পরশ প্রেমের
পরশ প্রেমের
"এই যে, আপনি এখানকার সিটি শপিংমলটার রাস্তাটা একটু বলে দিতে পারবেন?"
পিছন ফিরে দেখলাম অমনি লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে গেল চোখটা হঠাৎই নীচে নেমে গেল রাস্তার দিকে।
"সো সো সোজা গি গিয়ে তারপর বামদিকে দু মিনিট।" বলেই তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম।
থ্যাংক ইউ আওয়াজটা কানে ভেসে এল
আহ্ বাঁচা গেল
আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে কি একজন সুন্দরী যুবতী একথা আমায় জিজ্ঞাসা করেছিল। হঠাৎ করে সামনে চলে আসে আর আমি ঘাবড়ে যায়।
সত্যি নিজের উপর ভিষন রাগ ধরে, এখনও মেয়েদের দেখলে লজ্জা পাই আর তাদের সঙ্গে কথা বলা তো দূরের কথা। আর প্রেম, প্রেমের পরশ যে লাগেনি বলবো না লেগেছিল বহুবার কিন্তু বৃথা সে ছোঁয়া, প্রেমের ছোঁয়া।
জানিনা প্রেম কাকে বলে আর ভালোবাসাই বা কী? জানি প্রেমের ছোঁয়া সামলানো ভারি মুশকিল মনোরম মনে শুধু হাসি ফুটে উঠে, আর মন মগ্ন থাকে তার নেশায়।
কিন্তু ভালোবাসা কি স্থায়ী না অস্থায়ী? হয়তো একদিন এই ভালবাসার ভ কেউ খুঁজে পাওয়া যাবে না। সব হারিয়ে যাবে অতল গভীরে, হয়তো মনোমালিন্য এর অভাবে ভেঙে যাবে, সৃষ্টি হতে থাকা সম্পর্ক। বাঁধা পড়বে শান্তির পথে, গ্রহণ হবে অকাল মৃত্যু।
সব প্রেম কি সাফল্য পায়? এগিয়ে যাই ধাপে ধাপে পরবর্তী পদক্ষেপে?
প্রেম মানেই ভয়, প্রেম মানেই ব্যথা, প্রেম মানেই দুঃখ, তার হারিয়ে যাওয়ার ভয়, তাকে না পাবার ব্যথা, তাকে না দেখার দুঃখ।
মৃত্যুকে গ্রহণ ছাড়া উপায় কী? কতদিন বা সহ্য করা যায় এই ব্যথা এই দুঃখ, এই কষ্ট, এই যন্ত্রণা।
তাই আমার কাছে প্রেম মানেই বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়ানোর মতন। আর এমনিতেই মেয়েদের সাথে কথাই বলতে পারি না প্রেম তো দূরের কথা।
ঘেউ ঘেউ
উরিবাবা একটা চিৎকার শোনা গেল দূর থেকে খুব একটা দূর নয়, এই একটু দূর। আমি পিছন ফিরে তাকালাম সে ছুটে আসলো আমার পিছনে লুকালো, আমার একটা হাত ধরল শক্ত করে, একটা কুকুর এসে সামনে ঘেউ ঘেউ করতে থাকলো একটু ধমক দিতেই ব্যাটা দৌড় দিয়ে পগার পার।
তার মুখ থেকে এতক্ষণে ভয়ের ফ্যাকাসে ভাবটা একটু কমেছে, এবার সে মুচকি হাসলো, লজ্জায় পড়ে গেল।
আমি যে লজ্জায় পড়িনি তা নয়, লজ্জায় হৃদস্পন্দন যেন দ্রুত হয়ে গেছে। এমন সময় সে একটা অনুরোধ করে বসল যে ওই দিকটায় অনেকগুলো কুকুর আছে আমার ভয় লাগছে, আপনি একটু আমাকে এগিয়ে দিয়ে আসবেন ওই দিকটা পর্যন্ত। কি? একটু সাহায্য করুন না এই অসহায় মেয়েটিকে বড্ড ভয় লাগছে। আমি আপনার প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকিব। দয়া করে একটু সাহায্য করুন না।
আমি অন্য দিকে তাকিয়ে আছি মানে তার দিকে নয় অন্যদিকে তাকে উপেক্ষা করে তার পিছনের দিকে ল্যাম্পপোস্টর নীচে ওই ডাস্টবিন টার দিকে। বহুকষ্টে আমতা আমতা করে বললাম, অবশ্যই কেন নয়, তারপর তাকে নিয়ে এগোতে থাকলাম, একথা সে কথার মাঝে বহুকথা কিভাবে কিজানি হয়ে গেল, লজ্জা অল্প হলেও কমবে বৈকি।
সেদিন সে ধন্যবাদ জানালো, তারপর থেকে শুরু হলো প্রেমের পর্ব আপন মনে। ধীরে ধীরে প্রেমের প্রতি ভয়, ব্যথা বেদনা উধাও হতে শুরু করল, প্রেম ছাড়া ব্যার্থ এ জীবন, আর ভালোবাসা ছাড়া জীবনের কোন মূল্যই হয়না। প্রেম ভালোবাসাই আগে নিজেকে ঠিক হতে হবে, নিজে ঠিক হলে সব ঠিক। মন মালিন্যের অভাব রাখলে হবেনা। ভালোবেসে যেত হবে, পাওয়ার জন্য ভালোবাসা নয়, ভালো রাখার জন্য ভালোবাসতে হবে, হৃদয় দিয়ে, আজীবন।
কোন কারনে একদিন কাজের সূত্রে আবার দেখা দুজনের। বিকেলের অন্তগামী সূর্যের কমলাভ আলোই আকাশটা অল্প রাঙা। আকাশে উড়ে ফিরে যাচ্ছে বাসায় পাখিদের দল। গাছগাছালির ফাঁকে অন্ধকার আরও গাঢ় হচ্ছে। প্রিয়া ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছে এই মনোরম দৃশ্য। বাতাসের ছোঁয়ায় তার চুল গুলো দোলা খেয়ে যাচ্ছে। অন্তগামী সূর্যের কমলাভ আলোকছটা তার মুখশ্রীতে পড়ে আরও তাকে সুশ্রী লাগছে। আরও নতুন লাগছে। ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম আর বলেই ফেললাম এতদিনের ব্যার্থ হওয়া অসম্পূর্ণ সেই কথা। তার ঠেঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠল, আর মুখ দিয়ে লাভ ইউ টু। কিছুক্ষন নিরবতা এক দৃষ্টিতে এক অপরের দিকে তাকিয়ে। দৃষ্টি স্থির, এগিয়ে গেল দুই মুখ পারস্পরিক দূরত্বকে উপেক্ষা করে। ঠোঁটে-ঠোঁট মিশল আর হৃদয়ে-হৃদয়। নীরবতা ভাঙলো ফ্রাঞ্চ কিসের আওয়াজে। তারপর? তারপর আপনাদের আর বলে দিতে হবেনা। সবই বুঝতে পেরে গেছেন (হ্যুঁ)।