মা ও মেয়ে
মা ও মেয়ে


ঝুমুরের বিয়ে হয়েছে তিন বছর হল। তার শ্বশুরবাড়ী সাবেকী। পরিবারটি যথেষ্ট রক্ষণশীল ও বনেদী। পাত্রটি ভালো হওয়ায় বাবা বিয়ে ঠিক করতে দেরী করেননি। ঝুমুরের সাথে তার স্বামী অনিরুদ্ধর সর্ম্পকও বেশ ভালো। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই সে লক্ষ্য করেছে এই সংসারে তার শ্বশুরমশাইয়ের প্রচণ্ড প্রতাপ।
ছেলে, বাবা হতে চলেছে জেনে তাকে ডেকে একদিন বললেন ‘অনি, সময়মত বউমার ওই টেস্টটা করিয়ে নিও। তুমিতো জানো আমাদের পরিবারে মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়না।'
অনিরুদ্ধ প্রথমে ঝুমুরকে কিছু না জানিয়ে টাকা ঘুষ দিয়ে ঝুমুরের টেস্টটা করায়। কিন্তু রিপোর্টে যে লেখা ‘ফিমেল’। এবার তাকে সব কথা ঝুমুরকে জানাতেই হয়। তার সঙ্গে সে নিজের মাকেও সব কথা বলে।
ঝুমুর যখন চোখে জল নিয়ে ভাবছে কি করবে, ঠিক তখনই তার ঘরে আসেন তার শ্বাশুড়ী মা। অতি স্নেহে ঝুমুরের মাথায় হাত দিয়ে বলেন ‘কাঁদিসনা মা, এই সময় মেয়েদের কাঁদতে নেই। অনির শরীরে আমারও রক্ত আছে। আমি শেষবারের মত অনির বাবাকে বোঝাবো। যদি না বোঝে তাহলে তুই বাকী জীবনটাতে আমাকে দুটো খেতে দিতে পারবি তো? তুই তো আমার মতো অশিক্ষিত ও অসহায় নয়, নিজের জন্য একটা চাকরী নিঃশ্চয়ই যোগাড় করতে পারবি।’
ঝুমুর অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে রইল। তিনি একটা প্যাকেট থেকে বাচ্চা মেয়েদের কিছু সুন্দর জামা বের করে ঝুমুর কে দিয়ে বললেন ‘এগুলো আমার নাতনীকে পরাবো। যেদিন জানতে পেরেছিলাম আমার পেটে মেয়ে এসেছে, সেদিন কিনেছিলাম কিন্তু তাকে আর পরানো হয়নি।’ ঝুমুর তার মা (শ্বাশুড়ি) কে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো।