STORYMIRROR

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Others

3  

শিপ্রা চক্রবর্তী

Romance Others

লকডাউন ডাইরি

লকডাউন ডাইরি

3 mins
223



করবী আর কৌশিকের বিয়ে হয়েছে প্রায় তিন বছরের কাছাকাছি। কিন্তু ওরা একে অপরকে ভালো করে চেনা, জানার জন‍্য তিন মাস সময় হাতে পেয়েছে কিনা সন্দেহ!!! কারন ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতায় নেমে এক বাঁধা ছকের মধ‍্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছিল ওদের জীবন। 


যেখানে ওদের চোখে রঙিন স্বপ্নের জায়গায় সবসময় ভাসত ট্রেন, বাসের ভীড়, চেঁচামেচি, মেসিনের আওয়াজ, গাড়ির তীব্র হর্ণ। করবী আর কৌশিক দুজন মিলে দুই বাড়ির অমতে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিল। তবে ওদের এই বিয়ে এবং একে অপরের সাথে পরিচয়ের সময় ছিল মাত্র একমাস!!! সবার বিরুদ্ধে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করেছিল কৌশিক-করবী। কারন করবীর নেশাখোর বাবা করবীকে মোটা টাকার বিনিময়ে বেঁচে দিতে চেয়েছিল দালালের হাতে, আর অন‍্যদিকে কৌশিকের মা করবী ছোট জাতের মেয়ে এবং এই রকম পরিবারের হাল বলে মেনে নিতে চায়নি এই সম্পর্ককে!!!! তাই বাধ‍্য হয়ে নিজেদের জীবন শুরু করতে হয়েছিল সবার অমতে কারন কৌশিক কোন কারনেই করবীর হাত ছাড়তে চায়নি। 


আর ওদের এই নতুন জীবন শুরু হয়ে ছিল একটা ভরসায়!!! আর সেই ভরসাটা হলো করবীর চাকরি। করবী একটা গার্মেন্টস কম্পানিতে কাজ পেয়েছিল বিয়ের ঠিক এক সপ্তাহ আগে, করবী ছোট থেকেই হাতের কাজে বেশ পারদর্শী ছিল আসলে করবী সখে তখন হাতের কাজ শিখেছিল, আর সেই শিক্ষাই আজ তার পাশে দাঁড়িয়েছে। সত‍্যি শিক্ষার তুলনা কিছুর সাথে হয় না!!! তুমি যে... শিক্ষাই ভালোবেসে গ্রহন করবে সেই শিক্ষাই একদিন তোমাকে ঠিক সাহায্য করবে। মাইনে খুব বেশি ছিলনা করবীর, কোন রকমে চলে যেত নতুন সংসার। কৌশিকও চাকরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। বেশ কিছুদিনের মধ‍্যেই কৌশিক সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি পেয়ে যায় । 


শুরু হয় করবী আর কৌশিকের এক অদ্ভূত জীবন। সকাল বেলায় উঠেই করবী রান্না-বান্না সেরে খাবার খেয়ে, কৌশিকের জন‍্য খাবার গুছিয়ে রেখে, কাজে বেরোবে বলে রেডি হত। করবী বেরনোর ঠিক মিনিট দশেক আগে কৌশ

িক বাড়ি ফিরত। করবী একটা ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ কৌশিকের হাতে দিয়ে হাসি মুখে বেড়িয়ে যেত।


আর কৌশিক বেশ কিছুক্ষন করবীর যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকত, তারপর চা টা শেষ করে স্নান সেরে খাওয়া দাওয়া করে শরীর টাকে বিছানায় এলিয়ে দিত। সারা রাত জেগে থাকার ক্লান্তিতে দুচোখে ঘুম নেমে আসতো সহজেই। তবে প্রত‍্যেক দিন কৌশিক স্বপ্নে দেখত, একটা পূর্নিমার রাতে রূপোলি জোৎস্না গায়ে মেখে, কৌশিক করবীর হাত ধরে বসে আছে এক শান্ত সমুদ্রের তীরে। চারিদিকে কোথাও কোনো কোলাহল নেই, প্রকৃতি যেন নিঃশ্চুপ হয়ে দুটি ভালোবাসার মানুষের হৃদয়ের গোপন কথা শোনার চেষ্টা করছে। হয়তো একে অপরের সাথে সময় না.... কাটাতে পারার আক্ষেপ স্বপ্ন হয়ে শান্তনা দিত কৌশিকের মনে।


সারা দিনের কাজের খাটুনি, তারপর ট্রেন বাসের ভীড় ঠেলে গরমে ঘেমে, নেয়ে যখন ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরত করবী, তখন কৌশিকের কাজে যাওয়ার সময় হয়ে যেত!!! কৌশিকের মন চাইতো ক্লান্ত অবসন্ন করবীর পাশে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দুটো কথা বলতে, কিন্তু সেই সময় কোথায় ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতায়!!!কৌশিক এক গ্লাস জল করবীর হাতে দিয়ে হাসিমুখে বিদায় নিত করবীর কাছ থেকে। নিঃশব্দে এবং একাকিত্বে কেটে যেত করবীর রাতের পর রাত। এই ভাবে একই ছকে চলছিল ওদের জীবন মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। ছুটি খুব কম নেই বললেই চলে!! আর ছুটি ওরা নিতোনা, তাতে যদি আরও দুটো পয়সা বেশি আসে তাহলে সংসারটা ভালো করে চলবে এই ভাবনায়।


কৌশিক আর করবীর জীবনে এক নতুন অধ‍্যায়ের সূচনা করল মহামারী। মহামারী যখন দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং সারা দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষনা হল তখন কৌশিক আর করবী একসাথে সময় কাটিয়েছে, অভাব অনটন থাকলেও দিনের শেষে একে অপরের পাশে বসে দুটো প্রানখুলে কথা বলতে পেরেছে। সেই বাঁধা ছকের একঘেয়ে জীবন থেকে কিছুটা হলেও মুক্তির আকাশ খুঁজে পেয়েছে দুটো বদ্ধ মন এবং নতুন করে রঙিন স্বপ্ন সাজাতে শুরু করেছে চোখে একে অপরকে নিয়ে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Romance