লক্ষ্যভেদ
লক্ষ্যভেদ
বিষ্ণুপদ চ্যাটার্জ্জীদের বিশাল বড় জমিদার বাড়ি। একনামে এই হট্টপুর গ্রামের সবাই ওনাকে চেনেন। এখনও ঠাম্মা, দাদুরা নাতি নাতনিদের এই জমিদার বাড়ি এবং জমিদার বিষ্ণুপদ চ্যাটার্জ্জীর গল্প শোনান। এই জমিদার বাড়ি সাবেকি আনায় ভরপুর ছিল এক সময় । পুরনো দিনের আসবাব আর সাজসজ্জা দিয়ে পুরো বাড়িটা সাজানো ছিল। এই বাড়ির আনাচে কানাচে যেন দেবী লক্ষীর বসবাস ছিল। কিন্তু সময়ে সাথে সেই সাবেকি আনা আর সাজসজ্জা হারিয়ে যেতে লাগল। বাড়িটার অবস্থা ভঙ্গপ্রায় হয়ে উঠল। জীর্নকায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটা, আজও তার অস্তিত্বের জানান দিয়ে চলেছে, মাথা নীচু করেনি। এখন এই পুরনো দিনের মূল্যবান জিনিসগুলো বাজারে বেচে দিন চলছে চ্যাটুজ্জ্যেদের।
বিষ্ণুপদ চ্যাটুজ্জ্যে ছিলেন খুব পরিশ্রমী। তিনি তার লক্ষ্য কে... স্থির রেখে শত, সহস্র বাধা অতিক্রম করে এবং কঠোর পরিশ্রম করে নিজেকে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যেতে পেড়েছিলেন। তিনি কোনভাবেই নিজেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট করেননি। অবিচল ছিলেন, নিজের মনের জোর নিয়ে এগিয়ে গেছেন লক্ষ্য পূরনের পথে। বিষ্ণুপদ চ্যাটুজ্জ্যের কাছে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ছিল ধৈর্য্য, পরিশ্রম আর নিজের লক্ষ্যকে স্থির রাখা। তিনি এই মন্ত্র তার তিন ছেলেদের দিয়ে ছিলেন। কিন্তু দূর্ভাগ্য বশত তার তিন ছেলেই ছিল বড্ড কুড়ে এবং অহংকারি, আর দাম্ভিক। তাই নিজেদেরকে কোন দিক থেকেই সফল করে তুলতে পাড়েনি। তাই এখন নিরুপায় হয়ে নিজেদের গর্ব, আর অহংকারকে বেচে নিজেদের জীবন যাপন করে চলেছে।
তবে এই চ্যাটার্জ্জী পরিবারের সবথেকে ছোট্ট সদস্য ময়ূরী চ্যাটার্জ্জী, তার রক্তে যেন তার ঠাকুরদার সেই দীপ্ত, তেজ এবং নীতি বয়ে চলেছে। সে নিজের লক্ষ্য স্থির করে ফেলেছে। এবং হাজার হাজার বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে চলেছে লক্ষ্যপূরনের পথে। তবে সবচেয়ে বড় দূর্ভাগ্যের বিষয় তার এই লক্ষ্য পূরনের পথে সবচেয়ে বড় বাধা তার এই মস্ত বড়ো পরিবার এবং তাদের মানসিকতা। তার প্রধান কারন হল সে মেয়ে। তাদের পরিবারের মেয়ে বউরা বাইরে কাজ করতে যায় না এতে পরিবারের মান সম্মান ধুলোয় মিশে যায়!!!! অথচ বাড়ির জিনিস বিক্রি করে সংসার চালালে তাতে সম্মান ধূলোয় মেশে না!!!! এই পরিবারের মেয়েরা ঘর সংসার সামলায় এই তার বাবা, জ্যাঠা, দাদাদের বক্তব্য। তবে সে.... কোন কারনেই নিজেকে দমিয়ে রাখার পাত্রি নয়!!! তাই নিজের লক্ষ্যপূরনের জন্য সবার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সে... একাই লড়ে চলেছে। বারবার ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়েছে!! তবুও সে... তার এগিয়ে চলার পথ বন্ধ করেনি!!! কারন তার মনের মধ্যে অগাধ বিশ্বাস আছে... একদিন না... একদিন ঠিক সে তার সাফল্যের সিঁড়ি চড়বে!!! আজ যারা তাকে অপমান অসম্মান করছে তখন তারাই তাকে নিয়ে গর্ব বোধ করবে।
এবং তার সেই বিশ্বাস, এবং পরিশ্রমের ফসল হিসাবে সফলতা তার দরজায় কড়া নেড়েছে। সারা বিশ্বে তার নাম ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই ভগবান বলে মনে করে তাকে কারন সে.... যে... মানুষের প্রান ফিরিয়ে দিতে সক্ষম । তার পরিচয় এখন শুধু মাত্র ময়ূরী চ্যাটার্জ্জীতে সীমাবদ্ধ নয় তার নাম হয়ে উঠেছে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ ময়ূরী চ্যাটার্জ্জী আর তার সাফল্যের চাবিকাঠি হলো তার কঠোর পরিশ্রম আর ধৈর্য্য যা তাকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করছে।
