Dipanwita Sarkar

Abstract Inspirational

2  

Dipanwita Sarkar

Abstract Inspirational

লকডাউন ১১ সাস্তেনেবেল লিভিং

লকডাউন ১১ সাস্তেনেবেল লিভিং

3 mins
146



   কোথাও একটা পড়ে ছিলাম ,sustainable livelihood.....গতকাল তার ছোট্ট নমুনা পেলাম হাতেনাতে। লকডাউন এর দৌলতে ,ঘরে যা আছে তাই দিয়ে রকমারী না হলেও নিত্য নতুন কিছু করার মধ্যে বেশ একটা চ্যালেঞ্জ আছে।

   সেদিন বাজারে ভীষণ ভালো নোটে শাক পেয়েছিলাম।এত্তো ভালো যেন ক্ষেত থেকে টাটকা তুলে আনা।শাক বাছতে বসিয়ে দিলাম মেয়ে কে। বাছা শেষ হলে...সে জিজ্ঞেস করলো..মা ,এই বাকি ডাটা গুলো কি করবো? সত্যি বলছি...সঙ্গে সঙ্গে চলে গেলাম ছোটবেলার দিনে।

   বড়ো পরিবারের মেয়ে আমি ,মাকে দেখেছি..কি পরম মমতায় ,পাঁচ টি সন্তান কে খেতে দিতেন।রান্নাঘরে মা যেন সাক্ষাৎ অন্নপূর্ণা।বাবা বিমান দপ্তরের উচ্চ পদে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন, কিন্তু নিজের পরিবার ছাড়াও ,জ্ঞাতি দের পরিবার পরিজন দের গুরু দায়িত্ব পালনে কোনো দিন‌ও পিছিয়ে ছিলেন না।তাই তারাও আমাদের পরিবারের সদ‍্যস ছিলেন। রোজ বাড়িতে ৯/১০ জনের পাত পরা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল না।

মাকে তখন দেখতাম কিভাবে জিনিসের সদব‍্যবহার করতেন, আর সুস্বাদু ব‍্যঞ্জন বানাতেন।

   ফ্রীজ খুলে, সবজির ট্রে তে দেখলাম, আরো তিন চার দিনের রসদ আছে।কিন্তু ঐ টাটকা শাকের বাতিল করা অংশ টি ফেলে দিতে মন চাইলো না। সঙ্গে সঙ্গে মেয়ে কে দেখালাম বাকিটুকু কেমন ভাবে কেটে পরিষ্কার করবে।

যেমন বলা তেমন কাজ।মা,মেয়ে কে বিশেষ কাজে লিপ্ত দেখে, বাড়ির কত্তার অংশগ্রহণ... বলে উঠলেন.. কেন বাড়িতে আর কিছু নেই নাকি, বাজারে যাবো?...মেয়ে চোখ পাঁকিয়ে ধমক দিলো..কোথাও বের হবে না।সব আছে। ইসৎ ভুরু কুচঁকে,উনি বল্লেন.. এসব মুখে দেওয়া যাবে তো?

আমার জন্য চ্যালেঞ্জ আরো প্রবল হলো।মুখে বলাম,তোমার ভালো না লাগলে খেয়েও না,অন্য কিছুও তো আছে।

   এক ইনচি করে কাটা ডাটাগুলো ,আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো, আমিও।মুখের মধ্যে সেই ডাটা চচ্চড়ির স্বাদ পেলাম যেন।মায়ের মুখটা খুব মনে পড়ে গেল।

    অল্প একটু নারকোল, পোস্ত,সরষে আর নুন ,কাঁচা লঙ্কা ও রসুন বাটা করে নিলাম। ছোট একটি পেয়াঁজ কুঁচিয়ে নিলাম। এবার পাতলা করে অল্প আলু ও বেগুন কুটে নিলাম।মা এর মধ্যে কখনও কখনও ছোট ছোট মৌরলা মাছ দিতেন।গরম গরম ভাত দিয়ে জাস্ট জমে যেত।

   ছোটবেলার দিনে ঘুরতে ঘুরতে, কাড়াই চাপালাম।কড়াইয়ে সরষের তেল ঢেলে দিলাম অল্প পরিমাণে,তেল গরম হবার আগেই ,পেয়াঁজ, ডাটা, আলু ও বেগুন,বাটা মসলা আর পরিমাণ মতন নুন হলুদ আর অল্প লঙ্কা গুড়ো ছড়িয়ে দিয়ে নাড়াচাড়া করে,অল্প আঁচে ঢাকা দিয়ে বসিয়ে দিলাম... আমার ছোটবেলার স্বাদ।কিন্তু মৌরলা মাছের স্বাদটা মাথায় ঘুরপাক করতে থাকলো।ফ্রিজ খুলে একটু তদন্ত করতেই পেয়ে গেলাম, ছোট বাটিতে নুন,হলুদ মাখানো রুই মাছের ডিম!ব‍্যস ,আর কে দেখে আমায়...খুন্তি দিয়ে সবজি টাকে একধারে করে দিলাম।আর ও সামান্য সরষের তেল ও মাছের ডিম চটকানো কড়াইয়ের মাঝখানে রেখে ,সবজি গুলো দিয়ে আবার ঢাকা দিলাম।মনে রাখতে হবে, রান্না টা কিন্তু তেল গরম হবার আগেই মিশিয়ে দিতে হবে।

   যারা কলাপাতায় আমিষ বা নিরামিষ পাতুড়ি করেছেন বা খেয়েছেন..তারা অনুমান করতেই পারেন রান্নার পদ্ধতিটি ও স্বাদটি।পাঁচ থেকে সাত মিনিট অল্প আঁচে রেখে ,এবার সমস্ত জিনিস টা উল্টে দিয়ে আর ও পাঁচ মিনিট শেষে সবকিছু কে নেড়েচেড়ে কসিয়ে নিলাম। উপর থেকে ধনেপাতা কুঁচো ছড়িয়ে দিতে দিতে.... ছোটবেলার গন্ধে ডুবে গেলাম।

    খাবার পাতে মেয়ে খুব excited ছিল নতুন খাবার টেস্ট করতে পেয়ে।নিজের প্রশংসা করবো না,কিন্তু ভাতটা সেদিন সবাই বেশি খেলো। কত্তা বল্লেন, বেশ হয়েছে,তবে আমি ঐ আইটেম টা খুব কম‌ই পেলাম।

বোঝো!!

     মায়ের মুখটা আবার মনে পড়ে গেল... মনে মনে জড়িয়ে ধরলাম মাকে, যেন সেই মায়ের শাড়িতে ধোঁয়ার গন্ধটা ও পেলাম।

মেয়ে বল্লো, জানো মা..আজকাল Sustainable lifestyle একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে আমাদের জীবনে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract