Mahadev Nandi

Abstract Horror

4.0  

Mahadev Nandi

Abstract Horror

লক্ষ্যপূরণ

লক্ষ্যপূরণ

4 mins
433



ভুত আছে কি নেই তা নিয়ে তর্ক লেগেই আছে। অনেকে বিশ্বাস করেন মানুষ মারা গেলেও নাকি তার আত্মার মৃত্যু হয়না। মৃত্যুর আগে সেই ব্যক্তির যত আশা-আকাঙ্ক্ষা থাকে তা মৃত্যুর পর সম্পূর্ণ করেন। কিন্তু আমি এই সব কথা হাওয়ায় উড়িয়ে দিই বলে রঞ্জনদার সাথে হামেশাই ঝগড়া হয়।

ঝাঁকড়াচুলো, গোলফ্রেমের চশমা পরা বয়স বাইশের রঞ্জনদা মানুষ হিসেবে নিখুঁত। তবে তার বদ অভ্যেসগুলো আমি মানতে পারি না। সে যা বলবে সেটাই মেনে নিতে হবে এমনই তার দাবি। একই ক্লাসে পড়লেও বয়সে তিন বছরের বড়ো। তাই নামের শেষে দা' জুড়তে হয়। 

  বাড়ি থেকে কলেজের দূরত্ব সাতাত্তর মাইল, তাই একটু চিন্তিত ছিলাম। পিছন থেকে একঝাঁকা কুঁকড়ানো চুল নিয়ে চোখের চশমাটা একটু উপরে তুলে ভ্রু কুঁচকে একসাথে থাকার প্রস্তাব দিয়েছিল রঞ্জনদা। দেখে মনে হয়েছিল একটু হাঁদা স্বভাবের। তাই প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলাম। এখন তা নিয়ে আপসোস করি। রুম ছাড়ার অনেক চেষ্টাও করেছি; কিন্তু কোনো পার্টনার পায়নি। আমার পক্ষে একা পুরো রুমের ভাড়া দিয়ে থাকার সামর্থ্যও ছিল না। সুতরাং রঞ্জনদার সাথেই সংসার করতে হলো।

  সেদিন একটু বেশিই রেগে গিয়েছিলাম রঞ্জনদার উপর। ঘটনাটা ঘটে ডাইনা ম্যামের এনাটমির প্রেক্টিক্যাল ক্লাসে। ম্যাম পড়ান ভালো। তবে বদমায়েশি একদম পছন্দ করেন না। ক্লাসের মধ্যে খাতা কলমের সংঘর্ষের শব্দ ছাড়া একটা শব্দ হলেই রেগে, "বাহার যাও" বলে বাইরে বের করে দেন। ম্যাম একহাতে হিউমেরাস নিয়ে বোর্ডে হিউমেরাসের স্যাফ্টটা এঁকে কি একটা বলতে যাচ্ছেন ঠিক তখনই আমার পাশের চেয়ারে বসে থাকা রঞ্জনদা চশমাটা নাকের ডগায় নামিয়ে ওপরের ফাঁকা দিয়ে কৌতুহলী দৃষ্টিতে আমায় চিমটি কেটে ডাকছে। হটাৎ করেই চিমটির অস্বস্তিতে অজান্তেই মুখ দিয়ে উফফ্ঃ শব্দ বেরিয়ে যেতেই তৎক্ষনাৎ পিছন ফিরে রে রে করে তেড়ে এসে বললেন, " আওয়াজ কন কিয়া?" পাশাপাশি বসে থাকা সকল বন্ধুই কেমন যেন বিদঘুটে দৃষ্টিতে আমায় দেখছে। রঞ্জনদা দেখি চশমার ওপরের দিক দিয়ে এখনো আমায় দেখছে। অগত্যা দাড়ালাম এবং মৃদু গলায় বললাম, "ম্যা"।

" পড়হাই আচ্ছা নেহি লাগতা তো বাহার যাও, ডিসটার্ব মাত কারো।" ঝোড়ো বেগে বললেন ম্যাম।

লজ্জিত গলায় বললাম,"সরি ম্যাম"।

এক ধমক দিয়ে ম্যাম বললেন,"ব্যাঠো"।

রাগে গমগম করছি রঞ্জনদার ওপর। ক্লাস শেষ হতেই দৌড়ে আমার কাছে এসে রঞ্জনদা বলল, "হিউমেরাসের এনাটমি জানার চেয়েও বেশি লাভবান হবি, যদি তুই প্রতি রাতে ওটাকে রক্ত খাওয়াতে পারিস। "

আমি রাগিমুখে বললাম, "এই ফালতু কথাটা বলার জন্য তুমি চিমটি কেটেছিলে?"

"ফালতু নয় রে, যদি তুই পোষ মানাতে পারিস তোর সব কথায় অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।" 

বিরক্ত হয়ে বললাম, "ধ্যাঁৎ বকো না তো। খিদের চোটে উল্টোপাল্টা না বকে চলো ক্যান্টিনে কিছু খাওয়া যাক।"

  ক্যান্টিনে গিয়ে মুখোমুখি দুটো চেয়ারে বসেছি দুজনে। এগরোলের প্রথম কামড় দিয়েই আবার শুরু করলো রঞ্জনদা।

"তুই কেন ভুত মানিস না বলতো?"

"কেন মানবো? আর তুমি বিজ্ঞানের ছেলে হয়ে কি করে ভুত বিশ্বাস করো?"

"বিজ্ঞানেও কিছু কিছু অজ্ঞান আছে ভাই। তোকে তো ভুত বিশ্বাস করাবোই, এটা আমার প্রধান লক্ষ্য। "

প্রসঙ্গটা এড়ানোর জন্য বললাম,"বাড়ি কবে যাচ্ছো?"

উত্তরে রঞ্জনদা বললো, "সামনের শনিবার।"

  আজ শনিবার। বিকেলে কলেজ সেরে রঞ্জনদা বাড়ি চলে গেলো। আমিও একটু রক্ষা পেলাম। রঞ্জনদার বাড়ি গড়বেতায়। পৌঁনে ছ'টায় ট্রেন হাওড়া স্টেশন ছাড়বে। প্রায় সাড়ে নটা নাগাত বাড়ি পৌছুবে।  

আমি সন্ধ্যেবেলায় অল্পকিছু খেয়ে পড়তে বসলাম। হটাৎ মাথাটা ভারি হয়ে গেলো। প্রচন্ড মাথা ব্যথ্যা। ব্যাগে রাখা একটা সেরিডন খেয়ে নিলাম। আর পড়লাম না, কোনো রকমে বইগুলো একটু সরিয়ে শুয়ে পড়লাম। 

ঘুম ভাঙ্গলো দরজার কড়া নাড়ার শব্দে। পাশে রাখা মোবাইলে দেখলাম ২৩:৩৭। অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের মেসে সারারাত কেউ না কেউ জেগেই থাকে। অনেকে পড়াশুনোতে ব্যস্ত থাকে। আবার কেউ ভোর তিনটায় উঠেও পড়তে বসে। কেউ কেউ পাবজিতে মনোনিবেশ করেই ভোর করে দেয়। রাতে কারো কোনো প্রয়োজনে যে কারো দরজাতেই কড়া নাড়ায়। তবু ঘুম না ভাঙ্গলে ফোনে রিং করলেই উঠে দরজা খুলে দেয়। আমায় ফোন করতে প্রয়োজন হয় না। 

চোখ ঘষতে ঘষতে দরজা খুলেই দেখি রঞ্জনদা!! 

"ফিরে এলে যে? বাড়ি যাওনি?" অবাক হয়ে বললাম।

একটু শয়তানী হাসি হেসে রঞ্জনদা বললো, "তোকে ভুত দেখাতে এসেছি।"

আমি কথাকে অগ্রাহ্য করে বললাম, "মাথা ব্যাথা করছে। তোমার ফালতু ভাষন শোনার ইচ্ছা নেই। বিরক্ত করো না দয়া করে।"

ঠিক আছে। তুই আমায় হাওড়া স্টেশনে ৫০টাকার হেডফোন চেয়েছিলি, এই নে। ট্রেন মিস করেছি; তাই ভাবলাম তোর হেডফোনটা নিয়েই যায় " বললো রঞ্জনদা।

আমার টেবিলের দিকে ইঙ্গিত করে বললাম, "এখানে রেখে দাও।" 

সকাল সোয়া ছটায় ঘুম ভাঙ্গলো আমার। টেবিলে রাখা হেডফোনটা দেখে রঞ্জনদার কথা মনে পড়লো। ঘরের মধ্যে ছিল না তখন। রোজদিনের অভ্যেস সকালে উঠেই বাড়ির ছাদে হাটাহাটি করা। বোধহয় তাই করতেই গেছে। আমি হেডফোনটা নিয়ে হটস্টার থেকে প্রতিদিনের মতো এ.বি.পি আনন্দ লাইভ টেলিগ্রাস দেখতে শুরু করলাম। কয়েকটা খবর দেখার পর যে খবরটা দেখলাম তাতেই যে কোনো সাহসী ছেলের শরীর হিম করার জন্য যথেষ্ট। 'পথদুর্ঘটনায় মারা যান বছর বাইশের এক যুবক। মৃতের নাম রঞ্জন জানা।' আমি নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না। ফোন থেকে তৎক্ষনাৎ হেডফোন খুলে ফেললাম। তারপরের ঘটনাতে আমার বাকি জ্ঞানটুকুও হারিয়ে গেল। ফোনের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হেডফোন থেকে ভেসে এলো খুব চেনা স্বর। এতো রঞ্জনদার গলা। তীক্ষ্ণ অট্টহাসি হেসে বলতে লাগলো, " আমার লক্ষ্য পূরন হলো "।।


Rate this content
Log in

More bengali story from Mahadev Nandi

Similar bengali story from Abstract