “আরে শুভেন্দু, তুই কিছু বল, ওনার জন্যই তো তোর ফোনটা রক্ষা পেল, তোর তো আগে বলা উচিত,” পূজা বললো।


   শুভেন্দু বললো, “ ধন্যবাদ কাকিমা”


   মহিলাটার মুখে হাসি ফুটে উঠলো, হ্যাঁ হাসি। হাসিটার মধ্যে কতটা আঘাত, কতটা দুঃখ লুকিয়ে আছে তা কেউ দেখতে পেলনা। কাকিমা আর কিছু বললেন না। খুব কম দামেই তাদেরকে তাদের প্রয়োজনীয় সব সবজি গুলো দিলেন। তারা আসি বলে চলে গেল তাদের পিকনিকের উদ্দেশে। এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল নীরবে।


   "যার মা আছে সে কখনই গরিব নয়" কথাটা কি ভূল? না সত্য ? তবে কেন শুভেন্দু এড়িয়ে যেতে চাইলো, কাকিমা বললো তার মাকে? কেন? তার মা গরিব বলে? গরিব বলে সে তার বন্ধুদের সামনে "মা" বলতেও লজ্জা পাই? সবজি বিক্রি করে বলে তার প্রেস্টিজে লাগে? সম্মানহানির ভয়। এমনকি মাকে চোর সাজাতেও কুন্ঠা বোধ করেনি সে। সেকি বোঝেনা মায়ের মর্ম, মায়ের ভালোবাসা? এই মা, যে কিনা একাই সকল বাঁধা বিপত্তির সাথে লড়াই করে বড় করে তুলেছে তার এই সন্তানকে। নিজে অভুক্ত থেকে সন্তানের ক্ষুধা মিটিয়েছে। কত দুঃখ কষ্টের মধ্যেও সন্তানের সুখ খুঁজেছে, খেয়াল রেখেছে যথাযথ। আবদার মেটানোই কোন ত্রুটি রাখেনি। নামি স্কুল, দামি কলেজে পড়াতে দ্বিধা করেনি। নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছে তার এই সন্তানকে। আঁচড় লাগতে দেয়নি দুঃখ কষ্টের। তবু কেন? সে কিভাবে পারলো আঘাত দিতে মায়ের মনে? দ্বিধা করলো "মা" বলতে। এটাই সমাজ আর এটাই বাস্তব। কত সন্তানরা নিজেদের স্ট্যাটাস বজায় রাখার জন্য নিজেদের গরিব মা বাবা কেউ মা বাবা বলতে অস্বীকার করে। তাদের জীবনে এই শব্দ গুলো যেন কলঙ্ক। তাদের কর্মের মতন তাদের ভালোবাসাকে এরা ছোট মনে করে। বাবা রিক্সা চালক ছেলে একজন অফিসার। না ছেলে চেনেনা বাবাকে। মা রাস্তায় ভিক্ষা করে ছেলে ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। না ছেলে চেনেনা মাকে। এরা ঠেলে দেয় মা বাবাকে মৃত্যুর মুখে, সময় আসবে তোমাদেরও, তোমাদেরও হবে একই অবস্থা, একই ফল। নিজেকে বদলাও পৃথিবী বদলে যাবে। আর মা মা-ই হয় যে কোন অবস্থাতে, যে কোন পরিস্থিতিতে, যে কোন সময়ে। 


     “মা জননী চোখের মনি,

      অসীম তোমার দান।

      ঈশ্বরের পরে তোমার আসন,

      আকাশের সমান।

      ত্রিভুবনে তোমার মতো,

      হয়না কারও মান।

      মা তুমি মহান তুমি,

      মা তুমি মহান।”



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy